অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতির আশঙ্কা বাড়ছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় পার্টিই এ নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি করোনা সংকটের মধ্যে বাধ্য হয়ে পার্লামেন্টের অধিবেশন ডেকেছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। খবর ডয়চেভেলের

করোনায় সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা পার্লামেন্টের বদ্ধকক্ষে সশরীরে উপস্থিত থেকে বিতর্কে যোগ দেবেন, ভোটাভুটিতে অংশ নেবেন, এমনটা আশা করা কঠিন। তবে পরিস্থিতির চাপে রবিবার এমনটাই নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের বিপর্যয় প্রতিরোধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ নিতে চান তিনি। চলতি সপ্তাহেই প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশনে বিরোধী দল সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি সিদ্ধান্তকে ঘিরে ঘোর দুশ্চিন্তায় পড়েছে। করোনা সংকটের সময় ভোটগ্রহণ আদৌ সম্ভব করতে বিভিন্ন রাজ্যে সব ভোটারদের ডাকযোগে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ডেমোক্রেট গভর্নররা এমন ‘মেইল-ইন’ ব্যালটের উদ্যোগ নিচ্ছেন। ফলে দেশের প্রায় অর্ধেক ভোটার ডাকযোগে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু ট্রাম্প এমনই এক সংকটের সময়ে ডাক বিভাগের ব্যয় সংকোচের যে বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার ফলে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল জানতে দীর্ঘ বিলম্ব ঘটতে পারে।

এমন এক প্রেক্ষাপটে ডাক বিভাগের অবকাঠামো ও কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে মার্কিন পোস্ট মাস্টার জেনারেল লুইস ডিজয় ও অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের কংগ্রেসে তলব করেছেন ডেমোক্রেটিক দলের নেতারা। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলে দেশ জুড়ে চিঠিপত্র বিলির গতি ইতিমধ্যেই যেভাবে কমে গেছে, তার ফলে পোস্টাল ব্যালটকে ঘিরে ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন বিরোধী এমপিরা। ডাক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জেরা করে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে চান তারা। প্রয়োজনে পালটা পদক্ষেপ নিয়ে ডাক বিভাগের কাজে বিঘ্ন দূর করার কথাও ভাবছেন তারা। আইনি পথে ডাক বিভাগে কোনো রকম পরিবর্তন রোখার চেষ্টা করতে পারেন তারা। বেশ কয়েকটি রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমন আভাস দিয়েছেন।

বিরোধীদের অভিযোগ, জনমত সমীক্ষায় পিছিয়ে পড়ে নভেম্বরের নির্বাচন বানচাল করার মতলব করছেন ট্রাম্প। তিনি প্রমাণ ছাড়াই বারবার দাবি করছেন যে, বেশি ‘মেইল-ইন’ ভোট দেওয়া হলে জালিয়াতি হতে পারে। অথচ ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রতি চার জন ভোটারের মধ্যে একজন এভাবে ভোট দিয়েছিলেন।

সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চললে ডেমোক্রেটিক দল ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ডাক বিভাগের সব পরিবর্তন নাকচ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে শনিবারই এক প্রস্তাব অনুমোদন করতে পারে। তবে পার্লামেন্টে নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে সেটা সম্ভব হলেও উচ্চকক্ষে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দল বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই রাজ্য স্তরেও একই উদ্যোগ নিয়ে ও একাধিক আদালতের শরণাপন্ন হয়ে চাপ বাড়াতে চায় বিরোধীরা। ট্রাম্পের প্রচার অভিযানের আর্থিক মদতদাতা হিসেবে পোস্ট মাস্টার জেনারেল ডিজয় পার্লামেন্টে আসতে অস্বীকার করলে ডাক বিভাগের পরিচালকমণ্ডলীর মাধ্যমে তাকে পদচ্যুত করার কথাও ভাবছেন ডেমোক্র্যাটরা।

বিকল্প পদক্ষেপ হিসেবে করোনা সংকটের কারণে ডাক বিভাগের জন্য এককালীন বাড়তি আর্থিক অনুদানের উদ্যোগের কথাও ভাবছে ডেমোক্র্যাটরা। ট্রাম্প প্রথমে এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করলেও কোনো বৃহত্তর প্যাকেজের অংশ হিসেবে ডাক বিভাগের জন্য বাড়তি অর্থ সংস্থানের পথে বাধা না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। রিপাবলিকান দলের একাংশও এমন অনুদানের পক্ষে।