হাসান গোর্কি : সবকিছু কি নিয়মমাফিক চলছে? এর উত্তরে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ উভয়-ই ঠিক হতে পারে। বিষয়টা নির্ভর করবে আমরা নিয়ম বলতে কী বুঝবো তার ওপর। সৌর জগতের সবগুলো গ্রহ বেরি সেন্টারের চারিদিকে নির্দিষ্ট গতি ও দূরত্ব বজায় রেখে ঘুরছে। এই ঘটনাটিকে আমরা মহাজাগতিক নিয়মের শৃঙ্খলার বড় উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করে থাকি। পাশাপাশি এটাও ভাবতে আমরা পছন্দ করি যে, এটা কোনো অতীন্দ্রিয় সত্তার পরিকল্পনা ও চিন্তার ফসল। এর কারণ হলো আমরা সৌরজগতকে সুশৃঙ্খল অবস্থায়-ই দেখি। কিন্তু এই দেখার বয়স খুব বেশি নয়। সৌরজগতের সৃষ্টি হয়েছে মোটামুটি চারশ’ কোটি বছর আগে। আর সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের কথা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাসহ আমরা জানতে পেরেছি ১৫৩৯ সালে কোপার্নিকাসের বই দি রেভলিউসনিবাস অরবিয়াম কোয়েলেস্তিয়াম প্রকাশিত হবার পর। তবে এটা খুব-ই কৌতুহলোদ্দীপক যে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টারকাস সূর্যকেন্দ্রিক ব্রহ্মাণ্ড বিন্যাসের কথা চিন্তা করেছিলেন। কোপার্নিকাসের তত্ত¡ প্রকাশিত হবার পর সবগুলো গ্রহ সম্পর্কে জানতে প্রায় আরও এক শতাব্দী পার হয়ে গিয়েছিল। এমনকি নেপচুনের মতো বৃহদায়তন গ্রহের অস্তিত্ত¡ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি ১৮৪৬ সালে- আজ থেকে মাত্র ১৭৬ বছর আগে।
নেপচুন পরিধিতে চতুর্থ এবং ভরে তৃতীয় সর্ববৃহত গ্রহ। এর ভর পৃথিবীর ভরের ১৭ গুণ। ইউরেনাস আবিষ্কারের ঘটনাটা ছিলো বেশ মজার। ১৮ শতকের জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের ইতিহাসে অন্যতম বিজ্ঞানী ছিলেন ফ্রেডরিক উইলহেম বেসেল। তিনি ছিলেন প্রুশিয়ার (বর্তমান জার্মানি) অধিবাসী। ১৮৪৬ সালে তিনি একটি নাক্ষত্রিক লম্বন দৃষ্টিভ্রম পরিমাপ করেন এবং অনুমান করেন যে নেপচুনের গতিপথকে অজানা কোনো গ্রহ প্রভাবিত করছে। ১৮৪৬ সালে লে-টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে ইউরেনাসকে খুঁজে পাওয়া যায়। আমরা আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর খবর রাখি মোটামুটি দুই তিন শতাব্দী ধরে। এ’সময়ের মধ্যে আমাদের চেনা কোনো গ্রহ কক্ষচ্যুত হয়নি। কিন্তু বিগত সাড়ে চারশ’ কোটি বছর ধরে কী ঘটেছে সেটা অনুমান করা সম্ভব নয়। এমনও হতে পারে এই সৌরজগতে ৫০ টি গ্রহ ছিলো। তার ৪২ টি বিভিন্ন সময় কক্ষচ্যুত হয়ে গেছে। সেরকম হয়ে থাকলে শৃঙ্খলাকে আমরা যেমন আদি-অন্তহীন ও অমোঘ ভাবছি সেটা ভুল হয়ে যায়।
ধরে নেওয়া যাক আমাদের দেখা তিন শতাব্দী বা না দেখা সাড়ে চারশ’ কোটি বছর ধরে আটটি গ্রহ সৌরজগতের বেরি সেন্টারকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এটা শৃঙ্খলার একটা নুমুনা। এই শৃঙ্খলা তৈরি হলো কেনো? গ্রহগুলো এই নিখুঁত পথ পরিক্রমায় নিজেদের নিয়োজিত করেছিল কেনো? কেউ কি পরিকল্পনা করে তাদের গতি ও দূরত্ব নির্ধারণ করে আদি ঘূর্ণনটা শুরু করে দিয়েছিল? হলি স্ক্রিপচারগুলোতে সেরকম-ই বলা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন অন্য কথা। ঘূর্ণন শুরু হয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে, যার একমাত্র