অনলাইন ডেস্ক : পর্যায়ক্রমে দেশের ১৩ কোটি ৭৬ লাখ মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের প্রথমে টিকা দেওয়া হবে। বিশেষ কারণ ছাড়া ১৮ বছরের নিচে কাউকে টিকার আওতায় আনা হবে না।

মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক বৈঠক শেষে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) আবুল কামাল আজাদ (আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে চলমান প্রকল্পের আওতায় করোনার ভ্যাকসিন কেনা, সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য চার হাজার ২৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বিস্তারিত প্রকল্পের বিষয়াদি তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে রাজস্ব তহবিল থেকে ১২০০ কোটি টাকা দিয়েছেন উল্লেখ করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই টাকা থেকে আমরা ৯ শতাংশ মানুষের জন্য (দেড় কোটি মানুষ) সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি তিন কোটি ভ্যাকসিন আনার উদ্যোগ নিয়েছি। ওই টাকা ছাড়করণও করা হচ্ছে। এর বাইরে এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩১ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। তাদের টিকা দেওয়ার পর বাকি আরও ৪০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে।’

অনুমোদিত প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় ভর্তুকি মূল্যে কোভাক্স থেকে ভ্যাকসিন কিনে দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ কোটি ৪৪ লাখ মানুষকে ২ ডলার ডোজ মূল্যে দুই ডোজ করে দেওয়া হবে। এর জন্য ব্যয় হবে এক হাজার ১৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রাপ্যতা সাপেক্ষে কোভাক্স অথবা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি কিনে ১১ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৫৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে প্রতি ডোজ ৬ দশমিক ১০ ডলার মূল্যে দুই ডোজ করে দেওয়া হবে। এর জন্য ব্যয় হবে দুই হাজার ২৬২ কোটি ৮ লাখ টাকা। এছাড়া ভ্যাকসিন পরিবহনে শিপিং খরচ হবে ৬৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। পরিবহন ও অপারেশনের জন্য ৩৮৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা, সংরক্ষণ, কোল্ডচেইন ও সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা ব্যয় হবে ৩৪৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ভ্যাকসিন কেনার জন্য ব্যয় হবে চার হাজার ২৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

যারা পাবেন ভ্যাকসিন

দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর মধ্যে কারা করোনার টিকা পাবেন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবুল কালাম আজাদ তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এর কিছু ব্যক্তিশ্রেণির নাম এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এর বাইরে পরিকল্পনা কমিশনও কিছু শ্রেণির জনগোষ্ঠীর নাম প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত জনগোষ্ঠী হলো—কোভিড-১৯ সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা সম্মুখ সারির স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মজীবী, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, বন্দরগুলোতে দায়িত্বরত কর্মী, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মী, ব্যাংককর্মী, স্বল্প বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যারা কোভিডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, শ্রমঘন প্রতিষ্ঠানের কর্মী (গার্মেন্ট), পরিবহন শ্রমিক, শ্রমঘন হাটবাজার-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী, এতিমখানা এবং বিদেশগামী ও বিদেশফেরত সব ব্যক্তিবর্গ।’

প্রকল্প প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গত এপ্রিলে একনেকে পাস হওয়া মূল প্রকল্প ছিল এক হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এখন বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১৭২ কোটি টাকা। বাকি টাকা বিদেশি অর্থায়নে হবে। এপ্রিল ২০২০ থেকে জুন ২০২৩ মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। চলতি অর্থবছরে এই প্রকল্পে ৪৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও খরচ হবে চার হাজার কোটি টাকার মতো। কারণ, আমরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে চাই।’

ভারত থেকে টিকা আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছি। এটা কীভাবে কোত্থেকে আসবে, তা দেখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। তারা এ বিষয়টি বলতে পারবে।’