হাসান গোর্কি : পৃথিবীতে প্রাণি, উদ্ভিদ, প্রকৃতি, মহাকাশে গ্রহ-নক্ষত্র যে এত সুশৃঙ্খলভাবে চলছে সেটা ভেবে আমরা বিস্মিত হই। কিন্তু সবকিছু যতো সুশৃঙ্খল আমরা দেখতে পাই আসলে তা সে’রকম নয়। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এ’ নিয়মটি আমরা জন্মের পর থেকে দেখে আসছি। আমাদের আগে পৃথিবীতে যতো মানুষ এসেছে তারাও এ’রকম দেখেছে। এটাকে আমরা চিরন্তন সত্যের উদাহরণ হিসেবে মানি। এটা সত্য, তবে চিরন্তন সত্য নয়, আংশিক বা খণ্ডকালীণ সত্য। আজ থেকে সাড়ে পাঁচশ’ কোটি বছর আগে সূর্য ছিলো না, পৃথিবী ছিলো না। অতএব “পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে” কথাটিও সত্য ছিলো না। আজ থেকে সাড়ে চারশ’ কোটি বছর পর সূর্য বিলুপ্ত হবে, পৃথিবীর প্রাণি-উদ্ভিদ বিলুপ্ত হবে। ইতিহাস লেখার জন্য কেউ বেঁচে থাকলে সে লিখবে, ‘‘একসময় পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতো’’ আমদের কাছে মনে হয়, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, শীত-গ্রীস্ম-বর্ষার আগমন সবকিছু-ই স্মরণাতীতকাল থেকে ঘটছে অমোঘ পৌনঃপুনিকতায়, অনুপুঙ্খ নিয়ম মেনে। কিন্তু আমাদের কাছে যা ‘স্মরণাতীত কাল’ আসলে তা এতই ক্ষুদ্র সময় যে তাকে একটা মুহূর্তের ভগ্নাংশ বললেও বেশি বলা হবে। মহাকালের তুলনায় আমরা বেঁচে থাকি খুব কম সময়। এর বিশাল ব্যাপ্তিতে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার এক অতি ক্ষুদ্র অংশ আমরা দেখি। এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম গ্রন্থে স্টিফেন হকিং বলেছেন, আমরা সবকিছু নিয়ম মাফিক ঘটতে দেখি যে’কারণে সেটি হলো “ক্ষণস্থায়ী যে বিধান আমাদের তৈরি করে সেটি ভেঙে যাবার পর আমরা থাকিনা।” যে অনিয়ম আমাদের অস্তিত্বকে অসম্ভব করে তোলে তা দেখা আমাদের পক্ষে সম্ভব হলেও পরবর্তীতে এই ইতিহাস কোথাও টিকে থাকে না।
যেমন, এখন যদি কোনো উল্কাপাতে পৃথিবীর সব প্রাণি ধ্বংস হয়ে যায় অথবা পৃথিবী কক্ষচ্যূত হয়ে সূর্যের অগ্নি গাঙে ডুবে যায় তাহলে মরে যেতে যেতে সে ধ্বংসযজ্ঞ আমরা দেখে যাবো। কিন্তু পুরো বিষয়টা অপার বিস্মরণে ডুবে যাবে। হয়তো আজ থেকে একশ’ কোটি বছর আগে সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা ছিলো পঞ্চাশটি। কালক্রমে তার ৪২টি কক্ষচ্যুত হয়ে সূর্যের লেলিহান অগ্নিগাঙে ডুবে গিয়ে নিঃচিহ্ন হয়ে গেছে। সেগুলোর কোনো কোনটি হয়তো মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণিসহ ঝাঁপ দিয়েছে সূর্যের বুকে। পৃথিবীর মানুষকে এ’ খবরটি তারা জানিয়ে যেতে পারেনি। মঙ্গল গ্রহের মানুষরা যদি ১০০ কোটি বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে সেটা আমাদের জানার কথা নয়। কারণ, সে’ক্ষেত্রে ঘটনাটা ঘটেছে আমাদের পৃথিবীতে আগমনের ৯৯ কোটি ৭০ লক্ষ বছর আগে। জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন,
“পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়…” (দু’জন, বনলতা সেন)
