ইচক দুয়েন্দে : ১৯৬০ খৃষ্টাব্দে বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করেন ইচক দুয়েন্দে। জীবনের অধিকাংশ সময় বসবাস করেছেন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় পদ্মা-বিধৌত নগরী রাজশাহীতে। কাজ করেছেন কৃষি খামার পরিচালক, গ্রন্থ সম্পাদক এবং ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে। ইচক দুয়েন্দে’র অন্য বই: We Are Not Lovers (ইংরেজি উপন্যাস) এবং টিয়াদুর (মহাগপ্প)।
৯.
‘অধমের নাম আগা আবদুর রহমান,’ প্রায় কুর্নিশ করে নতুন সান্ত্রি তার পরিচয় ঘোষণা করে। ‘স্যার, আপনারা সবাই প্রফেসর। আমাদের জাতির গৌরব। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আপনারা সেই মেরুদণ্ডের মেরুদণ্ড। কী এক সামান্য অপরাধে আজ আপনারা হাজতে। হ্যাঁ, স্যার আমি অভিযোগ শুনেছি। আপনাদের আদালতে তুলবে, দুই একশ জরিমানা করবে। তারপর ছেড়ে দেবে। তা আর দুই এক ঘণ্টার মধ্যেই আপনাদেরকে নিয়ে চলে যাবে। হয়তো গাড়ি ব্যস্ত আছে তাই বিলম্ব হচ্ছে। স্যার, আপনারা নাস্তা-পানি করেছেন?’
‘আপনাকে দেখে মনে পড়ে গেল সৈয়দ মুজতবা আলীর অমর চরিত্র আবদুর রহমানের কথা। প্রিয় আগা, আপনি যদি একটু চায়ের ব্যবস্থা করেন, আমরা কৃতজ্ঞ হব,’ মিয়ান টিনটুই তাকে সালাম নিবেদন করে অনুরোধ করে এবং সান্ত্রি আগা আবদুর রহমান বিনাবাক্যব্যয়ে এই অনুরোধটি রক্ষা করে।
‘স্যার, এমএ পাশ করলেই একজন ব্যক্তি প্রফেসর হতে পারে না, একজন ব্যক্তিকে জ্ঞানের জাহাজ হতে হয় প্রফেসর হতে হলে। আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল হব প্রফেসর। কিন্তু হতে পারিনি। আমার এই সংক্ষিপ্ত কর্মজীবনে আমি কখনো কোনো প্রফেসরকে ধৃত হতে দেখি নাই। তাই গতকাল রাতে যখন আমি শুনলাম আপনাদের মতো স্বনামধন্য একদল প্রফেসর ধৃত হয়েছেন, আমার মন ব্যাকুল হয়ে উঠল, আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাতের আকুল আকাক্সক্ষায়। ডিউটি নিয়ে চলে এলাম আপনাদের সান্নিধ্যে। জ্ঞানী ব্যক্তিদের সান্নিধ্য আমি এক কাপ সুপেয় মধুর চেয়েও অধিক পছন্দ করি। আপনাদেরকে দেখে আমার মনে আনন্দ হচ্ছে,’ আগা আবদুর রহমান তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে শিশুরা যে-বিস্ময়ে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের দেখে।
‘আহ্ স্যার, আপনাদের বেল্ট ও মাফলারগুলো খুলে নিয়ে ওরা রেখে দিয়েছে। ইস্ স্যার, আপনারা কতই না কষ্ট পেয়েছেন। ওগুলো ফ্যানের আঙটায় ঝুলিয়ে অনেক হাজতি আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করে। ফ্যানের আঙটাটা ঐ কারণে কাটা। মানুষ হাজতে বা কারাবাসে খুব লজ্জা পায়। খবরটা জানাজানি হয়ে যায়। তখন সমাজে রি রি পড়ে যায়। তাই তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। স্যার, আপনারা বিষয়টা সহজভাবে নেন। জীবনে ভুল হয়ে যায়, অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যায়,’ আগা তাদের দরদভরে সান্ত¡না দেয়।