নিয়ামক ছিলো পদার্থের বৈশিষ্ট্য। মোটামুটি ৪৬০ কোটি বছর আগে একটি বিশালকায় আন্তঃনাক্ষত্রিক আণবিক মেঘের মহাকর্ষীয় সংকোচন থেকে সৌরজগতের উদ্ভব। মহাকর্ষ বলের কারণে এই মেঘের বেশিরভাগ কেন্দ্রীভূত হয়ে সূর্য তৈরি করে। সূর্যের আকর্ষণে বাইরের বস্তুপিণ্ড তার দিকে ধাবিত হয়। বেশিরভাগ বস্তু সূর্যে গিয়ে বিলীন হয়ে গেলেও কিছু বস্তুপিণ্ডের কেন্দ্রাতিগ ও কেন্দ্রাভিগ বল সমান হবার কারণে তারা কক্ষপথ তৈরি করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে। এই বস্তুপিণ্ডগুলো-ই আজকের গ্রহ। আমাদের মনে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে গ্রহগুলোর গতি ও দূরত্ব এতো নিখুঁত হলো কীভাবে! আসলে যে বস্তুপিণ্ডগুলোর গতি কম বা বেশি ছিলো তারা যথাক্রমে সূর্যে গিয়ে পড়েছে এবং সৌরজগতের বাইরে চলে গেছে। ব্যাপারটা একটা সহজ উদাহরণ থেকে বুঝতে চেষ্টা করা যাক:
ধরা যাক, আমরা একটা গামলায় ৫০টি মার্বেল রেখে সেগুলোকে সজোরে চালিয়ে দিলাম। বেশি গতির ১০টি মার্বেল গামলার বাইরে চলে গেলো। গতি কম হবার কারণে ৩২টি মার্বেল গামলার কেন্দ্রে (তলায়) জমা হলো। বাকি ৮টি গামলার গা বেয়ে ঘুরতে থাকলো। এদের কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রবিমুখী বল সমান হবার কারণে অনন্তকাল এভাবেই ঘুরতে থাকার কথা। কিন্তু এই পরীক্ষাটা আমরা সফলভাবে করতে পারবো না এ’কারণে যে ঐ মার্বেলগুলোর ওপর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ও গামলার পৃষ্ঠে চলার সময় সৃষ্ট ঘর্ষ বল এদের গতিকে বাধা দেবে। এই আলোচনা থেকে এটা সম্ভবত বুঝতে পারা গেছে যে গ্রহগুলোর গতি সুচিন্তিতভাবে নির্ধারণ করা জরুরি ছিলো না। শুরুটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক কারণে ঘটে থাকতে পারার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। আর যদি আমরা ধরে নেই এর পেছনে পরিকল্পনা ছিলো তাহলে এটাও মানতে হবে, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়েছে প্রকৃতির স্বতঃস্ফূর্ত নিয়মের দীর্ঘ ও যৌক্তিক নিয়ম মেনে।
ছোটবেলায় বন্ধুরা মিলে চৈত্র–বৈশাখ মাসে ঘূর্ণিবায়ুর খেলা দেখতাম। আমাদের বিশ্বাস ছিলো শিশু জ্বীনরা ধূলি-বালি ও শুকনো পাতা নিয়ে খেলছে। আমরা পাথর বা কাদামাটি ছুঁড়তাম। শিশু জ্বীনরা পালিয়ে যেতো। এখন আমরা জানি এটা উষ্ণ ও শীতল বায়ুর মিথস্ক্রিয়া। এক্ষেত্রে আমরা বিজ্ঞানীদের দেওয়া ব্যাখ্যা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। ঘূর্ণিবায়ু যে কোনো অতীন্দ্রিয় শক্তির কারসাজি নয় এটা সবাই মেনে নিয়েছি। কিন্তু সৌরজগতের ঘূর্ণনও যে একইরকম অনিবার্য একটা প্রাকৃতিক ঘটনা সেটা মানতে চাই না। আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটা রেলওয়ে ব্রিজ আছে। বর্ষাকালে, বিশেষত বন্যার সময়, সেখানে প্রবল স্রোত পড়ে। ব্রিজের পানি যে জলাশয়ে (দহ) পড়ে সেখানে একটা ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়। আমরা বিশ্বাস করতাম, এই ঘূর্ণন সৃষ্টি করছে পানির নিচে বসবাসকারী গায়ে শ্যাওলা পড়া একটা বুড়ো জ্বীন। সেখানে যে একটা জ্বীন বাস করে তার প্রমাণও ছিলো আমাদের হাতে। প্রায় প্রতি বছর দুই একজন মানুষকে ঐ ঘূর্ণিজল টেনে নিয়ে মেরে ফেলতো।
