সোনা কান্তি বড়ুয়া : ‘বৌদ্ধ চর্যাপদে প্রাচীন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও দর্শন বিরাজমান! বিশ্বের ধমর্ প্রচারকদের মধ্যে একমাত্র গৌতমবুদ্ধ (রাজপুত্র সিদ্ধার্থ) ২৬ ০০ বছর আগে বঙ্গলিপি অধ্যয়ন করার গৌরবোজ্জ্বল কাহিনীর সচিত্র খন্ডচিত্র ইতিহাস ভারতের অজন্তা গুহায় আজ ও বিরাজমান। সিদ্ধার্থ (গৌতমবুদ্ধ) বাল্যকালে যে ব্রাহ্মী, বাংলা, দেবনাগরি, লিপিসহ ৬৪ প্রকার ভাষার লিপিসমূহ অধ্যায়ন করেছিলেন তা বাংলা বিশ্বকোষে (১৩শ ভাগ, পৃঃ ৬৫) সগৌরবে লিপিবদ্ধ আছে। আজ ১৪২৯ বাংলা বর্ষ লেখা আমাদের ঐতিহাসিক রাজনীতির পরাজয়। আড়াই হাজার আগের বাংলা লিপিতে লেখার বয়স আজ ১৪১৯ বঙ্গাব্দ কেন? দু’শত বছর আগে বিশ্বে বাংলা ভাষার প্রথম বই “চর্যাপদের” একটা পৃষ্ঠা এবং পালি ভাষার একটা বই বাংলাদেশে কোথাও খুঁজে পাওয়ানি। প্রসঙ্গত: উলেখযোগ্য যে, (নারায়ন স্যানালের লেখা বই “অজন্তা অপরুপা”) ভারতের অজন্তা গুহাচিত্রে বঙ্গবীর বিজয় সিংহের ঐতিহাসিক শ্রীলংকা জয়ের ইতিকথা বিরাজমান অথচ চর্যাপদ বা বাংলা বর্ষ গণনায় আজ ১৪২৯ বর্ষ হবার কথা নয়। আজ ২৫৬৪ বাংলা বর্ষ (থাইল্যান্ডের পঞ্জিকায় বুদ্ধবর্ষ ২৫৬৪) হবার কথা ছিল।
হিন্দুদের ধম এবং মুসলমানদের POLITICALLY POWERFUL © ধম, ভারতে বৌদ্ধ, খৃষ্টান ধর্ম কী ধর্ম নয়? বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভদিনে ২০১৪ সালের ১৪ মে কোলকাতার ধর্মাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন বন্ধ করে ভোট কেন্দ্র খোলা হল কেন? বিভিন্ন ধর্ম (শিখ ও জৈন)সহ দূর্গা পূজা, ঈদ ও বড়দিন ছুটির দিন হলে ও ভারতমাতার ব্রাহ্মণ্যবাদের হিন্দুরাজনীতিতে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করতে পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমা পশ্চিমবঙ্গে ২০১৭ সরকারি ছুটি ছিল ন! চীনের বুদ্ধপূজাকে হিন্দুরাজনীতি বদলিয়ে ড্রাগন বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির মল্লযুদ্ধ দেখাচ্ছে (ক্যাচ নিউজ, ১১ মে, সাল ২০১৬)। বৌদ্ধ বিহারে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করে ভারতের জাতীয় পতাকায় (এবং এমব্লেম) সম্রাট অশোকচক্রের পদতলে বসে ভারতের হিন্দুরাজনীতি সম্রাট অশোকের বুুদ্ধপূজার চেতনায় কুঠারাঘাত করেছে। বিগত ৭ই জুলাই ২০১৩ সাল বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দিরে হিন্দুস্থানের মুজাহিদীনদের বোমা হামলায় পবিত্র মহাবোধি মন্দিরের বিপুল ক্ষতি সাধনসহ দুইজন বৌদ্ধ ভিক্ষু আহত হয়েছেন।
