অনলাইন ডেস্ক : বৈশ্বিক মহামারি থেকে দেশের জনগণকে রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেছেন, করোনা মহামারিতে অর্থনীতির সকল হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বেই অর্থনীতিসহ সবকিছুই স্থবির হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে। এই মহাসঙ্কট থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে সরকারকে বিপুল সংখ্যক প্রণোদণা ঘোষণার পাশাপাশি বিভিন্নখাতে তাৎক্ষণিক ব্যয় করতে হয়েছে। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থ-বছরের সম্পুরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ওয়শিকা আয়শা খান ও তাহজীব আলম সিদ্দিকী, বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং বিএনপির হারুনুর রশীদ। সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটটা একটা এক্সেপেন্ডিসারের পাসপেকটিভ থেকে দিয়েছি।
যদি বাজেট তৈরি না করি তাহলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ তোলার কোন ব্যবস্থা নেই। বাজেট তৈরি করেছি দেশের মানুষকে সামনে রেখে, দেশের মানুষকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে। বৈশ্বিক করোনার কারণে বাজেটে রাজস্ব আয়-ব্যয় ও জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পুননির্ধারিত করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য-সুরক্ষা বিভাগ, ত্রাণ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ দিতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এবারের বাজেট সহনীয় বাজেট, অর্থনীতির পাশাপাশি একটা মানবিক বাজেট। দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। মানুষকে বাঁচাতে না পারলে বাজেট কার জন্য? তাই আসুন সবাই মিলে দুর্যোগ মোকাবিলা করি। অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেট সকলের বাজেট। প্রধানমন্ত্রী আমাদের গ্রামে যাওয়ার জন্য বলেছেন, গ্রামের মানুষকে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। যারা গ্রামীণ মানুষ- পান দোকানদার, মুদি দোকানদার তাদের সবাইকে রক্ষা করতে হবে। তাদের দায়িত্ব নিয়েই এই বাজেট করেছি। অন্যবার রাজস্ব অর্জন করি এবং রাজস্ব খরচ করি। আমি এবার রাজস্ব খরচ করব, তারপর রাজস্ব অর্জন করব। পে অ্যাজ ইউ আর্ন। এখন যদি খরচ না করি মানুষ বাঁচবে কেমন করে? আর মানুষকে যদি বাঁচাতে না পারি দেশ কার জন্য? অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটে ৬ লাখ ৭০ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা থেকে নিট বরাদ্দ ৫ লাখ এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনা দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য সেবা খাত, স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
করোনা মোকাবিলায় সরকার সফল: সম্পুরক বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, সরকার যেভাবে প্রাণঘাতী করোনা পরিস্থিতি থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করেছেন এবং করছেন- তাতে নিন্দুকদেরও মুখের কথা বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের মুখ রক্ষার সমালোচনা কিংবা নিন্দা জনগণের কাছে ধোপে টিকছে না। কোভিড-১৯-এর কারণে স্বাস্থ্যখাতসহ অন্যান্যখাতে ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে। এতো কঠিন সময়ে জাতীয় বাজেট তৈরির কোন নজীর আছে বলে মনে হয় না। প্রথম মানুষকে বাঁচাতে হচ্ছে, পরবর্তীতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে হবে- এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরকার এগিয়ে চলেছে।