অনলাইন ডেস্ক : ক্ষমতায় থাকাকালে নিজ সরকারের ভুলের খেসারত খালেদা জিয়া-তারেক রহমান দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, মনের ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সরকারে থাকতে ভুল-ভ্রান্তি আমাদের কিছু ছিল। যার খেসারত আজকে জনগণ দিচ্ছেন, আজকে আমরা দিচ্ছি। খেসারত তারেক রহমান দিচ্ছেন, খেসারত খালেদা জিয়াও দিচ্ছেন।
যারা অপকর্ম করেছে তারা খেসারত দেয় নাই, তারা কিন্তু আমাদের আশপাশে আরও বলীয়ান হওয়ার চেষ্টা করছে।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে সদ্যপ্রয়াত সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের স্মরণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গয়েশ্বর বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনার প্রকৃত দোষীরা এখনও বেঁচে আছে, নিরাপদে আছে এবং ভালো আছে। এ ঘটনা বাংলাদেশের ভাবনা থেকে হয়নি, এ ভাবনার পরিকল্পনা অন্য কোথাও বসে করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বকে কবর দিতেই ২০০৪ সালে সংঘটিত একুশে আগস্টের ঘটনা ‘এক-এগারোর রি-এরেজমেন্ট’। ২১ আগস্টের ঘটনাটা শেখ হাসিনাকে মারার বড় চক্রান্ত- এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না। যদি থাকে- এ চক্রান্ত ছিল সেদিন জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বের কবর দেয়া। এটা একটা রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে বিএনপির ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে।
তারা দেশে আছে, দেশের বাইরেও আছে। সেটা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কারও অজানা থাকার কোনো কারণ নাই। সেটা দেশি-বিদেশি গোয়েন্দারা যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করে তাহলে এটা তাদের নখদর্পণে থাকার কথা। যেহেতু এটা একটি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ব্যাপার, সেই কারণে আসল ঘটনা কখনও আলোর মুখ দেখবে না, আপনারা-আমরা জানব না।

তিনি বলেন, এই যে মিথ্যা দিয়ে সত্যকে চাপা দেয়া, দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে সামগ্রিক রাজনীতিকে দুর্ঘটনায় ফেলা। ২১ আগস্ট এই রকম ঘটনা ১/১১ এর কোনো রি-এরেজমেন্ট হতে পারে। ১/১১-এ কে ভিকটিম হয়েছে? বিএনপি হয়েছে, খালেদা জিয়া হয়েছে। ১/১১-এ লাভবান হয়েছে কে? হাসিনা ও আওয়ামী লীগ। তাহলে ডাউট অব দ্য বেনিফিসারি যদি বলা হয় ১/১১-এর মাধ্যমে বেনিফিট হয়েছে বিএনপির অতি মুখোমুখি প্রতিপক্ষ।

২১ আগস্টের ঘটনার দিনটি ‘ভালো দিন নয়’ অভিহিত করে ওই সময়ে সেপ্টেম্বরে ভারতীয় টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারের বক্তব্য উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ওই দিনটি কোনো ভালো দিন আমি বলি না। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই কারও জন্য কাম্য নয়। দুই শতাধিক আসন নিয়ে তখন বিএনপি ক্ষমতাসীন। একটা স্টেবল গভর্মেন্ট ক্ষমতাসীন সরকার কখনই চাইবে না সেই সরকারকে আনস্টেবল করতে। ২১ আগস্টের ঘটনাটি রাষ্ট্রকে আনস্টেবল করা, উসকানি দেয়া, সুড়সুড়ি দেয়া, অর্থাৎ সরকারকে বিব্রত করা দেশে-বিদেশে সব ক্ষেত্রে।

তিনি বলেন, এটা যদি প্রতিষ্ঠিত হতো, এটা যদি জনগণ বিশ্বাস করতে পারত যে, এটা সরকার করেছে অথবা খালেদা জিয়া করেছে বা তারেক রহমান করেছে। তাহলে সেদিন সরকার থাকার কথা না। তখন একটা পাতা নড়ে নাই, একটা আওয়াজ হয় নাই। বিশ্ব শক্তি বুঝত যে, পিপলস হেজ দেট এক্সসেপটেড দিস ওকারেন্স। অর্থাৎ এটা জনগণের মাঝে বোঝা হয়ে গেছে যে, এই অপকর্ম সরকার করতে পারে না, একটা গণতান্ত্রিক সরকার করতে পারে না। এটা একটা রেন্সপনসেবল গভর্মেন্ট কোনো মতেই করতে পারে না- এটাই আমি ভারতীয় টেলিভিশনে সেদিন বলেছিলাম।

তিনি বলেন, তবে এটাও ঠিক, এই গ্রেনেড হামলায় যারা সম্পৃক্ত তারা ভিকটিম হয় নাই, আসামি হয় নাই। এখানে আমাদেরও ব্যর্থতা আছে। আর সরকার সেই পারপাসটা ভালো করে আমাদের উপরে চাপিয়ে দিতে পারছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে যদি চিন্তা করত, চেষ্টা করত- উনি খুব ভালো করে জানেন, সেই ঘটনাটা কেন ঘটছিল এবং কারা ঘটিয়েছিল। এত দিনে উনার অজানা থাকার কথা নয়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা ২১ আগস্টের ঘটনাকে অবশ্যই বলি এটা মর্মান্তিক। যারাই করুক তারা দুরাচার, তারা দুর্বৃত্ত। ওই ঘটনার সঙ্গে বিএনপিকে জড়ানো, তারেক রহমানকে জড়ানো- তখনই বোঝা যায় এটা একটা মাস্টার প্ল্যান। এই মাস্টার প্ল্যান শেখ হাসিনা জানতেন।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার সঙ্গে যদি তারেক রহমান জড়িত হয় তাহলে আপনাদের আন্দোলনের ফসল মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা চার্জশিটে দেয়নি কেন? আপনাকে এসে রাষ্ট্রক্ষমতা, আইন-আদালত কব্জা করে তার নাম যুক্ত করতে হয়েছে। তাতে কী প্রমাণিত হয় না যে, এই মামলায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নাম প্রতিহিংসায় দেয়া হয়েছে, আক্রোশবশত দেয়া হয়েছে।

রিজভী বলেন, আপনি তারেক রহমানকে জড়িত করেছেন রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে সাক্ষীকে জোর করে, টর্চার করে, পিটিয়ে, আপনি সাক্ষীদের মুখ দিয়ে এসব কথা বলিয়েছেন। সেই মুফতি হান্নান আবারও ১৬৪ করে- সেখানে তার ওপর টর্চার যেটা করা হয়েছে তার বর্ণনাও আছে। কীভাবে আঙ্গুলের নখ তোলা হয়েছে, পায়ের নখ তোলা হয়েছে- এভাবে টর্চার করে তার স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছিল। এটাও কিন্তু আদালতে আমলে নেয়া হয়নি। এ ঘটনার আসল রহস্য এটা অনাবিষ্কৃত রয়ে গেল। এটা যদি সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক সরকার আসে, সুষ্ঠু তদন্তের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা যায় তখনই বোঝা যাবে যে, এখানে কে দায়ী। শেখ হাসিনার মাস্টার প্ল্যান একটা ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল- সেটা খুব সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

ঢাকা জেলা সভাপতি দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাকের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম, ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যান তমিজউদ্দিন আহমেদ ও প্রয়াত নেতার একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নান।