তাজুল ইসলাম : আমাদের হৃদয়ের গভীরে সদা জাগ্রত ভালোবাসায় উচ্চারিত ভাষার নাম ‘বাংলা’। আমাদের ধ্যান, ধারণা, জ্ঞান ও মননে যে ভাষা আমরা লালন করি, তার নাম ‘বাংলা’। আমাদের মুখের ভাষা, প্রাণের আবেগের উচ্ছলতা কেড়ে নেবে, এমন সাধ্য এখন আর কারো নাই। এ কারণেই বরকত-সালাম-রফিক-জব্বার’দের নাম আমাদের চেতনায়, হৃদয়ের মণিকোঠায় শাণিত তরবারির মত সমুজ্জ্বল থাকে প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত। তাদের মত আরো অনেক জানা-অজানা শহীদ আমাদের বাঙালিদের কাছেই নয়, বিশ্বব্যাপী মহানায়কের মর্যাদা পেয়েছে। আকাশের অসংখ্য নক্ষত্র এসব কালজয়ী নক্ষত্রদের কাছে ম্লান মনে হয়ে গেছে। মৃত্যু নেই এসব কালজয়ী মহানায়কদের। জীবন সংগ্রামে আমরা যখন বাধাগ্রস্ত হই, হতাশ হয়ে পড়ি, অজানার উদ্দেশ্যে দুরু দুরু বক্ষে পথে পা ফেলি, তখন এই কালজয়ী ভাষা সৈনিকরাই আমাদের চলার পথের পাথেয় হয়ে কাজ করে, প্রেরণা জোগায় নির্ভীক চিত্তে। আমার মত অতি সাধারণ এক মানব সন্তান আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই সব শহীদদের, যাদের জন্য আজ আমরা গর্ব ভরে মাথা উঁচু করে বাংলা ভাষায় কথা বলি।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু
গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি।
আমার সোনার দেশের
রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।”
সবাইকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।
একুশে ফেব্রুয়ারির যে চেতনা আমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে সাহায্য করেছে, সেই দিনটিকে শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বুকে ধারণ করতে হবে। ভাষার মাস নিয়ে আমাদের মধ্যে একটি অন্য রকম আবেগ কাজ করে। ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা! তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!’ কবির এ অমিয় বাণী বাংলা ভাষাভাষীর হৃদয়ের কথা। অতুল প্রসাদ সেনের কালজয়ী এ গান মিশে আছে বাঙালির ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে।
বিশ্বে মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার জন্য আত্মাহুতি দেওয়ার ঘটনা অতি বিরল। এ জন্য জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত। সেই গর্ব ও অহংকার নিয়ে বাংলা ও বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে আমাদের। সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন করতে হবে। রক্ষা করতে হবে মাতৃভাষার মান। এর মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সুমহান মর্যাদার আসনে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে এ বোধ জেগে উঠুক আমাদের সবার মধ্যে- এই প্রত্যাশা আমাদের।