অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হন আর তার কী প্রভাব ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মহাদেশের নিরাপত্তায় পড়ে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপ। নির্বাচনের বাকি আছে অল্প কয়েক দিন। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার স্টাব বলেন, ‘আমরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি। কারণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই নির্বাচনের প্রভাব রয়েছে।
জরিপে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হন আর তার কী প্রভাব ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মহাদেশের নিরাপত্তায় পড়ে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপ।
ইউক্রেন ও ইউরোপের নিরাপত্তার প্রশ্নে অনেক ইউরোপীয় কর্মকর্তাই বলেন, তারা রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আবার ক্ষমতায় আসা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ন্যাটো দেশগুলোকে আক্রমণ করতে উৎসাহী হয়ে উঠতে পারেন।
চলতি মাসে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিকেই যুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী করেছেন।
যদিও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল। ট্রাম্প বলেছেন, আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জিতলে এক দিনেই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগেও হতে পারে।
তবে তিনি কিভাবে সেটি করবেন তা বলেননি।
আবার ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চান না এমন কথাও ট্রাম্প বলেননি। পশ্চিমা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়ই রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। অন্যদিকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস নির্বাচনে জয়ী হলে ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার নীতি অব্যাহত রাখবেন, আবার উত্তেজনা বৃদ্ধিও এড়িয়ে চলবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের তীব্র সমালোচক কমলা হ্যারিস।
তিনি বলেছেন, নির্বাচনে জিতলে যুদ্ধে ইউক্রেনের হাতই শক্তিশালী রাখা এবং ন্যায়সংগত শান্তি অর্জন নিশ্চিত করার জন্য তিনি কাজ করবেন।
যদিও তিনি ইউক্রেন নিয়ে বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা এখনো প্রকাশ করেননি। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইউক্রেন ও এর ইউরোপীয় সমর্থকরা একটি কঠিন সময় পার করছে। মস্কোর সেনাবাহিনী পূর্ব ইউক্রেনে লড়াইয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো তুমুল রুশ হামলায় তছনছ হওয়ার পর সামনে আসছে শীতের এক কঠিন সময়।
ইউরোপের দেশগুলোতেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি মহাদেশজুড়ে সরকারি আর্থিক খাতের অবস্থা টান টান। রাশিয়াবান্ধব জনবাদী রাজনৈতিক দলগুলো অস্ট্রিয়া, পূর্ব জার্মানি ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভালো ফল করেছে।
সে রকম ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে হঠাৎ নীতির যেকোনো পরিবর্তন ঘটে গেলে প্রধান যে পদক্ষেপটি ইউক্রেনের জন্য সহায়ক হতে পারে বলে ইউরোপ আশা করছে, তা হলো রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের মুনাফা কাজে লাগানো।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার জব্দ করা আর্থিক সম্পদ থেকে যে আয় হচ্ছে তা থেকে ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত জুনেই সম্মত হয়েছিল শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭। ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য জি৭ এই অর্থ দিতে রাজি হয়। গত সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বোঝাপড়া হয়েছে। এই চুক্তির ফলে ভবিষ্যতে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলেও ইউক্রেন এই অর্থ দিয়ে অস্ত্র কিনতে পারবে।
সূত্র : এনডিটিভি