অনলাইন ডেস্ক : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অর্জিত আয় থেকে বছরে শত শত কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে আয়ের অর্থ লোপাটের প্রমাণ পেয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ মিলেছে, একটি চক্র বিমানের বিভিন্ন ইউনিটের প্রকৃত আয়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ আয় কম দেখিয়ে এসব অর্থ লোপাট করেছে। দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন চক্রটি বিমানের বার্ষিক আয়ের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত্ করেছে।

উল্লেখ্য, অর্থ লোপাটের এসব ঘটনা বিমানের নিজস্ব তদন্তেও ধরা পড়ে। ২০১৬ সালে বিমানেরই নিজস্ব তদন্তে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিললে তখন তদন্ত কমিটি অর্থ লোপাটের এসব ঘটনা নিরপেক্ষ কোনো সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করার সুপারিশও প্রদান করেছিল।

দুদক সূত্র জানায়, দুদকের অনুসন্ধানে কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রকৃত ও প্রদর্শিত আয়ে বড় ধরনের ফারাক রয়েছে। বিমানের নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদন দুদক যাচাই-বাছাই করে এবং এ সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বিমানের ঊর্ধ্বতন বেশ কিছু কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এরপর দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় সম্প্রতি দুদক আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় কমিশন উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি এরই মধ্যে বিমানের আয়ের অর্থ লোপাটের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন। নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্টদের দ্রুতই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট দুদক সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১২০ ফ্লাইট অবতরণ করে থাকে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিমানের ১৫ ফ্লাইট রয়েছে, বাকিগুলো দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের। ৩০টির মতো কার্গো ফ্লাইটও ওঠানামা করে। ২০১৬ সালে বিমানের তদন্ত প্রতিবেদন এবং বিমানের গড় আয়ের এক হিসাবে দেখা যায়, ২০১৪ সালে বিদেশি উড়োজাহাজগুলো থেকে বিদ্যুত্ সার্ভিস প্রদান বাবদ মাসে বিমান ১৫ কোটি টাকা আয় করলেও দেখানো হয়ে ৮ কোটি টাকা। অর্থাত্ গড় হিসাবে বছরে এ খাত থেকে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।

এছাড়া এয়ারকন্ডিশন ইউনিট থেকে মাসে ২৫ কোটি টাকা আয় হলেও দেখানো হয় ১০ কোটি টাকা। অর্থাত্ গড় হিসাবে বছরে এ খাত থেকে অনেক টাকা লোপাট করা হয়েছে। একইভাবে এয়ারক্রাফট পুশ টো-ট্রাক্টর থেকে ৫ কোটি টাকার আয়কে দেখানো হয় ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা, অর্থাত্ গড় হিসাবে বছরে এ খাত থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। অন্যদিকে ওয়াটার সার্ভিস ট্রাক থেকে ৫ কোটি টাকার স্থলে ৩ কোটি টাকা দেখিয়ে গড়ে বছরে ২৪ কোটি টাকা লোপাট, মেইন ডেক কার্গো লোডার থেকে ৪ কোটি টাকার বদলে ৩ কোটি টাকা আয় দেখিয়ে গড়ে বছরে ১২ কোটি টাকা, ট্রলি সার্ভিস ট্রাক থেকে মাসে সাড়ে ৬ কোটির স্থানে ৪ কোটি টাকা আয় দেখিয়ে গড়ে বছরে ২৪ কোটি টাকা লোপাট, কনভেয়র বেল্টের ৮০ লাখ টাকার বদলে ৫০ লাখ টাকা দেখিয়ে গড়ে বছরে অনেক টাকা লোপাট এবং ফর্ক লিফট থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকার স্থানে আড়াই কোটি টাকা আয় দেখিয়ে গড়ে বছরে ১২ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। সব মিলে বিমানে গড় হিসাবে বছরের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে দুদক কর্মকর্তারা মনে করছেন।

এ ব্যাপারে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত জানিয়েছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত দুদকে চলছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান শেষে চূড়ান্ত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।