Home কলাম সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

কানাডার জন্মের ১৫৫ বছরের দ্বারপ্রান্তে সাস্কাচুয়ানের মেরিভ্যাল ইন্ডিয়ান আবাসিক স্কুল এলাকায় ৭৫১টি গণকবর আবিস্কারের ঘটনা শান্তিপ্রিয় মানুষের হৃদয় বিদীর্ণ করে দিয়েছে। শিক্ষা সব সময় আমাদের আরো বেশি সভ্য করে তুলে, এটাই স্বাভাবিক আর প্রত্যাশিত। কিন্তু শিক্ষা যদি কখনও কোন জাতির সদস্যদের কন্ঠ রুদ্ধ করে দেয়, অথবা শিক্ষার উদ্দেশ্য যদি হয়ে থাকে কোন জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ছোট করে দেখা বা অবজ্ঞা করা তাহলে সেটা কোন ক্রমেই কাম্য হতে পারে না। গত এক মাসে কানাডার দুটি ইন্ডিয়ান আবাসিক স্কুলে প্রায় ১০০০ জন শিক্ষার্থীর গণকবর আবিস্কারের ঘটনা সভ্য ও সংবেদনশীল মানুষদের বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে।

গত ২৭ মে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পরিত্যক্ত কামলুপ্স ইন্ডিয়ান আবাসিক স্কুল এ ২১৫ শিশুর গণকবর খুঁজে পাওয়ার পর গত ২৪ শে জুন পূর্ব সাস্কাচুয়ানের মেরিভ্যাল ইন্ডিয়ান আবাসিক স্কুল এলাকায় ৭৫১টি গণকবর আবিস্কারের ঘটনা শান্তিপ্রিয় মানুষদের আরো বেশি দুঃখ ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই হৃদয় বিদারক আবিস্কারের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যারা এমন শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন এবং যারা এর পরিচালনায় ছিলেন তারা চরম মানবতার বিরোধী কাজ করেছেন এবং যে সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তাদের সবার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।

উল্লেখ্য, গত আঠার ও উনিশ শতকে কানাডা সরকারের ‘ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডিয়ান এফেয়ার্স’ আদিবাদী শিশুদের নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে সরিয়ে কানাডার মূলধারার ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে মেশানোর জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বোর্ডিং স্কুলে পড়ার ব্যবস্থা করে। এই ব্যবস্থা অধিকাংশ আদিবাসী জনগোষ্ঠী মেনে না নিলেও সরকার তার তোয়াক্কা করেনি। সরকারের জোরপূর্বক এই ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য মূলত ক্যাথলিক চার্চকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৮৬৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এক লাখ পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি আদিবাসী শিশুকে তাদের পরিবার থেকে নিয়ে এসে এসব বোর্ডিং স্কুলে রাখা হয়েছিল। এই শিশুদেরকে প্রায়ই তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলতে ও তাদের সংস্কৃতি চর্চা করতে দেওয়া হতো না, তাদের অনেকের সঙ্গেই মানসিক, দৈহিক ও যৌন নিপীড়ন চালানো হতো। এই পদ্ধতির প্রভাবগুলি নথিবদ্ধ করতে ২০০৮ সালে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কমিশন দেখতে পায়, বিরাট সংখ্যক আদিবাসী শিশু আর কখনোই তাদের নিজেদের সমাজে ফিরে যায়নি। ধারণা করা হয়, এই সময়ের মধ্যে ৩২০০ থেকে ৬০০০ আদিবাসী শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটে।

আর এক দিন পর দেশব্যাপী কানাডার ১৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে ‘বাংলা কাগজ’ এর পক্ষ থেকে সবার প্রতি রইল শুভেচ্ছা। বহুজাতি আর বহু সংস্কৃতির মানুষের সম্মীলনে ধীরে ধীরে বিকশিত হওয়া কানাডা হোক সত্যিকারের সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির এক শান্তিময় মিলনক্ষেত্র।

Exit mobile version