বৌদ্ধ পাল রাজত্বের পতনের যুগে এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পূনরুত্থান কালে অস্থির ঘটনা চাঞ্চল্যের দ্বারা চঞ্চল সেন বর্মন রাষ্ট্রের প্রবল আধিপত্যের প্রোপটে চর্যাপদের জন্ম আধুনিক গণতান্ত্রিক অধিকারের মেনিফিষ্টো হিসেবে। এর মধ্যে নিহিত রয়েছে বাঙালীর সর্বপ্রথম গণতন্ত্রের বীজ ‘বাক স্বাধীনতার অধিকার’। বাংলা ভাষার প্রথম ‘বিপ্লবী মিনার’। ব্রাহ্মণ্যবাদের মাফিয়াচক্রে জাতিভেদ প্রথায় সনাতন ধর্মের মস্তক বিক্রয় করে গণতান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মকে বৈদিক ব্রাহ্মণগণ ধ্বংস করে। অধ্যাপক হরলাল রায় তাঁর লেখা ‘চর্যাগীতি’ গ্রন্থের দশম পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘ধর্মকোলাহলেই বাংলা সাহিত্যের পুষ্টি ও বিকাশ। ভারতেই আমরা দেখতে পাই ব্রাহ্মণ্য ধর্মের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় পালি সাহিত্যের উৎপত্তি। হিন্দুধর্মের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলেই বৌদ্ধ ধর্ম ভারত হতে বিতারিত হয়েছিল। বাঙালী সমাজের এই করুণ ছবি দেখতে পাই ৩৩ নং চর্যায়। “টালত মোর ঘর নাঁহি পড়বেসী। হাড়ীতে ভাত নাঁহি নিতি আবেশী। এর মানে, নিজ টিলার উপর আমার ঘর। প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নাই, অথচ নিত্য ক্ষুধিত।” সেন রাজত্ব মানে পূর্ব পাকিস্তান কর্ণাটকের ব্রাহ্মণ্যদের অধীনে বাংলা, নিজ বাসভূমেই পরবাসী করে দিয়েছে বাঙালিকে। ইতিহাসের এই অন্ধকার যুগে তবু বাঙালি দুহাতে অনন্ত সমস্যার পাথর সরিয়ে জীবনের যাত্রা পথ ধরে হাঁটতে শুরু করেছিল অন্যতর আলোর লক্ষ্যে।
অতীত বুদ্ধগণের ঐতিহ্যের ইতিকথা বৌদ্ধ সাহিত্য এবং ত্রিপিটকে বিরাজমান সত্বে ও বৈদিক হিন্দু দর্শন ও সাহিত্যে উক্ত অতীত বুদ্ধগণের বিভিন্ন প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে গৌতমবুদ্ধকে হিন্দুধর্মের অবতার বানিয়ে হিন্দুশাসকগণ বৌদ্ধধর্ম এবং বুদ্ধগয়া দখল করলেন। বুদ্ধবংস না পড়ে বৈদিক হিন্দু পন্ডিতগণ মনে করেন যে, গৌতমবুদ্ধের আগে পিছে কোন বৌদ্ধ ঐতিহ্য নেই। “ইহারা এবং আরও শতকোটি সম্যক সম্বুদ্ধগণ, সকল বুদ্ধই অসমসম, সকল বুদ্ধই সর্বশক্তিমান (আটানাটিয় সূত্র)।” বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধগণ কি মানুষ নহেন? জঙ্গীরা বৌদ্ধ জুম্মা ও হিন্দু মা বোনকে পথে ঘাটে আক্রমণ করছে। বৌদ্ধ সম্রাট অশোকের শিলালিপি ভারতীয় হিন্দু পন্ডিতগণ পড়তে পারলেন না; কিন্তু বৃটিশ পন্ডিত জেমস প্রিন্সেপ উক্ত শিলালিপি সম্বন্ধে বিভিন্ন গ্রন্থ সম্পাদনা কর সম্প্রতি মানবমনে উদীয়মান বুদ্ধের অনুভবে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবোর্ন বৌদ্ধভিক্ষু হলেন। এই গ্রন্থে চিত্রে বুদ্ধ জীবনী ও আনবিক যুগে বৌদ্ধ ভারত সন্ধানে বিরাজমান। মানব জাতির উন্নয়নে গৌতমবুদ্ধের ধ্যান ও ধর্মের অবদান।
বাংলা ভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রুপ এবং বাংলা লিপি বহু চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে এবং নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হলো অনাগত বংশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্দোলন প্রবর্তন সূত্রময় ‘শহীদ দিবস।’ প্রসঙ্গত: উল্লেখযোগ্য যে, বাংলা বর্ণমালার বয়স কত? প্রায় ২৫৬৪ বছর পূর্বে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতমবুদ্ধ তাঁর বাল্যকালে যে বাংলা লিপি অধ্যায়ন করেছিলেন তা বাংলা বিশ্বকোষে (১৩শ ভাগ, পৃঃ ৬৫) সগৌরবে বিরাজমান।
