রবার্ট ইগার : (দা ওয়াল্ট ডিজনী কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসাবে রবার্ট ইগারের পনের বছরে অর্জিত শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা। ২০০৫ সালে রবার্ট ইগার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন যখন কোম্পানি এ যাবত কালে সর্বাধিক সঙ্কটময় পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে। তিনটি মূলনীতির উপর ভর করে তিনি এগুলেন এক. গুণগত মানের শ্রেষ্ঠতা বজায় রাখা, দুই. নিত্য নতুন প্রযুক্তির সাথে প্রতিযোগিতা না করে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং তিন. গন্ডির বাইরে বিশ্বব্যাপী নিজেদের চিন্তা-চেতনার প্রসার ঘটানো। চৌদ্দ বছরে তিনি ডিজনিকে পৃথিবীর সর্ববৃহত মর্যাদাসম্পন্ন মিডিয়া কোম্পানিতে রূপান্তর করলেন। এখন পিক্সার, মার্ভেল, লুকাসফিল্ম, টুয়েন্টি ওয়ান সেঞ্চুরি ফক্স প্রভৃতি স্বনামধন্য কোম্পানির মালিক দা ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি। রবার্ট ইগারের লেখা “দা রাইড অফ এ লাইফ টাইম” সাপ্তাহিক ‘বাংলা কাগজ’এ ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন উন্নয়ন সংগঠক ও অনুবাদক কোরবান আলী)

সপ্তদশ.
পঞ্চম অধ্যায়
ডিজনিতে দ্বিতীয় অবস্থান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) শেষ পর্যন্ত আমরা সৃজনশীল একটা কিছু নির্মাণ করতে সক্ষম হলাম যেটা সবসময় একটা বিশাল অর্জন হিসাবে বিবেচিত হবে। এটি নির্মাণের প্রস্তুতির জন্যই রুনের টিমের কয়েক মাস সময় লেগেছিল। নিজের সৃজনশীলতায় মুগ্ধ হয়ে রুন শেষ হাসি হাসলেন। ইতিপূর্বে তিনি বহুবার নিজ গুণে মুগ্ধ হয়েছেন। আমাদের মিলিনিয়াম অনুষ্ঠানের স¤প্রচার করা হলো টাইম স্কোয়ার থেকে, অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করলেন পিটার জেনিংস। আমরা টাইম স্কোয়ারে সবাই উপস্থিত ছিলাম যখন ভানুয়াতুতে মধ্যরাত্রি, মিলেনিয়ামকে স্বাগত জানানোর প্রথম টাইম জোন। (ভানুয়াতু প্রজাতন্ত্র দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় অবস্থিত ৮০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র। এটি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ৫৬০০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং অস্ট্রেলিয়ার ২৪০০ কিমি উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।) পরবর্তী ২৪ ঘন্টা আমাদের সরাসরি স¤প্রচার জারি ছিল চীন, প্যারিশ, রিও ডি জ্যানিরো, ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড, টাইম স্কোয়ার এবং সবশেষে লস অ্যাঞ্জেলেস যেয়ে আমাদের সরাসরি স¤প্রচার শেষ হল। পিটারকে ভিষণ আকর্ষণীয় দেখাচ্ছিল, তিনি একটা স্টুডিওতে বসে ছিলেন পরণে ছিল টুক্সেডো (ডিনার জ্যাকেট বিশেষ)। তিনি যেখানে বসে ছিলেন সেখান থেকে নিচের দিকে তাকালেই মিলেনিয়াম অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাজার হাজার অংশগ্রহণকারী উল্লাসে মেতে আছেন। এত সবের কোন কিছুই তাঁকে স্পর্শ করতে পারছে না, তিনি এক মনে নিজের দ্বায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সকলের সাথে ভাগাভাগি করে নিলাম মিলেনিয়াম বর্ষ উদযাপনের অভিজ্ঞতা যা আমাদের কারও জীবনে আর কখনও ঘটবে না। কোন টিভি নেটওয়ার্কই আমাদের মতো এত বেশি খরচ করেনি। আমাদের দর্শক-শ্রোতার সংখার কাছাকাছিও কেউ যেতে পারেনি।

