সোনা কান্তি বড়ুয়া : আমাদের বাংলাদেশ আমাদের ধর্ম! বৌদ্ধ বাংলার অতীত মুখ ফোটে মনের কথা বলতে পারেনি। সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি / তারি দু’চারিটি অশ্রুজলে আমার দেশ আমার পরম তীর্থভূমি প্রসঙ্গ! ১০৪১ সালে অতীশ দীপংকর (৯৮২ – ১০৫৪) তিব্বতে যাবার পর বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম রাতারাতি কোথায় হারিয়ে গেল? বৌদ্ধ পালরাজাগণ বাংলাদেশে চারশত (730 A. D. to 1130 A. D.) বছর রাজত্ব করেছিলেন! ভারত ছিল বৌদ্ধময়। এই বাংলার পাঁচ হাত মাটি খনন করলেই উঠে আসে গৌতম বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্মারক। সম্রাট অশোকের (300 B. C). বৌদ্ধ ভারত গোলেমালে ধর্মান্ধ হিন্দু ইন্ডিয়া হল কেন? তুমি সেই উগ্র মুসলমান ও ব্রাহ্মণ যে মানব, পাহাড়ী এবং অখন্ড মানব জাতি সেই মানব! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথা / নিতান্তই সহজ সরল! সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি / তারি দু’চারিটি অশ্রুজল / নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা / নাহি তত্ত¡ নাহি উপদেশ!”
একাদশ শতাব্দীতে কর্নাটকের হিন্দু রাজা বিজয় সেনের বাংলাদেশ দখল করাতে বাংলাদেশী বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। বঙ্গবাসীর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় ব্রাহ্মন্য ধর্ম। পরবর্তীকালে যার নাম দেওয়া হয় হিন্দু ধর্ম। বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজনীতি পালি বর্ণমালা (Asokan Scripts) কে ব্রাহ্মী বর্ণমালা করেছিল কেন? বাংলাদেশে বৌদ্ধ রাজত্ব, বাংলা ছিল বৌদ্ধময়। ব্রাহ্মণ্য রাজনীতি এবং ধর্মের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ‘বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধে চর্যাপদের (8th century to 12th century) উত্পত্তি! বাংলাদেশে বৌদ্ধ রাজত্ব ছিল হিন্দুরাজনীতির প্রাচীন বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ by force মুসলমান হয়েছিলেন (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২)!

১১৯২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র হিন্দু রাষ্ট্রধর্মের নেতা হয়ে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করতে ‘শেক শুভোদয়া ’ শীর্ষক বই লিখেছিলেন। তিনি তাঁর রচিত দিনলিপির (ডায়েরী) উক্ত বইতে মুসলিম তুর্কী মিশনের যোদ্ধাদের সাথে মহামন্ত্রীর গোপন ষড়যন্ত্রে রাজা লক্ষণ সেনকে সরিয়ে বখতিয়ার খিলজিকে বাংলার সিংহাসন আরোহনের নীলনক্সার পুঞ্জীভূত লোমহর্ষকর বাস্তব ঘটনাবলী অকপটে রচনা করে স্বীকার করলেন। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের এবং সন্ত্রাসী তুর্কি ইসলাম (বখতিয়ার খিলজি) ধর্মের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধে রামাই পন্ডিতের রচিত “শূন্য পুরান” শীর্ষক বইয়ের উত্পত্তি (16th century)। ১২০২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়! এবং বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন!