ধরা যাক ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে ৩,৬৮০ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিতে একটা গ্রহাণু চলে যেতে চেষ্টা করলো। পৃথিবী তখন তাকে টেনে নামাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু কেন্দ্রাতিগ বলের কারণে গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে দূরে চলে যাবার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এই দুই বলের সাম্যের কারণে গ্রহাণুটি চাঁদের মতো পৃথিবীর উপগ্রহে পরিণত হবে। এ’রকম ঘটলে আমরা ঘটনাটাকে দুই ভাবে দেখতে পারি: এক- ইচ্ছাময় কোনো মহাশক্তি পরিকল্পিতভাবে এই গ্রহাণুকে পাঠিয়েছে পৃথিবীর উপগ্রহ বানানোর উদ্দেশ্যে। দুই- গ্রহাণুটি দৈবক্রমে ছুটে এসে উপগ্রহ বনে গেছে। আমরা যারা প্রথম মতটিকে বিশ্বাস করছি তারা আসলে একটা স্ব-আরোপিত বিশ্বাসে ভর করে আছি। পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহে প্রতিনিয়ত উল্কাপাত বা মাঝে মাঝে গ্রহাণুর পতন ঘটছে। এ’রকম ঘটছে এ’কারণে যে উপরের যে হিসাবটি আমরা দেখলাম সেটা ঘটার সম্ভাবনা গাণিতিকভাবে খুব-ই কম। কিন্তু যদি এ’রকম একটা ঘটনাও মিলে যায় তখন আমরা তাকে অতীন্দ্রিয়তা ভাববো। এখন যদি কোনো বড় আকারের গ্রহাণু দৈবক্রমে পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়ে পৃথিবীর উপগ্রহে পরিণত হয় তাহলে আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করবো যে মাহান সৃষ্টিকর্তা অন্ধকারে পথ দেখানোর জন্য আমাদের জন্য দ্বিতীয় চাঁদ পাঠিয়েছেন। এ প্রশ্নটা আমাদের মাথায় আসবে না যে শনির ৫৫ টি, বৃহস্পতির ৭৯ টি, ইউরেনাসের ২৭ টি বা মঙ্গলের ২ টি উপগ্রহ রাতের বেলা আলো ছড়িয়ে কাদের পথ দেখায়!
আরও একবার ধরে নেওয়া যাক সবকিছু কোনো এক অজ্ঞাত ইচ্ছাময়তার ফসল। তাহলে এটাও ভেবে দেখা উচিত ইচ্ছা যদি নিয়মের অধীন ও অনুগামী হয় তাহলে তার কোনো অর্থ থাকে কিনা! ধরুন, আমি একটা পাথর ছুঁড়ে সেটা চন্দ্রপৃষ্ঠে ফেলতে চাই। সেক্ষেত্রে পাথরটিকে সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটার গতিতে ছুঁড়তে হবে। নিয়ম অনুযায়ী আমার হাতের মাংস-পেশী সে পরিমাণ শক্তি রাখে না। আমি এমন একটা কামান খুঁজে বের করলাম যার গোলা ছোঁড়ার গতি ১১.২ কিলোমিটার/সেকেন্ড (পৃথিবীর মুক্তি গতি)। এটা দিয়ে পাথরটিকে ছুঁড়ে দিলে বাতাসের সাথে ঘর্ষণে তা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। নাসার আর্টেমিস ৩ মিশন কয়েক বছরের (২০২৫) মধ্যে চাঁদে আবার মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। আমি যদি নভোচারীদের কাউকে ভুলিয়ে ভালিয়ে তার পকেটে পাথরটা পুড়ে দিতে পারি তাহলে সে সেটা চাঁদে রেখে আসতে পারবে। খেয়াল করে দেখুন আমার ইচ্ছা যতই প্রবল হয়ে থাকুক, তা স্বাধীনভাবে কাজ করেনি। তা সফল করতে আমাকে সঙ্গতিপূর্ণ নিয়ম অনুসরণ করতে হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে আদি নিয়মের (যাকে আমরা প্রাকৃতিক নিয়ম বলছি) উত্স কী? আসুন আমরা আরোহী পদ্ধতিতে চিন্তা করি। পদ্মা ও যমুনা গোয়ালন্দের যেখানে মিলিত হয়েছে সেখানে বড় বড় ঘূর্ণি তৈরি হয়। এর কারণ আমরা জানি। এটা যে কোনো আধিদৈবিক ঘটনা নয় সেটা বুঝি। গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উত্পন্ন