অনলাইন ডেস্ক : গা ঢাকা দিয়েছে স্বাস্থ্য খাতের মাফিয়ারা। সাহেদ-সাবরিনা কেলেঙ্কারিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেটের মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মহাপ্রতারক মোহাম্মদ সাহেদ এবং জেকেজি হেলথ কেয়ারের বিতর্কিত ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী কী করে নানামুখী অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন, কারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন, তা নিয়ে সব মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। আড়ালের মাফিয়াদের চিহ্নিত করে তাদের মুখোশ উন্মোচন করার দাবি তুলেছেন সবাই।

করোনাকালে মাস্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এরপর আসে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার নামে ভয়াবহ প্রতারণার ঘটনাটি। গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ সাহেদ বলেছেন, তার লোক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে রয়েছে। এছাড়া ওপরমহলেও তার লোক আছে।

এখন সবার প্রশ্ন হলো, তারা এখন কোথায়? তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে কেন? জানা গেছে, তাদের অনেকেই দুবাই, মালয়েশিয়া, আমেরিকায়, কেউ কানাডায় অবস্থান করছে। আমলাদের মধ্যেও মাফিয়ারা লুকিয়ে আছে।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার ফোনে ২৬ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য গোয়েন্দা জালে ধরা পড়ে। পরে ঐ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া আরো কয়েক জন কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা বাইরে থেকেও কলকাঠি নাড়ছেন। কেনাকাটা, সরবরাহ, নিয়োগ-বদলি—সবকিছুই এসব মাফিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কেরানি ২০০ কোটি টাকার মালিক হওয়ায় প্রমাণিত হয়, স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেট কত শক্তিশালী। বিএনপির সময়েও এসব মাফিয়া সক্রিয় ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় হস্তক্ষেপের কারণে সিন্ডিকেট আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ডা. সাবরিনার জেকেজি হেলথ কেয়ারের কোনো কিছুই নেই। তার পরও তারা অনুমোদন পেল কীভাবে? মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সিন্ডিকেট সদস্যরা এর সঙ্গে জড়িত। সাহেদ-সাবরিনার প্রতিষ্ঠান থেকে করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে ইতালি গিয়ে অনেক প্রবাসী বেকায়দায় পড়েছেন। এ ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

করোনাকালে চরম বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন জাতীয় হূদেরাগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা আরিফ ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী। দুজনে মিলে গড়ে তুলেছেন জিকেজি হেলথ কেয়ার নামে করোনার ভুয়া রিপোর্ট তৈরির কারখানা। এক ল্যাপটপ থেকেই তারা দিয়েছেন করোনা টেস্টের ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া রিপোর্ট। ন্যূনতম একটি ট্রেড লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও কী করে এই ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চুক্তি করল? কারা তাদের এই সুযোগ তৈরি করে দিলেন? কী কারণেই বা তাদের এমন সুযোগ দেওয়া হলো? এসব নিয়েও প্রশ্ন সব মহলে।

সাহেদ বা ডা. সাবরিনারা কিন্তু নিজে নিজে গড়ে ওঠেননি। তাদের পেছনের শক্তি হিসেবে সব সময় কেউ না কেউ কাজ করেছেন। বর্তমানে নিশ্চয়ই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই কেউ পেছন থেকে এদের মদত দিয়ে আসছেন। আবার অন্য সরকারগুলোর সময়েও কেউ না কেউ তাদের মতো অপরাধীদের মদত দিয়েছেন। তাই শুধু তাদের বিচার করলেই চলবে না, এসব অপরাধের মূলোত্পাটন করতে হবে। আঘাত করতে হবে গোড়ায়।

স্বাস্থ্য খাতের যেকোনো অনিয়মের গোড়া খুঁজতে গেলেই অবধারিতভাবে চলে আসে সিন্ডিকেট সদস্যদের নাম। স্বাস্থ্য খাতের সর্বত্র তাদের অদৃশ্য জাল ছড়ানো। মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার, স্থানীয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইনস্টিটিউটসহ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, সিভিল সার্জন অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত সিন্ডিকেটের প্রায় তিন দশক ধরে বিছানো এই জাল দিনে দিনে আরো পোক্ত হয়েছে।

নতুন করে আলোচনায় এসেছে এসব সিন্ডিকেটের নাম। এছাড়া নার্সিং অধিদপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানসমূহে আছে তাদের এজেন্ট। ঐ সিন্ডিকেটের কেউ কেউ স্বাস্থ্য খাতে মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত। তারা বেশির ভাগ সময় বিদেশে থাকেন। বিদেশে থাকলেও তাদের ইঙ্গিতেই চলে স্বাস্থ্য খাত। বিদেশেও রয়েছে তাদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা।

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান গ্রেপ্তারকৃত সাহেদ, ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফ জিজ্ঞাসাবাদে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এক পর্যায়ে র‌্যাব হেফাজতে থাকাকালে সাহেদ বলেন, ‘আমার হাত অনেক লম্বা। কিছুই হবে না। আমি একা খাইনি, অনেককে দিয়েছি।’