বাংলা কাগজ, মন্ট্রিয়ল: ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে দিবসটি পালন করছে। তবে, এবারও বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ১৯৭৫ সালের শোকাবহ এই কালো দিবসে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। কী নিষ্ঠুর, কী ভয়াল, কী ভয়ঙ্কর- সেই রাত। যা ৪৩ বছর পরও ৫৬ হাজার বর্গমাইলের জনপদের ধূলিকণা ভুলতে পারেনি। ভুলতে চায়নি, ভুলতে পারবে না। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অশ্রুভেজা, কলঙ্কময় রাতের কথা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের কথা। বছর ঘুরে রক্তের কালিতে লেখা সে দিন-রাত আবার ফিরে এসেছে।
গভীর শোক আর বিনম্র শ্রদ্ধায় বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করছে গোটা জাতি। সেটা বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে বাংলাদেশীরা ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞে ১৫ আগস্টের কাল রাতে শাহাদাত বরণকারী স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শোক আর বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের পাশাপাশি শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন, পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকরের দাবির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির জনকের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (ক্যুইবেক) কানাডা। গত ১৫ আগস্ট পার্ক ভিউ রিসেপশন হলে দুপুর ১২টায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ক্যুইবেক আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী বশীরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সুইটের পরিচালনায় সভার শুরুতেই পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদ এবং ২১শে আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শোক জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং বাংলাদেশের উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য উপস্থিত সবাইকে নিয়ে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়া জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ জীবনের জন্যেও মোনাজাত করা হয়।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধান অতিথি সেলিম জুবেরী, মুক্তিযাদ্ধা হাজী মাসুদুর রহমান, আবুল কাশেম। এছাড়া সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মহিলা লীগ সম্পাদিকা সাজেদা হোসেন, ফিরুজা চৌধুরী, শাকিলা খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মতিন মিয়া, সৈয়দ মেহেদী রাসেল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ মো: ফায়েক, জামান ভুঁইয়া, দিন মো: তপন, জাহিদুল আলম, রোমেন আলম, মুজিবুর রহমান, নায়মুল ইসলাম টিপু, মো: হাবিব চয়মন, ইকবাল হোসেন প্রমূখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আগস্ট মাস আমাদের জীবনে এক বেদনা-বিধুর, শোকের মাস। এই দিনেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের একদল দুর্বৃত্ত বিপথগামী সেনাসদস্য নির্মমভাবে হত্যা করে। পৃথিবীতে যত বাঙালি আছে, প্রত্যেকের জন্য এই মাসটি শোকাবহ। এত শোক, এত নিষ্ঠুরতর, কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ড দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল!
বক্তারা আরো বলেন, মাত্র ৫৫ বছরের জীবন তাঁর; কিন্তু এত কম সময়ে কত বড় কাজ করে গেছেন তিনি। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালিকে একতাবদ্ধ করে স্বাধীনতার স্বর্ণদ্বারে পৌঁছে দিয়েছেন। পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হলো বাঙালির প্রথম জাতিরাষ্ট্র- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। কৃতজ্ঞ জাতি সঙ্গতভাবেই তাঁকে স্বীকৃতি দেয় জাতির পিতা হিসেবে, বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে। আর বাংলার মানুষ ভালোবেসে তাঁকে অভিহিত করে ‘বঙ্গবন্ধু? হিসেবে।
যে নেতার জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না- যে নেতার জন্ম না হলে একটি জাতিসত্তা হারিয়ে যেত চিরতরে; সেই মহান নেতাকে এই আগস্ট মাসেই একদল দুর্বৃত্ত সেনাসদস্য সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আজ তাদের অনেকেরই বিচার হয়েছে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে সব চক্রান্তকারী গোপনে-পেছনে ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের বিচার হয়নি, তারাও একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বক্তারা বলেন, চলতি বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে। এ কারণে এবারের জাতীয় শোক দিবসটি অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বছরব্যাপী ব্যাপক আয়োজনের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু করোনা সংকটের কারণে সেসব আয়োজনের অনেক কিছুই বাদ দিতে হয়েছে। নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, যে মহান নেতা দীর্ঘ সংগ্রাম করে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তাঁর চিন্তা, কর্ম, ত্যাগ ও সংগ্রামের চেতনা যদি আমরা হৃদয়ে ধারণ করি, সেটাই হবে সত্যিকার শ্রদ্ধা নিবেদন। রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বস্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়ন করাই হোক জাতীয় শোক দিবসের অঙ্গীকার।