অনলাইন ডেস্ক : বিল পাসের প্রায় চার বছর পর ভারতের ব্যাপক বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাস্তবায়নের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার। সোমবার এই আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রথমবারের মতো ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদান সংক্রান্ত এই আইন পাসের পর ২০১৯ সালে দেশটিতে ব্যাপক সহিংসতা দেখা দেয়। ওই সময় এই আইনের বিরোধিতায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ-সহিংসতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও আইনটির বিরোধিতা করে।
এনডিটিভি বলেছে, বিজ্ঞপ্তিটি জারি হওয়ায় এখন বিজেপি সরকার ভারতের বসবাসরত অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দিতে পারবে; যারা ২০১৫ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
২০১৯ সালের জাতীয় ও বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। এখন দেশটির লোকসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এই আইনের বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হলো। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল বিজেপি টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সিএএ বাস্তবায়নে ‘‘অবশ্যই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে’’ ঘোষণা দেওয়ার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হলো। অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘‘সিএএ দেশের একটি আইন… এটা অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে। নির্বাচনের আগে সিএএ কার্যকর হবে এবং এটা নিয়ে কারও বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না।’’
দেশটির এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য সিএএর মতো বিতর্কিত ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনসের (এনআরসি) মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করা হবে বলে যে ভীতি ছড়িয়েছে, তাও নাকচ করে দেন।
সিএএর অন্যতম কট্টর ও সবচেয়ে সোচ্চার সমালোচক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘‘তার সরকার মানুষের মাঝে বৈষম্য তৈরি করে এমন যেকোনও কিছুর বিরোধিতা করবে। তৃণমূল কংগ্রেসের এই নেত্রী বলেছেন, সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর বা জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন আইন পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। নির্বাচনের আগে তিনি এসব নিয়ে অশান্তি চান না।
এর আগে, তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটের জন্য এই সময়ে সিএএ ইস্যুকে সামনে আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। মমতা বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বিজেপি আবার রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য সিএএকে ইস্যু করছে। কিন্তু আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, যতদিন আমি বেঁচে আছি, ততদিন বাংলায় এটার বাস্তবায়ন হতে দেব না।
• কী আছে সিএএতে
নাগরিকত্ব আইন স্বাধীন ভারতের পুরোনো আইন। সেই আইনেই বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে দেশটির সরকার। এতে বলা হয়েছে, বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিরা সংশোধিত আইনে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত নাগরিকত্ব পাবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি সাত বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। কিন্তু কারা এই সুযোগ পাবেন?
সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে আক্রান্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ, এই আইনে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখদের কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু আক্রান্ত মুসলিমদের কথা বলা হয়নি। কেন মুসলিমদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীদের একটি অংশ। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনও শুরু হয়েছিল সে কারণেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, এই আইন নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন, কেড়ে নেওয়ার নয়।
সূত্র: এনডিটিভি।