মহাকাশে প্রতিনিয়ত নক্ষত্র বিস্ফোরিত হয়ে সুপার নোভা, নিউট্রন তারা বা কৃষ্ণগহ্বরের সৃষ্টি হচ্ছে। গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটছে। হাবল ও জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এ’রকম সংঘর্ষের কিছু ছবি তুলে পাঠিয়েছে। ঐ অনিয়মের শিকার যদি কোন বুদ্ধিমান প্রাণি হয়ে থাকে তাহলে তারা ভাবছে মহাজগতটা-ই একটা অনিয়মের রাজত্ব। কোনো মানুষের বয়স যদি তেরশ’ কোটি বছর হতো তাহলে সে পুরো ঘটনাটা বলতে পারতো। আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন তাঁর মহাকাশে কী ঘটছে বইয়ে লিখেছেন, তার সারমর্ম এ’রকম: “দীর্ঘজীবী ঐ ব্যক্তির কাছে মহাজগতকে এক চরম অরাজকতাপূর্ণ ও বিশৃঙ্খল ঘটনাবলীর সমাহার ছাড়া কিছু-ই মনে হতো না। সে দেখতো, একটা বিন্দুতে অকল্পনীয় বৃহৎ একটা বিস্ফোরণের পর গ্যাসের পাঁজা, ধুলিকণা, প্রস্তরখণ্ড, অগ্নিগোলক- সবকিছু প্রায় আলোর গতিতে দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করেছে। ছুটন্ত অবস্থায়-ই এদের মধ্যে জোট (গ্যালাক্সি) তৈরি হচ্ছে। বিস্ফোরণকালীন শক্তি ধারণ করে জোটগুলো নিজ অক্ষে আবর্তিত হতে শুরু করেছে। সেগুলো পরস্পরের মধ্যে ঢুকে পড়ে প্রবল সংঘর্ষে ছত্রখান হয়ে যাচ্ছে। মহাকাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে কোটি কোটি মাইল দীর্ঘ আগুনের শিখা। কোথাও পুঞ্জীভ‚ত গ্যাসীয় মেঘমালা থেকে তৈরি হচ্ছে নক্ষত্র; উপজাত হিসেবে গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু। কোনো কোনো গ্রহে প্রাণের উম্মেষ ঘটছে এবং মুহূর্তে তা বিলুপ্ত হচ্ছে।” ‘মুহূর্তে’ বলা হয়েছে এ’কারণে যে, সেই কল্পিত ব্যক্তির বয়স যদি আমরা পঁচাত্তর বছরে সঙ্কুচিত করে হিসেব করি তাহলে সে আফ্রিকার গুহাবাসী মানুষের পূর্ব প্রজাতির আবির্ভাব (মোটামুটি ত্রিশ লাখ বছর আগে ঘটেছে বলে ধরা হয়) থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের বিবর্তনকে দেখবে পনেরো দিনে; ক্রোমেনিয়ন মানব থেকে বর্তমান মানবে বিবর্তন দেখবে এক ঘন্টায়; ইউরোপের শিল্প বিপ্লব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীকে দেখবে এক সেকেন্ডে।
তাহলে আমাদের কাছে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে বলে মনে হচ্ছে কেনো? ধরে নেওয়া যাক, পাহাড়ের চূড়া থেকে ভ‚মিকম্পে একটা বড় পাথরখণ্ড মাটিতে খসে পড়ে একটা গর্ত তৈরি করলো। সেখানে বৃষ্টির পানি জমলো। ব্যাঙাচিবাহী একটা ট্রাক উল্টে ঐ ডোবায় কিছু ব্যাঙের জন্ম হলো। একশ’ বছর পর ঐ ব্যাঙরা ভাবতে শুরু করবে তারা এখানে অনন্তকাল ধরে বাস করছে। তাদের ঈশ্বর এই অনাদি আবাসকে সাজিয়েছেন তা-ই দিয়ে ঠিক যা যা তাদের দরকার ছিলো। তিনি নিয়মিত বৃষ্টিপাত দিচ্ছেন। খাদ্য হিসেবে পোকামাকড়, শ্যাওলার জোগান নিশ্চিত করছেন। পরিমিত সূর্যালোক, অক্সিজেন সরবরাহ করছেন। এই ডোবার বাইরে যে কোনো জগৎ আছে সেটা তারা ভাবতে পারবে না। তাদের মনে হবে সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্ররাজি, বায়ু, বৃষ্টি সব তাদের জন্য আছে। আমাদের ভাবনাগুলোও হয়তো সে’রকম। আরও একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। আপনি কাদার পিণ্ড দিয়ে একটা বল তৈরি করে বড় একটা জলন্ত চুল্লি লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারলেন। ধরে নেওয়া যাক, জন্ম থেকে কুড়ি প্রজন্মে পৌঁছুতে তাদের এক সেকেন্ড সময় লাগে। ছুঁড়ে মারার পরের মুহূর্তে ঐ কাদার পিণ্ডে জন্ম নেওয়া মাইক্রো অরগানিজমগুলো শূন্যে ছুটন্ত এই কাদার পিণ্ডটাকে তাদের অনাদি আবাস ভাবতে থাকবে; যেমন করে আমরা পৃথিবীকে ভাবছি। কাদার পিণ্ডটা চুল্লিতে পৌঁছে পুড়ে যাবার আগে পর্যন্ত এই কুড়ি প্রজন্মের সবাই ভাববে সবকিছু নিখুঁত পরিকল্পনা মতো ঠিকঠাক চলছে। মহাবিশ্ব বা পৃথিবীর বয়সের তুলনায় মানব সভ্যতার বয়স ঐ মাইক্রো অরগানিজমগুলোর কুড়ি প্রজন্ম পার করা মুহূর্তের লক্ষ-কোটি ভাগের এক ভাগ হতে পারে- যা কোনো ব্যত্যয় বোঝার জন্য যা খুবই কম সময়।
সবকিছু কি নিয়মমাফিক চলছে? এর উত্তরে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ উভয়-ই ঠিক হতে পারে। বিষয়টা নির্ভর করবে আমরা নিয়ম বলতে কী বুঝবো তার ওপর। সৌর জগতের সবগুলো গ্রহ বেরি সেন্টারের চারিদিকে নির্দিষ্ট গতি ও দূরত্ব বজায় রেখে ঘুরছে। এই ঘটনাটিকে আমরা মহাজাগতিক নিয়মের শৃঙ্খলার বড় উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করে থাকি। পাশাপাশি এটাও ভাবতে আমরা পছন্দ করি যে, এটা কোনো অতীন্দ্রিয় সত্তার পরিকল্পনা ও চিন্তার ফসল। এর কারণ হলো আমরা সৌরজগতকে সুশৃঙ্খল অবস্থায়-ই দেখি। কিন্তু এই দেখার বয়স খুব বেশি নয়। সৌরজগতের সৃষ্টি হয়েছে মোটামুটি চারশ’ কোটি বছর আগে। আর সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের কথা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাসহ আমরা জানতে পেরেছি ১৫৩৯ সালে কোপার্নিকাসের বই দ্য রেভলিউসনিবাস অরবিয়াম কোয়েলেস্তিয়াম প্রকাশিত হবার পর। তবে এটা খুব-ই কৌতুহলোদ্দীপক যে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টারকাস সূর্যকেন্দ্রিক ব্রহ্মাণ্ড-বিন্যাসের কথা চিন্তা করেছিলেন। কোপার্নিকাসের তত্ত¡ প্রকাশিত হবার পর সবগুলো গ্রহ সম্পর্কে জানতে প্রায় আরও এক শতাব্দী পার হয়ে গিয়েছিল। এমনকি নেপচুনের মতো বৃহদায়তন গ্রহের অস্তিত্ত¡ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি ১৮৪৬ সালে— আজ থেকে মাত্র ১৭৬ বছর আগে।
নেপচুন পরিধিতে চতুর্থ এবং ভরে তৃতীয় সর্ববৃহৎ গ্রহ। এর ভর পৃথিবীর ভরের ১৭ গুণ। নেপচুন আবিষ্কারের ঘটনাটা ছিলো বেশ মজার। ১৮ শতকের জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের ইতিহাসে অন্যতম বিজ্ঞানী ছিলেন ফ্রেডরিক উইলহেম বেসেল। তিনি ছিলেন প্রুশিয়ার (বর্তমান জার্মানি) অধিবাসী। ১৮৪৬ সালে তিনি একটি নাক্ষত্রিক লম্বন দৃষ্টিভ্রম পরিমাপ করেন এবং অনুমান করেন যে ইউরেনাসের গতিপথকে অজানা কোনো গ্রহ প্রভাবিত করছে। ১৮৪৬ সালে লে-টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে নেপচুনকে খুঁজে পাওয়া যায়। আমরা আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর খবর রাখি মোটামুটি দুই তিন শতাব্দী ধরে। এ’সময়ের মধ্যে আমাদের চেনা কোনো গ্রহ কক্ষচ্যুত হয়নি। কিন্তু বিগত সাড়ে চারশ’ কোটি বছর ধরে কী ঘটেছে সেটা অনুমান করা সম্ভব নয়। এমনও হতে পারে এই সৌরজগতে ৫০ টি গ্রহ ছিলো। তার ৪২টি বিভিন্ন সময় কক্ষচ্যুত হয়ে গেছে। সেরকম হয়ে থাকলে শৃঙ্খলাকে আমরা যেমন আদি-অন্তহীন ও অমোঘ ভাবছি সেটা ভুল হয়ে যায়।