আমি সারাদিনে বেশ কয়েকবার স্টুডিও পরিদর্শন করি। শুরুতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল আমাদের স¤প্রচার বিশাল সফলতা পেতে যাচ্ছে। স্টুডিওর ভেতরে প্রবেশ করলেই আপনি নিজেও উত্তেজনা অনুভব করবেন। সবচেয়ে সুখকর মুহূর্ত তখনই অনুভূত হলো যখন দেখলাম রুন সমস্ত স¤প্রচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করছেন। ফিল্ডে টিমের সদস্যদের কাছে নির্দশনা পাঠাচ্ছেন। পিটারের মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য কথা বলছেন যাতে সে সরাসরি স¤প্রচারে আর একটা নতুন প্লট যুক্ত করে। ভিন্ন ধরনের ক্যামেরা এ্যঙ্গেলের জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন। স¤প্রচারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমার মনে হচ্ছে আমি পঁচিশ বছর আগে ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত ফ্রাঙ্ক সিনেট্রার কনসার্টের অনুষ্ঠানের স¤প্রচার দেখছি, যেখানে স¤প্রচার জগতের কিংবদন্তি রুন আরলেজ নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

স¤প্রচারের বিশ ঘন্টা অতিবাহিত হবার পর আমি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে প্রবেশ করলাম। রুনের সাথে দেখা করলাম। তাঁর চোখ-মুখ ভর্তি হাসির ঝলকানি। আমার হাত ধরে লম্বা সময় ধরে উষ্ণ ঝাঁকুনি দিলেন। সে নিজের কৃতিত্বে গর্বিত। আমার জন্য গর্বিত। এমন একটা অনুষ্ঠান স¤প্রচার করার দ্বায়িত্ব দেবার জন্য আমার প্রতি কৃতজ্ঞ। তখন তাঁর বয়স সত্তর এবং এটিই তাঁর জীবনে শেষ বারের মত এত বড় অনুষ্ঠান পরিচালনা করলেন।

দুই বছর পর রুন মরণ ব্যাধির সাথে যুদ্ধে পুরোপুরি পরাস্ত হলেন। তিনি এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চির বিদায় নিলেন।। তাঁর মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে থ্যাঙ্কস-গিভিং ছুটিতে আমি নিউ ইয়র্কে। সনিবার রাতে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বনাম নটর ড্যাম কলেজের খেলা দেখছি এবিসি টিভিতে। রাত দশটায় আমার ফোন বেজে উঠল। এবিসির টেলিফোন অপারেটরের কন্ঠস্বর ভেসে এল। বলল, ‘ইগার সাহেব, রুন আরলেজ আপনার সাথে কথা বলতে চান। যদি আপনার কছে তাঁর নম্বর থাকে এবং তাঁর সাথে কথা বলা জরুরী হলে আপনি এবিসির সুইচবোর্ডে কল করতে পারেন তাঁরা আপনাকে রুন আরলেজের সাথে কথা বলার ব্যাবস্থা করে দেবে।’ রুনের কাছে এখনও নম্বরটা আছে। আমাকে বলার মত জরুরী বার্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

টেলিফোন অপারেটর আমাদের সংযুক্ত করে দিলেন। আমি বললাম, ‘রুন?’
‘বব, আপনি কি টেলিভিশন দেখছেন?’
‘ফুটবল খেলা দেখছি।’

‘হ্যাঁ, ফুটবল খেলার কথায় বলছি। আপনি কি টের পেয়েছেন, অডিও সিস্টেম সব বন্ধ?’
তিনি আরও বললেন ধারা ভাষ্যকার কি সব উল্টাপাল্টা বকছে, কিছুই বোঝা যায় না। সব ফালতু, কোন মানে হয় না। আমি জানতাম রুনের অবস্থার দ্রæত অবনতি হয়েছে এবং তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমি জানতাম তিনি হ্যালুসিনেসন মানসিক রোগে ভুগছেন। কিন্তু পুরোন কর্তব্যবোধ ভেতর থেকে জাগ্রত হয়ে গেল। রুন বলছেন কিছু একটা ভুল হচ্ছে, আর আমাকে সেটা ঠিক করে দিতে হবে। আমি সেটা ঠিক করার চেষ্টা করলাম।
‘রুন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। একটু পরেই আপনাকে কল করে জানাচ্ছি।’
‘আমি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম অডিও সিস্টেমে কোন সমস্যা হচ্ছে কি না। নিউ ইওর্কের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে আমাকে জানান হল, ‘না বব, কোন সমস্যা নেই।’
আমি বললাম, ‘আপনি একটু সুইচ বোর্ডে ফোন করে দেখুন তাঁরা কিছু শুনতে পাচ্ছে কি না।’
কয়েক মুহূর্ত পরে ওপার থেকে শুনতে পারলাম, ‘না, সব ঠিক আছে।’

আমি রুনকে কল দিলাম। বললাম, ‘নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সবকিছু খতিয়ে দেখেছে এবং আমাকে নিশ্চিত করে বলল সব ঠিক আছে।’ তিনি কি শুনতে পাচ্ছেন এ বিষয়ে যবার আগেই আমি প্রশ্ন করলাম, ‘আপনি কেমন আছেন, রুন?’
তিনি ফিস ফিস করে বললেন, ‘আমি স্লোন কেটারিং হাসপাতালে আছি। আপনার কি মনে হয়? আমি কেমন আছি?’

