Home আন্তর্জাতিক যেসব কারণে ট্রাম্পকে সমর্থনের পাশাপাশি নগদ অর্থ ছিটাচ্ছেন ইলন মাস্ক

যেসব কারণে ট্রাম্পকে সমর্থনের পাশাপাশি নগদ অর্থ ছিটাচ্ছেন ইলন মাস্ক

অনলাইন ডেস্ক : আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন আদায়ে নগদ অর্থ ছিটাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের ইলন মাস্ক। নির্বাচনে প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণকারী দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোটারের মধ্যে প্রতিদিন ১০ লাখ ডলার বিলি করছেন ইলন মাস্ক। একটি পিটিশনে (আর্জিতে) সই করা ভোটারদের মধ্যে বড় অঙ্কের আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে মাস্কের প্রচারশিবির ‘আমেরিকা পিএসি’। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে নাস্তানাবুদ করতেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে নিরন্তর কাজ করছে এ প্রচারশিবির।

গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম পেনসিলভানিয়ায় ওই পিটিশনে শুধু সই করলেই সেখানকার ভোটারদের দেয়া হচ্ছে নগদ অর্থ। সই করা ভোটারদের মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে দিনে একজনকে দেয়া হচ্ছে ১০ লাখ ডলারের অবিশ্বাস্য পরিমাণের নগদ অর্থ পুরস্কার।

ব্যবসায়িক ফায়দা বাড়িয়ে নিতে ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন ইলন মাস্ক এমনটি উল্লেখ করে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন গর্ডন বলেন, ‘ইলন মাস্ক নিজেকে এমন একজন (ভুক্তভোগী) ব্যক্তি হিসেবে দেখেন, যিনি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং নিয়ন্ত্রকদের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি মনে করেন যে সরকারী হস্তক্ষেপ তার গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, স্বচালিত গাড়ি প্রযুক্তির বিকাশ এবং বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।’

‘ইলন মাস্ক নিজেকে এমন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চান, যিনি নতুন পথ তৈরি করতে পারেন এবং (রাষ্ট্রীয়) নিয়মনীতির ফাঁদে বা বেড়াজালে পড়বেন না। যেসব নিয়ম সাধারণত প্রযুক্তির অগ্রগতির তুলনায় ৫, ১০ বা ২০ বছর পিছিয়ে থাকে,’ যোগ করেন অধ্যাপক গর্ডন।

মাস্ক ব্যতিক্রমী পথে এগোতে চান,’ তিনি যোগ করেন। তিনি মঙ্গল গ্রহে যেতে চান।’ এমনটি উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসির বিশ্লেষণে।

যদি নভেম্বরের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হন, তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ‘ব্যয় কমানোর’ দায়িত্ব দেয়া হবে। এমনকি তিনি যদি সুনির্দিষ্টভাবে সেই কাজ না-ও করেন, বিশ্লেষকরা মনে করেন যে ইলন মাস্ক নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্পকে সমর্থন দেয়ার জন্য তার কাছে প্রভাবশালী হবেন এবং পরবর্তীতে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তার শক্তিশালী প্রভাব থাকতে পারে।

কয়েক মাস আগেও ইলন মাস্ক এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক এতটা বন্ধুত্বর্পূণ ছিল না। তবে সেই সম্পর্কে দ্রুত পরিবর্তন আসতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন স্পষ্ট হতে থাকে। সম্প্রতি ইলন মাস্ক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ডেমোক্রেটদের সঙ্গে তার আর কোন সম্পর্ক নেই।

যেসব কারণগুলো ইলন মাস্ককে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন দেখাতে প্রভাবিত করছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অর্থনৈতিক নীতি এবং কর ব্যবস্থার সমর্থন। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে কর কমিয়ে এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কর সুবিধা দেয়া হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের ধনী উদ্যোক্তাদের উপকারে আসে। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে মাস্ক এই নীতিগুলোর প্রতি সমর্থন দেখাতে পারেন।

নিয়ন্ত্রণ মুক্ত বাজারের সমর্থক হিসেবে ইলন মাস্ক অবশ্যই ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া নিয়ম-কানুন শিথিলের পক্ষে থাকবেন। বিশেষ করে প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক খাতে। শীর্ষ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হওয়ায় এই ধরনের মুক্ত বাজার নীতির প্রতি সমর্থন করতে পারেন।

বাকস্বাধীনতার পক্ষে নীতির সমর্থক ইলন মাস্ক বারবার ট্রাম্পের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি টুইটারের মালিকানা নেয়ার পরই প্রভাবশালী এই সামাজিক মাধ্যমটিতে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টের উপর থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ট্রাম্পের বাকস্বাধীনতার পক্ষে থাকা মানসিকতা মাস্কের অবস্থানের সঙ্গে মিল রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মহাকাশ গবেষণা এবং প্রযুক্তি উন্নয়নের দিকে মনোযোগী ছিল, বিশেষ করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মাধ্যমে মহাকাশ কার্যক্রমে। মাস্কের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা স্পেসএক্স ও টেসলার মতো প্রতিষ্ঠান ট্রাম্পের এই ধরনের উদ্যোগের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখে।

এদিকে, আইন বিশেষজ্ঞরা ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচন ঘিরে ভোটার সরাসরি প্রভাবিত করতে এবং কোনো কাজের বিনিময়ে এভাবে অর্থ দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের আইনের লঙ্ঘন হয়ে থাকতে পারে।

 

Exit mobile version