সোনা কান্তি বড়ুয়া : ভারতের জাতীয় পতাকা ও এমবেøমে বৌদ্ধধর্মের ধর্মচক্র প্রচারে বিশ্বজয়! বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুত্বের জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে বৌদ্ধধর্মের “অহিংসা পরম ধর্ম ‘জয়গান গেয়ে “চন্ডালিকা” শীর্ষক নৃত্যনাট্য রচনা করেছিলেন! ভারতে “ধর্মহীন বিজ্ঞান খোঁড়া, বিজ্ঞানহীন ধর্ম অন্ধ।” বৈদিক হিন্দু জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে “আমরা, ভারতের জনগণ সুপ্রতিবেশী হিসেবে একে অন্যের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে ভারতের সংবিধানের রচনা করেছিলেন! বৈদিক বর্ণাশ্রমবাদী হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুধর্মে মানবাধিকার না থাকাতে ভারতের সংবিধানের কাছে পরাজিত হিন্দু জাতিভেদ প্রথার রাজনীতি! বহু-সংস্কৃতির ভারত গঠনের কথা! ঐতিহাসিক ভাবে কংগ্রেস স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকে বহুত্ববাদের প্রবক্তা। বহু-সংস্কৃতির ভারত গঠনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় “হেথায় আর্য হেথায় অনার্য, / হেথায় দ্রাবিঢ় চিন, / শকহূন দল পাঠান মোগল একদেহে হল লীন।”
জাতিভেদ প্রথা হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুধর্মের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ! ভারতের সংবিধানে লেখা রয়েছে, “আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ হিসেবে গঠন করতে চাই। একই সঙ্গে এর নাগরিকদের সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার, চিন্তা, প্রকাশ, বিশ্বাস, আস্থা ও উপাসনার স্বাধীনতা মর্যাদা ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে চাই এবং তাদের সকলের মধ্যে সকল ব্যক্তির মর্যাদা ও দেশের ঐক্য ও সংহতি নিশ্চয়তাদায়ী সৌভ্রাতৃত্ব বাড়িয়ে তুলতে চাই!”
এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অভিশাপে জাতিভেদ প্রথার কোন বিচার আজ ও হয়নি সমাপন। “কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)।” চর্যাপদে আমরা দেখতে পাই সেন আমলে গায়ের জোরে উচ্চবর্ণের হিন্দু শাসকগণ বৌদ্ধগণকে দলিত বানিয়েছিলেন এবং বাঙালী সমাজের এই করুণ ছবি দেখতে পাই ৩৩ নং চর্যায়। “টালত মোর ঘর নাঁহি পড়বেসী। হাড়ীতে ভাত নাঁহি নিতি আবেশী। এর মানে, নিজ টিলার উপর আমার ঘর। প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নাই, অথচ নিত্য ক্ষুধিত।” উচ্চবর্ণের হিন্দুরা ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র করছে! ভারতীয় সংবিধান বিরোধি বর্তমান ভারতে উচ্চবর্ণের জাতিভেদ প্রথা (ব্রাহ্মণ ও দলিত বিতর্ক) এবং মনুস্মৃতি নামক হিন্দু আইন গ্রন্থের নীতিমালা। সকল ধর্মে মানুষ মানুষের আত্মীয় স্বজন। ভারত নামক রাষ্ঠ্রটি ভারতের জনতাকে (দলিত) নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে পারেনি। ধর্ম নামক ক্যানসার বা মহামারি রোগে ভারত সরকার রোগগ্রস্থ হয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কি ভাবে লড়বে? ভারত মাতার দেশে আইনের শাসনে হিংস্র উচ্চবর্ণের হিন্দুরা ধর্মকে ঢাল তলোয়ারের মত ব্যবহার করছে!
