অনলাইন ডেস্ক : প্রাথমিকের প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীকে ইতিহাস জানানোর জন্য দেশের সব স্কুলে সৃজনশীল বই পৌঁছে দেওয়া নিয়ে অসততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই ভালো উদ্যোগ প্রশংসার বদলে এখন দুর্নাম কুড়াচ্ছে। নামি প্রকাশনা ও লেখকদের বাদ দিয়ে কিছু অপরিচিত প্রকাশনী ও লেখকদের বই তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। আর তা নিয়েই বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। আপত্তি জানিয়েছে প্রকাশক সমিতিও। অভিযোগ রয়েছে, এই বই কেনায় কোনো নিয়মই মানা হয়নি। বইয়ের ভাষা ছোটদের উপযোগী কি না তাও বিবেচনায় আনা হয়নি, বিবেচনায় আনা হয়নি বইয়ের দামও।
বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ভালোমানের বই বাছাই করা হয়নি এমন অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে না জানিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে। মন্ত্রীর দপ্তরে যাতে বই ক্রয়ের ফাইল না যায় এমন কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
কোনো দরপত্র বা বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই সিঙ্গেল সোর্সের মাধ্যমে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার বই কেনার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বাছাইয়ের পর বই ক্রয়ের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এর পরই গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। ফলে আপাতত আটকে আছে বই ক্রয়ের প্রক্রিয়া।
তালিকায় দেখা গেছে, ভালো ও মানসম্পন্ন কিছু বইয়ের পাশাপাশি এমন বেশ কিছু প্রকাশনী ও বই রয়েছে যা পরিচিত নয়। রয়েছে পরিচিত নন বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখকও। তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির একটি করে বই তালিকায় যুক্ত রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বই বাছাই করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। দরপত্র আহ্বান করা হলে নামি ও পরিচিত প্রকাশনীগুলো অংশ নিতে পারত। এতে ভালোমানের বই বাছাই করা সহজ হতো। এই ক্রয়ের আওতায় আনা হয়েছে ৩০টির মতো বই। যার প্রত্যেকটির ৬৫ হাজার কপি ক্রয় করা হবে। সে অনুযায়ী প্রায় ১৫০ কোটি টাকার বই ক্রয় করা হবে। গত বছরের ডিসেম্বরে এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। বই কেনার ক্ষেত্রে এসব অসততার তথ্য তুলে ধরে প্রক্রিয়াটি বাতিল চেয়ে ও নিয়মমাফিক ক্রয়ের আহ্বান জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এবং সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, প্রাথমিকের এই বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয়নি। এভাবে বই ক্রয় করলে প্রকৃত প্রকাশকরা বঞ্চিত হবে, পাশাপাশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে আমাদের শিশু শিক্ষার্থীরা।