‘স্যার, আমার বুকের মধ্যে একটা ইচ্ছা কিলবিল করছে। বলেই ফেলি, স্যার। এই চাবিটা দিয়ে তালাটা খুলে বলি, স্যার, আপনারা মুক্ত, ফ্রি চলে যান পাখা মেলে,’ আগা আবেগদীপ্ত স্বরে বলে।
‘আপনার মতো মহৎ-হৃদয় মানুষকে এখানে পাব এ ছিল আমাদের স্বপ্নের অতীত,’ মিয়ান টিনটুই উচ্ছ¡সিত হয়ে ওঠে।
‘স্যার, গতকাল সন্ধ্যায় আপনাদেরকে দেখেছিলাম এক ঝলক, কী জোয়ান, কী চেহারা, কী লাশ আপনাদের, আজকে স্যার, বিশ্বাস হচ্ছে না সেই আপনারাই বসে আছেন এখানে। ইস্ স্যার, আপনাদের বডিগুলা আধখানা হয়ে গেছে। কোনো দানাপানি পান নাই, কোত্থেকে থাকবে শরীর? স্যার, আপনারা কি রাজনীতি করতেন?’ কৌত‚হল প্রকাশ করে আগা।
‘না না, রাজনীতি আমরা করি না। বলতে পারেন কেউ কেউ কিছুটা সাহিত্যিক,’ মিয়ান টিনটুই এর স্বরে অস্বস্তি প্রকাশ পায়।
‘আপনাদের পোশাক-লেবাস দেখেই বুঝেছিলাম আপনারা হবেন সংস্কৃতিমনস্ক সাহিত্যবোদ্ধা,’ আগা বলে।
‘আগা, আপনি কি কবি? এত সুন্দর শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছেন আপনি,’ মিয়ান টিনটুই সপ্রশংস স্বরে বলে।
‘জী, টুকটাক লিখি। যেমন ধরুন ‘শামুকে’ আমার ছ’টি কবিতা বেরিয়েছে। ‘কলমিলতায়’ তিনটে। শিগগিরই একটি দৈনিকে আমার কবিতা বেরুবে। কিন্তু আমি কোত্থাও বলিনি আমি কোন্ ডিপার্টমেন্টে কাজ করি। স্যার, আরেকটা সিক্রেট ব্যাপার আমি বলি আপনাদের, আমি একজন বিএ, এবং শুনে আশ্চর্য হয়ে যাবেন, আমাদের ওসি সাহেবও একজন বিএ,’ সরল খুশি মনে বলে আগা।
সেই সময়ে আরেক সান্ত্রি এগিয়ে আসে। এক পক্বকেশ বৃদ্ধ। এই কথাবার্তার মধ্যে সেও ঢুকে পড়ে। হাজতঘরে ওরা এগার জন আর কোনো কথাই প্রায় বলছে না। শুধু একে একে তারা কোণার ছোট্ট শৌচাগারে যাচ্ছে আর ফিরে আসছে। তারা নিঃশব্দ কিন্তু তাদের মনগুলো ভীষণ অস্থির। হাজত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তারা উদ্গ্রীব। এভাবে ছোট্ট একটা ঘরে থাকতে তারা অনভ্যস্ত।
‘আমার নাম গোপেল পমেটম। এই ডিপার্টমেন্টে সাঁইত্রিশ বৎসর সার্ভিস করছি। আর একটা বছর তারপর রিটায়ার। যে পোস্টে ঢুকছি ঐ পোস্টেই রিটায়ার। তেল দিতে পারলাম না। তিনবার সাসপেন্ড হইছি। একবার চাকরি যাবার লাগছিল। তাঁর কৃপা, যায় নাই। আমগোরে সময় ডিপার্টমেন্টে ঢোকা সহজ আছিল না। ধরেন, দাঁড়ইলেন লাইনে পা ফাঁক কইরা, যদি পা ঠিক কইরা না দাঁড়ইতে পারেন তো আউট। তারপর এই আপনার পোশাকটোশাক খুইলা যন্ত্রপাতি সবটা ঠিকঠাক আছে কিনা হেইডা দেইখা লইত। হার্ড টেরনিং। বরফের মতন ঠাণ্ডা পানির মদ্য দিয়া সান্তার কাট। ঘোড়ার সঙ্গে পাল্লা মাইরা দৌড়াও, ইত্যাদি। কিন্তু এখন কী হয়? অফসার হইতাছে, কীভাবে হইতাছে? প্রাইম মিনিস্টারের পোলা টিকরি টুকরতের পকেটে ঢালো লাখ টাকা তারপর অফসার হও। হেই টেককা ইনাগোরে তো তুলতে অইবো। তাই হেরা আপনাগো কী ধরব, নাকি আমরা আপনাগো ধরব?
