বিনোদন ডেস্ক : বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা, সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৫ মে) স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্র তথা সংস্কৃতির আঙিনায়। মঙ্গলবার (১৬ মে) ইউএস-বাংলার বিএস-৩০৮ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর থেকে নায়ক ফারুকের মরদেহ নিয়ে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর তার মরদেহ উত্তরার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
উত্তরা থেকে সকাল ১১টায় ফরুকের মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানান। শহীদ মিনার থেকে চলচ্চিত্রের মানুষের মিয়া ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের প্রিয় জায়গা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি)। সেখানে বাদ যোহর জানাজার পর নিয়ে যাওয়া হবে গুলশান আজাদ মসজিদে সেখানে বাদ আসর জানাজা হবে।
ফারুকের মেয়ে ফারিয়া তাবাসসুম পাঠান তুলসী জানান, আজাদ মসজিদের জানাজা শেষ করে মরহুমের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার নিজ জন্মস্থান কালীগঞ্জে। উপজেলার তুমালিয়া ইউনিয়নে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে ফারুককে।
নিয়মিত চেকআপের জন্য ২০২১ সালের ৪ মার্চ সিঙ্গাপুরে যান ফারুক। চেকআপের পর তখন তার ইনফেকশন ধরা পড়লে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন এই অভিনেতা। এরপর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা।
ক্যারিয়ারে প্রায় পাঁচ দশক বড় পর্দা মাতিয়েছেন ফারুক। ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন চিত্রনায়ক ফারুক। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ফারুকের চলচ্চিত্রে আগমন। তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন কবরী। ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত আবার তোরা মানুষ হ, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত আলোর মিছিল দুটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত সুজন সখী ও লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সে বছর লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্বচরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৭৬ সালে ফারুক অভিনীত তিনটি সিমেমা মুক্তি পায়। এগুলো হচ্ছে- সূর্যগ্রহণ, মাটির মায়া ও নয়নমণি। চলচ্চিত্র তিনটি বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। পরের বছর শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত কালজয়ী উপন্যাস সারেং বৌ অবলম্বনে নির্মিত সারেং বৌ ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮৭ সালে ‘মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্র সাফল্যের পর তিনি মিয়া ভাই হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
চলচ্চিত্রের বাইরে ফারুক একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ফারুক ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।