পদ্মা বা তিব্বতের কৈলাস শৃঙ্গের হিমবাহে উত্পন্ন যমুনা যে বিপুল জলধারা বয়ে নিয়ে এসে বঙ্গোপসাগরে ফেলে তার ব্যাখ্যা হলো এই অঞ্চলের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য- ভূভাগের আনতি বা ঢাল। তার অর্থ কোনো দৈব শক্তি এই জলধারাকে চালিত করে নিয়ে আসে না। একইভাবে ঐ দুটি হিমবাহে বরফ জমার এবং তা গলে যাবার কারণও ব্যাখ্যা করা যায়। এভাবে পেছন দিকে চলতে থাকলে সৃষ্টির আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে। এখন যদি ‘সৃষ্টির মুহূর্তে’র ভালো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তাহলে মহাজগতের সৃষ্টি ও বিকাশে ইচ্ছাময় মহাশক্তির ভূমিকা গৌণ বা অনুপস্থিত হয়ে পড়ে। ঐ মুহূর্তটিকে বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন সিঙ্গুলারিটির ধারণা দিয়ে যা বস্তুত একটা বিশ্বাসের সমার্থক। এটা এমন একটা দশা যেখানে স্থান-কাল ছিলো না। সেটা ঈশ্বর ধারণার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা চলে।
আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে, মহাজগত আসলে এক অন্তহীন প্রবাহ। এর শুরু ছিলো না। শেষও থাকবে না। শুরু থাকতে হলে অস্তিত্বে আসার কারণ থাকতে হবে যা অবধারিতভাবেই অতীন্দ্রিয় হতে হবে। হতে পারে সেটা ইচ্ছাময় বা ইচ্ছাশূন্য। কিন্তু যদি আমরা একটা অন্তহীন অতীত ও ভবিষ্যত কল্পনা করতে পারি তাহলে সৃষ্টিকর্ম ও স্রষ্টার দরকার পড়ে না। মহাজগত কি আদি-অন্তহীন হওয়া সম্ভব? হয়তো সম্ভব যা স্থান-কালের মধ্যে থেকে আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। আমরা খেয়াল করলে দেখবো, কোনকিছুর অনন্ত হবার অনেক উদাহরণ আমাদের কাছে আছে। একটা অতি-পারমাণবিক কণাকে ভাঙা যায় না। কিন্তু গাণিতিকভাবে তাকে অসীম সংখ্যক ভাগে ভাগ করা যায়। তার অর্থ চিন্তার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা ভৌত জগতের অভিজ্ঞতা। আমরা যখন অনন্ত অতীত ও ভবিষ্যতের কথা ভাবতে চেষ্টা করছি তখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমাদের ভৌত জগতের অভিজ্ঞতা।
মহাজগত অনন্ত হবার কারণ বিগ ব্যাং এর মধ্যেও আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাবিশ্বের স¤প্রসারণ এক সময় শেষ হয়ে যাবে। তখন ঘটবে বিগ ক্র্যাঞ্চ (মহা- সংকোচন)। মহাবিশ্বের সব বস্তু একটি মাত্র বিন্দুতে সংকুচিত হয়ে পড়বে এবং নতুন এক সময় ও স্থানহীনতা অর্থাত ‘সিঙ্গুলারিটি’র জন্ম দেবে। নতুন মহাবিস্ফোরণ থেকে সৃষ্টি হবে নতুন মহাবিশ্ব। তাহলে যে বিগ ব্যাং থেকে আজকের মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে তার আগেও একটা মহা- সংকোচন ঘটেছিল- এ’রকম ভাবতে সমস্যা কোথায়! হয়তো এভাবে অনন্ত অতীত থেকে বিগ ব্যাং ও বিগ ক্রাঞ্চ চলে আসছে। চলবেও অনন্ত ভবিষ্যত পর্যন্ত। ভাববাদী দার্শনিকরা মহাবিশ্বকে ‘কারণ’ (অন্যভাবে যা ঈশ্বরের সমার্থক) এর অবভাস বলে মনে করেন। মহাজগত অনন্ত হলে এই ধারণা থেকেও মুক্তি মেলে: ভৌত অস্তিত্ত¡পূর্ণ, উদ্দেশ্যশূন্য, স্থানিকভাবে অর্থপূর্ণ একটা বাস্তব জগতে আমরা উদ্গত ও বিলীন হই- এ’রকম বিশ্বাস করে তৃপ্তি পেতে পারি।
hassangorkii@yahoo.com
রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কানাডা