বাংলা ব্যাকরণের সাথে পালি, থাই, বার্মা, কম্বোডিয়া, লাওস ও শ্রীলংকার ব্যাকরণের সাদৃশ্য বিদ্যমান। পাঁচটা দেশের ব্যাকরণের সাথে বাংলা ব্যাকরণের সাদৃশ্য পালি ভাষার কারণে। আমার আজও মনে পড়ে থাইল্যান্ড বা শ্যামদেশের রাজধানী ব্যাঙ্কক এয়ারপোর্টের নাম “সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট।” সুবর্ণভূমি নাম তো বাংলা শব্দ এবং সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (২৩০০ বছর আগে) দক্ষিণপূর্ব এশিয়া (সুবর্ণভূমি) বিশ্বমানবতায় (গৌতমবুদ্ধের মহাকরুনা ও মৈত্রী) আলোকিত হয়ে ওঠেছিল।
ব্রাহ্মণ্যবাদের হিন্দুরাজনীতি সম্রাট অশোকের ব্রাহ্মী বর্ণমালার প্রচার বন্ধ করে পালি ত্রিপিটক ধ্বংস করে গৌতমবুদ্ধকে হিন্দুধর্মের নবম অবতার করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। সম্রাট অশোক সংস্কৃত ভাষা ব্যতীত গৌতমবুদ্ধের প্রচারিত বৌদ্ধধর্মের প্রথম ত্রিপিটক পালি ভাষায় অশোক অরে (ব্রাহ্মী বর্ণমালা) প্রকাশ করলেন এবং শ্রীলঙ্কায় সিংহলী বর্ণমালায় পালি ভাষায় বৌদ্ধ ত্রিপিটক আজও বিরাজমান। একাদশ এবং দ্বাদশ শতাব্দী থেকে শুরু হলো সাধক চর্যাকারগণের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের পর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার ইতিহাসের অবিচ্ছন্ন ধারা প্রবহমান এবং আজ দুর্বৃত্ত ও লম্পট যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। ইতিহাসের সূত্র বিশেষণে দেখা যায় যে ধর্মের নামে নর-নারী হত্যা, জামাতের অমানবিক অত্যাচারের বিচার বাংলাদেশ সরকারকেই করতে হবে।
লিপির অতীত সন্ধানে! ‘‘দেশ-এ (৭-১২-৯১) ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় লিখিত নিবন্ধ, ‘বাঙ্গালা ভাষার নাম কত দিনের?’ খুবই তথ্যবহুল। কিন্তু ট্র্যাডিশনাল পথ পরিক্রমায় কিঞ্চিৎ দিগভ্রান্ত বলে প্রতীয়মান হয়। ভাষায় অতীত সন্ধান করতে গেলে, লিপির অতীত সন্ধানও অন্তত আলোচ্য ক্ষেত্রে আবশ্যক। ভাষার ইতিহাস-প্রেক্ষাপট বিচার করলে দেখা যায়, সভ্যতার বহমান ধারায় চলমান ভাষাসমূহের প্রত্যেকটিই লিপি-আশ্রিত ছিল। হয়ত সেক্ষেত্রে অন্যের অবদান ঋণ হিসেবে কাজ করছে। বস্তুত লিপি-আশ্রিত না হয়ে ভাষার বিকাশ এবং সভ্যতার অগ্রগতি সম্ভবপর হয়নি, আজও সম্ভবপর নয়। তাই, লিপির অতীত-সন্ধান অন্তত একটি তথ্য সঠিকভাবে জানিয়ে দেবে যে সভ্যতার চিত্রপটে ভাষাটি কখন ঠাঁই পেয়েছিল। প্রসঙ্গতই উল্লেখ্য, লিপির উৎসে যে প্রয়োজনগুলো কাজ করেছে তার মধ্যে হিসেব-পত্র রাখার কথাটিই প্রধান। সে রাজার হিসেব অথবা ব্যবসায়ীর হিসেব যাই হোক না কেন। তবে, ব্যবসায়ীর হিসেব আবার এক্ষেত্রে পালায় ভারী।
পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাসমূহের পতনের অন্যান্য কারণসমূহের মধ্যে লিপির লাঞ্চনা অর্থাৎ লিপির প্রতি প্রতিকুল মনোভাব গ্রহণ একটি প্রধান কারণ। সদূর অতীত থেকে পুরোহিততন্ত্রের হাতেই লিপির এই লাঞ্ছনা ঘটেছে। কি মিশর, কি চিন, কি ভারতবর্ষ- সর্বত্রই মানুষের ভাষা এবং লিপি পুরোহিততন্ত্রের ম্যাজিকের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে। মিশরের হায়ারোগ্রাফিক লিপির সংস্কার ও বিকাশ অর্থাৎ চিত্রলিপি থেকে লিপিচিত্রে উত্তরণ স্তব্ধ করেছে ক্ষমতা ও বিলাসের ভূমিতে রাজশক্তি ও পুরোহিতশক্তির সমবেত বিচরণ। নীলনদের অবদানের পাদপীঠে দাঁড়িয়ে রাজশক্তি ও পুরোহিতশক্তি কার্যত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে ফেলেছে। প্রতিদ্ব›দ্বী সেখানে বিশাল জনসমাজ। এই বিশাল জনতাকে ক্ষমতা ও বিলাসের উৎস হিসেবে ধরে রাখতে গেলে সেই জনতার হাতে কোন লিপিও রাখা যায় না। ম্যাজিক তো ক্ষমতা ও বিলাসকে সর্বপ্রকারে রক্ষা করার কৌশল গোপন রাখার অধিবিদ্যা। জনমানসে সেই কৌশলের গোপনীয়তা যত বেশি প্রকাশ হবে, তত বেশি তার ক্ষমতাচ্যুতি হবে। ফলে মিশরীয় ভাষা ও লিপির উত্তরণের পরিবর্তে অবনমন হল। ভারতবর্ষেও এর ব্যক্তিক্রম নেই। রাজভাষা তো ঈশ্বরের ভাষা। তাই সংস্কৃত দেবভাষা। দেবভাষার কোন লিপি নেই। সমস্ত ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতিতে লিপির কোন স্থান নেই। সরস্বতী বাগ্দেবী। লিপিরদেবী নয়। ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতি লেখাকে নরকের দ্বার স্বরূপ ফতোয়া জারি করে জনগণকে শোষণের একটি মোম ব্যবস্থায় নিজেদের স্বার্থ অটুট রাখতে প্রয়াসী হয়েছে।
ভারতবর্ষের এই ট্র্যাডিশনাল বিকৃতির হাত থেকে দেশবাসীকে অব্যাহতি দিয়ে অবশ্যই বুদ্ধ সর্বপ্রথম চেষ্টা করেন এবং সফলও হন। পরবর্তীকালে অবশ্যই ট্র্যাডিশনাল বিকৃতির কাছে বৌদ্ধসংস্কৃতি পরাভূত হয়- সে অন্য কথা।
এখানে শুধুমাত্র তাঁর একটি প্রয়াসের কথাই উল্লেখ করা হচ্ছে। তা হল লিপি। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘লিপি ব্যবহারকারীগণ সুখে কালাতিপাত করবে না’ শুধু তাই নয়, শীলসূত্তে শিশুদের জন্য ‘অক্করিকা’ নামক একটি খেলার কথাও গুরুত্বসহকারে উল্লেখ আছে। ব্রাহ্মণসন্তানের অস্বাভাবিক জীবন তৈরী নয়, বুদ্ধ শিশুদের জীবনের স্বাভাবিক পরিণতির জন্য দিক নির্দেশ করছেন। এখন দেখা যাক, বুদ্ধ শৈশবে কোন অবস্থার মাধ্যমে পরিণত হচ্ছিলেন। বিশ্বকোষ (১৩শ ভাগ, পৃ-৬৫) থেকে একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হচ্ছে।