হিন্দু জাতীয়তাবাদী ও মুসলিম লিগ, দু’ পক্ষকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই হিন্দু ও মুসলিম উগ্র জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শকে দূরে সরিয়ে রেখে এক বহু-সংস্কৃতির ভারত গঠনের কথা বলেছিলেন, যেখানে জনজীবনে সমস্ত রাজনৈতিক স¤প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। অহিংসা পরম ধর্ম এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় (১৬ অগষ্ট ২০১৬ লেখক জয়ন্ত ঘোষালের লেখা “উচ্চবর্ণ আর দলিতে সংঘাতে হিন্দুত্ববাদীরা বেসামাল” শীর্ষক} প্রবন্ধে বিরাজমান“ ঐতিহাসিক ভাবে কংগ্রেস স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকে বহুত্ববাদের প্রবক্তা। কংগ্রেসের মধ্যে এ নিয়ে সমস্যা ছিল। মদনমোহন মালব্যের মতো নেতা কংগ্রেস সংগঠনের পাশাপাশি হিন্দু মহাসভার ধ্বজাকে উড়িয়ে চলেছিলেন। পরবর্তী কালে, ১৯৩০ সালে বীর সাভারকর অবশ্য হিন্দু মহাসভাকে একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠনে রূপান্তরিত করেন।
জাতিভেদ প্রথার মাধ্যমে বৈদিক ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতি ও রাষ্ট্রশক্তি ধর্মের অপব্যবহার করে লেখাকে নরকের দ্বার স্বরূপ ফতোয়া জারি করে বিধান দিলেন, “স্বরস্বতী বাগদেবী, লিপির দেবী নয়। “দেবভাষায় কোন লিপি নেই (দেশ, ১৪ পৃষ্ঠা, কলকাতা, ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২)।” গৌতমবুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার এই সামাজিক বিকৃতির হাত থেকে জনতাকে রক্ষা করেন। ব্রাহ্মণ্য সাহিত্য মানে হিংসার ইতিহাস! হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আয়না! ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতি ও ধর্মের ইতিহাস, অশ্লীল যৌনতার ইতিহাস। যুদ্ধ-বিগ্রহে ঈশ্বর, ব্রহ্মা মহেশ্বরসহ এমন কোন দেবী-দেবতা দেখাতে পারবেন না, যাঁদের হাতে অস্ত্র নাই বা যৌনতা নেই বা সুরা পান নেই।
হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুধর্ম অন্ধ্রপ্রদেশের বৌদ্ধ তিরুপতিমহাবিহার দখল করে হিন্দু মন্দিরে রুপান্তরিত করেছে! ভারতবর্ষে বৌদ্ধ বিহার ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে পুরীর হিন্দু মন্দির! ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে বৌদ্ধদের ভারত ভূমি ও দেশ দখল করার নাম হিন্দুধর্ম! বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধদেব সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন, “ভারতবর্ষে বুদ্ধদেব, মানবকে বড় করিয়াছিলেন। তিনি জাতি মানেন নাই, যাগযজ্ঞের অবলম্বন হইতে মানুষকে মুক্তি দিয়াছিলেন, দেবতাকে মানুষের লক্ষ্য হইতে অপসৃত করিয়াছিলেন। তিনি মানুষের আত্মশক্তি প্রচার করিয়াছিলেন। দয়া এবং করুণা তিনি স্বর্গ হইতে প্রার্থনা করেন নাই, মানুষের অন্তর হইতেই তাহা তিনি আহ্বান করিয়াছিলেন। এমনি করিয়া শ্রদ্ধার দ্বারা, ভক্তির দ্বারা, মানুষের অন্তরের জ্ঞানশক্তি ও উদ্যমকে তিনি মহীয়ান করিয়া তুলিলেন। মানুষ যে দীন দৈবাধীন হীন পদার্থ নহে, তাহা তিনি ঘোষণা করিলেন।”
হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুধর্ম বৌদ্ধবিশ্বের প্রার্থনার জায়গা বুদ্ধগয়ায় মহাবিহার দখল করে হিন্দু মন্দিরে রুপান্তরিত করেছে! বৌদ্ধবিশ্বের প্রার্থনার জায়গা বুদ্ধগয়ায় হিন্দু রাজনীতির শিবলিঙ্গ দুর্বৃত্তপনা ছিল কেন? ১৯৪৯ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর আদেশে উক্ত শিবলিঙ্গ বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির থেকে সরিয়ে নেওয়া হল এবং বুদ্ধগয়ায় আজ বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশের বৌদ্ধ মন্দির সমূহ সগৌরবে বিরাজমান। হিন্দুরাজনীতি ও ভারত রাষ্ট্রশক্তির “সত্য” বড় বিষম বস্তু। রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপের ফলে তাতে কোপ পড়লে গণতন্ত্রের বিপদ, আবার শাসকবর্গের কায়েমি স্বার্থে তার বাগাড়ম্বরও সমস্যাকর। বস্তুত, সত্যকে সহজভাবে প্রকাশিত হতে না দিলে তা কি আর সত্য থাকে? রামায়ন ও মহাভারতের কথাই ধরা যাক। হিন্দু রাষ্ট্রশক্তি বৌদ্ধ ত্রিপিটককে নিশ্চিহ্ন করে হিন্দু ধর্মকে মহিমান্বিত করতে বৌদ্ধ জাতকের গল্পকে চুরি করে ((১) রামায়ন (২) মহাভারত (৩) বেতাল পঞ্চবিংশতি ( ৮) পঞ্চতন্ত্র, (৫) HITOPADESA এবং (৬) কথাসরিৎসাগর রচনা করেছেন (WEEKLY BARTAMAN MAGAZINE EDITORIAL page 4, dated 2 January 2016)!
ভারতের জনগণ বৈদিক হিন্দু জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে এক বহু-সংস্কৃতির ভারত গঠনের জয়গান গেয়ে ভারতের সাবেক আইন মন্ত্রী বাবা সাহেব ডঃ বি. আর আম্বেদকর ভারতের সংবিধান রচনা করেছিলেন এবং “ভারতীয় বিধান পরিষদ, ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এই সংবিধান গ্রহণ করল, কার্যকর করল ও আমাদের হাতে সংবিধান তুলে দিল।” প্রস্তাবনার মূল শব্দগুলির অর্থ কী? “আমরা,ভারতের জনগণ” বলতে ভারতের মানুষের চূড়ান্ত সার্বভৌমত্ব বোঝায়। এখানে ভারতকে “প্রজাতন্ত্র” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা থেকে বোঝায় সরকার হবে জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য। এখানে উদ্দেশ্য হিসেবে “সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক ন্যায়ের” কথা বলা হয়েছে।
১৯৫৬ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, “গণতন্ত্রের কথা মুখ্যত আগে যা বলা হয়েছে, রাজনৈতিক গণতন্ত্রে মুখ্যত সব মানুষের ভোটাধিকার রয়েছে। কিন্তু যে মানুষ একেবারে নিচে রয়েছে, বাইরে রয়েছে, ধরুন যে মানুষটা উপোসী, ক্ষুধার্ত, তার একটা ভোট তার প্রতিনিধিত্ব করে না। রাজনৈতিক গণতন্ত্র যথেষ্ট নয়, যদি না এর মাধ্যমে কেবল অর্থনৈতিক গণতন্ত্র, সমতার ক্রমবর্ধমানতার পরিমাপ করা যেতে পারে, এবং যদি না জীবনের সুন্দর জিনিসগুলি অন্যদের কাছে ছড়িয়ে না দেওয়া যেতে পারে এবং মোটাদাগের অসাম্যগুলি দূর করা যেতে পারে।”
কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই উগ্র জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শকে দূরে সরিয়ে রেখে এক বহু-সংস্কৃতির ভারত গঠনের কথা বলেছিলেন, যেখানে জনজীবনে সমস্ত রাজনৈতিক স¤প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী ও মুসলিম লিগ, দু’ পক্ষকেই নেহরু সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। অহিংসা পরম ধর্ম এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় (১৬ অগষ্ট ২০১৬ লেখক জয়ন্ত ঘোষালের