স্পোর্টস ডেস্ক : ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল গত এপ্রিলে। ইউরোপে তখন করোনাভাইরাসের প্রকোপটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। ইতালিতে তখন বলতে গেলে প্রায় সবাই গৃহবন্দী। খুবই জরুরি কাজ না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন না কেউই। এর মাঝে হঠাৎ একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ইতালির লিগুরিয়ার ফিনালে লিগারে এই গৃহবন্দী দশার মাঝেও টেনিস প্রেমটা ধরে রেখেছিলেন দুই কিশোরী।
নিজ নিজ বাসার ছাদে থেকেই টেনিস খেলার দুর্দান্ত এক বুদ্ধি বের করে নিয়েছিলেন ভিত্তোরিয়া ওলিভেরি এবং ক্যারোলা পেসিনা। ১৩ বছর বয়সী ভিত্তোরিয়া ও তার চেয়ে দুই বছরের ছোট ক্যারোলার এ ভিডিও সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। রাতারাতি সবার পরিচিত হয়ে উঠেছিল দুজন। এক কোটির বেশিবার সে ভিডিও দেখা হয়েছিল টুইটারে। এটিপি ট্যুর সে ভিডিও নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেছিল। তবে নিজেদের খ্যাতি আসলেই কতটা ছড়িয়ে পড়েছে সেটা বুঝতে পারেনি এ দুজন। স্বয়ং রজার ফেদেরার এসে এই দুই টেনিসপ্রেমীর সঙ্গে দেখা করে চমকে দিয়েছেন দুজনকেই।
ফেদেরারের মতো বিখ্যাত এক তারকার সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আভাস দেওয়া হয়নি ভিত্তোরিয়া ও ক্যারোলাকে। দুজনই ভেবেছিল বরাবরের মতোই আরেকটি সাক্ষাৎকার বলেই ধরে নিয়েছিল ঘটনাটি। বিশেষ করে যখন জিজ্ঞেস তাদের জিজ্ঞেস করা হলো, দুজনের প্রিয় খেলোয়াড় কে? ভিত্তোরিয়ার উত্তর ছিল, ‘রজার ফেদেরার। তাঁর সঙ্গে দেখা হলে আমি হয়তো ঝাঁপিয়ে পড়ব তাঁর ওপর। অথবা হতভম্ব হয়ে বসে থাকব।’ বয়সে ছোট হতে পারে কিন্তু ক্যারোলা একটু হলেও বেশি হিসেবি, ‘কিন্তু তুমি তাঁকে অটোগ্রাফ দিতে বলতে চাইলে তোমার হাত দিয়ে সেটা বোঝাতে হবে। তুমি তো সুইস ভাষায় কথা বলতে পার না।’ ভিত্তোরিয়া পেতে চায় ফেদেরারের ব্যাকহ্যান্ড। আর ক্যারোলার চাই দুটো—ফেদেরারের খেলার সৌন্দর্য আর নাদালের শক্তি।
এটুকু বলার পরই দুজনের জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্তটা জন্ম নিল। যখন পর্দার আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলেন ফেদেরার। ২০টি গ্র্যান্ড স্লাম বিজয়ী এ দুজনের সঙ্গে ছাদে কিছুক্ষণ টেনিস খেলে দুজনকে মধ্যাহ্নভোজনের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। সে মুহূর্তের কথা যখন বলছিল ভিত্তোরিয়া, তখনো খুশির আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছিল, ‘যখন তাঁকে দেখলাম, আরেকটুর জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই ছাদের মধ্যকার দূরত্বটা বুঝে নিয়ে খেলা শুরু করলেন। এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে দুই পায়ের মাঝ দিয়েও শট মেরে পাঠাচ্ছিলেন, অবিশ্বাস্য। আমার তো প্রথমে মনে হয়েছিল, তিনি মানুষ নন। কেউ হয়তো পুতুলকে তাঁর মতো সাজিয়ে এনেছে।’ এ কথায় ফেদেরার আবার নিশ্চিত করলেন, ‘না, শতভাগ নিশ্চিত, আমি পুতুল না।’
শুধু দেখা দিয়েই উপহারের ডালি ফুরায়নি ফেদেরারের। আগামী গ্রীষ্মে ভিত্তোরিয়া ও ক্যারোলার রাফায়েল নাদালের টেনিস একাডেমিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অবশ্য ইতালিয়ান দুই কিশোরী যে তাঁকে এর চেয়েও বেশি কিছু দিয়েছেন। গত জুলাইয়ে দুই ভক্তের সঙ্গে দেখা হওয়ার প্রসঙ্গে ফেদেরার বলেছেন, ‘আজ (১০ জুলাই) আমি ক্যারোলা ও ভিত্তোরিয়ার মতো ভক্ত বা শিশুদের চমকে দিয়ে যে আনন্দ দিতে পেরেছি, একজন টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে এটা বিশেষ কিছু। আমি বিশ্বের অনেক দুর্দান্ত সব জায়গায় খেলেছি। কিন্তু আজকের অভিজ্ঞতা সেরা অভিজ্ঞতাগুলোর একটি। আমরা দেখিয়ে দিয়েছে বিশ্বের যেকোনো স্থানেই খেলা সম্ভব এবং তা থেকে আনন্দ নেওয়া সম্ভব।’