রবার্ট ইগার, অনুবাদ: কোরবান আলী : (দা ওয়াল্ট ডিজনী কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসাবে রবার্ট ইগারের পনের বছরে অর্জিত শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা। ২০০৫ সালে রবার্ট ইগার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন যখন কোম্পানি এ যাবত কালে সর্বাধিক সঙ্কটময় পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে। তিনটি মূলনীতির উপর ভর করে তিনি এগুলেন এক. গুণগত মানের শ্রেষ্ঠতা বজায় রাখা, দুই. নিত্য নতুন প্রযুক্তির সাথে প্রতিযোগিতা না করে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং তিন. গন্ডির বাইরে বিশ্বব্যাপী নিজেদের চিন্তা-চেতনার প্রসার ঘটানো। চৌদ্দ বছরে তিনি ডিজনিকে পৃথিবীর সর্ববৃহত মর্যাদাসম্পন্ন মিডিয়া কোম্পানিতে রূপান্তর করলেন। এখন পিক্সার, মার্ভেল, লুকাসফিল্ম, টুয়েন্টি ওয়ান সেঞ্চুরি ফক্স প্রভৃতি স্বনামধন্য কোম্পানির মালিক দা ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি। রবার্ট ইগারের লেখা “দা রাইড অফ এ লাইফ টাইম” সাপ্তাহিক ‘বাংলা কাগজ’এ ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন উন্নয়ন সংগঠক ও অনুবাদক কোরবান আলী)
একাদশ.
তৃতীয় অধ্যায়
অজানাকে জান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আমরা দুজনে সেন্সর বোর্ডের সাথে আলোচনা করলাম তারপর টেমপ্লেট তৈরি করলাম ‘পিজি-১৩’ বিধিনিষেধের মধ্যে আমরা কোন কোন বিষয় প্রদর্শন করতে পারবো আর কোন কোন বিষয় প্রদর্শন করা যাবে না। (পিজি-১৩ অর্থ মাতাপিতা ও অভিভাবকবৃন্দ ১৩ বছরের নিচের কিশোর-কিশোরীদের কিছু কিছু উপাদান দেখানোর বিরোধীতা করেন। কঠোরভাবে সতর্ক থাকেন।) আমরা কৌশলগতভাবে গ্রহণযোগ্য সমস্ত শব্দ নিয়ে একটা শব্দকোষ তৈরি করলাম। যেমন ‘অ্যাসওয়াইপ’ শব্দ ঠিক আছে কিন্তু ‘অ্যাসহোল’ অব্যবহার্য্য। আমরা একজন ব্যক্তিকে ‘প্রিক’ বলতে পারবো কিন্তু শরীরের কোন অংশকে নির্দেশ করার জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করতে পারবো না। আমরা একটা নোট বই টেনে বের করলাম, সেখানে কিছু মানুষের নগ্ন ছাবি আঁকলাম। উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্ধারণ করা – শরীরে কোন অংশটা চলচিত্রে আনা যাবে আর কোন অংশ দেখানো যাবে না।
দ্বিতীয় কাজটি হচ্ছে ড্যান বার্কের কাছে ধারণাটি বিক্রি করা। ড্যান লস অ্যাঞ্জেলেসে উড়াল দিয়ে চলে আসলেন। আমরা তিন জন স্টিভের কার্যালয় সংলগ্ন রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার সারলাম। আমরা তাঁকে শব্দকোষ আর মানুষের শরীরের ছবিগুলো দেখালাম এবং বোঝানোর চেষ্টা করলাম কেন এই চলচ্চিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ। শেষে ড্যান বললেন, ‘তোমরা ছবিটি নির্মাণে হাত দিতে পার’। আমাকে উদ্দেশ্য করে আরও বললেন, ‘তবে মনে রাখবেন উল্টাপাল্টা কিছু ঘটলে কিন্তু আমার আলখাল্লা এত বড় নয় যে তাতে আপনাকে লুকিয়ে রাখতে পারবো’।