লেখা “উচ্চবর্ণ আর দলিতে সংঘাতে হিন্দুত্ববাদীরা বেসামাল” শীর্ষক} প্রবন্ধে বিরাজমান ঐতিহাসিক ভাবে কংগ্রেস স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকে বহুত্ববাদের প্রবক্তা। কংগ্রেসের মধ্যে এ নিয়ে সমস্যা ছিল। মদনমোহন মালব্যের মতো নেতা কংগ্রেস সংগঠনের পাশাপাশি হিন্দু মহাসভার ধ্বজাকে উড়িয়ে চলেছিলেন। পরবর্তী কালে, ১৯৩০ সালে বীর সাভারকর অবশ্য হিন্দু মহাসভাকে একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠনে রূপান্তরিত করেন।
ভারতীয় সাবেক আইন মন্ত্রী বাবা সাহেব ডঃ বি. আর আম্বেদকর বিধান পরিষদে তাঁর অন্তিম ভাষণে বলেছিলেন, “রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে সামাজিক গণতন্ত্র না থাকলে তা টিকে থাকতে পারে না। গণতন্ত্র মানে কী? তার মানে এমন একটা জীবন যেখানে স্বাধীনতা, সমতা ও সৌভ্রাতৃত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় যে তিনটি পৃথক নয়। এই তিনে মিলে একটি সংযুক্তি তৈরি হয় যার একটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেই গণতন্ত্র তার উদ্দেশ্য হারাবে। স্বাধীনতাকে সমতার থেকে আলাদা করা যায় না, সমতাকে পৃথক করা যায় না স্বাধীনতার থেকে। আবার সৌভ্রাতৃত্বের থেকে স্বাধীনতা ও সমতাকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না।” ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনীতে ‘সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে’র জায়গায় ‘সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ গৃহীত হয়েছে। সে সময়ে ‘দেশের ঐক্য’-কে বদলে ‘দেশের ঐক্য ও সংহতি’ করা হয়েছে।
মনুষ্যত্বের পুন্য বাঁধনে বৌদ্ধধর্মের “অহিংসা পরম ধর্ম! বৌদ্ধ সাহিত্য, বৌদ্ধ স্থাপত্য, বুদ্ধের শিক্ষা ও বৌদ্ধ শিল্প-কলা সবকিছুকে ধ্বংস করার জন্যই হিন্দুরাষ্ট্র ও ও হিন্দুধর্ম নানা রকম হিংসার আশ্রয় নিয়েছিলেন। ব্রাহ্মণ্য ধর্মে অহিংসার কোন স্থানই নাই। এজন্য ব্রাহ্মণ্য দেব-দেবীদের হাতে কোন না কোন অস্ত্র রয়েছে। পরমতসহিষ্ণু মানবধর্মকে ধ্বংস করার নাম ধর্মান্ধ উগ্রবাদের ধর্ম! প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে সরকার কর্তৃক সমর্থিত এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হলো সকল সংখ্যালঘুকে নিশ্চিহ্ন করে ভারতকে খাঁটি হিন্দুরাষ্ট্র বানিয়ে ফেলা! হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুত্বের অতীত ও ঐতিহ্যে জাতিভেদ প্রথার রাজনৈতিক ন্যায়বিচার নাই। জাতিভেদ প্রথা হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুধর্মের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’! PSYCHOLOGICAL TORMENTING FOR গরীব দলিতগণ সন্ধান এ ডিপ্রেশন! হিন্দুধর্মের জাতিভেদ প্রথা ও এ ডিপ্রেশন গরীব দলিতগণকে বিজ্ঞানহীন ধর্ম আচ্ছাদন করে ফেলে। তারা মনে করে যে, মৃত্যুই হয়তো এ ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার উপায়। এর পরের জীবনটা যে, কতোটা ভয়াবহ হতে পারে তা কি তারা একবার ও ভেবে দেখে না? গরীব দলিতগণ ও বৌদ্ধদের মৃত্যুর পরবর্তীতে ও কিন্তু একটা জীবন আছে। কিন্তু না এটাতো অস্থায়ী একটা সমাধান মাত্র। মরে গেলাম মানে বেঁচে গেলাম না। কারণ কারো জন্য জীবনটা থেমে থাকে না!