‘আপনারা ইয়াং ম্যান। আপনারা লিকার উকার খাইছেন। আমরা যখন ইয়াং ছিলাম লিকার উকার ধুমছে খাইতাম। শালা হামলে পড়লাম। ধরলাম দুটা মাতাল। তারপর ওদের পইসাতেই মদ খেইলাম। আমার নাম গোপেল পমেটম। ধরেন লোকে লিকার খাইল, ধরা পড়িল। আমরা বলিলাম দশ দশ করিয়া দিয়া দাও, কোর্টে তুলিলে বিশ বিশ করিয়া নিবে। উহারা টংকা দিল আমরা ছাড়িয়া দিলাম। আপনারা কি লেরকি উরকি নিয়া পাকড়াও হুইছেন। না? ঠিক হ্যয়।
‘আপনাগো কেসটা খুব জটিল। খুবই জটিল, এটাকে বলা যায় সিটন পিস্টন ধরনের। উনারা আমাদের বিশেষ বিভাগের নোক। উন্নাদের অন্নেক রঅস্য। স্যার, আপনাদের যে কত্তা বড় বিপ্পদ আসতেছে এটা ভাব্যে আমার বুকে ভিমিকম্প হইয়া যাচ্ছে। খুব টরচার হব স্যর।’
‘আপনারা খরচার ব্যাপারে কিপটা। কলেজ গিয়াছেন তাই আপনাগোর নলেজ আছে। নো নলেজ উইদাউট কলেজ। কিন্তুক আপনাদের পকেট ফানকা। সব্বোনাশ। আপনাগোর কেনি লাঙুলে ফুটাইপ পিন। কিক্কুস। পায়ের নাঙুলে ফুটাইপ পিন। তারপর দিবক শক। পরথম অল্পক। তাপ্পর বহুত। ধরামতো পড়িলেন আচ্ছড়ি। গুরুমতো। যা বুঝবার বুইজ্ঝা লন। জান শ্যাষ। আমার দুইডা বাড়ি। র্থিরিশ বিগা ধানি ঝমি। মাইগোরে বিয়া দিছি। পোলারা হগ জুয়ান। একটাক প্রফরেছ কচ্ছি। একটা ডিবি পাইয়া ম্মেরিক্কায়। আরো টচ্চারের কতা কইতে পাত্তাম, কইলাম না। আপনাগোরে মুখ শুক্কাইয়া গেছে। আপনেরা হার্টফেইল কইত্তেন তাই কইলাম না। রেডিক থাক্কেন। আপনাগো নলেজ আচ্ছে। আপনাগো কানকো দিয়া নলেজ গড়াইয়া আছছে। কিন্তুক আপনাগো পঙ্কেট ফাঙ্কা। আগা, যাই, তুই থাউকগা। আম একটুক গড়া¹ড়ি দিয়া আইসি। যন্তরপাত্তির সব ঢিল্লা হইয়া গেল্ রে। কিচ্ছুক চিমচিকা ধইরা আইনছে। রসকস সিঙ্গারা বুলবুলি কিচ্ছুক নাই। অপদ্দাত্থ। সক্কাল হইত্তক গলা ভিজ্জইবার জন্য এক ক্হাফ চা পাইলাম না। থাক আগা। বেহকখুফ।’
সান্ত্রি গোপেল পমেটম প্রস্থান করে।
১০.
‘এত ছোট ছোট চুল রেখেছিস কেন তোরা?’ এগারজনকে উদ্দেশ করে হাজতঘরে ঢুকেই অচেনা লোকটির প্রশ্ন। সে হাজতঘরটার সম্মুখের করিডোরে দেখা দেবার সঙ্গে সঙ্গে ওদের এগার জনের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা কাঁপুনি নেমে যায়। তার হাতে হাতকড়া, পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি। করিডোরটা ভর্তি হয়ে যায় সান্ত্রিতে।
‘কই জবাব দিলি না, তোরা ঠসা নাকি?’ নবাগত আবার প্রশ্ন করে। সে খালি গায়ে, পরনে হাফ প্যান্ট। উজ্জ্বল দেহ। বিন্দুমাত্র মেদ নেই দেহে। সুউন্নত মেরুদন্ড। তীক্ষè নাক। তীব্র অথচ সুগঠিত মুখমণ্ডল। উজ্জ্বল অতি ধারালো ক্ষীপ্র চোখ। কালো কুচকুচে ঝাঁকড়া চুল। তার বয়স আন্দাজ করা অসম্ভব। পঁয়ত্রিশ থেকে পঁচপান্নর মধ্যে হতে পারে।
তার সাথে কোনো অস্ত্রশস্ত্র দেখা যায় না। কিন্তু এগার জনের সব্বাই মনে করে লোকটি সশস্ত্র। সে খালি পা। কিন্তু মনে হয় তার পা জোড়া শক্তিশালী জুতোয় ঢাকা, আর সেই জুতোর ফাঁকে ফাঁকে মোজা ঘেঁষে সেগুঁজে রেখেছে এক ডজন ছুরি। সে যদি চায়, সে একাই, ওদের এগার জনকে করতে পারবে সম্পূর্ণ পরাস্ত।
এর মধ্যেই বাইরে থেকে গরাদ-দরজার তালা আটকে দেয়া হয়েছে।
‘কি-রে তোরা বোবা নাকি?’ আবারো প্রশ্ন করে সে।
‘তোদের চুলে বেণী কোথায়? ছেলেদের মতো প্যান্ট শার্ট পরেছিস কেন তোরা? আর তোদের বুক চ্যাপ্টা কেন?’
রজেট চিনচুই, এগার জনের মধ্য থেকে প্রথম কথা বলে, ‘আমাদেরকে তুই তোকারি করছেন কেন?’
‘প্লিজ, আপনি চিনচুই এর কথায় কিছু মনে করবেন না। আপনি আমাদের বড় ভাইয়ের মতো। আপনি আমাদেরকে আদর করে তুই বলতেই পারেন। প্লিজ মাইন্ড করবেন না। দেখতেই পাচ্ছেন, আমরা সব্বাই ছেলে বা পুরুষ। আমরা অ্যাডাল্ট। কেন আমাদেরকে মেয়ে জ্ঞান করে ঠাট্টা মস্করা করছেন?’ মিয়ান টিনটুই দ্রুত কথাগুলি বলে, যাতে রজেট চিনচুই আর কথা বাড়াতে না পারে।
‘আচ্ছা! তাহলে তোরা ছেলে? এই হাজতঘরে তোরা ঢুকেছিস কেন? ঢোকার সময় দেখিসনি দরজার উপরে লেখা ‘মহিলা’?’ ভীষণ মজা পেয়ে সে হাসে। ‘বস্, বস্ বসেই থাক তোরা। আমি এখানে তোদের পরে এলাম। আগেই চলে যাব। এরা আমাকে খরচ করে দেবে। আমার নাম উল্লাস ছাপ্পান্ন। আমার মাথার দাম লাখ টাকা। তোদের মতো ফুলবাবুদের ধরল কেন?’
ফিজ ফ্যাল বলে, ‘আপনাকে করিডোরে দেখলাম। আমার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হিমশীতল স্রোত নেমে গেল। আপনি ভয়ঙ্কর। আপনাকে দেখে আমার, আমাদের ভয় লেগে গেল। এখন আর লাগছে না। কারণ, আপনার নাম জানলাম। আমাদেরকে, আচ্ছা আমাদেরকে ধরেছে কেন? সংক্ষেপে বললে বলা যায়, আমরা একজন বড় অফিসারের সঙ্গে ইংরেজিতে তর্ক করেছিলাম। এই সামান্য একটা ব্যাপার।’
‘ফুঃ। ফুঃ। আমি তিনটা ঠোলা নিকেশ করেছি। ওরা আমাকে পাকড়াও করার জন্য কমপক্ষে পঞ্চাশ বার অ্যাটেম্প্ট নিছে। দুইতিনবার প্রায় জালে পড়ে গেছিলাম। নিজের দেশ থেকে আমি নিরুদ্দেশ দশ বছর। হঠাৎ হঠাৎ বাড়ি যাই। আর যেই গন্ধ পাই, পালাই। তাই লালঘরে আমি তোদের জুনিয়র।
‘আমার বডিতে রাখতাম ছাপ্পান্নটা চাকু। বিশ-পঁচিশটা জোয়ান মরদকে আমি একাই একশ, আটকে দিতাম। কাল ভোররাতে আমাকে ঘুমের মধ্যে ধরে ফেলল। বেঈমানটা রাতে নিশ্চয়ই আমার ভাতে ঘুমের ওষুধ দিছ্ল। খাতে খাতে সন্দেহ হচ্ছিল। ঘুম দিলাম। কী ঘুম! জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘুম। নইলে বাতাসে আমি বিপদের গন্ধ পাই। আমার মন বলে দেয় কী ঘটবে।
‘ঘুম ভাঙল। দেখলাম হাতে হাতকড়া, পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি। আজই আমার জীবনের শেষ দিন,’ ঘোষণা করে উল্লাস ছাপ্পান্ন, স্বপ্নাচ্ছন্ন মৃদু হাসি হাসে।
‘ভাইডি, কী নাম তোর,’ উল্লাস ছাপ্পান্ন জিজ্ঞেস করেন মিয়ান টিনটুইকে। মিয়ান টিনটুই তার নাম বলতেই উল্লাস ছাপ্পান্ন বহু কসরৎ করে বহু কষ্টে তার হ্যান্ডকাফ পরানো হাত দিয়ে তার হাফপ্যান্টের একটা গোপন পকেট থেকে কয়েকটা পাঁচশ টাকার নোট এবং দু’টো খাম বের করে এবং বলে, ‘তুই ভালো ছেলে, এই টাকা কটা রাখ্ আর আমার এই চিঠি দু’টা পোস্ট করে দিস। পিকনিক করিস।’