আমার উপর গভীর বিশ্বাসবোধ ও আস্থা থাকার কারণে টম ও ড্যান আমাকে এই পদে অধিষ্ঠিত করেছেন। আর আমার ঝুঁকি নিয়ে নতুন কিছু করার এটি একটি প্রধান কারণ। তাঁরা আমাকে এই পদ দিয়েছে আমি দ্রুতই তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করেছি, যা আমাকে তঁদের অনেক কাছের মানুষে পরিণত করেছে। আমার কাজের ক্ষেত্রে আমি অসীম স্বাধীনতা ভোগ করি। আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি না এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি আদেশ দেওয়া, সিদ্ধান্ত নেওয়া বা আনুগত্য প্রয়োগের ক্ষেত্রে অপার স্বাধীনতা ভোগ করি। আমার পূর্বসূরি ব্রান্ডোন স্টোডার্ড এ ধরনের বিশ্বাসবোধ কখনও অর্জন করতে পারেননি এবং এ ধরনের অধিকারও ভোগ করেননি। তিনি তাঁদেরকে সম্মান করতে অস্বীকার করেছিলেন, ফলে তিনিও কখনও তাঁদের কাছ থেকে সম্মান পাননি। যখন তিনি তাঁর পদ অধিকার বলে তাঁদের কাছে কিছু চাইতেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাকে সব সময় না বলা।
ড্যানের অনুমোদনের পর দীর্ঘ শ্রমসাধ্য নির্মাণযজ্ঞ শুরু হয়। চলচ্চিত্রের নির্মাণ কৌশল ও শৈলীতে ভর করে স্টিভেন একদিকে ঠেলে নিয়ে যায় পক্ষান্তরে এবিসির চলচ্চিত্র সঞ্চালনের মান, রীতি ও দর্শক উল্টদিকে টেনে নিয়ে যায়। একটা সমঝোতা না হওয়া পর্য়ন্ত এ টানাটানি চলতেই থাকে। ধারাবাহিকটি প্রথম প্রদর্শন করা হয় ১৯৯৩ এর বর্ষায়। এর পর পুরো এক বছর চলে এর প্রদর্শনী। আমেরিকান ফেমেলি এ্যাসোসিয়েশন এ প্রদর্শনী বয়কট করল। অনেক বিজ্ঞাপন দাতা এটি প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে অস্বীকার করল। ২২৫টি বিজ্ঞাপনদাতা কোম্পানি যারা ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে বিনিয়োগ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ৫০টি কোম্পানি তাঁদের বিনিয়োগ উত্তোলন করে নিল। তবে ধারাবাহিকটির গ্রহণযোগ্যতা ছিল অসাধারণ। দ্বিতীয় পর্ব স¤প্রচারের সময় দেখা গেল প্রথম দশটি টিভি শো’র মধ্যে এটি অন্যতম। এক যুগ ব্যাপী এই ধারাবাহিক বিনোদনের মূখ্য সময়ে স¤প্রচারিত হয়েছে। ২০টি ‘এমি’ পুরষ্কার পেয়েছে এবং সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ টিভি ধারাবাহিকের মর্যাদা পেয়েছে।
দীর্ঘ পাঁচ বছর ব্যাপী ’বিনোদনের মূখ্য সময়’ পরিচালনা কালের চতুর্থ বছরেই আমরা আমাদের এবিসি টিভিকে এক নম্বর টিভি চ্যানেলে রূপান্তর করলাম। এমনকি এনবিসি টিভির ব্রান্ডন ট্যারিকফকে তাঁর স্থানচ্যুত করলাম যিনি বরাবরই এনবিসি টিভিকে টিভি জগতের চূড়ায় অবস্থান করে দিয়েছিলেন। নিলসেনের মূল্যায়নে আমরা টানা আটষট্টি সপ্তাহ ব্যপী শ্রেষ্ঠ টিভি চ্যানেল হিসাবে বিবেচিত হই। (যখন খবরে প্রকাশ পেল এবিসি টিভিই শ্রেষ্ঠ তখন ব্রান্ডন আমাকে ফোন করে অভিনন্দন জানালেন। তিনি একজন আড়ম্বরপূর্ণ, মার্জিত ও দক্ষ মানুষ। তিনি এমন কিছু করে গেলেন যা কেউ কোন দিন করতে পরবে না। আমি বললাম ‘আমি হালকা দুঃখিত। মনে হচ্ছে জো ডিম্যাগিওর বিদ্যুতের ঝলকানির সময় শেষ হয়ে আসছে।’)