“কিয়ৎকাল পরে সিদ্ধার্থ গুরুগৃহে প্রেরিত হইলেন। সেখানে তিনি বিশ্বমিত্র নামক উপাধ্যায়ের নিকট নানা দেশীয় লিপি শিক্ষা করেন। গুরুগৃহে গমণের পূর্বেই তিনি ব্রাহ্মী, খরোষ্ট্রী, পুস্করসারী, অঙ্গলিপি, বঙ্গলিপি, মগধলিপি, মাঙ্গল্যলিপি, মনষ্যলিপি, অঙ্গুলীলিপি, শকারিলিপি, ব্রহ্মলিপি, দ্রাবিড়লিপি, কিনারিলিপি, অর্দ্ধধন্লিপি, দরদলিপি, খাস্যলিপি, চীনালিপি, হুনলিপি, মধ্যরবিস্তারলিপি, পুস্পলিপি, দেবলিপি, নাগলিপি, কিন্নরলিপি, মহোরগলিপি, অসুরলিপি, গরুড়লিপি, মৃগচক্রলিপি, চক্রলিপি, বায়ুমরুলিপি, ভৌমদেবলিপি, অন্তরীদেবলিপি, উত্তরকুরুদীপলিপি, অপরগৌড়লিপি, পূর্ববিদেহলিপি, উৎপেলিপি, নিপেলিপি, বিপেলিপি, প্রপেলিপি, সাগরলিপি, বজ্রলিপি, লেখপ্রতিলেখলিপি, অনুদ্রæতলিপি, শাস্ত্রাবর্তালিপি, গণনাবর্তলিপি, উৎপোবর্তলিপি, অধ্যাহরিণীলিপি, সর্বরাত্রসংহারিনীলিপি, বিদ্যানুলোমালিপি, বিমিশ্রতলিপি, ঋষিতপস্তস্তা, রোষত্রানা, ধরণী-প্রেণলিপি, সর্বৌধিষ্যন্দালিপি, সর্বসারসংগ্রহণী ও সর্ব্বভূতরুতগ্রহণী প্রভৃতি চতুঃষষ্ঠী প্রকার লিপি অবগত ছিলেন।
বৃহৎ উদ্ধৃতিটির প্রয়োজন এই কারণে যে এর উপর লিপির সামগ্রিক দর্শন আসন পেতে রয়েছে। কোন লিপিই, তা সে যত আদিম স্তরেই হোক না কেন, কোন খেয়ালী মনের সৃষ্টি নয়। প্রত্যেকটি লিপির রূপপরিগ্রহণে সমষ্টির তীব্র প্রয়োজন আর যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তার অবকাশ রয়েছে। নিঃসন্দেহে সেই ভাবনার প্রভূত দূর্বলতা ছিল, প্রয়োজনে তীব্রতা সৌন্দর্য্যকে স্বাভাবিক বিকাশের অবকাশ দেয়নি। প্রকৃতিগতভাবেই যেমন সে আপন মনের ভাষাকে ধ্বনিতে প্রকাশ করে, তেমন সেই ধ্বনিকে তার পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির সঙ্গেই রূপায়ণ করতে চেয়েছে। তাই, বাস্তব পরিবেশের দিকে লক্ষ রেখেই যে লিপিচিহ্ন তৈরী হয়েছে, সেটিই সবচেয়ে বড় কথা। সেই সুদুর অতীতে মুখের ধ্বনিব্যঞ্জনাকে লিপিচিহ্নে আবদ্ধ করা, তা সে যেভাবেই হোক অত্যন্ত কঠিন কাজ।
উদ্ধৃতিটিতে দেখা যাচ্ছে বুদ্ধ শুধুমাত্র ভৌগোলিক পরিমণ্ডলাশ্রিত ভাষাশ্রিত লিপিমালাই (বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য বঙ্গলিপি) শেখেননি, বিভিন্ন প্রকার জ্ঞানরাজ্যের সাঙ্কেতিক লিপিসমূহও – যথা শাস্ত্রাবর্তালিপি, গণনাবর্তলিপি, বিদ্যানুলোমালিপি, সর্বরাত্রসংহারিনীলিপি, সর্বৌধিষ্যন্দালিপি, সর্বসারসংগ্রহণী এবং সর্ব্বভূতরুত গ্রহণী প্রভৃতি লিপি- শিখেছিলেন। অর্থাৎ এখন জ্ঞানমার্গের বিভিন্ন শাখায় যে ধরণের ভাষা (Technical Tems) এবং সাঙ্কেতিক চিহ্ন (Symbol) ব্যবহার করা হয়, অতীতেও তা ছিল। অবশ্যই তা তৎকালীন সময়-পরিপ্রেতি।
আরও সমধিক গুরুত্ব সহকারে উলেখ্য যে তৎকালীন সময়ে লিপি (এবং তৎসহ ভাষা) শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ (প্রতিষ্ঠান) ছিল। বিভিন্ন লিপি শিক্ষা দেওয়ার প্রতিষ্ঠানগত অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে ঐ ঐ লিপি-আশ্রিত ভাষা ছিল এবং তাদের অস্তিত্বগত সমৃদ্ধি ছিল। অর্থাৎ ঐ সব ভাষা সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে গুরুত্ব বহন করত। এবং এইসব উদ্যোগের মূলে শ্রমণ-ঐতিহ্য ক্রিয়াশীল ছিল-এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। মোটের উপর একথা নি:সন্দেহে বলা যায় যে যাগযজ্ঞপূজা ইত্যাদি ছাড়া ভারতবর্ষের জ্ঞান রাজ্যে ব্রাহ্মণসংস্কৃতির অন্য কোন অবদান নেই।