ধরে নেওয়া যাক আমাদের দেখা তিন শতাব্দী বা না দেখা সাড়ে চারশ’ কোটি বছর ধরে আটটি গ্রহ সৌরজগতের বেরি সেন্টারকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এটা শৃঙ্খলার একটা নুমুনা। এই শৃঙ্খলা তৈরি হলো কেনো? গ্রহগুলো এই নিখুঁত পথ পরিক্রমায় নিজেদের নিয়োজিত করেছিল কেনো? কেউ কি পরিকল্পনা করে তাদের গতি ও দূরত্ব নির্ধারণ করে আদি ঘূর্ণনটা শুরু করে দিয়েছিল? হলি স্ক্রিপচারগুলোতে সেরকম-ই বলা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন অন্য কথা। ঘূর্ণন শুরু হয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে, যার একমাত্র নিয়ামক ছিলো পদার্থের বৈশিষ্ট্য। মোটামুটি ৪৬০ কোটি বছর আগে একটি বিশালকায় আন্তঃনাক্ষত্রিক আণবিক মেঘের মহাকর্ষীয় সংকোচন থেকে সৌরজগতের উদ্ভব। মহাকর্ষ বলের কারণে এই মেঘের বেশিরভাগ কেন্দ্রীভ‚ত হয়ে সূর্য তৈরি করে। সূর্যের আকর্ষণে বাইরের বস্তুপিণ্ড তার দিকে ধাবিত হয়। বেশিরভাগ বস্তু সূর্যে গিয়ে বিলীন হয়ে গেলেও কিছু বস্তুপিণ্ডের কেন্দ্রাতিগ ও কেন্দ্রাভিগ বল সমান হবার কারণে তারা কক্ষপথ তৈরি করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে। এই বস্তুপিণ্ডগুলো-ই আজকের গ্রহ। আমাদের মনে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে গ্রহগুলোর গতি ও দূরত্ব এতো নিখুঁত হলো কীভাবে! আসলে যে বস্তুপিÐগুলোর গতি কম বা বেশি ছিলো তারা যথাক্রমে সূর্যে গিয়ে পড়েছে এবং সৌরজগতের বাইরে চলে গেছে। ব্যাপারটা একটা সহজ উদাহরণ থেকে বুঝতে চেষ্টা করা যাক:
ধরা যাক, আমরা একটা গামলায় ৫০টি মার্বেল রেখে সেগুলোকে সজোরে চালিয়ে দিলাম। বেশি গতির ১০টি মার্বেল গামলার বাইরে চলে গেলো। গতি কম হবার কারণে ৩২টি মার্বেল গামলার কেন্দ্রে (তলায়) জমা হলো। বাকি ৮টি গামলার গা বেয়ে ঘুরতে থাকলো। এদের কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রবিমুখী বল সমান হবার কারণে অনন্তকাল এভাবেই ঘুরতে থাকার কথা। কিন্তু এই পরীক্ষাটা আমরা সফলভাবে করতে পারবো না এ’কারণে যে ঐ মার্বেলগুলোর ওপর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ও গামলার পৃষ্ঠে চলার সময় সৃষ্ট ঘর্ষ বল এদের গতিকে বাধা দেবে। এই আলোচনা থেকে এটা সম্ভবত বুঝতে পারা গেছে যে গ্রহগুলোর গতি সুচিন্তিতভাবে নির্ধারণ করা জরুরি ছিলো না। শুরুটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক কারণে ঘটে থাকতে পারার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। আর যদি আমরা ধরে নেই এর পেছনে পরিকল্পনা ছিলো তাহলে এটাও মানতে হবে, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়েছে প্রকৃতির স্বতঃস্ফূর্ত নিয়মের দীর্ঘ ও যৌক্তিক নিয়ম মেনে।