আমাদের সফলতা সব সময় দলভিত্তিক প্রচেষ্টার উপর নির্ভরশীল ছিলো। কিন্তু আমার পেশাগত জীবনে এটিই প্রথম সাফল্যের অভিজ্ঞতা যা প্রকাশ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। একদিকে আমার মধ্যে একধরনের অদ্ভূত অনুভূতি কাজ করছিল যে অন্যের কৃতিত্বের জন্য মানুষ আমাকে প্রশংসা করছে। এই বিনোদন জগতে আমি যখন পা রেখেছিলাম তখন আমি এর কিছুই জানতাম না। আমার চার পাশে ছিলেন অত্যন্ত গুণী প্রতিভাবান মানুষ, তাঁরা অকপটে সমস্তকিছু আমাকে বলেছিলেন, শিখিয়েছিলেন। তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন কখনও বুঝতেও পারেননি যে আমি তাঁদের বস। তাঁদের উদারতার কারণে আমারা সকলেই সফল হয়েছি। উপরন্ত কৃতিত্বের বেশির ভাগই আমাকে দেয়া হচ্ছে।
আমার মনে হয় এটা বলা অশোভন হবে না যে আমি যদি বিনোদনের ‘মূখ্য সময়’ পরচিালনার দায়িত্বে না থাকতাম তবে এবিসি টিভি বিনোদন জগতে এক নম্বর টিভি চ্যানেল হতো না। আমার উপর টম ও ড্যানের অগাধ বিশ্বাস আমাকে ঝুঁকি নেবার সাহস যুগিয়েছেন। আর যদি আমার নিজের শক্তি থাকত তবে আমি সৃজনশীল মানুষদের বলতাম আপনারা আপনাদের উত্কৃষ্টতম ক্ষমতা ও দক্ষতা দিয়ে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সুযোগ গ্রহণ করুন। আমি অবশ্যই তাঁদের ব্যার্থতা থেকে উঠে দাঁড়াতে সহযোগিতা করতাম। চলচ্চিত্র নির্মাণ সব সময় একটি সমন্বিত ও যৌথ প্রচেষ্টার ফল। তথাপিও আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রশংসিত হয়েছি যে আমি সব সময় একদল মেধাবী নির্মাতাকে সর্ব্বোচ্চ সুযোগ দিয়েছি তাঁদের শ্রেষ্ঠটি নির্মাণ করার জন্য।
আমার সত্যিকারের কৃতিত্ব হচ্ছে আমি প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিত হবার সুযোগ দেইনি। এবিসির বিনোদন জগতের প্রধান নির্বাহী থাকা কালে প্রতিষ্ঠানের বাহিরের লোকজন ঠিক ততটুকুই পেয়েছেন যা তাদের প্রাপ্য। আমি যাদের সাথে কাজ করি তাদের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হয় যখন আমাকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া হয়, কৃতিত্বের দাবীদার শুধু আমাকে বানান হয়। বলা হয় কৃতিত্ব সব আমার। এটি এক অদ্ভূত প্রকাশ ভঙ্গি। কোম্পানির বাহিরের কেউ না কেউ প্রায়ই আমার সাথে দেখা করতে আসেন সে ব্যক্তিটি শুধুমাত্র আমার দিকেই চেয়ে থাকেন, এমন কি যখন একই টেবিলে আমার সহকর্মীবৃন্দ বসে থাকেন তখনও। আমি জানি না অন্যান্য প্রধান নির্বাহীদের এরকম কোন অনুভূতি হয় কিনা। তবে আমার কাছে এটা লজ্জ্বাজনক, আমি সব সময় আমার সহকর্মীদের দেখিয়ে বলতাম এ কাজের প্রশংসার দাবীদার তাঁরা, আমি না। একই ভাবে আমি যখন ডিজনির বইরের একদল মানুষের সাথে সভা করতাম তখন টেবিলে বসে থাকা সবার সাথে যোগাযোগ ও কথাবলা নিশ্চিত করতাম। ছোট্ট একটা অঙ্গভঙ্গি, যার দ্বারা সহকর্মী হিসবে নিজেকে উপেক্ষিত হওয়ার অনুভূতি কেমন তা আমি খুব ভালভাবে জানি। যে কোন কিছু হতে পারে যা আপনাকে মনে করিয়ে দেয় আপনি মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু নয়, সেটি আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