বুদ্ধই মানুষকে ঈশ্বরের আসনে বসিয়েছেন এবং সেই মানুষের আচরণযোগ্য ধর্মও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সেখানে ভাষার ক্ষেত্রেও (লিপির ক্ষেত্রে তো বটেই) বুদ্ধ জনসমাজের দরবারেই হাত পেতেছেন। এই ভাষা ও লিপির পুনর্জাগরণ ঘটিয়ে বুদ্ধ ভারতীয় ঐতিহ্যকে সামগ্রিক বিকৃতির হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। আজকের বাংলাভাষা, সংস্কৃত নয়, মূলত পালিভাষার বিবর্তিত রূপ। পালিভাষাকে ম্যাজিকাল সংস্কার করেই সংস্কৃত তৈরি হয়েছে। বস্তুত বুদ্ধের সময়ে যেভাবে বঙ্গলিপি প্রচলিতছিল, সেইভাবে বাংলাভাষাও প্রচলিত ছিল।” মুকুল সাহা (দেশ, কলিকাতা, ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২)।
হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের কারণে নাকি বৌদ্ধদের চর্যাপদ আবিষ্কারের (১৯০৭ থেকে ২০০৭) শতবর্ষ জয়ন্তি (ONE HUNDRED YEAR DISCOVERY OF CHARYAPADA) পালিত হল না। বৌদ্ধদেও সাহার্য ব্যতীত মুসলমান হায়দরাবাদের নিযাম সরকারের পুরাতত্ত¡ বিভাগের প্রধান ডক্টর গোলাম ইয়াজদানির সম্পাদনায় ১৯৩১ সালে বিরাট চার খন্ডে অজন্তা গুহার বৌদ্ধধর্মের একটি মনোরম এ্যালবাম প্রকাশ করা হল। বাংলাদেশে একমাত্র ধর্ম মানুষের মানবতাকে কি তিলে তিলে ধ্বংস করবে? গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশে মৌলবাদের সূতিকাঘার ধর্মস্থানের মাদ্রাসা। “টাকার যুগে” টাকার নামে ধর্মের অপব্যবহারে সাতখুন মাপ হল লাল মসজিদ ও শিখদের স্বর্ণমন্দিরে রাজনীতির পাঠশালায়। প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নেই, অথচ নিত্যই ক্ষুধিত।” বিদ্রোহী চর্যাপদের লেখকগণ শাসক ব্রাহ্মণ এবং হিন্দুরাজাদের বিরুদ্ধে কবিতার মাধমে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
হিন্দুরাজনীতি (নিম্নে বর্ণিত) গৌতমবুদ্ধকে বেঙ্কটশ্বর নামকরনসহ রাশি রাশি বৌদ্ধ মন্দিরকে হিন্দু মন্দির বানিয়েছে (সম্পাদকীয় আনন্দবাজার পত্রিকা, ২২ আগষ্ট, ১৯৯৩ এবং ২৪ ফেব্রæয়ারি ১৯৯৭ ইং)। ১৯৪৮ সালের পর চালচলনের পালাবদলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেবের “উর্দু” ভাষা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হলে “বৌদ্ধধর্মের” মতো বাংলাভাষা বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) থেকে বিতাড়িত হতো। ভাষা আন্দোলনের আলোকে বাংলা বর্ণমালার বয়স কত? কারণ বাংলা কাশে চর্যাপদের ইতিহাস ও বাংলা ভাষা প্রসঙ্গে অধ্যাপক মহোদয় আলোচনা করতেন বাংলা বর্ণমালার বয়স কত?