ছোটবেলায় বন্ধুরা মিলে চৈত্র–বৈশাখ মাসে ঘূর্ণিবায়ুর খেলা দেখতাম। আমাদের বিশ্বাস ছিলো শিশু জ্বীনরা ধূলি-বালি ও শুকনো পাতা নিয়ে খেলছে। আমরা পাথর বা কাদামাটি ছুঁড়তাম। শিশু জ্বীনরা পালিয়ে যেতো। এখন আমরা জানি এটা উষ্ণ ও শীতল বায়ুর মিথস্ক্রিয়া। এক্ষেত্রে আমরা বিজ্ঞানীদের দেওয়া ব্যাখ্যা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। ঘূর্ণিবায়ু যে কোনো অতীন্দ্রিয় শক্তির কারসাজি নয় এটা সবাই মেনে নিয়েছি। কিন্তু সৌরজগতের ঘূর্ণনও যে একইরকম অনিবার্য একটা প্রাকৃতিক ঘটনা সেটা মানতে চাই না। আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটা রেলওয়ে ব্রিজ আছে। বর্ষাকালে, বিশেষত বন্যার সময়, সেখানে প্রবল স্রোত পড়ে। ব্রিজের পানি যে জলাশয়ে (দহ) পড়ে সেখানে একটা ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়। আমরা বিশ্বাস করতাম, এই ঘূর্ণন সৃষ্টি করছে পানির নিচে বসবাসকারী গায়ে শ্যাওলা পড়া একটা বুড়ো জ্বীন। সেখানে যে একটা জ্বীন বাস করে তার প্রমাণও ছিলো আমাদের হাতে। প্রায় প্রতি বছর দুই একজন মানুষকে ঐ ঘূর্ণিজল টেনে নিয়ে মেরে ফেলতো।
ধরা যাক ভ‚পৃষ্ঠ থেকে ৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে ৩,৬৮০ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিতে একটা গ্রহাণু চলে যেতে চেষ্টা করলো। পৃথিবী তখন তাকে টেনে নামাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু কেন্দ্রাতিগ বলের কারণে গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে দূরে চলে যাবার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এই দুই বলের সাম্যের কারণে গ্রহাণুটি চাঁদের মতো পৃথিবীর উপগ্রহে পরিণত হবে। এ’রকম ঘটলে আমরা ঘটনাটাকে দুই ভাবে দেখতে পারি: এক- ইচ্ছাময় কোনো মহাশক্তি পরিকল্পিতভাবে এই গ্রহাণুকে পাঠিয়েছে পৃথিবীর উপগ্রহ বানানোর উদ্দেশ্যে। দুই- গ্রহাণুটি দৈবক্রমে ছুটে এসে উপগ্রহ বনে গেছে। আমরা যারা প্রথম মতটিকে বিশ্বাস করছি তারা আসলে একটা স্ব-আরোপিত বিশ্বাসে ভর করে আছি। পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহে প্রতিনিয়ত উল্কাপাত বা মাঝে মাঝে গ্রহাণুর পতন ঘটছে। এ’রকম ঘটছে এ’কারণে যে উপরের যে হিসাবটি আমরা দেখলাম সেটা ঘটার সম্ভাবনা গাণিতিকভাবে খুব-ই কম। কিন্তু যদি এ’রকম একটা ঘটনাও মিলে যায় তখন আমরা তাকে অতীন্দ্রিয়তা ভাববো। এখন যদি কোনো বড় আকারের গ্রহাণু দৈবক্রমে পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়ে পৃথিবীর উপগ্রহে পরিণত হয় তাহলে আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করবো যে মাহান সৃষ্টিকর্তা অন্ধকারে পথ দেখানোর জন্য আমাদের জন্য দ্বিতীয় চাঁদ পাঠিয়েছেন। এ প্রশ্নটা আমাদের মাথায় আসবে না যে শনির ৫৫ টি, বৃহস্পতির ৭৯ টি, ইউরেনাসের ২৭ টি বা মঙ্গলের ২ টি উপগ্রহ রাতের বেলা আলো ছড়িয়ে কাদের পথ দেখায়!
