আতোয়ার রহমান : অনেক দিন পর পত্রিকা পড়লাম। অদৃশ্য আততায়ী করোনার দাপটে এক কাপ গরম চা কিংবা কফির কাপে সশব্দে চুমু দেয়ার সঙ্গে পত্রিকা হাতে আমাদের সকাল শুরু হওয়ার সেই পরিচিত দৃশ্য পাল্টে গিয়েছিল।

করোনার ভয়ে আমরা অদৃশ্য কারাগার থেকে সবে মুক্তি পেতে শুরু করেছি। সমাজের সব পেশার মানুষের জীবনের ওপর পড়েছে করোনার কাল ছোবল। করোনা তো আর শুধু অসুখ নয়, আতঙ্ক হয়েও দেখা দিয়েছে ভাবনায়। আতঙ্কে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের উপরেও এর প্রতিক‚ল প্রভাব পড়েছে। সংবাদপত্র কর্মীরা জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে পালন করেছেন পেশাগত দায়িত্ব। আবার অনেক পত্রিকা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন সংবাদপত্র কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের উপার্জন হারিয়েছেন, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঠকরা। এই করোনাকালে আমাদের পত্রিকা পড়া ছেড়ে দিতে হয়েছিল।

লকডাউন শুরু হতে না হতেই পত্রিকা অফিসগুলো বন্ধ হয়ে গেল, বন্ধ হলো পত্রিকা আসা বাসাবাড়িতে। টিভিতে খবর শুনে আর কতটুকু তৃপ্তি পাওয়া যায়। আমরা যারা স্বাধীনতাউত্তর প্রজন্মের মানুষ-তারা পত্রপত্রিকা, বইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছি একেবারে আষ্টেপৃষ্টে। পত্রিকা আমাদের নেশা, বই আমাদের প্রাণ। বিশেষ করে আমরা যেসকল প্রবীণ মানুষ প্রবাসে বসবাস করছি সন্তানসন্ততিদের সাথে, তারা তো করোনার অনেক আগে থেকেই ঘরবন্দি জীবনযাপন করছি। ঘরবন্দি জীবনের একঘেয়েমি আর নিঃসঙ্গতা কাটানোর একটা বড় অবলম্বন হলো এখান থেকে প্রকাশিত কমিউনিটি বাংলা পত্রপত্রিকালো।

সকালে এক কাপ গরম চা হাতে পত্রিকা পড়া শুরু করে রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত একই পত্রিকার প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত কয়েকবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া, মোটা ফ্রেমের চশমা চোখ থেকে খুলে চোখ ডলে সেই খবরটা ভাল করে পড়া একটা অতি সাধারণ চিত্র। মনে হয় পেপারের গন্ধ না শুকলে খবরের মজা পাওয়া যায় না। সারাদিন ঘরে বন্দি থাকার ক্লান্তি, অবসাদ, আর বিরক্তির অবসান ঘটাতে হাতের কাছের একটি পত্রিকাই যথেষ্ঠ ছিল। এই লোকগুলো চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করেছে কখন লকডাউন শিথিল হবে, কখন পত্রিকা আসবে ঘরে চারিদিকের আতঙ্ক, অস্থিরতা আর দুঃশ্চিন্তা থেকে একটু স্বস্তি দিতে। এই দীর্ঘ গৃহবন্দি অবস্থায় আমরা যারা বই, পত্রপত্রিকা থেকে দূরে থেকেছি এতদিন, তারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি, পত্রিকা নিছকই একটা কাগজ নয়, নিছকই শখের জিনিস নয়। হাতের কাছে পত্রিকা থাকলে ভাল হতো।

বন্দিদশায় মন ভালো রাখতে তরুণরা মোবাইল, ফেসবুক, তথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু বয়স্করাতো এগুলোতে অভ্যস্ত না। পত্রিকা পড়াই তাদের আজন্ম অভ্যাস।