স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতকে কাঁদিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ঘরে তুলল অস্ট্রেলিয়া। বোলারদের নৈপুণ্যের পর ট্রাভিস হেডের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ফাইনালে ৬ উইকেটের বড় জয় পান প্যাট কামিন্সরা। পুরান গ্রিক শব্দ হেক্স‘র অর্থ ‘ষষ্ঠ’। গত কয়েকটি ফুটবল বিশ্বকাপে পাঁচবারের শিরোপাজয়ী ব্রাজিল হেক্সা জয়ের স্বপ্ন দেখলেও পারেনি। তবে ক্রিকেটে তা করে দেখাল অস্ট্রেলিয়া।
চলমান অসরে এই অস্ট্রেলিয়ার অবশ্য শুরুটা হয়েছিল খুবই বাজে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেই হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরাজয় বরণ করেন। তবে এরপরই অপ্রতিরোধ্য দলটি জিতে নিল টানা ৯ জয়। এরমধ্যে প্রোটিয়াদের অজিরা সেমিফাইনালে হারের স্বাদ দিয়ে প্রতিশোধ নেয়। এবার নিল ভারতের বিপক্ষে।
এর আগে ১৯৮৭ সালে অ্যালান বোর্ডার হাত ধরে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর ১৯৯৯ সালে স্টিভ ওয়াহ জেতান দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। ২০০৩ ও ২০০৭ সালে রিকি পন্টিংয়ের অধীনে অজিরা শিরোপা জিতে হ্যাটট্রিক ট্রফি ঘরে তোলে। আর ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে মাইকেল ক্লাকের নেতৃত্বে পঞ্চমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
ভারতের সামনে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি ছিল। এবারের আসরে শুরু থেকে রোহিত শর্মাদের পারফরম্যান্সে মনে হয়েছিল তারা শিরোপা জিততেই চলেছেন। তবে টানা ১০ ম্যাচে অপরাজিত দলটি ফাইনালে এসে মুখ থুবড়ে পড়ল। এর আগে ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বে প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। আর ২০১১ আসরে মাহেন্দ্র সিং ধোনি জেতান দ্বিতীয় শিরোপা।
আজ আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে খেলতে নামে দুদল। বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় ম্যাচটি শুরু হয়। যেখানে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করা রোহিতবাহিনী নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪০ করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে হেডের সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেট হারিয়ে ও ৪২ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।
২৪১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে জসপ্রিত বুমরাহকে প্রথম ওভারে তুলোধুনো করেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। তিন বাউন্ডারিতে তুলে নেন ১৫ রান। তবে দলীয় দ্বিতীয় ওভারেই ভারতকে উইকেট এনে দেন মোহাম্মদ শামি। ইনিংসে নিজের করা প্রথম বলে ওয়াইড দেন তিনি। তবে বৈধ প্রথম বলেই ডেভিড ওয়ার্নারকে স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন আসরজুড়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শামি।
এরপর নিজের পর পর দুই ওভারে দুটি উইকেট তুলে ভারতকে লড়াইয়ে রাখেন জসপ্রিত বুমরাহ। দলীয় পঞ্চম ওভারে ১৫ বলে ১৫ রান করা মিচেল মার্শকে উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলের ক্যাচে ফেরান এই ডানহাতি। আর সপ্তম ওভারের শেষ বলে ৪ রানে থাকা স্টিভেন স্মিথকে এলবির ফাঁদে ফেলেন তিনি।
দলীয় পঞ্চাশ রানের আগে ৩ উইকেট হারালেও ট্রাভিস হেড ও মার্নাস লাবুশানের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। চাপের মধ্যে থেকে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি তুলে নেন হেড। ৯৫ বলে ১৪টি চার ও একটি ছক্কায় শতকের দেখা পান এই বাঁহাতি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তারা ২১৫ বলে ১৯২ রানের পার্টনারশিপ গড়েন।
জয়ের জন্য অজিদের যখন মাত্র ২ রান দরকার হেড তখন তুলে মেরে মোহাম্মদ সিরাজের বলে আউট হন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি করা হেড চলতি আসরে দ্বিতীয় শতক করলেন। তিনি শেষ পর্যন্ত ১২০ বলে ১৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৩৭ রানে আউট হন। তাকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া লাবুশানে ১১০ বলে ৪টি চারে ৫৮ রানের দৃঢ় এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। তবে জয়সূচক দুটি রান আসে এই বিশ্বকাপের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিয়ান গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট থেকে।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে বুমরাহ ২টি উইকেট পান। একটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন শামি ও সিরাজ।
টস হেরে এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনার শুভমান গিলকে ইনিংসের শুরুতে হারায় ভারত। তাকে ফেরান মিচেল স্টার্ক। দলীয় পঞ্চম ওভারে তুলে মারতে গিয়ে শটে থাকা অ্যাডাম জাম্পার কাছে ক্যাচ দেন ব্যক্তিগত ৪ রানে থাকা এই ব্যাটার। এরপর ভয়ংকর রোহিত শর্মাকে ফেরান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। দশম ওভারে ভারতীয় অধিনায়ক তুলে মারলে পয়েন্টে থাকা ট্রাভিস হেড দারুণ এক ক্যাচ নেন। রোহিত ৩১ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৭ করেন। পরের ওভারেই নতুন ব্যাটার শ্রেয়াস আইয়ারকে (৪) উইকেটরক্ষক জশ ইংলিসের ক্যাচে ফেরান প্যাট কামিন্স।
ভারত ৮১ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারালেও বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায়। চতুর্থ উইকেটে তারা ১০৯ বলে ৬৭ রান তোলেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৭২তম ফিফটির দেখা পান কোহলি। এছাড়া চলতি বিশ্বকাপে নবম হাফসেঞ্চুরির দেখা পান। আসরে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বিরাট কোহলিকে অবশেষে ফেরান প্যাট কামিন্স। ২৯তম ওভারে ডানহাতি তারকাকে বোল্ড করেন অজি অধিনায়ক। কোহলি ৬৩ বলে ৪টি চারে ৫৪ করেন।
উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টায় থাকা রবীন্দ্র জাদেজাকে আউট করেন জশ হ্যাজেলউড। দলীয় ৩৬তম ওভারে ব্যক্তিগত ৯ রানে উইকেটরক্ষক জশ ইংলিসকে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি। ভারত দলীয় দুইশ রানের পর দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে। স্বাগতিকদের ভরসা যোগানো লোকেশ রাহুলকে মাঠ ছাড়া করান মিচেল স্টার্ক। রাহুল উইকেটরক্ষক জস ইংলিসের ক্যাচে পরিণত হন। তিনি ১০৭ বলে মাত্র চারে ৬৬ রান করেন। এই বাঁহাতি পেসারের তৃতীয় শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন মোহাম্মদ শামি। জসপ্রিত বুমরাহকে এলবির ফাঁদে ফেলে আউট করেন অ্যাডাম জাম্পা। আর ১৮ রান করে জস হ্যাজেলউডের বলে আউট হন সূর্যকুমার যাদব। ইনিংসের শেষ ১০ রানে থাকা কুলদীপ যাদব রান আউট হন।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট পান মিচেল স্টার্ক। এছাড়া হ্যাজেলউড ও কামিন্স ২টি করে উইকেট দখল করেন।