এয়োদশ শতাব্দীতে হলায়ুধ মিশ্র মন্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ারের বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ! সন্ত্রাসী তুর্কি মুসলমান বখতিয়ার খিলজির বাংলাদেশ দখল করাতে এয়োদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো! এমনকি রাজা লক্ষন সেনের সভাকবি উমাপতি ধর পরে বখতিয়ার খিলজির সভাকবি হলেন কেন? ইহাই বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্মের ট্রাজেডি।
হিন্দু মুসলমান রাজনীতির (Sen and Bakhtiar Khilji) বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধগণ by force মুসলমান হয়েছিলেন! ব্রাহ্মণ শাসিত সংস্কৃত ভাষার ব্রাহ্মণ্যবাদে জাতিভেদ প্রথার দুর্বৃত্তপনা! হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ধর্মচক্রকে বদলায়ে অশোকচক্র বানিয়েছে এবং সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারতকে হিন্দু ভারত করেছেন। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের বৌদ্ধ তিরুপতি মহাবিহার দখল করে হিন্দু মন্দিরে রুপান্তরিত করেছে এবং বুদ্ধ মূর্তিকে হিন্দুর ভগবান বেঙ্কটশ্বর বানিয়েছে। ডাক্তারকে যমানাদাসের লেখা ‘তিরুপতি বালাজি ওয়াজ এ বুদ্ধিষ্ঠ স্রাইন’ শীর্ষক মহাগ্রন্থে লেখা আছে, “আসলে এটি একটি প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি। ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্ম পতনের সময় হিন্দুরা স্রেফ গায়ের জোরে বিহারটিকে দখল করে নেয়।

বিশ্ব বিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ত্রয়দশ (13 th century) শতাব্দীতে তূর্কিশাসক সন্ত্রাসী বক্তিয়ার খিলজী ধ্বংস করেছিলেন। আটশত বছর পর চীন ও জাপানের দুই বিলিয়ন ডলার এবং ভারত সরকারের সাহায্যে দুই হাজার আঠারো সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্লাস শুরু হয়েছে। দুঃখের বিষয় এই যে অমর্ত্য সেন উচ্চশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ শিক্ষা প্রশাসক হয়েও বিশ্ব জনতার আকুল আশা অনন্ত পিপাসা ধ্বংস করতে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটি কোটি টাকা বিভিন্নভাবে পকেটেস্থ করেছে।

কথাশিল্পী শওকত আলীর লেখা “প্রদোষে প্রাকৃতজন” এবং “দুষ্কালের দিবানিশি” গ্রন্থদ্বয়ে দক্ষিণ এশিয়ার হিন্দু মুসলমান শাসকগণ কর্তৃক বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের রক্তাক্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন। তুর্কী আক্রমণ অত্যাসন্ন। তবু বাংলার হিন্দু সামন্ত-মহাসামন্তদের বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ ও অত্যাচারের শেষ নেই। সেই অত্যাচার রুখে দাঁড়ায় কখনো অন্ত্যজেরা, কখনো বৌদ্ধেরা! দেশ এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গ! সম্রাট অশোকের তীর্থভূমি বুদ্ধগয়ায় হিন্দু রাজনীতির শিবলিঙ্গ দুর্বৃত্তপনা কেন? বৌদ্ধদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধদেরকে দলিত বানিয়ে হিন্দুধর্মের নামে নীচু জাত করে মনুষ্যত্ব কেড়ে নিল (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২)।

বাংলাদেশে বৌদ্ধ রাজত্ব ছিল হিন্দুরাজনীতির প্রাচীন বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ by force মুসলমান হয়েছিলেন (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২)!

