অনলাইন ডেস্ক : চিত্রনায়িকা রত্নার ঢালিউড চলচ্চিত্রে প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ার। ২০০২ সালে প্রথম ‘কেন ভালোবাসলাম’ ছবির মধ্য দিয়ে এ জগতে নাম লেখান এই নায়িকা। একটা সময়ে নিয়মিত অভিনয় করলেও পরে কমিয়ে দেন অভিনয়। প্রায় অর্ধশত ছবির এই নায়িকা জানালেন, অভিনয়-মেধা থাকার পরও এক দশক ধরে চলচ্চিত্র অঙ্গনে একজন নায়কের আধিপত্যের কারণেই কাজ কমে যায় তাঁর। আস্তে আস্তে সরে আসেন তিনি।
রত্না ২০০২ সালে স্কুলে পড়া অবস্থায় প্রথম ছবিতে অভিনয় করেন। তাঁর বিপরীতে ছিলেন নায়ক ফেরদৌস আহমেদ। সেই শুরু। দশম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময় তাঁর হাতে আসে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইতিহাস’ ছবির কাজ। এই ছবিতে কাজী মারুফের বিপরীতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। রাতারাতি খ্যাতি এনে দেওয়া এই ছবির কল্যাণে এই ঢালিউড নায়িকার হাতে একাধিক ছবির প্রস্তাব আসতে থাকে। কিন্তু তিনি অভিনয় করতে পারছিলেন না। এ প্রসঙ্গে এই নায়িকা বলেন, ‘সুপারডুপার একটি হিট ছবি করেই আমার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। কোথায় পড়ব, সেটা নিয়ে যেমন চিন্তিত ছিলাম, তেমনি ভালো কোনো স্ক্রিপ্টও পাচ্ছিলাম না। তখন থেকেই আমার অভিনয়ে একটা গ্যাপ হয়ে যায়। দেখা যেত প্রতিবছরের বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা–ক্লাস চলতই। আমার পড়াশোনার ব্যস্ততার জন্যই অনেকেই ভাবত, আমি কাজে অনিয়মিত।’
ব্যস্ততার মধ্যেই এই অভিনেত্রী ‘ধোঁকা’, ‘মরণ নিয়ে খেলা’, ‘নষ্ট’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘সন্তান আমার অহংকার’, ‘মন যেখানে হৃদয় সেখানে’, ‘সন্তানের মতো সন্তান’সহ বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় ছবি উপহার দিয়েছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তামান্না ফিল্মস নামে প্রযোজনা সংস্থাও গড়ে তুলেছিলেন রত্না। একসময় নিয়মিত অভিনয়ে ফিরলেও সাত-আট বছর আগে কাজ কমতে থাকে। গত কয়েক বছর কাজের পরিমাণ আরও কমে যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমাদের মিডিয়া একনায়ককেন্দ্রিক ছিল। সেই নায়ক শাকিব খান। যখন থেকে শাকিব খানের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু হলো, তখন থেকেই সব নির্মাতা শুধু শাকিবের ওপর নির্ভর করতে শুরু করলেন সবাই। শাকিব খান যাঁদের প্রস্তাব করতেন, তাঁদেরই তাঁর বিপরীতে নেওয়া হতো। যে কারণে শুধু আমরা শিল্পীরাই নই, অনেক ক্যামেরাম্যান, মেকআপম্যান, টেকনিশিয়ানরাও বেকার হতে থাকেন।’
‘করোনার আগে থেকেই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সংকটের মধ্যে পড়েছে। অলরেডি আগে থেকেই ধ্বংসপ্রায় ছিল। তার ওপর করোনা মহামারি আমাদের সিনেমাকে পুরোপুরি সংকটে ফেলে দিল। যতটা না আশার আলো দেখছিলাম, সেই জায়গা থেকে এখন অনেক শিল্পীর কাজ করে খাওয়ার মতো অবস্থা নেই,’ বলেন এই নায়িকা। বর্তমান অনেক তারকার বেকারত্ব নিয়েও ভাবছেন তিনি। বর্তমান অসহায় শিল্পীদের পাশে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি দাঁড়ালেও মধ্যম আয়ের শিল্পীদের পাশে সরকারের দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
দুই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে ঢাকাতেই থাকেন। মাঝেমধ্যে স্টেজ শো করলেও এখন বেকার। এর আগে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই অভিনেত্রী। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে নমিনেশন তুলেছিলেন। বর্তমান রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই সময়ে আমিই চলচ্চিত্রশিল্পী থেকে মনোনয়ন তুলেছিলাম। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে মাস্টার্সে পড়ি। তখন কিছুটা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমি এখন অ্যাডভোকেট, সেটা নিয়েই ব্যস্ত। চর্চা করছি। এখন রাজনীতি মাথায় নেই।’
বাসায় পড়াশোনা করেই বেশি সময় কাটছে রত্নার। একঘেয়েমি থেকে বাঁচতে মাঝেমধ্যে দোহারে গ্রামের বাড়ি চলে যান। চার বছর বিরতি দিয়ে ২০১৮ সালে তাঁর অভিনীত সর্বশেষ ‘টাইম মেশিন’ ছবিটি মুক্তি পায়। সুযোগ-সুবিধা হলে আবারও ফিরতে চান প্রিয় চলচ্চিত্রে।