১৯৯২ সালের লম্বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ড্যান বার্ক ফোনে বললেন এবিসির প্রেসিডেন্ট অবসরে যাচ্ছেন। তাঁরা চান আমি আবার নিউ ইয়র্কে ফিরে আসি এবং প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণ করি। এর পুরোটায় আমার কাছে চমক ছিল না। বরং আমাকে যখন বিনোদন বিভাগের প্রধান নির্বাহীর পদ গ্রহণ করতে বললেন সে সময়েই টম ও ড্যান বলেছিলেন যদি আমি ভাল করি তবে তাঁরা আমাকে এবিসি টিভির প্রধান নির্বাহী করতে চান। যখন আমি ড্যানকে জিজ্ঞেস করলাম ঠিক কোন তারিখে আমাকে আমার নতুন কাজে যোগদান করতে হবে। তিনি বললেন, ‘পহেলা জানুয়ারী’। মাঝখানে মাত্র এক মাস।
আমি ফিরে যেতে পেরে আনন্দিত। এবিসি টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহীর পদে আসিন হবো তার জন্য নয়। এ বছরের শুরুর দিকে আমার আর সুসানের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। সে আমাদের কন্যাদের নিয়ে নিউ ইয়র্কে ফিরে গেছে। সুসান লস অ্যাঞ্জেলেস কখনই পছন্দ করেনি। আলাদা থাকাটা সে মোটেই পছন্দ করে না। নিউ ইয়র্ক আসলে সে মনে করে নিজের বাড়িতে এসেছে। আমি তাকে রুষ্ট করতে চাইনি। যতবার সম্ভব উড়ে চলে গেছি কন্যাদ্বয়কে এক নজর দেখার জন্য। কিন্তু বছরটি ভয়ানক কষ্টকর ছিল।
স্বল্প সময়ের নোটিসে আমি আমার লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়িটি বিক্রি করে দিলাম। আমার জিনিস পত্র সমস্ত গুছিয়ে নিয়ে শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত হোটেল মার্কের একটা রুমে উঠলাম। তেতাল্লিশ বছর বয়সে ১লা জানুয়ারী আমি এবিসি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার পদে আসিন হলাম। আমি জানতাম এটি কোন এক সময় ঘটবে কিন্তু যখন ঘটল তখন এটি পরাবাস্তবের মতো শোনাচ্ছে। আমার পুরোন দিনের বিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা এবিসি সংবাদের প্রধান নির্বাহী রুন, এবিসি স্পোর্টসের প্রধান নির্বাহী ডেনিস সোয়ানসন আমার কাছে দ্বায়বদ্ধ। টেড হার্বার্ট আর স্টু ব্লুমবার্গ আমাকে শিখিয়েছিলেন টেলিভিশন নির্বাহীর কাজ। এদেরই একজন টেড হার্বার্ট এখন এবিসি বিনোদনের প্রধান নির্বাহী, আমার স্থনে অভিসিক্ত।
এক বছরেরও কম সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালের শেষে টম মর্ফি আমাকে তাঁর অফিসে ডেকে পাঠালেন। বললেন, ‘ড্যান এই ফেব্রুয়ারীতে অবসরে যাচ্ছেন। ড্যানের পদে আমি আপনাকে চাই।’
আমি বললাম, ‘আমার দ্বারা সম্ভব না, আমি সবেমাত্র একটা নতুন কাজ শুরু করেছি। এবিসি নেটওয়ার্ক কে চালাবে? আমাকে আরেকটু সময় দিন। আপনারা বরং আর একটু অপেক্ষা করুন।’ যদিও আমার বৈশিষ্ট হচ্ছে সকল সুযোগকে ‘হ্যা’ বলা, তথাপি এক্ষেত্রে অনেক দ্রুত মনে হচ্ছে।
আট মাস পরে টম আবার আমার কাছে আসলেন। বললেন, ‘আমি আপনাকে ড্যানের জায়গায় চাই। কোম্পানিটি চালু রাখার জন্য আপনার সহযোগিতা অপরিহার্য্য হয়ে পরেছে।’ ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্যাপিটাল সিটি এবং এবিসি টেলিভিশনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হয়ে গেলাম। মাত্র এক বছর নয় মাস অতিবাহিত হবার পর এই পদোন্নতি ঘটল। এই সংক্ষিপ্ত পথ পরিক্রমা আমাকে অনেক সময় হতবুদ্ধি করেছে অনেক সময় মনে হয়েছে আমি একটা অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে আছি। আমি কাউকে এত দ্রুত এত বড় বড় পদে পদোন্নতির পক্ষে কখনও মত দিবো না। আমি আরও একবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে চাই। যেভাবে আমি তাঁদের বিশ্বাস ও আস্থার পরশ পেয়েছি সেটিই প্রতিটি পদক্ষেপে আমাকে সফলতা এনে দিয়েছে।