অনেকের মতে, বাংলাভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রূপ! ভারতে মানব জাতিকে চন্ডাল বানাতে হিন্দুত্বের হিন্দুরাষ্ট্র ষড়যন্ত্র! হিন্দু রাষ্ট্র ও হিন্দুধর্মের জাতিভেদ প্রথায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি ভয়ঙ্কর বিদ্বেষ নিয়ে হিন্দুধর্মের লেখকগণ রামায়ন লিখেছেন। বৌদ্ধধর্মকে খারাপ সাব্যস্ত করে হিন্দুধর্মকে মহিমান্বিত করতে রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের (অধ্যায়) বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতমবুদ্ধকে (যথাহি চৌর স তথাহি বুদ্ধ, তথাগতং নাস্তিকমত্র বিদ্ধি।) চোর বলে (HATE CRIME) গালাগাল করার পর কি সেই মহাকাব্যটি কি বৌদ্ধ জাতকের আগে রচিত?
বিংশ শতাব্দীর সেরা মানুষ (টাইম ম্যাগাজিন মতে) অ্যালবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫), “Science and Religion” ২২৫ নম্বর প্রবন্ধ (১৯৪১) নিউইয়র্কে বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্ম বিষয়ক সম্মেলনে উক্তি, “ধর্মহীন বিজ্ঞান খোঁড়া, বিজ্ঞানহীন ধর্ম অন্ধ।” বৌদ্ধধর্মকে হিন্দু রাজনীতি তিলে তিলে কিডন্যাপ করেছেন! বৌদ্ধদের তিরুপতি বালাজী মন্দির এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির হিন্দু রাজনৈতিকগণ দখল করার পর গৌতমবুদ্ধকে হিন্দু রাজনীতির ভগবান বা অবতার বলে বৌদ্ধধর্মকে হিন্দু রাজনীতি তিলে তিলে কিডন্যাপ করেছেন। হিন্দু মৌলবাদী সেনাবাহিনী বেঈমানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সন্ন্যাসীর রুপ ধরে শত শত বছর পর্যন্ত ত্রিশূল দিয়ে সর্বত্র ভারতীয় বৌদ্ধগণকে হত্যা করেছে। সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ইচ্ছা করে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৌদ্ধ বাড়ী সহ পুরানো বৌদ্ধ শহর (বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ , দেশ, ৪ মে ২০০১ পৃষ্ঠা ১২ কলকাতা)!
বৌদ্ধদের জাতক কথা চুরি করে হিন্দুরাষ্ট্র ও ব্রাহ্মণেরা এক কাহিনী অন্য কাহিনীর সাথে সংমিশ্রন করে এবং সে কাহিনীগুলোর একটির সাথে অন্যটির কোন সম্বন্ধ না থাকার পরেও পৃথক পৃথক কাহিনীকে যুক্ত করে করে রামায়ন ও মহাভারতের মত ভারী মহাকাব্য গ্রন্থ তৈরী করেছেন।! ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে বৌদ্ধ সম্রাটের ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মহামতি সম্রাট অশোকের বংশজ মৌর্য বংশের সর্বশেষ বৌদ্ধ সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করেছিল এবং মগধের সিংহাসন অধিকার করে নিজেকে হিন্দু রাজা ঘোষিত করেছিলেন। এবং তাঁর নির্দেশে বৌদ্ধ ধর্মের মুল গ্রন্থ বৌদ্ধ ত্রিপিটককে নিশ্চিহ্ন করে হিন্দু ধর্মকে মহিমান্বিত করতে বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়া কেড়ে নিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে বৌদ্ধদের ভারত ভূমি ও দেশ দখল করার নাম হিন্দুধর্ম! অহিংসা মানুষের ধর্ম এবং জাতিভেদ প্রথায় হিংসার নাম হিন্দুধর্ম! সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর বৌদ্ধ ভারতে ব্রাহ্মণ্যধর্মী হিন্দু মৌলবাদের হরিলুট ! বৌদ্ধবিশ্বের প্রার্থনার জায়গা বুদ্ধগয়ায় হিন্দু রাজনীতির শিবলিঙ্গ দুর্বৃত্তপনা কেন? বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়ায় ইতিহাসে জাতক কেড়ে নেবার নাম কি হিন্দুধর্ম? হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ বৌদ্ধরা নমঃশূদ্র ও দলিত হলো!
হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুধর্মের জাতিভেদ প্রথায় মানবাধিকার নেই এবং স্বনামধন্য ভারতীয় লেখক টি. (তিরুমেল্লাই) এন. (নারায়ন আইয়ার) সেশন “ভারতের অধঃপতন” শীর্ষক বিখ্যাত গ্রন্থে ভারতীয় রাজনীতির চালচিত্র বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। সংবিধানানুসারে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারত বি জে পির রামরাজ্য বা হিন্দু ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নহে। মানুষের লোভ থেকে আমাদের মানবতা রক্ষা করা নিতান্ত কর্তব্য। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতকে কবজা করে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানষতে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ভয়ঙ্কর ষড়য়ন্ত্র! হিংসা ও লোভের নাম ধর্ম নয়। হিংসা ও লোভের নাম হিন্দুধর্মের জাতিভেদ প্রথা! “হিন্দুরাষ্ট্র হিন্দুধর্মে দলিতদেরই জীবনধারণের স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার” ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্ণের শাসনে নেই।
রাজা বল্লাল সেন বৌদ্ধধর্মীদের নমঃশূদ্র করতে হুলিয়া জারি করলো! ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজনীতির প্রাচীন বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ! বৌদ্ধরা কিভাবে নমঃশূদ্র হলো? In 1235 A. D. ব্রাহ্মণ্যধর্মী বল্লাল সেন যখন বাংলার রাজা হলো, তখন সে বৌদ্ধধর্মীদের হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে হুলিয়া জারি করলো। বৌদ্ধরা তা মানলো না। শুরু হলো রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ ও অত্যাচার। অকথিত অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, বৌদ্ধরা জলে জঙ্গলে (পূর্ববঙ্গে) পালালো।
ব্রাহ্মণ্যধর্মী বল্লাল সেন যখন বাংলার রাজা হলো, তখন সে বৌদ্ধধর্মীদের হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে হুলিয়া জারি করলো। বল্লাল সেনাবাহিনীকে হুকুম দিল, ওদের পিছনে ধাওয়া করে হত্যা করো। (গুরুচাঁদচরিত ষষ্ঠ সংস্করণের ২৩৮ ও ২৩৯ পৃষ্ঠা দেখুন)। একজন মন্ত্রী পরামর্শ দিল, প্রাণভয়ে পলাতকদের হত্যা করা রাজার উচিত কাজ নয়। রাজা তখন জিজ্ঞেস করলো, এদের কি পরিচয় হবে? মন্ত্রী বললো, হিন্দু রাজত্বে এরা সর্বনিম্ন শূদ্র বর্ণের অন্তর্ভুক্ত হোক। তবে এরা লোক খারাপ না। তাই নমঃশূদ্র হোক। বল্লাল মেনে নিল। কিন্তু ব্রাহ্মণের তাতে পোষালো না। তারা বেজায় চটে গেল। রাজার কাছে তারা দরবার করে সিদ্ধান্ত দিল, রাজধানী গঞ্জ থেকে যারা দূরে বসবাসের অযোগ্য স্থানে বাস করে, তাদের চণ্ডাল বলে। ওদের চণ্ডাল নাম যথাযথ। ব্রাহ্মণের মুখের কথাই শাস্ত্র ও অনুশাসন। তাঁর বিধানে ভুল