অনলাইন ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার নিরঙ্কুশ জয়ের মধ্যদিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। দুটি আসন ছাড়া ২৯৮ আসনের ফলাফল ঘোষণা শেষে বেসরকারিভাবে এমন জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ‘বিতর্কিত’ এই গণরায়ের মাধ্যমে দলটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পঞ্চমবার এবং টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। এই জয় নিয়ে বরাবরের মতো সরব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
আল জাজিরা শিরোনাম করেছে, ভোটের শতাংশ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে বাংলাদেশে পঞ্চমবার জয়ী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ যে এমন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে তা তফসিল ঘোষণার পরেই ধারণা করা হয়। কারণ অন্যতম প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও সমমনা দল একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন এবারের নির্বাচনে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এককভাবে জয়ী হয়েছেন ২২২ আসনে। দলীয়ভাবে জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১১ আসন। এর ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে কাউকে পাওয়া যাবে কী না তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেবে।
বিবিসির শিরোনাম হয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে টানা চতুর্থবার জয়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রয়টার্সের শিরোনামে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ের প্রত্যাশায়।
রোববার (৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৪টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ২৯৮টি আসনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৫টি আসন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। এ পর্যন্ত ৬১টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবার পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। মহাজোটের শরিকদল হিসেবে যে ২৬টি আসনে তারা আওয়ামী লীগের কাছে ছাড় পেয়েছিল, তার অনেকগুলোতেই জামানত হারিয়েছেন জাপা প্রার্থীরা।
এর বাইরে আওয়ামী লীগেরই নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে। এছাড়া বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে আসা কল্যাণ পার্টি জয় পেয়েছে একটি আসনে।
রোববার সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোট শেষ হয় বিকেল ৪টায়। এরপর নির্ধারিত বিরতি শেষে শুরু হয় গণনা। একাধিক সূত্রে জানা যায়, নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটল।
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার মধ্যদিয়ে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় বসতে যাওয়া আওয়ামী লীগের জয় নিয়েও সরব রয়েছে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ছাড়াও বিদেশি গণমাধ্যম। ১৯৯৬ সালের পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে দলটি। এরপর থেকে একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এই দলটি।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, ৩০০ আসনের জাতীয় সংসদে কোনো দল যদি এককভাবে ১৫১ আসনে বিজয়ী হয়, তাহলে তারা সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করে। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে আগামী সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করেছে। এ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার মধ্যদিয়ে এবারও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থবারের মতো মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।
বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ রোববার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে শেষ হয়েছে বিকেল ৪টায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তবে একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ তুলে শুরু থেকেই নির্বাচন বর্জন করে অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল। নানা প্রতিবাদ-কর্মসূচি, অসহযোগ আন্দোলনসহ সবশেষ ভোট বর্জনের দাবিতে দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে দলগুলো। তবে চলমান অস্থিরতার সুযোগে ট্রেন, বাস ছাড়াও ভোটকেন্দ্রে নাশকতা চালায় একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী।