অনলাইন ডেস্ক : শারমিন আকতার ইভা। এক রহস্যময়ী রমণী। বয়স ৩৫’র বেশি নয়। তবে ইতিমধ্যে পাঁচ পুরুষের ঘর করেছেন। নিজেকে কখনো বিউটিশিয়ান, কখনো আইনজীবী, কখনো ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার অভিনব প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হয়েছে প্রবাসীসহ প্রায় এক ডজন পুুরুষ। তার প্রতারণার শিকার পাঁচ পুরুষের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে তিনি দাবি করেন নিয়মনীতি মেনেই পাঁচ পুরুষের সঙ্গে সংসার করেছেন।
শারমিন আকতার ইভা বাগেরহাট সদর উপজেলার হরিণ খান এলাকার শওকত আলীর কন্যা।
স্কুলে পড়া অবস্থায় আপন ফুপাতো ভাই মোয়াজ্জেমের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে তাকে বিয়ে করেন। মোয়াজ্জেম হোসেন তার প্রথম স্বামী। তার ঘরে রয়েছে আনিছা নামে এক কন্যা। মোয়াজ্জেমের অভিযোগ বিনা মেঘে বজ্রপাতে মতোই কোনো কারণ ছাড়াই আমার সংসার ত্যাগ করেন ইভা। কোনো কিছুর অভাব ছিল না আমার। আমি কি হারিয়েছি তা আর বলতে চাচ্ছিনা। আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিক। ওর হাত অনেক বড়। আমার মেয়েটার এখন বয়স ১৫। ওই পরিবেশ থেকে ওকে আনতে চাচ্ছি। কিন্তু আনতে পারছি না। আমি আমার মেয়েকে ফিরে পেতে সবার সহযোগিতা চাই।
মোয়াজ্জেমের সংসারে থাকতেই তার বাড়িতে সব সময় আসা যাওয়া করতো ইভার ভগ্নিপতির খালাতো ভাই বিপাস। তার বাড়ি বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জের ডুলিগাতী। অগাধ সম্পদ ও টাকা দেখে কৌশলে তার সঙ্গে সম্পর্ক করে। বিয়ে করে তার কাছ থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেয়। নিজ নামে করে নেয় বাড়ির দলিল। ব্যবসায়ী বিপাসের সঙ্গে ঢাকায় থাকতেই ইভার পরিচয় হয় একটি লেদার কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার কামরুল হাসানের। বিপাসের টাকা-জমি হাতিয়ে রাতের আঁধারে চলে যায় কামরুলের সঙ্গে। ইভার বেপরোয়া জীবন ও রাতবিরাতে চলাফেরা কেউ থামাতে পারেনি। একদিন এক অভিজাত হোটেলে পরিচয় হয় সিলেটের লন্ডন প্রবাসী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এনামুল সুলতানের সঙ্গে। কামরুলের সংসারে থাকা অবস্থায় সুলতানের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। এ সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। একপর্যায়ে কামরুলের কাছ থেকে দেনমোহরের টাকাসহ মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে খুলনায় চলে যায়। নগরীর শামসুর রহমান রোড এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে প্রথমে নিজেকে আমদানিকারক পরিচয় দেন। কিছুদিন পর বিউটি পার্লারের ব্যবসা শুরু করেন। এর আড়ালে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। তখন লন্ডন প্রবাসী সুলতানের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সুলতানকে নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে দিনের পর দিন কাটাতে থাকেন। একপর্যায়ে সুলতানের সঙ্গে বিয়ে হয়। ব্যবসা করার কথা বলে সুলতানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। ইভার প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাননি বাড়ির মালিক নাজমা বেগম নাজুও। খুলনা মহানগরীর শামসুর রহমান রোডের নাজুর বাড়িতে যখন ইভা ভাড়া নেয় তখন নিজেকে লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রী পরিচয় দেন। এই সময় বাড়ির মালিক নাজুর কাছ থেকে ৩ লক্ষাধিক টাকা নেন এলসির মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য আনবে বলে। বাড়িতে বিউটি পার্লারের ব্যবসা শুরু করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই বিউটি পার্লার ব্যবসার আড়ালে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। এ ব্যাপারে বাড়ির মালিক নাজু জানায়, স্বামী দেশের বাহিরে থাকায় বেপরোয়া জীবনযাপন করতো ইভা। বাড়িতে রাতবিরাতে অনেক প্রভাবশালী ও টাকাওয়ালা লোক আনাগোনা করতো। ব্যবসার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে আর ফেরত দেননি। আমি মান-সম্মানের ভয়ে তাকে বাড়ি থেকে নামিয়ে দেই।
লন্ডন প্রবাসী স্বামী সুলতান জানায়, এই কলগার্লের সঙ্গে পরিচয় হয় রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে। ওর প্রতারণায় পড়ে একপর্যায়ে বিয়ে করে আমি সর্বস্বান্ত হই। ব্যবসার কথা বলে লাখ লাখ টাকা নেয়। প্রতিমাসে সংসার চালাতে ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হতো। একপর্যায়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তাকে খুলনা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। সুস্থ হয়ে আমাকে ডিভোর্স না দিয়েই নয়ন নামের হাসপাতালের এক অফিস সহকারীকে বিয়ে করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার বেসরকারি এক মাদকাসক্ত ক্লিনিকে চিকিৎসাকালে পরিচয় হওয়া পাভেল হাওলাদার নয়নের বয়স ইভার চেয়ে অনেক কম। তার সঙ্গেও বিয়ে হয়। নয়ন এখন বাগেরহাট হাসপাতালে অফিস সহকারী পদে কর্মরত।
প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রসঙ্গে শারমিন আক্তার ইভা বলেন, আমি বৈধভাবেই পাঁচজনকে বিয়ে করেছি। নিয়ম অনুযায়ী ১০ জনকে বিয়ে করলেও কারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। নিজেকে আইনের শিক্ষার্থী বলে দাবি করেন ইভা। বলেন, আমার টাকার কোনো লোভ নেই। লোভ থাকলে কোটিপতির ঘর ছেড়ে একজন সামান্য অফিস সহকারীকে বিয়ে করতাম না।