তানজির আহমেদ রাসেল : যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা অধিকাংশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস চলছে। আগামী শীতকালীন সেমিস্টারেও অনলাইনে ক্লাসের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো । আর অনলাইন ক্লাস হলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ভিসা দিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। আর তা হলে বাংলাদেশিসহ প্রায় ১২ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের নিয়ম মেনে দ্রুত তাঁদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। কেউ এই নিয়ম না মানলে ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি, সিএনএন ও রয়টার্স ।
করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন কোর্সে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছে।
এমনকি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সমস্ত কোর্স অনলাইনে চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ক্যাম্পাসে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের বেলায়ও প্রযোজ্য হবে। এই পদক্ষেপের ফলে হাজার হাজার বিদেশী শিক্ষার্থী যারা যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, নন-একাডেমিক বা বৃত্তিমূলক পড়াশোনায় রয়েছেন তাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে । যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীরা প্রধানত: নন ইমিগ্রান্ট এফ-১ এবং এম- ১ ভিসা নিয়ে পড়াশোনা করতে যান । যারা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কোর্সে অংশ নেন তাদের দেয়া হয় এফ-১ ক্যাটাগরির ভিসা । আর যারা ভোকেশনাল কোর্স করতে যান তাদের দেয়া হয় এম-১ ক্যাটাগরির ভিসা। মার্কিন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট জানিয়েছে যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এফ-১ এবং এম-১ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আছে তাদের ক্লাস যদি সম্পূর্ণরূপে অনলাইনে পরিচালিত হয় তাহলে তারা শিক্ষার্থী হিসাবে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে না ।
হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্টের স্নাতক শিক্ষার্থী ভ্যালেরিয়া মেন্ডিওলা (২৬) এক প্রতিক্রিয়ায় সিএনএনকে বলেন, এটি অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক । এতে অনেক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে । আমাকে যদি মেক্সিকোতে ফিরে যেতে হয় তবে আমি ফিরে যেতে পারব, তবে অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সেটা পারবে না। আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশন অফ ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড ফার্নসওয়ার্থ বলেন, এই ঘোষণা অনেকের মতো আমাকেও অবাক করে দিয়েছে।
আমরা মনে করি এটি আরও বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা তৈরি করতে চলেছে । যুক্তরাষ্ট্রের ১৮’শ কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বকারী এই সংগঠনের নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এমন পরিস্থিতি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম না ।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ল্যারি বাকাউ এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশনা বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সময় স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার চ্যালেঞ্জগুলোর ভারসাম্য বজায় রেখে হার্ভার্ডসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক প্রোগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ও চিন্তাভাবনার ক্ষতি করবে । ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত থিংক ট্যাঙ্ক মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের মতে, এই সিদ্ধান্ত ২০১৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের ৮ হাজার ৭’শ টি স্কুলে নিবন্ধিত প্রায় ১২ লাখ শিক্ষার্থীর ওপর প্রভাব ফেলবে ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ৫.৫ শতাংশই বিদেশি । ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সর্বোচ্চ এক মিলিয়নেরও বেশি ছিল । মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের তথ্য মতে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার অবদান রেখেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৫ শতাংশ বেশি।
২০১৯ সালের ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন এক্সচেঞ্জ এর তথ্য মতে, ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করা বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮ হাজার ২’শ ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এই সংখ্যা ২০১৮ সালের তুলনায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ এবং ২০০৯ সালের চেয়ে তিনগুণ বেশি । উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পাঠানো দেশগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে ২০তম এবং শীর্ষস্থানীয় ২৫ টি দেশের তালিকায় রয়েছে ।কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত, কম্পিউটার, জীব বিজ্ঞান ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে অধ্যায়নরত আছে ।
মার্কিন প্রশাসন করোনা ভাইরাসের এই কঠিন পরিস্থিতিতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছে । মার্কিন সরকারের এই সিদ্ধান্তে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চীন এবং ভারতের শিক্ষার্থীরা, কারণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে এই দুই দেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সব চেয়ে বেশি।