অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে পৌঁছানোর আশায় মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চল থেকে হাজার হাজার অভিবাসী পদযাত্রা শুরু করেছেন। এই অভিবাসীদের বেশিরভাগই দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশের। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি ও ভারতীয় অনেক অভিবাসীও রয়েছেন। এই পদযাত্রায় আরও অনেকে যুক্ত হবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন অভিবাসীরা।

সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রায় ৭ হাজার অভিবাসী এই পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন; যাদের বেশিরভাগই দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকার নাগরিক। অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তমুখী পদযাত্রায় হাজার হাজার শিশুও রয়েছে।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের সাথে সীমান্তে অভিবাসীদের ঢল সামলানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার দেশটিতে সফরে যাবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তার এই সফরের আগে মেক্সিকো থেকে পায়ে হেঁটে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছেন ওই অভিবাসীরা।

অভিবাসীদের ঢল বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্প্রতি মেক্সিকোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর দুই দেশের যৌথ সীমান্ত অতিক্রমকারী অভিবাসীদের সংখ্যার ‘‘নাটকীয়’’ উল্লম্ফন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমোন্তে আটককৃত অভিবাসীর সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, কেবল চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারী ২ লাখের বেশি অভিবাসীকে আটক করেছে।

অভিবাসীদের নতুন এই পদযাত্রা বড়দিনের সন্ধ্যায় গুয়েতেমালা সীমান্ত লাগোয়া মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তাপাচুলা থেকে শুরু হয়েছে। দারিদ্র্য থেকে মুক্তির যাত্রা লেখা একটি ব্যানার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের দিকে হাঁটছেন ওই অভিবাসীরা।

স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, পদযাত্রায় অংশ নেওয়া বেশিরভাগ অভিবাসীই কিউবা, হাইতি এবং হন্ডুরাসের বাসিন্দা। তবে কেউ কেউ বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দূরের দেশ থেকেও এই পদযাত্রায় শামিল হয়েছেন।

অনেকে বলেছেন, ট্রানজিট পারমিটের জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করার পর তারা এই পদযাত্রায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অভিবাসী অধিকার কর্মী লুইস গার্সিয়া ভিলাগ্রান বলেছেন, উত্তরে গণ পদযাত্রায় যোগদান করা অনেক অভিবাসীর জন্য এটাই শেষ অবলম্বন; যারা তাপাচুলায় দীর্ঘদিন ধরে আটকা ছিলেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত (গুয়েতেমালা লাগোয়া) খোলা রয়েছে এবং এই সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮০০ থেকে ১ হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ছেন। আমরা যদি তাপাচুলা থেকে বের না হই, তাহলে শহরটি ভেঙে পড়বে।

‘‘আমরা মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষকে বলেছি আমাদের উপকূলীয় মহাসড়ক দিয়ে যাওয়া এবং হাঁটা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’’

অভিবাসীরা ২৪ ডিসেম্বর ভোরে যাত্রা শুরু করার পর প্রথম সকালেই প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন। হন্ডুরাসের একজন অভিবাসী বলেছেন, তিনি একটি অপরাধী চক্রের হাত থেকে বাঁচতে নিজ দেশ ছেড়েছেন। ওই চক্রের সদস্যরা তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে।

জোসে স্যান্তোস নামের এক অভিবাসী ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আমি ভয় পেয়ে মেক্সিকোতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে বলে আশা করেছিলাম।

গত শুক্রবার মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর বলেছেন, তিনি অভিবাসন নিয়ে উদ্বেগ মোকাবিলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আবারও কাজ করতে আগ্রহী। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে মেক্সিকোর এই প্রেসিডেন্টের।

সূত্র: বিবিসি।