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আলবদর চক্র মুসলমান দুর্বৃত্তরা মধ্যরাতে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ, Our বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে বাংলাদেশ ধ্বংস করেছে! মুক্ত ভূখণ্ডে, স্বাধীনভাবে, শোষণমুক্ত হয়ে বাঁচার জন্য, বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির মধ্যে নতুন চেতনার যে অদম্য বহির্প্রকাশ ঘটে- সেটাই বাঙালি জাতীয়তাবাদ, যার বিকাশ ভাষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন দিয়ে এবং চূড়ান্ত গন্তব্য অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাত কোটি মানুষ এককণ্ঠে কথা বলতে শুরু করে, আর সেই কন্ঠস্বরটি হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও অগাধ দেশপ্রেমের কারণেই তিনি পুরো জাতিকে একসূত্রে আনতে পেরেছিলেন। যে কারণে, দুই হাজার বছরের ইতিহাসে তিনিই শুধু সফলভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটাতে পেরেছেন। যার ফলশ্রুতিতে জন্ম হয় বাংলাদেশের।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অভিশাপে নানা ষড়যন্ত্র! অবশেষে বৌদ্ধদের জায়গা তাদের নিকট ফেরত দিতে সম্মত হল – রাশেদ মোহাম্মদ আলী টেকনাফের দক্ষিণ হ্নীলা বৌদ্ধ বিহারের ১৩ একর ভূমি ফেরত দিতে সম্মত হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর পুত্র হ্নীলা ইউনিয়ন আওয়ামি লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী।
এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অভিশাপে নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহেরকে ফোন করে বহুল আলোচিত বৌদ্ধ বিহারকে তাদের দখল থেকে ফেরত দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস আমাকে নিশ্চিত করেছেন।

২৩ ফেব্রুয়ারি (২০২১) সন্ধ্যার ৭ ঘটিকার সময় কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে মিলনায়তনের টেকনাফের দক্ষিণ হ্নীলা বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের সাথে সাক্ষাত বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ, আমিনুর রসুল বাবুল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, মুজিব মেহদী, উপপরিচালক, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, সালেহ আহমেদ, সাধারন সম্পাদক, সম্মিলিক সামাজিক আন্দোলন, জাহিদুর রহমান, সংবাদ কর্মী, দৈনিক সমকাল, দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি, সুলভ চাকমা, সভাপতি, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, সাহিদা পারভীন, প্রকল্প ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, থোঅং বুবু, সভাপতি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কক্সবাজার জেলা শাখা ও ক্য জ অং, সদস্য সচিব দক্ষিণ হ্নীলা বড় বৌদ্ধ বিহার রক্ষা কমিটি ও সহ সভাপতি আদিবাসী ফোরাম, কক্সবাজার জেলা শাখা উক্ত সভায় উস্থিত ছিলেন।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারি মহোদয়কে যার নির্দেশ পরামর্শে জন্য আজ আমরা এ চুড়ান্ত অবস্থানে আসতে পেরেছি। ঢাকা থেকে আগত এবং অদ্য সভার উপস্থিত সকল সদস্যকে এবং কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল ইসলাম, এডভোকেট আয়াছুর রহমানসহ উপস্থিত সকল সংবাদ কর্মীও ও সকল সংবাদ মাধ্যমকে।

হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ চক্রান্তে (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২) জাতিভেদ প্রথার ট্রাজেডিতে “বৌদ্ধগণ” ভারতে হিন্দু রাজনীতির ক্রীতদাসে পরিণত হয়ে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন! বৌদ্ধবিশ্বের প্রার্থনার জায়গা বুদ্ধগয়ায় হিন্দু রাজনীতির শিবলিঙ্গ দুর্বৃত্তপনা কেন? কথাশিল্পী শওকত আলীর লেখা “প্রদোষে প্রাকৃতজন” গ্রন্থে হিন্দু মুসলমান (বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র বখতিয়ার খিলজির) রাজনীতির বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞের ভয়াবহ ইতিহাস বর্ণনা “তুর্কী আক্রমণ অত্যাসন্ন। তবু সামন্ত-মহাসামন্তদের অত্যাচারের শেষ নেই। সেই অত্যাচার রুখে দাঁড়ায় কখনো অন্ত্যজেরা, কখনো বৌদ্ধেরা (Page 50)!” ধর্মের নামে বৌদ্ধ জনতার জান মাল লুট হ’ল।

