অনলাইন ডেস্ক : মধ্য পৌষে এসে আসল রূপে আবির্ভূত হয়েছে শীতকাল। প্রায় সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে শীতে যবুথবু অবস্থা জনজীবনের। এতদিন যারা হালকা গরম কাপড় গায়ে দিয়েছিলেন তারা শুক্রবার অপেক্ষাকৃত আরও মোটা কাপড় নামিয়েছেন আলমারি থেকে। পাশাপাশি কানটুপি ও গলায় মাফলার প্যাঁচিয়ে রাজধানীর মানুষকে ঘর থেকে বের হতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার দেশের পাঁচ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। শুক্রবার সেই পাঁচ জেলার মধ্যে তিনটি শৈত্যপ্রবাহমুক্ত হয়। কিন্তু অবশিষ্ট দুই জেলার পাশাপাশি নতুন আরও দুটিতে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। ফলে বর্তমানে চার জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বইছে।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে স্থবির ছিল ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এর ফলে তিনটি ফ্লাইট নামতে পারেনি ঢাকায়। এর মধ্যে দুটি ভারতের কলকাতায় এবং একটি মিয়ানমারের ইয়াংগুন বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।
শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮, নওগাঁর বদলগাছীতে ১০ আর যশোরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
সাধারণত তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সেই হিসাবে উল্লিখিত এলাকাগুলোতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসছে বাতাস, যেটিকে আমরা ‘উত্তরা বাতাস’ বলে থাকি। ঢাকায় বর্তমানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার। এই বাতাস কনকনে হিম বয়ে এনে হাড় কাঁপুনির সৃষ্টি করেছে। আগামী আরও ৪-৫ দিন তাপমাত্রার এ নিম্নাবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য আরও কমে যাবে। ফলে ঠান্ডার অনুভূতি আরও বাড়বে।
বিএমডি জানায়-বৃহস্পতিবার রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, নীলফামারী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। শুক্রবার নওগাঁ, পঞ্চগড়, যশোর এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী, পাবনা ও নীলফামারী থেকে শৈত্যপ্রবাহ দূর হয়েছে। পঞ্চগড় ও যশোর অঞ্চলে নতুন করে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। শুক্রবার তা হয়েছে ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু শীতল বায়ুপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকার আকাশে মেঘ থাকায় খুবই অল্পসময়ের জন্য দেখা যায় সূর্যের মুখ। ফলে শীতের অনুভূতি না কমে বরং বেড়েছে।
এদিকে বিএমডি জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। আগামী তিন দিন পর পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এ সময়ে সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।