মিয়ান টিনটুই টাকাটা না-নেবার প্রাণপণ চেষ্টা করে অসফল হয়। এবং তখন সেখানে দাঁড়ানো সান্ত্রি খটাংটকাং করে তালা খোলে এবং গরাদ-দরজা খুলে যায়। দুই জন সবল সান্ত্রি উল্লাস ছাপ্পান্নকে দুই পাশ থেকে চেপে ধরে নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। যাবার আগে উল্লাস বলে, ‘তোরা ভালো। তোদের চুলের কাটিং এবং চোখের চাউনি বলে দেয় তোরা ভালো। ছাগলের যে দুধের বাচ্চাগুলো থাকে, ঐগুলির মতো তোরা ভালো। এগারটা মেয়ে আমার। যদি আমার মেয়েদের আগেই বিয়ে না দিতাম, তোদেরকে আমার জামাই করতাম। মেয়েগুলার মুখ আর কোনোদিনও দেখতে পাব না। যাই।’
উল্লাস ছাপ্পান্ন চলে যায়। ফাঁকা হয়ে যায় করিডোর। তার পিছু পিছু সব সান্ত্রি চলে যায়। তাদেরকে পাহারা দেবার জন্য থাকে শুধু একজন।
স্বস্তির নিশ্চিন্ত ভাব প্রকাশ করে ইমুস ক্যাটস্ বলে, ‘ওকে দেখলাম, মনে হল একটা কসাই, আমার জিভ শুকিয়ে গেল। গলা শিরশির করতে লাগল। মনে হল আমার গলায় কেউ চাকু চালাচ্ছে। ও চলে গেছে, আমার কী যে ভালো লাগছে। যদি আর দুই এক দিন এখানে থাকতে হয়, কোনো প্রবেøম নেই, আমি এখানে থাকতে পারব।’
জিয়াফ ব্যানব্যাট উদ্বিগ্ন স্বরে বলে, ‘বেটা প্রথমে আমাদেরকে একটা ধোলাই দিল। পরে এমন একটা ভাব যে পারলে আমাদেরকে জামাই করে। বিষয়টা সন্দেহজনক। বেটা ওদের চর হতে পারে। মিয়ান, খামটা খুলে দেখ। ওর মধ্যে কী ঝামেলা রেখে গেল কে জানে? তোমরা ভুলে যেও না, ঐ অফিসারটা এসে আমাদের শাসিয়ে গেল, কী যেন রিমান্ডে না ডিমান্ডে নেবে। প্লিজ, মিয়ান খামটা খুলে দেখ, দেখ কী ষড়যন্ত্রের জাল মেলে গেল।’
আবেগ-উদ্দীপ্ত স্বরে মিয়ান টিনটুই বলে, ‘অ-স-ম্ভ-ব। আমার কাছে বিশ্বাস করে খাম দু’টি রেখে গেছে। ছাড়া পাব। সোজাসুজি একটা ডাকবাক্সে ফেলে দেব। আমি আমার কথা রাখব। যদি ঐ লোকটা, আচ্ছা, উল্লাস ছাপ্পান্ন যদি একশটা মার্ডারও করে থাকে, মনে হল আমার, সে অন্যায় করে একটা মার্ডারও করেনি। আমার মন বলে, সে শক্তের যম নরমের ভক্ত। সে গ্রেট। আমি জীবনে কনো এমন চমৎকার, দুর্দান্ত, প্রথম-শ্রেণির মানুষ দেখি নাই। দুঃখিত। স্যরি। আমি তার বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে পারব না। আমাদেরকে যদি রিমান্ডে নেয়, যদি ঐ চিঠি দু’টির মধ্যে সত্যিই বিপজ্জনক কিছু থাকে, দায়দায়িত্ব সব আমার। বন্ধুরা, বল, কিছু খাবা? উল্লাসজি আমাকে ষোল হাজার টাকা দিয়ে গেছেন।’
ওরা শুধু চা খেতে চায়। (চলবে)