আনন্দবাজার পত্রিকার (সম্পাদকীয়, ২২ আগষ্ট, ১৯৯৩) মতে, “রামায়নের আদি হিসাবে তাঁহাদের কেহ কেহ প্রাচীনতর ভারতীয় কাহিনীর যথা: “দশরথ জাতক” (জাতক নম্বর : ৪৬১) এর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়াছেন। … সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কেমন করিয়া ভুলিয়া গেলেন যে, একদা রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করিয়া একদিন গড়িয়া উঠিয়াছিল রাশি রাশি হিন্দু মন্দির। তাঁহারা কি জানেন, হিন্দুর কাছে অতি পবিত্র পুরীর মন্দিরের প্রাক্ ইতিহাস সম্পর্কে কানিংহাম কিংবা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের কী অভিমত? তাই বলিতেছিলাম, অযোধ্যা একটি বৃহত প্রশ্ন বটে, কিন্তু নিতান্তই মনগড়া এক নির্বোধ প্রশ্ন।”

জনতা সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম জুড়ে দেবার জন্যে আপনার আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি। বাঙালি এনলাইটেনমেন্ট যুগে ধর্ম নিরপেক্ষতাসহ সমৃদ্ধিশালী বাহাত্তরের সংবিধানকে জাতীয় পার্লামেন্টে প্রতিষ্ঠা করার আকুল আশা নিয়ে জনতা আপনার দলকে ভোট দিয়াছিলেন। আইনের শাসনে বাহাত্তরের সংবিধান যে কোন সরকার লঙ্ঘন করলে আইনত দন্ডনীয়। সংবিধান রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যে কোন সরকার বাহাত্তরের সংবিধান কাঁটা ছেঁড়া বা ধ্বংস করলে দেশের সুপ্রীম কোর্ট উক্ত সরকারকে দন্ডিত করবেন। জোট সরকারের সময় ইসলাম ধর্মকে অপব্যবহার করার ফলে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল রক্তাক্ত প্রান্তরে।

হিন্দু মুসলমান রাজনীতির মাফিয়া চক্রে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ! আমাদের জাতীয় বিবেকের জবাবদিহিতার শক্তি মরে ধর্ম নামক বিভিন্নভয় ভীতির কবলে। হলায়ুধ মিশ্র মহামন্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধবাংলা জয় এবং ১২০১ সালে বখতিয়ার খিলজির হিংসার আগুন সম্রাট ধর্মপালের (৭৭০-৮১০) প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় (বিহার, ভারত), ধ্বংস করে দিল। কারণ দেশ ও ভাষা বাঙালীর কাছে নিরেট বাস্তব, অতিশয় অপরিহার্য। চর্যাপদ পাঠ এবং গবেষণার সময় মনে হবে বাংলা কেবল একটি দেশ নয়, সে একটি সভ্যতা, একটি সংস্কৃতি, একটি অপাপবিদ্ধ জীবনাদর্শ বা জীবন দর্শনের প্রতীক, যার মর্মবাণী হল বিশ্ব মানবতাবাদ “আমার এই ঘর ভাঙিয়াছে যেবা / আমি বাঁধি তার ঘর। / আপন করিতে গুরিয়ে বেড়াই,/ যে মোরে করেছে পর। (কবি জসীম উদ্দীনের লেখা)!

ভারতীয় সংবিধান বিরোধি বর্তমান ভারতের জাতিভেদ প্রথা (ব্রাহ্মণ ও দলিত বিতর্ক) এবং মনুস্মৃতি নামক হিন্দু আইন গ্রন্থের নীতিমালা। সকল ধর্মে মানুষ মানুষের আত্মীয়স্বজন। ভারত নামক রাষ্ট্রটি ভারতের জনতাকে (দলিত) নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে পারেনি । ধর্ম নামক ক্যান্সার বা মহামারি রোগে ভারত সরকার রোগগ্রস্থ হয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়বে? ভারত মাতার দেশে আইনের শাসনে হিংস্র উচ্চবর্ণের হিন্দুরা ধর্মকে ঢাল তলোয়ারের মত ব্যবহার করছে! এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অভিশাপে জাতিভেদ প্রথার কোন বিচার আজও হয়নি সমাপন। “কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)।” চর্যাপদে আমরা দেখতে পাই সেন আমলে গায়ের জোরে উচ্চবর্ণের হিন্দু শাসকগণ বৌদ্ধগণকে দলিত বানিয়েছিলেন এবং বাঙালি সমাজের এই করুণ ছবি দেখতে পাই ৩৩ নং চর্যায়। “টালত মোর ঘর নাঁহি পড়বেসী। হাড়ীতে ভাত নাঁহি নিতি আবেশী। এর মানে, নিজ টিলার উপর আমার ঘর। প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নাই, অথচ নিত্য ক্ষুধিত।” মীরজাফরের সাথে ইংরাজ শাসদের চক্রান্তের মতো সেন রাজার রাষ্ট্রধর্মের মহামন্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়, Hindu Political Conspiracy to destroy Buddhism in India, এবং প্রাচীন বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন (প্রসঙ্গত : কথাশিল্পী শওকত আলীর লেখা প্রদোষে প্রাকৃত জন)।

“দলিতদেরই জীবনধারণের স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তা
বৌদ্ধদের ধর্মস্থানে হিন্দু আগ্রাসন নিয়ে এতো কোর্ট কাছারির হাঙ্গামা কেন? অহিংসা মানুষের ধর্ম এবং হিংসা জাতিভেদ বৈদিক ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতি প্রথার পশুর ধর্ম। জাতিভেদ প্রথা ভিত্তিক হিন্দুধর্মে বৌদ্ধদের বিন্দুমাত্রও অস্তিত্ব নেই। বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দির হিন্দুত্বকরণের বিরুদ্ধে ভারতীয় বৌদ্ধভিক্ষুদের আমরন অনশন ধর্মঘটের সংবাদ টরন্টোর বাংলা কাগজ (জানুয়ারী ১২, ২০১০), বাংলাদেশের নয়া দিগন্ত (২ এবং ৩রা জানুয়ারি, ২০১০) ও কলকাতার টেলিগ্রাফ পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে বিশ্ববৌদ্ধ সমাজ বিস্মিত। জঙ্গি হিন্দুত্ববাদীদের গভীর ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে (কলকাতার দেশ ৪ মে, ২০০১ পৃ: ১০) ভারতীয বৌদ্ধদের অক্লান্ত প্রয়াসের ফলে মহাবোধি মন্দির উদ্ধারের দাবিতে অনশন, অবস্থান, মিছিল, ধর্ণা ইত্যাদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসুচি রুপায়ন চলতে থাকে বছরের পর। অবশেষে হিন্দু রাজনীতির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সন্মিলিত বৌদ্ধবিশ্বের প্রতিবাদ মুখরিত বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দিরে বুদ্ধ বন্দনার পর মহাভিক্ষু সমাগমে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়। সুসভ্য চীন জাপানসহ পৃথিবীর অনেক দেশের কোটি কোটি জনতা বুদ্ধের ধর্ম গ্রহণ করে বৌদ্ধ হলেন। মানুষের লোভ থেকে আমাদের মানবতা রক্ষা করা নিতান্ত কর্তব্য।

প্রত্যেকেরই জীবনধারণের স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার” ধর্মে বিরাজমান। চর্যাপদের সিদ্ধপুরুষ কবি ভুসুকু’ বাঙালি শব্দের আবিষ্কারক ছিলেন। চর্যাপদের বাঙালি এনলাইটেনমেন্টের যুগে বুদ্ধাব্দই বঙ্গাব্দ ছিল এবং ‘আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী (ভুসুকু আজ আলোকপ্রাপ্ত সিদ্ধপুরুষ বা বাঙালি হলেন)” থেকে ঐতিহাসিক’ শব্দের অভূতপূর্ব সংযোজন হয়েছিল।