আরও একবার ধরে নেওয়া যাক সবকিছু কোনো এক অজ্ঞাত ইচ্ছাময়তার ফসল। তাহলে এটাও ভেবে দেখা উচিত ইচ্ছা যদি নিয়মের অধীন ও অনুগামী হয় তাহলে তার কোনো অর্থ থাকে কিনা! ধরুন, আমি একটা পাথর ছুঁড়ে সেটা চন্দ্রপৃষ্ঠে ফেলতে চাই। সেক্ষেত্রে পাথরটিকে সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটার গতিতে ছুঁড়তে হবে। নিয়ম অনুযায়ী আমার হাতের মাংস-পেশী সে পরিমাণ শক্তি রাখে না। আমি এমন একটা কামান খুঁজে বের করলাম যার গোলা ছোঁড়ার গতি ১১.২ কিলোমিটার/সেকেন্ড (পৃথিবীর মুক্তি গতি)। এটা দিয়ে পাথরটিকে ছুঁড়ে দিলে বাতাসের সাথে ঘর্ষণে তা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। নাসার আর্টেমিস ৩ মিশন কয়েক বছরের (২০২৫) মধ্যে চাঁদে আবার মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। আমি যদি নভোচারীদের কাউকে ভুলিয়ে ভালিয়ে তার পকেটে পাথরটা পুড়ে দিতে পারি তাহলে সে সেটা চাঁদে রেখে আসতে পারবে। খেয়াল করে দেখুন আমার ইচ্ছা যতই প্রবল হয়ে থাকুক, তা স্বাধীনভাবে কাজ করেনি। তা সফল করতে আমাকে সঙ্গতিপূর্ণ নিয়ম অনুসরণ করতে হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে আদি নিয়মের (যাকে আমরা প্রাকৃতিক নিয়ম বলছি) উৎস কী? আসুন আমরা আরোহী পদ্ধতিতে চিন্তা করি। পদ্মা ও যমুনা গোয়ালন্দের যেখানে মিলিত হয়েছে সেখানে বড় বড় ঘূর্ণি তৈরি হয়। এর কারণ আমরা জানি। এটা যে কোনো আধিদৈবিক ঘটনা নয় সেটা বুঝি। গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন পদ্মা বা তিব্বতের কৈলাস শৃঙ্গের হিমবাহে উৎপন্ন যমুনা যে বিপুল জলধারা বয়ে নিয়ে এসে বঙ্গোপসাগরে ফেলে তার ব্যাখ্যা হলো এই অঞ্চলের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য— ভ‚ভাগের আনতি বা ঢাল। তার অর্থ কোনো দৈব শক্তি এই জলধারাকে চালিত করে নিয়ে আসে না। একইভাবে ঐ দুটি হিমবাহে বরফ জমার এবং তা গলে যাবার কারণও ব্যাখ্যা করা যায়। এভাবে পেছন দিকে চলতে থাকলে সৃষ্টির আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে। এখন যদি ‘সৃষ্টির মুহূর্তে’র ভালো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তাহলে মহাজগতের সৃষ্টি ও বিকাশে ইচ্ছাময় মহাশক্তির ভ‚মিকা গৌণ বা অনুপস্থিত হয়ে পড়ে। ঐ মুহূর্তটিকে বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন সিঙ্গুলারিটির ধারণা দিয়ে যা বস্তুত একটা বিশ্বাসের সমার্থক। এটা এমন একটা দশা যেখানে স্থান-কাল ছিলো না। সেটা ঈশ্বর ধারণার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা চলে।
আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে, মহাজগৎ আসলে এক অন্তহীন প্রবাহ। এর শুরু ছিলো না। শেষও থাকবে না। শুরু থাকতে হলে অস্তিত্বে আসার কারণ থাকতে হবে যা অবধারিতভাবেই অতীন্দ্রিয় হতে হবে। হতে পারে সেটা ইচ্ছাময় বা ইচ্ছাশূন্য। কিন্তু যদি আমরা একটা অন্তহীন অতীত ও ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে পারি তাহলে সৃষ্টিকর্ম ও স্রষ্টার দরকার পড়ে না। মহাজগৎ কি আদি-অন্তহীন হওয়া সম্ভব? হয়তো সম্ভব যা স্থান-কালের মধ্যে থেকে আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। আমরা খেয়াল করলে দেখবো, কোনকিছুর অনন্ত হবার অনেক উদাহরণ আমাদের কাছে আছে। একটা অতি-পারমাণবিক কণাকে ভাঙা যায় না। কিন্তু গাণিতিকভাবে তাকে অসীম সংখ্যক ভাগে ভাগ করা যায়। তার অর্থ চিন্তার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা ভৌত জগতের অভিজ্ঞতা। আমরা যখন অনন্ত অতীত ও ভবিষ্যতের কথা ভাবতে চেষ্টা করছি তখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমাদের ভৌত জগতের অভিজ্ঞতা।
মহাজগৎ অনন্ত হবার কারণ বিগ ব্যাং এর মধ্যেও আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাবিশ্বের স¤প্রসারণ এক সময় শেষ হয়ে যাবে। তখন ঘটবে বিগ ক্র্যাঞ্চ (মহা-সংকোচন)। মহাবিশ্বের সব বস্তু একটি মাত্র বিন্দুতে সংকুচিত হয়ে পড়বে এবং নতুন এক সময় ও স্থানহীনতা অর্থাৎ ‘সিঙ্গুলারিটি’র জন্ম দেবে। নতুন মহাবিস্ফোরণ থেকে সৃষ্টি হবে নতুন মহাবিশ্ব। তাহলে যে বিগ ব্যাং থেকে আজকের মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে তার আগেও একটা মহা- সংকোচন ঘটেছিল— এ’রকম ভাবতে সমস্যা কোথায়! হয়তো এভাবে অনন্ত অতীত থেকে বিগ ব্যাং ও বিগ ক্রাঞ্চ চলে আসছে। চলবেও অনন্ত ভবিষ্যৎ পর্যন্ত। ভাববাদী দার্শনিকরা মহাবিশ্বকে ‘কারণ’ (অন্যভাবে যা ঈশ্বরের সমার্থক) এর অবভাস বলে মনে করেন। মহাজগৎ অনন্ত হলে এই ধারণা থেকেও মুক্তি মেলে: ভৌত অস্তিত্ত¡পূর্ণ, উদ্দেশ্যশূন্য, স্থানিকভাবে অর্থপূর্ণ একটা বাস্তব জগতে আমরা উদ্গত ও বিলীন হই- এ’রকম বিশ্বাস করে তৃপ্তি পেতে পারি।
এখন আমরা আমাদের শরীরটাকে পরিপূর্ণ ভাবছি। কিন্তু আমাদের মাথার পেছন দিকে একটা চোখ থাকলে সেটাকেই আমরা নিয়ম মনে করতাম। শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য ঐ চোখের কার্যকারিতা নিয়ে খুশি থাকতাম। জীবনানন্দ দাশ কবিতা লিখতেন, তোমার পেছন চোখ পেঁচার ডানার মতো উড়ে যায় নক্ষত্রের পানে- অনিমেষ। পেছনের চোখ ছাড়া কোনো শিশুর জন্ম হলে পত্রিকায় শিরোনাম হতো, “বরগুনায় দুই চোখ বিশিষ্ট শিশুর জন্ম- নবজাতক সুস্থ আছে।” মানুষ যদি আকাশে উড়তে পারতো তাহলে আমরা সেটাকেই নিয়ম ভেবে নিজেদের আশীর্বাদপুষ্ট মনে করতাম। তিন বছর বয়সে কোনো শিশু উড়তে না শিখলে বাবা মা চিন্তিত হয়ে পড়তেন। সবকিছু যে ঠিক চলছে না সেটা তারা ভাবতেন তখনকার মানদণ্ডে।
কিছুটা পেছন ফিরে দেখা যাক। বিবর্তনবাদকে যদি আমরা নির্ভুল বলে মেনে নেই তাহলে সকল প্রাণির উদ্ভব ঘটেছে সমুদ্রে- এককোষী প্রাণি থেকে। আমাদের বহুকোষী পূর্বপুরুষরাও সমুদ্রের পানিতে বাস করতো। তাদের হাত-পা ছিলো না। চোখ-মাথা কিছু-ই আমাদের মতো ছিলো না। সে’সময় তারা ভাবতো তারা সব অর্থে পরিপূর্ণ (ইলিশ মাছ যেমন নিজেকে ভাবে!)। একসময় তারা ডাঙায় উঠে আসে। বিবর্তনের ধারায় এপ জাতীয় প্রাণি থেকে হোমো হেবিলিস, হোমো ইরেক্টাস, নিয়ানডার্থাল হয়ে আমরা হোমো স্যাপিয়েন্স। আরও একশ’ কোটি বছর বেঁচে থাকলে বিবর্তনের অনিবার্য পথ বেয়ে মানুষ যে আকৃতি ধারণ করবে সেটাকেই তারা পরিপূর্ণ এবং ত্রুটিহীন মনে করবে এবং অবাক হয়ে ভাববে- সবকিছু এত ঠিকঠাক চলছে কেমন করে! অনেক বড় কোনো বিবর্তন যে ঘটবেই তা নিশ্চিত নয়। কোনো প্রাণির বিবর্তন ঘটে মূলত প্রকৃতির কোনো প্রতিক‚ল না নতুন অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য।