স্বদেশে হারানো চর্যাপদ বাংলাভাষার আদিমতম নিদর্শন এবং পালি সাহিত্যের বিপুল অবদান থেকে বাংলাভাষা অনেক বছর বঞ্চিত ছিল। পালি ভাষা ও বাংলা ভাষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, “জাতকের (বৌদ্ধ সাহিত্যে বুদ্ধ বচনে ছোট গল্প) বাংলা অনুবাদ পরলোকগত ঈশানচন্দ্র ঘোষ মহাশয়ের একটি আশ্চর্য কীর্তি। বৃহৎ এই, গ্রন্থখানির মধ্যে কোথাও শৈথিল্য নাই; সর্বত্রই লেখকের পান্ডিত্যপূর্ণ গবেষণার পরিচয় আছে।” ৫০০ বছর আগে বাংলাদেশে বাংলাভাষায় “চর্যাপদের”একটা বই ও খুঁজে পাওয়া সহজ কাজ ছিল না। বৈদিক ও বিদেশী সভ্যতার অভিশাপে আজ ২৫৫৩ বাংলা সনকে ১৪১৬ বাংলা সন বলা হয় এবং বাঙালির নব বর্ষের হালখাতার উৎসবকে কেন্দ্র করে সম্রাট আকবরের আমল থেকে বাংলা সন সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। ধর্মীয় ব্যাপারে হিন্দু বাঙালিরা শকাব্দ, মুসলমান বাঙালিরা হিজরি, বৌদ্ধ বাঙালিরা বুদ্ধাব্দ এবং খৃষ্ঠান বাঙালিরা খৃষ্ঠাব্দ সাল ব্যবহার করেন।
ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক শেখড়ের সন্ধানে ইহা ও এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উলেখযোগ্য যে, আমরা ‘বৌদ্ধ চর্যাপদের’ সন্ধান পেলাম আজ থেকে ১০৮ বছর আগে। ১৯০৭ খৃষ্টাব্দে নেপালের রাজদরবারের পুঁথিশালায় প্রাচীন পান্ডুলিপির সন্ধান করতে গিয়ে মহামহোপধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহোদয় উক্ত বৌদ্ধ চর্যাপদের মরমী সংগীতগুলো আবিস্কার করেন এবং ভাষা আন্দোলনের আলোকে চর্যাপদ সন্ধানের (১৯০৭- ২০০৭) শতবার্ষিকী ছিল। পরে ডঃ দীনেশ চন্দ্র সেন, ডঃ সুনীতি কুমার চাট্টোপাধ্যায়, ডঃ মোহাম্মদ শহীদুলাহ, ডঃ প্রেবোধ চন্দ্র বাগচি, ডঃ রাহুল সাংকৃত্যায়ন, ডঃ সুকুমার সেন, ডঃ মনীন্দ্রমেহন বসু, ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্ত, ডঃ তারাপদ মুখার্জী, ডঃ অতীন্দ্র মজুমদার, অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পন্ডিত পার কভিরনেসহ আরও অনেক বিখ্যাত গুণীজন। মুনিদত্ত চর্যাপদ তিব্বতি ভাষা থেকে সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করেন। বিশ্বসভ্যতা ও বাংলাভাষার জনক গৌতমবুদ্ধ! মানবমনে উদীয়মান বুদ্ধের আবির্ভাব। মনের বুদ্ধ মনে আছেন। বৌদ্ধ ভারতে অতীত ও অনাগত বুদ্ধগণের অবিচ্ছিন্ন স্রোতধারা প্রবহমান।