ধরলেই মুণ্ডু নেবে। সুতরাং চণ্ডালই পাকা পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুধর্ম বোধিসত্ত¡ তারাদেবীর ( চীন ও তিব্বতের বৌদ্ধ দেবী ) নাম বদলিয়ে বন্দে মাতরমের ভারতমাতা দূর্গা, কালী, চন্ডী নাম রাখা হলো এবং হিন্দুরাজনীতিচক্র বৌদ্ধধর্মকে অপহরণ করে পরম পূজনীয় অবলোকিরেশ্বর বোধিসত্ত¡কে শিব বানিয়ে বৌদ্ধ সভ্যতার অস্তিত্বকে চিরতরে বিলীন করার গভীর ষড়যন্ত্রের ইতিহাস রচনা করেছিল। প্রসঙ্গতঃ হিন্দুরাজনীতি ১৪৩৩ হিজরিকে সূর্য্য ক্যালেন্ডার দিয়ে বদলিয়ে ১৪১৯ বঙ্গাব্দ হলো এবং বৌদ্ধদের ধর্মচক্রকে বদলিয়ে সারনাথের অশোক চক্র বানিয়ে ভারতের “রাষ্ট্রীয় প্রতিক” করেছে। দশরথ জাতককে হিন্দুপন্ডিতগণ বদলায়ে রামায়ণ রচনা করার পর উক্ত রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতমবুদ্ধকে চোর এবং বৌদ্ধদেরকে নাস্তিক বানিয়েছে। এই ঐতিহাসিক রক্তাক্ত প্রান্তরের স্বাক্ষী বাংলা ভাষার আদিমতম নিদর্শন বৌদ্ধ চর্যাপদ।
১৯০৭ সালে নেপালের সাবেক রাজকীয় লাইব্রেরী থেকে মহামহোপধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক ‘চর্যাপদ’ আবিস্কারের মাধ্যমে। গৌতমবুদ্ধের পূর্বে সংস্কৃত ভাষার কোন লিপি ছিল না। পরে অশোকের শিলালিপির ভাষা পালি ভাষা (প্রায় ৪০ টা ভাষায় বর্ণমালার জনক), অনুকরন করে দেবনাগরী লিপি বা বর্ণমালা প্রতিষ্ঠিত হয়। সমস্ত ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতিতে লিপির কোন স্থান নেই । কারন স্বরস্বতী বাগদেবী, লিপির দেবী নন। তাই কলিকাতার বিখ্যাত কেন্দ্রীয (ইম্পেরিয়েল) লাইব্রেরীতে গৌতমবুদ্ধের ছবি বিরাজমান।
ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুধর্ম বৌদ্ধদের ভারত ভূমি ও দেশ দখল করার নাম হিন্দু ধর্ম! ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ত্রিপিটকের পালি বর্ণমালা কে ব্রাহ্মী বর্ণমালা করেছিল! ২৬০০ বছর পূর্বে গৌতমবুদ্ধের ভাষা আন্দোলন! গৌতমবুদ্ধ সংস্কৃত ভাষাকে বাদ দিয়ে তাঁর ভিক্ষুসংঘ এবং জনতাকে পালি ভাষায় উপদেশ দিয়ে ছিলেন। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে! হিন্দুধর্ম তথা হিন্দু-সংস্কৃতির কেন্দ্রে আছে ব্রাহ্মণ্যবাদী জাতিভেদ প্রথার বৈদিক-সংস্কৃতি এবং বেরিয়ে আসছে সন্ত্রাসী জাতিভেদ প্রথায় অপরাধের ফিরিস্তি!
ধর্মীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে নাগরিক উদ্যোগ জোরদার করা দরকার! হিন্দু জাতিভেদ প্রথায় ভারতীয় কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)। সহজ কথায় ব্রাহ্মণ্যবাদের হিন্দু জাতিভেদ প্রথায় রাজনীতির ষড়যন্ত্রে হিন্দুত্ববাদীদের গায়ের জোরে উচ্চবর্ণের হিন্দু শাসকগণ বৌদ্ধগণকে দলিত বানিয়েছিলেন!
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি !