হাসান আমিন : ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপের পর আর কোন বিশ্বকাপে দেখা যায়নি কানাডাকে। তাইতো তুষারবৃষ্টি আর পাগলা হাওয়া উপেক্ষা করে টরন্টোর গ্যালারিতে উপচে পড়েছিলো কানাডিয়ানদের ঢল, উড়ছে ম্যাপল লিফ। অবশেষে ঘটেছিলো ৩৬ বছর অপেক্ষার অবসান।
ঘরের মাঠে সেই খেলা ড্র করলেও চলত কানাডার। তাতেও সব ধরনের হিসাব-নিকাশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিশ্বকাপে চলে যেত কানাডা। কিন্তু এতে করে গ্যালারিতে ক্ষণে ক্ষণে গর্জে উঠা কানাডিয়ানদের ভালোবাসার যে প্রতিদান দেওয়া হয় না। তাই প্রতিপক্ষকে ৪-০ গোলে উড়িয়েই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছিলো স্বাগতিক কানাডা।
৩৬ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরছে দেশ। কনকাকাফ অঞ্চলের বাছাইপর্বেরও শীর্ষে থেকে শেষ করেছে কানাডা। বাছাইপর্বে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে কানাডাকে। যুক্তরাষ্ট্র, কোস্টারিকা, মেক্সিকো, জ্যামাইকা ও হন্ডুরাস যেখানে সরাসরি তৃতীয় রাউন্ডের বাছাইপর্ব খেলেছে, সেখানে কানাডাকে একদম প্রথম রাউন্ড থেকে খেলতে হয়েছে বাছাইপর্ব। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাউন্ড মিলিয়ে গত এক বছরে ২০টি ম্যাচ খেলতে হয়েছে কানাডাকে। ১৯তম ম্যাচে এসে নিজেদের বিশ্বকাপের জায়গা নিশ্চিত করেছে কানাডা।
তৃতীয় রাউন্ডে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দুই দল যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর কাছে হারেনি কানাডা। এ দুই দলের সঙ্গে দুই ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট করে পেয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠিত শক্তি কোস্টারিকার বিরুদ্ধে এক ম্যাচে হেরেছে। বাছাইপর্বে এটিই তাদের একমাত্র হার। এমন দাপুটে পারফরম্যান্সই ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে নিয়ে গেছে কানাডাকে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ফ্রান্স, হাঙ্গেরি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের গ্রæপে পড়া কানাডা সব কটি ম্যাচে হেরেছিল।
যেহেতু তিন যুগ পর বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে ফিরেছে কানাডা। দল নিয়ে তাই কোন আপোষ করেননি প্রধান কোচ জন হার্ডম্যান। চোট সমস্যা থাকলেও ঠাই পেয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখ তারকা আলফনসো ডেভিস। গত সপ্তাহে নিজের বাছাই করা খেলোয়াড়দের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেন কানাডা কোচ। ডেভিস জায়গা পেলেও কপাল পুড়েছে ডিফেন্ডার ডনিয়েল হেনরির। গত সপ্তাহে বাহরাইনের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের প্রাক্কালে গা গরম করার সময় চোট পান সাবেক ওয়েস্টহ্যাম ডিফেন্ডার।
ইনজুরির সমস্যা এখানেই শেষ নয় দ্য ম্যাপল লিফদের। আরেক ডিফেন্ডার স্কট কেনেডি ও গোলকিপার ম্যক্সিম ক্রেপোউ আগেই ছিটকে গেছেন চোটে পড়ে। তবে দলে থাকা ডেভিস শেষ পর্যন্ত মূল আসরে খেলতে না পারলে আক্ষেপের শেষ থাকবে না কানাডিয়ানদের।
২২ বছর বয়সী এই তরুণ তুর্কি ইতোমধ্যে বেশ নাম কুড়িয়েছেন জার্মান বুন্ডেসলিগায়। শরণার্থী ক্যাম্পে জন্ম নেওয়া ডেভিস নিজেও বেশ উচ্ছ¡সিত বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে। দল ঘোষণার পর সামাজিক মাধ্যম টুইটারে তিনি বলেন, ‘শরণার্থী ক্যাম্পে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর এতোদূর আসার কথা ছিল না। কিন্তু এখন আমরা বিশ্বকাপে যাচ্ছি। কখনও কাউকে বলতে দিও না তোমার স্বপ্ন অবাস্তব। স্বপ্ন দেখতে থাকো, অর্জন করতে থাকো।’
বিশ্বকাপে এফ গ্রæপে বেলজিয়াম, মরক্কো ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে লড়বে কানাডা। ২৩ নভেম্বর বেলজিয়ামের বিপক্ষে খেলা দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করবে ডেভিসরা।
কানাডার বিশ্বকাপ দল
গোলরক্ষক: মিলান বোরজান (রেড স্টার বেলগ্রেড), জেমস প্যানটেমিস (সিএফ মন্ট্রিল) এবং ডেইন সেন্ট ক্লেয়ার (মিনেসোটা ইউনাইটেড)।
ডিফেন্ডার: অ্যালিস্টার জনস্টন (সিএফ মন্ট্রিল), ডেরেক কর্নেলিয়াস (প্যানেটোলিকোস), রিচি লারিয়া (টরন্টো এফসি), স্যাম আদেকুগবে (হাতেসপোর), স্টিভেন ভিটোরিয়া (চ্যাভস), কামাল মিলার (সিএফ মন্ট্রিল) এবং জোয়েল ওয়াটারম্যান (সিএফ মন্ট্রিল)।
মিডফিল্ডার: স্টিফেন ইউস্ট্যাকিও (পোর্তো), জোনাথন ওসোরিও (টরন্টো এফসি), আতিবা হাচিনসন (বেশিকতাস জে.কে.), মার্ক-অ্যান্টনি কায় (টরন্টো এফসি), স্যামুয়েল পিয়েট (সিএফ মন্ট্রিল), লিয়াম ফ্রেজার (কে.এম.এস.কে. বেলজিন), ইসমায়েল কোন (সিএফ মন্ট্রিল) এবং ডেভিড ওদারস্পুন (সেন্ট জনস্টোন)।
ফরোয়ার্ড: আলফনসো ডেভিস (বায়ার্ন মিউনিখ), জোনাথন ডেভিড (লিলে) এবং সাইল লারিন (ক্লাব ব্রæগ), তাজন বুকানন (ক্লাব ব্রæগ), লুকাস ক্যাভালিনি (ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপস), জুনিয়র হোয়েলেট (রিডিং এফ.সি.), এবং আইকে উগবো (ইএস ত্রয়েস)।