নাদিরা তাবাস্সুম : শিক্ষা সম্পর্কে সাফিদ যতটুকু জেনেছে তা হলো, শিক্ষা বলতে স্কুল বা স্কুলের মতো সুশৃংখল পরিবেশে শেখানো শিক্ষা পদ্ধতি যা অপ্রতিষ্ঠানিক সামাজিকতা পদ্ধতির বিপরীত। শিক্ষার উদ্দেশ্যমূলক কার্যক্রম আছে যা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে পরিচালিত হয়; যেমনÑ জ্ঞান বিতরণ, দক্ষতা অর্জন এবং চারিত্রিক গুণাবলী। এগুলোর সাথে দয়া মায়া এবং সততার বিকাশও অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষাগ্রহণ একটা পদ্ধতি যা পরিবর্তন ঘটায়, যা অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলাফল হিসাবে ঘটে এবং যা ভবিষ্যৎ শিক্ষাগ্রহণ ও উন্নত দক্ষতা বৃদ্ধি করে। শিক্ষার্থির মাঝে জ্ঞান, দৃষ্টিভংগী বা আচরণে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। তাছাড়া মানুষ যেসকল উৎস থেকে জ্ঞান আহরণ করে সেগুলো প্রধানত – প্রজ্ঞা, কর্তৃত্ব, যৌক্তিক অবরোহ, আরোহ, অভিজ্ঞতা এবং বিজ্ঞান।
অভিজ্ঞতা হলো সবচেয়ে পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত। বন্ধু দীপকও একই কথা বলেছে। কিন্তু সাফিদের প্রশ্ন – শিক্ষা বলতে যদি এই বোঝানো হয় তা হলে কেন আধুনিক সভ্যযুগের মানুষ যেহেতু শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, গবেষণা ইত্যাদি বিষয়ে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো সত্তে¡ও সে অনুযায়ী সকল প্রকার অন্যায়, অত্যাচার, সন্ত্রাস, হানাহানি ও যুদ্ধ মুক্ত পরিবেশে শান্তিপূর্ণসহ অবস্থানে বসবাস করতে পারছে না। তার পরিবর্তে উল্টো অবস্থানে অবস্থান করছে।
সকলের মাঝে অজানা এক চরম হতাশা, অস্থিরতা, চঞ্চলতা ও যন্ত্র নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষমতা, অহংকার, লোভ, স্বার্থপরতাসহ অন্যান্য সকল নেতিবাচক চিন্তা ও কাজের অবাধ বিচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
দীপক বলে- ঠিকই বলেছ। প্রকৃতপক্ষে শরীর ও মন নিয়ে মানুষ, তাই শরীর সুস্থ রাখার জন্য যেমন প্রয়োজন হয় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা তেমনই মনের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন হয় নিয়মিত পজিটিভ চিন্তা এবং পজিটিভ শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার অনুশীলন। মন সব সময় কোন না কোন চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, কোন সময়ের জন্য অবসর থাকে না কারণ চোখ দিয়ে বাইরের জগতের যা কিছু দেখে, কান দিয়ে যা কিছু শুনে, তার সবই মনের মাঝে চিন্তার উৎপত্তি ঘটায়।
মানুষের চারপাশে ঘটে যাওয়া সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক ঘটনা দুর্ঘটনাগুলো মনের মাঝে নেগেটিভ চিন্তার জন্ম দেয়। তাই পজিটিভ-নেগেটিভ এবং শুভ-অশুভের দ্ব›দ্ব অহরহ মনের মাঝে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। শিশু বয়স থেকে এজন্যই বেশি বেশি পজিটিভ চিন্তা এবং পজিটিভ শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে এটা সত্য যে, পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ শারীরিক বৈশিষ্টে যেরূপ ভিন্ন মানসিক বৈশিষ্টে সেরূপই ভিন্ন। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা কাউকে তিনি সঠিক পথে পরিচালিত করেন আবার কাউকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন। তিনি পবিত্র কোরআনের সূরা নাহলের ৯৩ নং আয়াতে বলেছেন, ‘আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে এক জাতি করতেন; কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন’। সূরা রা’দের ২৭ নং আয়াতে তিনি আরও বলেছেন, ‘বলুন, নিশ্চয়ই যাকে ইচ্ছা আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন, তাঁর দিকে রুজূকারীকে সুপথ প্রদর্শন করেন’।
সাফিদ- এজন্যে তিনি মানুষকে সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য পবিত্র কোরআন নাযিল করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ উত্তম বাণীর কিতাব নাযিল করলেন, যার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরীর রোমাঞ্চিত হয়। তাদের দেহ ও অন্তর শান্ত হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে, এটাই আল্লাহর হেদায়েত, ইচ্ছামত হেদায়েত প্রদান করেন, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার আর কোন পথ প্রদর্শক নেই’। (সূরা যুমার : আয়াত ২৩)
‘কোরআনকে উপদেশার্থে সহজ করেছি, কে আছে তা গ্রহণের?’ ( সূরা কামার : আয়াত ১৭)
‘তা ( কোরআন) বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ মাত্র। আর এর খবর অনতিকাল পর নিশ্চয়ই জানবে’ ( সূরা সোয়াদ: আয়াত ৮৭-৮৮)
‘হে মানুষ! তোমাদের নিকট এসেছে উপদেশ তোমাদের রবের পক্ষ হতে এবং অন্তর রোগের ওষুধ এসেছে; মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত। বøæন, (এ কোরআন) আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায়, এতে যেন সন্তুষ্ট হয়। তাদের পুঞ্জীভূত ধন হতে এটা উত্তম’ (সূরা ইউনুস : আয়াত৫৭-৫৮)।