প্রসঙ্গত: ২৫৬৪ বুদ্ধবর্ষের সাথে থাই বর্ণমালা ও ভাষায় অনেক বাংলাশব্দ এবং ব্যাকরণ সমূহের মিল আমি থাই ভাষায় খুঁজে পেয়েছি। থাইভাষায় লেখা হয়, “সঙ্গীত শালা, মানুষ, রাজা, রাজিনী, লেখাধিকার (সম্পাদক), রাষ্ঠ্রসভা (সংসদ), প্রধান (সভাপতি), মূলনিধি (ফাউন্ডেশান), শিল্প, (থাই উচ্চারণ শিলাপা), মহাবিদ্যালয়।” থাইভাষা, ধর্ম এবং সভ্যতার সাথে বাংলা ভাষা ও সভ্যতার মিল আছে। বাংলা বর্ণমালায় একুশের ভাষা আন্দোলনের অগ্নিবীণা নিহিত ছিল। সম্রাট অশোকের (ব্রাহ্ম ণ্যবাদী হিন্দুরাজনীতির ষড়যন্ত্রে সম্রাট অশোকের দৌহিত্রকে হত্যা করে সেনাপতি ব্রাহ্মণ পুষ্যমিত্র মগধের সিংহাসন আরোহন করার পর পালি সাহিত্য, বৌদ্ধভিু ও বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করেন।
বৌদ্ধ চর্যাপদ পাঠ এবং বিশ্ব মানবতাবাদে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের” ঐতিহাসিক প্রোপটের উদ্ভাবন এবং বোধিসত্ত¡ অবলোকিতশ্বরের (হিন্দুদের শিব) মতো পরকে আপন করার সাধনায় গভীরতরো অবলোকন। এই সব কথা কি করে আমি আপনাদেরকে সবিস্তারে বর্ণনা করবো? ইতিহাসের এই অহিংসার উজ্বল আলোতে ও আমাদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অঙ্গন হিংসায় উন্মত্ত হয়ে থাকার কথা নয়। বিদেশী সভ্যতার হাজার বছর আগে বাঙালির গৌরব সন্তান অতীশ দীপঙ্কর বিশ্বমানবতা, মানবাধিকার ও অহিংসার মন্ত্র দিয়ে তিব্বত চিন সহ পৃথিবী জয় করেছেন।
বৌদ্ধ কবি ও সাধকগন বিপুল প্রজ্ঞা ও ক্ষুরধার বৌদ্ধদর্শন প্রয়োগ করে মনুষ্যত্বের উন্মেষ বিকাশে চর্যাপদের (৮ম – ১২শ শতাব্দী) এক একটি কবিতা রচনা করতেন। মানুষের দেশ মানুষের মনেরই সৃষ্টি। মানবাধিকারের যুগে চর্যাপদ আবিষ্কারের (১৯০৭ থেকে ২০০৭) শতবর্ষ জয়ন্তি ছিল। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে চর্যাপদ বাঙালি জাতির জাতীয় সম্পদ। ইহাই রাজনীতি ও ইতিহাসের ক্ষেত্রে বাঙালির অখন্ড সাধনা এবং এই অখন্ড সাধনার ফলেই গৌতমবুদ্ধের তদানিন্তন বাংলা লিপি বহু চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে এবং নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীতে প্রতিষ্ঠিত হলো অনাগত বংশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্দোলন প্রবর্তন সূত্রময় ‘শহীদ দিবস।’ একাদশ এবং দ্বাদশ শতাব্দী থেকে শুরু হলো সাধক চর্যাকারগনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। যার দূর্ণিবার জীবন্ত স্রোত হাজার বছরের সংকোচের জগদ্দল পাথর ভেঙ্গে এলো আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারীর উনিশশো বায়ান্ন সাল থেকে আজকের বাঙালী ঐতিহ্যমন্ডিত আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালী জাতি আবার নতুন সহস্রাব্দের আলোকে আবিস্কার করবে বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন বৌদ্ধ চর্যাপদের প্রতিটি শব্দ ও তার গভীর মর্মার্থকে। কারণ দেশ ও ভাষা বাঙালীর কাছে নিরেট বাস্তব, অতিশয় অপরিহার্য।
লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি।