অনলাইন ডেস্ক: মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে র্যাব। তারা হলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ সাত পুলিশ সদস্য এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী। তবে গতকাল পর্যন্ত এই মামলায় কাউকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি র্যাব। আজ শুক্রবার থেকে প্রথমবারের মতো নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এ মামলার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে। এরই মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
প্রথম দফায় আজ আয়াজ উদ্দিন, নুরুল আমিন ও নিজাম উদ্দিনকে কারাগার থেকে র্যাব তাদের হেফাজতে নিয়ে সাত দিন জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে অন্য আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে। সব শেষে প্রদীপ ও লিয়াকতকে রিমান্ডে নেওয়া হবে। তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানায়।
এদিকে সিনহার ব্যবহূত ল্যাপটপ ও হার্ডডিস্কের হদিস মিলছে না। এগুলো কোথায় গেল- এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মেরিন ড্রাইভে গুলির ঘটনার পর নীলিমা রিসোর্টে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের অভিযানের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সিনহার কক্ষ থেকে এক রাউন্ড গুলি জব্দ করেছিল পুলিশ। এ ছাড়া তার কক্ষে একটি ল্যাপটপ ও তিনটি হার্ডড্রাইভ ছিল। অভিযানের সঙ্গে যুক্ত একজন পুলিশ সদস্যকে সিনহার ওই হার্ডড্রাইভ অনেক সময় ধরে নাড়াচাড়া করতেও দেখা যায়। অভিযানের শুরুতে সিনহার কক্ষে ল্যাপটপের সামনে বসেই পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় শিপ্রা দেবনাথকে। তবে নীলিমা রিসোর্টে অভিযানের ঘটনায় রামু থানায় পুলিশ যে মামলা করেছিল, সেখানে সিনহার কক্ষ থেকে উদ্ধার করা গুলি, ল্যাপটপ ও হার্ডড্রাইভ জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। ‘জাস্ট গো’ নামে ডকুমেন্টারি তৈরির কাজে নীলিমা রিসোর্টে তিন সহযোগীসহ এক মাস ধরে অবস্থান করছিলেন সিনহা। তারা হলেন- শিপ্রা দেবনাথ, তাহসিম সিফাত নূর ও সাহেদুল ইসলাম সিফাত। এদিকে নীলিমা রিসোর্ট হিমছড়ি থানার মধ্যে হলেও টেকনাফ থানা পুলিশও অভিযানে অংশ নেয়।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ সমকালকে বলেন, তিন আসামিকে আজ রিমান্ডে নিয়ে আনুষ্ঠানিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে অন্যদের নেওয়া হবে।
জানা গেছে, সিনহা নিহত হওয়ার রাতেই পুলিশ তার আবাসস্থল রিসোর্টে অভিযানের পর হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ওই মামলায় সিনহার সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথকে আসামি করে মামলা করেছিল। সেখানে দুটি ভোদকা, তিনটি ভ্যাট ৬৯, দেশি মদ, এক পুরিয়া গাঁজা ও পানির বোতলে এক লিটার দেশি চোলাই মদ পাওয়া যায় বলে দাবি করা হয়েছে। শিপ্রাকে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেপ্তার দেখালেও তার সহকর্মী তাহসিম রিফাত নূরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
তদন্ত সংশ্নিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এ মামলায় পুলিশ সদস্যদের আনুষ্ঠানিক জিজ্ঞাসাবাদের আগে সংশ্নিষ্ট অন্যদের বক্তব্য জানা হবে। ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া গেলে তার বক্তব্যও নেওয়া হবে। সবার কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার পর পুলিশ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই মামলায় সাত পুলিশসহ ১০ জনের প্রত্যেককে সাত দিন ধরে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। তারা সবাই বর্তমানে কক্সবাজারের জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সিনহাকে গুলির ঘটনার প্রকৃত মোটিভ তারা বের করতে চান। তাৎক্ষণিক নাকি পূর্বপরিকল্পিত সাজানো ছকে ঘটনা ঘটানো হয়েছে- এটা বের করবে তদন্ত সংস্থা। পরিচয় দেওয়ার পরও কেন গুলি করা হলো, এটা বড় প্রশ্ন। আবার সিনহার পরনে সেনাসদৃশ পোশাক ছিল। এ ছাড়া মেরিন ড্রাইভে ওই রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও এপিবিএনের চেকপোস্ট নির্বিঘ্নে নিজ পরিচয় দিয়েই অতিক্রম করে এসেছিলেন সিনহা ও তার সহযোগী। এর পরও কেন লিয়াকত একাধিক গুলি করেন সিনহাকে। আবার পায়ের নিচে না করে সিনহার শরীরের ওপরের দিকে কেন গুলি করা হলো? তবে সিনহার সঙ্গী সিফাত র্যাবকে জানিয়েছেন, ঘটনার সময় প্রচণ্ড উত্তেজিত ছিলেন পরিদর্শক লিয়াকত।
লিয়াকত বা ওসি প্রদীপের সঙ্গে সিনহার পূর্ববিরোধ থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে সিফাত জানিয়েছেন, সিনহা কখনও তাদের সঙ্গে বিরোধের কথা তাকে জানাননি। চেনাজানা ছিল কিনা সেটিও বলেননি। তদন্ত করলেও এসব বিষয় পরিস্কার হবে বলে মনে করেন সিফাত। আর ঘটনার দিনও অন্যান্য দিনের মতো শান্ত ছিলেন সিনহা। পাহাড় থেকে নেমে কিছু সময় জগিং করেন। ঘটনার দিনও জগিং করেছেন তিনি।
তদন্ত সংশ্নিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে চার পুলিশ সদস্যকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব। তবে তাদের কাছ থেকে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়নি। এ ধরনের চাঞ্চল্যকর মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেলগেট উপযুক্ত জায়গা নয় বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্নিষ্টরা। তাই সব আসামিকে আদালতের অনুমতি নিয়ে হেফাজতে নিয়েই ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।