তিনি দর্শনার্থীর সাথে সাক্ষাত করছেন কিনা সেটি নিশ্চিত হয়ে পরের দিন তাঁর সাথে দেখা করতে গেলাম। আমি যখন তাঁর রুমে প্রবেশ করলাম তখন দেখলাম তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন। মনে হল তাঁর আয়ু আর বেশিদিন নেই। টেলিভিশনে ফিগার-স্কেটিং প্রতিযোগিতা চলছে। আর তিনি সেটি নিবিষ্ট চিত্তে উপভোগ করছেন। আমি সরাসরি তাঁর পাশে যেয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মুখের দিকে একবার চেয়ে দেখলেন তারপর স্কেটারদের দিকে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। তিনি বললেন, ‘এটি যেমন হওয়া উচিত তেমন নয়। তোমার কি মনে হয়?’
আমি জানি না তিনি কোন বিষয়টিকে নির্দেশ করে প্রশ্ন করলেন। যখন আমরা কোন কাজে কোথাও যেতাম তখন কোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টাকা খরচের বিষয়ে তঁকে হেনস্থ করার সাহস পেতেন না। নাকি তিনি যখন তাঁর কক্ষে বসে থাকতেন কারও কোনদিন সাহস হয়নি তাঁর কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে। অথবা তিনি পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। অথবা যা কিছু দেখছেন সবই নতুন অপরিচিত মনে হচ্ছে। তাঁর পৃথিবী বদলে গেছে। বিছানায় পড়ে থাকা রুনের শরীরের দিকে চেয়ে মনে হল এটিই রুনের সাথে আমার শেষ দেখা।

বললাম, ‘না রুন, এটি মোটেও তেমন নয়।’
সহস্রাব্দের অনুষ্ঠান স¤প্রচারের পরে এবিসির সাথে আমাদের ভাগ্যও নিচের দিকে নামা শুরু করল। হু ওয়ান্টস টু বি এ মিলিনিয়ার শোটি এখনও ২০০০ – ২০০১ সালে এসেও জনপ্রিয়, তবে আগের মৌসুমের মত এত ব্যাপক জনপ্রিয়তা আর থাকল না। আমরা ক্রমহ্রাসমান প্রবৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আমাদের হাতে নির্মানাধীন কোন ভাল টিভি শো নেই। বিনোদন বিভাগে ব্যাপক পরিবর্তন এনে এটিকে পুনরুজ্জীবিত করা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর থাকল না। আমরা জানলাম মাত্র একটা শো দিয়ে আমাদের পেট চলবে না। এনবিসির সাথে প্রতিযোগতিা করার জন্য আমরা সপ্তাহে পাঁচবার করে একই শো দেখানো শুরু করলাম। তারা বৃহস্পতিবার রাতে ‘মাস্ট সি টিভি’ স¤প্রচার শুরু করেছে যা অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আর সিবিএস টিভি ‘সার্ভাইবার’ আর ‘সিএসআই’ পেয়ে আবার পায়ের নিচে মাটি পেয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।

মাত্র দু বছরের মাথায় সর্বাধিক জনপ্রিয় টিভি থেকে পিছলে শেষের তিনটি ব্যার্থ টিভি নেটওয়ার্কের খাতায় নাম লিখাল। ফক্স টিভি কেবল জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। এর জনপ্রিয়তা ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই ব্যার্থতার দ্বায়ভার আমার কাঁধে কিছুটা হলেও বর্তায়। আমি এবিসি টিভি পরিচালনা করছি এবং আমি সপ্তাহে কয়েক রাত্রি মিলেনিয়ার স¤প্রচারের সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছিলাম। এটি একটা সহজ সমাধান ছিল নিজেদের দোষগুলো সাময়িকভাবে ঢেকে রাখার। কিন্তু যখন ডুবা শুরু হলো তখন আমাদের বড় বড় ব্যার্থতাগুলো নগ্ন হয়ে পড়ল।