বৌদ্ধ বিহার ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে পুরীর মন্দির”- সেই চেপে রাখা ইতিহাসের সামান্য তুলে ধরা হলো হিন্দু ধর্ম কিভাবে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করে! সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের মাটিতে বৌদ্ধ রাষ্ট্রদ্রোহী। বাণভট্ট রচিত হর্ষচরিত গ্রন্থানুসারে, ১৮৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মৌর্য্য রাজবংশের বৌদ্ধ নবম সম্রাট বৃহদ্রথের (5th Generation of Emperor Asoka) প্রধান সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য্য সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজে শক্তি প্রদর্শনের সময় তাকে হত্যা করে মৌর্য্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটান ও শুঙ্গ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করে চলেছে। আবার ব্রাহ্মণ্যবাদ জেগে উঠে দিনের পর দিন বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করে চলেছে। রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের (অধ্যায়) বত্রিশ নম্বর শ্লোকে বুদ্ধকে (যথাহি চৌর স তথাহি বুদ্ধ, তথাগতং নাস্তিকমত্র বিদ্ধি); চোর বলে গালাগাল করার পর কি সেই মহাকাব্যটি কি বৌদ্ধ জাতকের আগে রচিত? আমার দেশ আমার ধর্ম! ব্রাহ্মন্য ধর্ম পরবর্তীকালে যার নাম দেওয়া হয় হিন্দু ধর্ম।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম বই “চর্যাপদের” অনুবাদ তিব্বতি ভাষায় বিদ্যমান এবং সর্বকালের জয় বাংলার গৌরব সন্তান অতীশ দীপঙ্করকে (৯৮২ – ১০৫৪) তিব্বত এবং চিনের জনগণ আজ ও সশ্রদ্ধ চিত্তে বিশ্বমানবতার দেবদূত রূপে অভিবাদন করেন। টাকা দিয়ে সুখ কিনলামের যুগে ধর্মীয় রাজনীতির রক্তাক্ত প্রান্তরে স্বার্ধান্ধ সুখের জন্যে আজ রাজনীতি ও ধর্ম মানুষের ক্যান্সার রোগ বা মহামারিতে পরিণত হয়েছে। উচ্চবর্ণের হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ এবং বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন!

ধর্মের নামে বৌদ্ধ জনতার জান মাল লুট হ’ল! দেশের উক্ত বিষাদ সিন্ধুময় ঘটনার কান্না কথাশিল্পী শওকত আলীর লেখা “প্রদোষে প্রাকৃতজন” শীর্ষক বইতে অব্যক্ত বেদনার ছবি হয়ে আছে। প্রসঙ্গত একদিকে যেমন মানুষের রক্তে হোলিখেলা হলো মাটির উপর তেমনি আরেক দিকে মা বোনের ইজ্জত পর্যন্ত অব্যাহতি পেলো না ভোগ লালসা থেকে। মানুষের দরবারে অত্যাচারিতের দুঃখের দহনে করুণ রোদনভরা ফরিয়াদে বাংলার আকাশ বাতাস কেঁদে কেঁদে গুমরে উঠেছিল কেন?

হিন্দু রাজনীতি শশাঙ্কের সময় (7th Century) থেকে সেন আমল (12th Century) পর্যন্ত ব্রাহ্মন্যবাদীরা বাঙালি জাতির পালি ভাষা বলা ও লেখা বন্ধ করে দিয়ে বুদ্ধের সমস্ত পালি ঞবীঃ স্মৃতি চিহ্নগুলি ধ্বংস করে দেয়। হিংসা ও লোভের নাম ধর্ম নয়!! বাংলা ভাষার প্রথম বইতে (চর্যাপদ) হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের মুক্তিযুদ্ধ! বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ, দেশ, ৪ মে ২০০১ পৃষ্ঠা ১২ কলকাতা! সম্রাট অশোক ব্রাহ্মণ শাসিত সংস্কৃত ভাষা বাদ দিয়ে বৌদ্ধ ত্রিপিটক পালি ভাষায় প্রকাশনা প্রচার ও প্রসার করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন!

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রণেতা প্রবাসী কলামিষ্ট, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!