স্বপন কুমার সিকদার : “যায় যদি লুপ্ত হয়ে যাক,
শুধু থাক্?
এক বিন্দু নয়নের জল
কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল
এ তাজমহল”। – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমরা ছোট বেলায় যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছি তা বাড়ি থেকে অনেক দূরে। রাস্তাঘাট উন্নত ছিল না। আমাদের অবস্থা ছিল অনেকটা প্রখ্যাত সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিলাসী’ গল্পের সেই হৃদয়গ্রাহী ও নাড়ীতে টান দেওয়া কথাগুলোর মতো- “বর্ষার দিনে মাথার ওপর মেঘের জল ও পায়ের নীচে এক হাঁটু কাদা এবং গ্রীষ্মের দিনে জলের বদলে কড়া সূর্য এবং কাদার বদলে ধুলার সাগর সাঁতার দিয়া স্কুল-ঘর করিতে হয়, সেই দুর্ভাগা বালকদের মা-সরস্বতী খুশি হইয়া বর দিবেন কি, তাহাদের যন্ত্রণা দেখিয়া কোথায় যে তিনি মুখ লুকাইবেন, ভাবিয়া পান না”। আর প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল (সহৃদয় পাঠক মাফ করিবেন)- অনেকটা সেই ‘ইয়াদ আলীর পাঠশালা’। তাই আমাদের এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘ দিনের।
কবি গুরুর কথাগুলো নিঃশব্দে কানে বেজেছে বারে বারে –
“এইসব মূঢ় ম্লান মূক মুখে
দিতে হবে ভাষা, এইসব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে
ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বিশ্বকবির অভিলাষ এবং স্বপ্নে অবগাহন করে আমাদের হৃদয়ও বলেছে –
“মলিন মুখে ফুটুক হাসি, জুড়াক দু নয়ন।
মলিন বসন ছাড়ো সখী, পরো আভরণ।
অশ্রু-ধোওয়া কাজল-রেখা আবার চোখে দিক-না দেখা,
শিথিল বেণী তুলুক বেঁধে কুসুমবন্ধন”। – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে (শিক্ষা সচিব বরাবরে) ৩৩ শতক জায়গা চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার চন্দনাইশ পৌরসভাধীন পশ্চিম হারলার ৩নং ওয়ার্ডের আমাদের ব্রাম্মন পুকুর পারে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্যে দান করি। সরকারের ‘গণশিক্ষা কর্মসূচী’-র ডাকে সাড়া তথা আমাদের এলাকায় শিক্ষার স¤প্রসারণে এবং আমাদের শ্রদ্ধেয় স্বর্গীয় পিতার স্মৃতি রক্ষার্থে আমরা ভূমি দান করি। বাংলাদেশ সরকার সহৃদয় হয়ে আমাদের প্রিয় বাবার নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ করেন। আমাদের কামনা অনন্তকাল ধরে এই বিদ্যালয় শিক্ষার আলোক বর্তিকা জ্বেলে যাক – মূঢ় ম্লান মূক মুখে ভাষা, শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে আশা সঞ্চার করুক ও মলিন মুখে হাসি ফুটাক। এই বিদ্যালয় কালের কপোলতলে সমুজ্জ্বল হয়ে থাকুক।
“এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু,
পিছন-পানে তাকাই যদি কভু।
দিনের তাপে রৌদ্রজ্বালায় শুকায় মালা পূজার থালায়,
সেই ম্লানতা ক্ষমা করো, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো প্রভু”।
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম চোধূরী, সম্মানিত সংসদ সদস্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, সহৃদয় হয়ে বিদ্যালয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী রাস্তার উন্নয়ন কাজের সর্বশেষ অংশের শুভ উদ্বোধন করেন। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম চৌধূরী, সম্মানিত সংসদ সদস্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; সম্মানিত উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল জব্বার চৌধূরী, চন্দনাইশ এবং সম্মানিত পৌরসভা মেয়র মুঃ মাহাবুবুল আলম খোকা, চন্দনাইশ মহোদয়গণের নিকট কৃতজ্ঞ। হে প্রভু, আমাদের অর্ঘ্য তুমি তোমার মহানুভবতা দিয়ে গ্রহণ করো। ধন্যবাদ।