অনলাইন ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে তাদের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলায় ব্যবহার করতে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করলে ইউক্রেন রাশিয়ার বেশ ভেতরের শহরকে লক্ষ্যে পরিণত করতে পারবে। এতে যুদ্ধের পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। এরই মধ্যে এ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পক্ষ থেকে এটা ‘গুরুতর উস্কানি’ ও ‘আগুনে তেল’ দেওয়ার মতো ঘটনা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে বৈরী রুশ-মার্কিন সম্পর্ক আরও বৈরিতার দিকে মোড় নিয়েছে।

৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুদ্ধ বন্ধের বার্তা দিয়েই ভোটারদের আকৃষ্ট করেছেন। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তাঁর নেতৃত্বে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে; বন্ধ হবে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন ট্রাম্প। কিন্তু এর আগেই বাইডেন শেষ মুহূর্তে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির পার্টনার সিবিএসকে মার্কিন এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটাকে মার্কিন নীতির বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এটিএসিএমএস নামে পরিচিত এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন। তবে এ নিয়ে জেলেনস্কি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, এসব বিষয় এখনও ঘোষণা করা হয়নি; ক্ষেপণাস্ত্রই তাদের জন্য কথা বলবে।

গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে ক্রেমলিন বলেছে, যদি ওয়াশিংটনের দেওয়া অস্ত্র রাশিয়ার অনেক ভেতরে আঘাত হানে, মস্কো ধরে নেবে এটা ইউক্রেনের নয়, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা। ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যুদ্ধে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশকে ইঙ্গিত করে। এটা পরিষ্কার যে, বাইডেন প্রশাসনের এ পদক্ষেপ ‘আগুনে তেল’ ঢালার শামিল।

রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র রসিয়াস্কিয়া গ্যাজেটে প্রকাশিত ঘোষণায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতায় থাকাকালের সবচেয়ে উস্কানিমূলক ও বেহিসাবি সিদ্ধান্তগুলোর একটি নিয়েছেন, যার ফল হতে পারে বিপর্যয়কর। রুশ রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান লিওনিড স্লাটস্কি মনে করেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত অনিবার্যভাবে গুরুতর উস্কানির দিকে এগোবে, যা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। রুশ সিনেটর ভ্লাদিমির জাভারভ এটাকে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগোনোর অভূতপূর্ব পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এটি হবে ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো সামরিক জোটের ‘সরাসরি অংশগ্রহণ’। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এটিএসিএমএস ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল।

তবে কিয়েভভিত্তিক ইউক্রেনের সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন সেন্টারের চেয়ারম্যান সেরহি কুজান বিবিসিকে বলেন, জো বাইডেনের সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন করবে না। কিন্তু আমি মনে করি, এটা আমাদের বাহিনীকে প্রতিপক্ষের আরও সমান করে তুলবে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন কর্মকর্তারা দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ইউক্রেনে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার রুশ সিদ্ধান্তের জবাবে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে কিয়েভকে বাইডেনের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে। তবে জার্মানি বলেছে, তারা ইউক্রেনকে কোনো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেবে না। গত সপ্তাহে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাঢ শোলৎস রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন। জেলেনস্কি এটাকে ‘পেন্ডোরার বাক্স’ খোলার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

এদিকে সোমবার ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের ওডেসায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে আটজন নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়েছেন। খেরসন অঞ্চলে আরেকটি রুশ হামলায় চারজন নিহত ও ১০ জন আহত হন।