ইব্রাহীম চৌধুরী : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা জন বোল্টনের বইয়ের প্রকাশনা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের অধীনে ১৭ মাস কাজ করেছেন জন বোল্টন। মার্কিন এ রক্ষণশীল কূটনীতিক জাতিসংঘে মার্কিন দূত হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের প্রশাসনেও। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে অস্থির হোয়াইট হাউস থেকে তাঁকে সরে যেতে হয়। আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বহু আগ্রাসী নীতির প্রবর্তক মনে করা হয় জন বোল্টনকে।

ট্রাম্প প্রশাসনে তাঁর কর্মকালীন সময় নিয়ে বই প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়ার পর এ নিয়ে নানা মহলে উৎসাহ দেখা দেয়। বইটি আসছে ২৩ জুন প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৬ জুন ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার আদালতে বইটির প্রকাশনা স্থগিত রাখতে মামলা করা হয়েছে। মামলার আবেদনে বলে হয়েছে, প্রকাশিতব্য বইয়ে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য স্পর্শকাতর বিষয় থাকতে পারে। বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, জন বোল্টনের কাছে মার্কিন সরকারের অতি সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে। পদত্যাগের দু মাসের মধ্যে তিনি দু মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেন বই লেখার জন্য। আবেদনে বলা হয়, গোপনীয় তথ্য দিয়ে বোল্টন পাঁচ শরও বেশি পৃষ্ঠা লিখেছেন, যা বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ করতে চান তিনি। এটিকে ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি চাকরির গোপনীয়তার চুক্তি ভঙ্গ ঘোষণা করার জন্য ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

মামলার আবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকারের অনুমতি ছাড়া জন বোল্টনের স্মৃতিবিষয়ক তথ্য প্রকাশ থেকে যেন প্রকাশককে বিরত রাখা হয়। কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছে এসব তথ্য থাকলে প্রকাশক ‘সাইমন অ্যান্ড শুস্টার’ যেন তা উদ্ধার করে নষ্ট করে ফেলে। জন বোল্টনের আইনজীবী বইয়ে কোনো রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য নেই বলে আগেই জানিয়েছেন।

গত সপ্তাহ থেকেই জন বোল্টনের প্রকাশিতব্য বই নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টার দৃষ্টিতে হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ কঠিন কিছু বিষয় উঠে আসছে—এমন ধারণায় সর্বত্র আলোচনা শুরু হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সোমবার বলেছেন, আমি ভাবতে পারি না, তিনি (জন বোল্টন) অতি গোপনীয় রাষ্ট্রীয় তথ্য দিয়ে বই লিখতে পারেন।

এরপর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, ট্রাম্প প্রশাসন এ নিয়ে আদালতে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বলা প্রতিটি কথা অতি গোপনীয় বলে মনে করেন ট্রাম্প। এ নিয়ে বই লেখাকে আইনের লঙ্ঘন এবং ফৌজদারি অপরাধ উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বইটি দেখেননি।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের নজরদারির কারণে বইটি প্রকাশনা এমনিতেই বিলম্বিত হচ্ছিল। না হলে আরও কয়েক মাস আগেই বইটি প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল।

জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একাধিক কর্মকর্তা জন বোল্টনের বইটি দেখেছেন। সর্বশেষ নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মাইকেল এলিস গত ২ মে জন বোল্টনের বইয়ে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য আছে বলে জানান। এ বিষয়টি জন বোল্টনের আইনজীবী চাক কুপারকে ৮ জুন একটা চিঠি দিয়ে জানানো হয়। এর মধ্যে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়, জন বোল্টনের বইটি ২৩ জুন প্রকাশিত হবে। এ বইয়ে ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট সময়ের বিষয়গুলো থাকার কথা বলে মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান। গত মঙ্গলবার মামলাটি দায়েরের পর জন বোল্টনের আইনজীবীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।