আমার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হওয়ার সামান্য কিছুদিন পর ১৯৯৫ সালের বসন্তে দ্যা ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী মাইকেল আইজনার ক্যাপ সিটি এবং এবিসি টেলিভিশন কেনার জন্য অনুসন্ধান শুরু করলেন। এটি প্রাথমিকভাবে খুব একটা এগোল না। এরই মধ্যে টম আমাকে বললেন তিনি আমাকে তাঁর জায়গায় তাঁর উত্তরসূরি তথা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসাবে দেখতে চান। এবং তিনি সেটি অচিরেই কোম্পানির পরিচালনা পরিষদে উন্থাপন করবেন। সে বছরের জুলাই মাসে আমরা আইডাহোর সানভ্যালিতে অ্যালেন এন্ড কোম্পানির বাত্সরিক কনফারেন্স করছিলাম। আমি একটা পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে টমের সাথে কথা বলছিলাম। দেখলাম অদূরে ওয়ারেন বাফেট, আমাদের সর্বাধিক শেয়ারহোল্ডার আর মাইকেল আইজনার কথা বলছিলেন। তাঁরা টমকে হাতের ইশারায় ডাকলেন। টম চলে যাবার আগে আমি তাঁকে বললাম, ‘যদি আপনারা মাইকেলের কাছে কোম্পানি বিক্রি করে দেবার সিদ্ধান্ত নেন, তবে দয়াকরে আমাকে সময় থাকতে জানাবেন।’
খুব একটা বেশি দিন লাগল না। মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই মাইকেল টমের সাথে ডিজনির পক্ষে ক্যাপিটাল সিটি এবং এবিসি টিভি নেটওয়ার্ক কেনার জন্য আলাপ-আলোচনা শুরু করলেন।
চতূর্থ অধ্যায়
ডিজনির সান্নিধ্য
ডিজনির ক্রয় দলিল দস্তাবেজে অনেক বিস্তারিত লেখা রয়েছে আমি এখানে সুধুমাত্র আমার সাথে সংশ্লিষ্ট একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই। মাইকেল আইজেন গুরুত্ব দিয়েছেন যে আমার সাথে এবিসি কোম্পানির যে পাঁচ বছরের চ্যুক্তি হয়েছিল সে চুক্তি মোতাবেক আমি যেন পাঁচ বছর যৌথ কোম্পানিতে থাকি। মাইকেল ১৯৮৪ সাল থেকে ডিজনির প্রধান নির্বাহী। গত এক বছর যাবত সে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ছাড়ায় তিনি কোম্পানি পরিচালনা করে আসছেন। ১৯৯৪ সালের বসন্তে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ফ্রাঙ্ক ওয়েলস এক হেলিকাপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান। তখন থেকেই তিনি একাই কোম্পানি পরিচালনা করে আসছেন। এই চুক্তিনামা কার্যকর হলে ডিজনির আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মাইকেল আইজেন ভালোভাবে জানতেন দুই সত্বার এতো বড় এক কোম্পানি তাঁর একার পক্ষে সামলানো সম্ভব নয়। এটি আমার কাছে অনেক বড় বিষয় যে তাঁরা আমাকে চাকুরিচ্যুত করেন নায়। একদিন আমি এবিসি আর ক্যাপ-সিটির প্রধান নির্বাহী হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। তারপর আমাকে ডিজনি কোম্পানির মিডিয়া বিভাগ পরিচালনার দ্বায়িত্ব নিতে বলা হলো, এটাও ছিল পাঁচ বছরের চুক্তি। চাকুরিটা সন্ধেহাতীতভাবে আকর্শনীয় ছিলো, কিন্তু সে সময় আমার মনে হয়েছিল এটি একটা তেতো বড়ি আমাকে গিলতে হবে। (চলবে)