১৯৯৯ সালের শেষের দিকে মাইকেলের একগুঁয়েমির উপর আঘাত আসল। তাঁর কোন দ্বিতীয় ব্যক্তি ছাড়া একাই কোম্পানি পরিচলনা করার যে প্রবণতা সেটা লোকজন এখন আর মেনে নিতে পারছেন না। তিনি একঘরে হয়ে পড়েছেন। কিছুটা নিরাপত্তাহীনতাও পেয়ে বসেছিল। আশেপাশের লোকজনকে আরও অবিশ্বাস করতে শুরু করলেন। তাঁদের প্রতি তিনি আরও বিরূপ মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠলেন। তাঁর এই ভার বহনে সহযোগিতার জন্য আর একজনের প্রয়োজন তা প্রবলভাবে অনুভব করতে লাগলেন। নিজের উত্তরাধিকরের কথা ভাবার সময় হয়ে এসেছে এমন সংকেত বোর্ড থেকে পেয়েছিলেন। ষোল বছর শীর্ষ পদে থাকার পর তিনি নিজের উত্তরাধিকরের কথা ভাবতে শুরু করলেন। এটি চিন্তা করাও তাঁর জন্য সহজ বিষয় ছিল না। ওভিজের হাস্যকর ও অপমানজনক ঘটনার পর মাইকেল কোম্পানির দ্বিতীয় ব্যক্তির কথা উচ্চারণ করতেও ভয় পান। তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে তিনি আগের মত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। কিন্তু তিনি দ্বায়িত্ব এবং সিদ্ধান্ত ভাগাভাগির ফলাফল ও এর জটিলতাগুলোর মুখোমুখি আর হতে চান না। তাঁর নানান ধরনের কাজকর্মে অন্য কাউকে সম্পৃক্ত করতে চান না।

কোম্পানির দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম নিতে মাইকেলের যে অনীহা তার প্রভাব কোম্পানির সর্বত্র বিরাজমান ছিল। এটি পরিষ্কার ছিল যে তাঁর সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু কোম্পানির দ্বিতীয় ব্যক্তির নিয়োগ দিতে চান না। পক্ষান্তরে অন্যরা শূন্য পদ দখল করার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের সাধারণ পরামর্শক স্যান্ডি লিটভ্যাক ভাইস চেয়ারম্যান পদে পদোন্নতি পান এবং তিনি স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ভাবতে শুরু করেন। কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগ এখন পরিচালনা করেন পিটার মর্ফি (ল্যারি মর্ফির সাথে তাঁর কোন সম্পর্ক নেই, তাঁর পূর্বসূরি মাত্র)। তাঁকে এখন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ বাদ দিয়ে প্রত্যাহিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বেশি ব্যাস্ত থাকতে হয়। প্রত্যেকের দ্বায়িত্ব ও কর্তৃত্বের একটা সীমারেখা ছিল। এই সীমারেখা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছিল যা কোম্পানির নৈতিকতায় মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল।

কয়েক মাস ব্যাপী মাইকেল আমার সাথে ঠান্ডা-গরম মিশ্র আচরণ করছেন। তিনি আমার উপর নির্ভর করে শান্তি পাচ্ছিলেন। আমার মনে হচ্ছিল আমাকে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ঘোষণা করা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমাকে সবসময় তাঁর পাশাপাশি রাখছিলেন। মনে হচ্ছিল ভবিষ্যত অনিশ্চিত এ কথাটা এখন আর আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ১৯৯৯ সালের আগষ্টে আমি দুই সপ্তাহ ছুটি নিলাম। সাথে মার্থাস ভিনিয়ার্ডে একটা বাসা ভাড়া করলাম (মার্থার ভিনিয়ার্ড উত্তর আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস-এর কেপ কডের দক্ষিণে অবস্থিত একটি দ্বীপ যা গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটানোর জন্য জনপ্রিয়)। আমার স্ত্রী উইলো আর দুই বছরের পুত্র সন্তান ম্যাক্স সহ সেখানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাবো। টম মর্ফি, আমার প্রাক্তন বস প্রথম রাতেই আমাকে ফোন করলেন। মাইকেল আর কয়েকজন বোর্ড মেম্বারের সাথে আগের রাত্রে লস অ্যাঞ্জেলেসে একটা রাত্রিকালিন ভোজে তিনি উপস্থিত ছিলেন। আর সেই ভোজ সভায় মাইকেল স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন আমি কখনই তাঁর উত্তরাধিকারী হতে পারবো না। কয়েক বছর আগে যখন দুটি কোম্পানি একীভূতকরণ হচ্ছিল তখন তিনি আমাকে ডিজনিতে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন তিনি বলছেন, ‘আমি আপনাকে কোন খারাপ সংবাদ দিতে ভীষণ অপছন্দ করি কিন্তু আপনার উচিত ডিজনি থেকে পদত্যাগ করা। মাইকেল আপনাকে বিশ্বাস করেন না। তিনি বোর্ডকে বলেছেন আপনি কোনভাবেই তাঁর উত্তরাধিকারী হতে পারবেন না। আপনার ডিজনি ছেড়ে যাওয়া উচিত।’ (চলবে)