সুশৃঙ্খল বা বিশৃঙ্খল যা-ই হোক মহাবিশ্বের এই মহাযজ্ঞ চলছে কোন্ বিধিতে? বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বিগ ব্যাং এর পর যে সকল পারমুটেশন কম্বিনেশনের ওপর ভিত্তি করে এই যজ্ঞটা শুরু হতে পারতো তা সংখ্যাতীত। তাহলে ঠিক এ’রকম ঘটলো কেনো? পদার্থকণা, গ্রহ–নক্ষত্র, প্রাণি-উদ্ভিদ, মাধ্যাকর্ষণ- এসব তৈরি হলো কেনো? এ’রকম ঘটেছে এ’কারণে যে, যেকোনো একটা ঘটনা ঘটতে হতো। যেমন দশ তলা একটা বিল্ডিং এর ছাদ থেকে রাস্তা লক্ষ্য করে মার্বেল ছুঁড়ে দিলে সেটা পথচারীর মাথায় পড়তে পারে, চলমান গাড়ির ছাদে পড়তে পারে, রাস্তায় পড়তে পারে, সবজির ভ্যানে পড়ে হারিয়ে যেতে পারে। কারো মাথায় পড়লে আমরা বলবো, “মাথায় পড়লো কেনো?” অন্য যেকোনো ঘটনার ক্ষেত্রেও আমরা একইরকম প্রশ্ন করবো। একইভাবে, এখন আমরা যা দেখছি তা সংখ্যাতীত সম্ভাব্য ঘটনার একটা। আর এই ঘটনাটা যেহেতু আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে তাই অন্য সম্ভাব্য ঘটনাগুলো কেনো ঘটেনি তা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছি।
বিষয়টা স্পষ্ট করতে স্টিফেন হকিং এর এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম বই থেকে একটা রূপকল্প ধার করা যাক: “অশিক্ষিত বানরদের একটা দলের সবাইকে একটা করে ল্যাপটপ দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হলো। তাদের বলা হলো ইচ্ছা মতো টাইপ করতে। আধা ঘন্টা পর পর তাদের কৃতকর্মের একটা করে প্রিন্ট নিতে থাকা হলো। দেখা গেলো এর বেশিরভাগই অর্থহীন শব্দ-সম্ভার। এই কাজ অনন্ত সময় ধরে চলতে থাকলে এদের কেউ সেক্সপিয়রের একটা সনেট লিখে ফেলতে পারে।” আমাদের বুদ্ধিতে এর সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। কিন্তু অংকের বিধিতে সেটা শূন্য নয়। কোনো বানর সনেট টাইপ করে ফেললে সেটা হতো সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উৎপাদন। কিন্তু সেটা না করে কোনো বানর যদি ঘটনাক্রমে একটা বাক্য বা কমপক্ষে পরপর দু’টি অর্থপূর্ণ শব্দ টাইপ করে ফেলে তাহলে একটা কার্যকর কিছু ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া চলে। আমরা যে মহাবিশ্বে বাস করছি সেটা অনেকটা সে’রকম, সনেটের পরিবর্তে একটা বাক্য বা দু’টি অর্থপূর্ণ শব্দের মতো। আর এলোপাথাড়ি পারমুটেশন কম্বিনেশনের কোনো পর্যায়ে প্রকৃতি যদি সনেট লেখা ঐ বানরের মতো একটা নির্ভুল বিধিমালা লিখে ফেলে তাহলে আমরা অসীম ও কল্পনাতীত বৈচিত্র্যহীন একটা শৃঙ্খলা দেখতে পাবো।
hassangorkii@yahoo.com
রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কানাডা।