হিমাদ্রী রায়: নতুন করে একটি লাইন হৃদয়াঙ্গম করলাম স্পিরিচুয়াল বাট নট রিলিজিয়াস। আমার মতো করে যদি বলি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে আমার আস্থা নেই তবে মানুষের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যে আমি বিশ্বাস করি।

পরশু যখন ঘুম থেকে উঠলাম জশ স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। গায়ে নতুন জ্যাকেট দেখে আমার স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলাম কোথা থেকে কিনেছে সে জানালো স্কুল থেকে পেয়েছে। কোন এক প্রতিষ্ঠান তাদের ক্লাসের প্রতিটি বাচ্চাকে শীতের উষ্ণতা উপহার দিয়েছে। গতকাল নিজে গিয়েছিলাম জশকে স্কুল থেকে আনতে, জানার চেষ্টা করলাম ঐ প্রতিষ্ঠান কে বা কারা। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিনয়ের সঙ্গে তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলেন।
আমার এক পলিশ কলিগ আর্থিকভাবে দত্তক নিয়েছেন একটি মেয়েকে সোমালিয়ায় অর্থাৎ মেয়েটির পড়াশোনা যোগান দিচ্ছে সে কানাডায় বসে মাসে ২৭ ডলার খরচা আসে তার। সে নিজের থেকে এই গল্প আমায় বলেনি কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে সাদা মহিলা কৃষ্ণবর্ণের বাচ্চার সাথে কথা বলছে দেখে কৌতুহল থেকে জানা হলো। আমরা ভালো কাজ যে করছি না তা নয়। কিন্তু এমন কাউকে দেখবো বলে ‘যখন দাঁড়াই গলির কোণে মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’। প্রচারের আড়ম্বর এতোটাই থাকে যে এর সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। তবু ঢোল পিটিয়ে, পিঠ চাপড়িয়ে হলেও মানবিক কাজ হোক তাতেও মাথা নত হয়ে আসে।
ফেইসবুক এর পোষ্ট থেকে পত্রিকার পাতা সর্বত্রই লুটপাট, বাটাবাটি আর দুবৃত্ত দ্বারা রাজ করার খবর কিংবা খবরকে পুঁজি করে সুযোগ সন্ধানীদের নিজেকে প্রচার পাওয়ার খবর।
বিবেকানন্দ বলেছিলেন, যদি ভারতবর্ষ মারা যায় তবে আধ্যাত্মিকতার মৃত্যু হবে। সেখানে রাজত্ব করবে কাম এবং বাসনা, অর্থ মানে টাকা হবে পুরহিত তার পূজার উপকরণ হবে পশুবল প্রতারণা, নিষ্ঠুর প্রতিযোগিতা বলির বস্তু হবে মানবাত্মা।

১২ জানুয়ারি ছিলো স্বামী বিবেকানন্দের জন্মতিথি ১৮৬৩ থেকে ২০২৩ এ এসেও কি প্রাসঙ্গিক তাঁর দর্শন।

সর্বত্র প্রতিযোগিতা মানুষকে মেশিনে রুপান্তরের চেষ্ঠা। আমরা আমাদের প্রজন্মকে, তাদের মস্তিষ্ককে ফলো করতে বলি হৃদয়কে নয়। মস্তিষ্ক যন্ত্রকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে সত্যি। কিন্তু আমার দুঃখে যন্ত্র চোখের জল ঝরাতে পারে না। মানুষকেই মানুষের দুঃখে কাঁদতে হয়।

হৃদয়হীন সংসারে তাই দেখি আজ নিষ্ঠুর, লোভী, দুর্নীতিবাজ, সা¤প্রদায়িকতার ভীড়ে সেই কিছু মানুষই এর প্যারালাল ফোর্স হয়ে অগোচরে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, তাদের ভালোবাসায় আজো গোলাপ ফুটে।

ডিসেম্বরের ২২ তারিখ ফোনের নোটিফিকেশনে অনেকগুলি কোমলপ্রাণ মৌমাছির মতো বাচ্চারা আমার জন্মদিন উয়িস করে ভিডিও বার্তা পাঠায়। না আমি আপ্লæত হয়ে এর কোন পোস্ট দেইনি, আমার নিজেকে এতটা ভালোবাসার যোগ্য মনে হয়নি। তবে এর জর খুঁজতে যেয়ে মানবিক চরের সন্ধান পেলাম। এরা সবাই ‘ছায়াতল বাংলাদেশ’ নামে এক সংগঠন দ্বারা পরিচালিত স্কুলের ছাত্রছাত্রী। কথা হচ্ছিল স্কুলের ভলান্টিয়ার শিক্ষিকা কাকলি কাদেরের সঙ্গে। তার সত্য উচ্চারণ মুগ্ধ করেছে। প্রোফাইলে সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাদের নিয়ে এদের কাজ আমাকে সেই মানবিক মানুষের উষ্ণতা দিয়েছে।

মনে মনে দীক্ষা চাইলাম বুদ্ধির আগে যেন আমার বোধ জাগ্রত হয়। উদারতাই ধর্ম সেই ধর্মের অনন্ত হাতই কেবল পৃথিবীর সকল মানুষকে আলিঙ্গন করতে পারে।
বিবেকানন্দ বলেছিলেন আমি সেই দেবতার পূজারী অজ্ঞানে যাদের মানুষ বলে ডাকি।