অনলাইন ডেস্ক : ভারতে আর মাস দুয়েক পরই শুরু হচ্ছে বিধানসভা নির্বাচন। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিজেপির প্রচারে পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশের ইস্যুকে আবারও খুঁচিয়ে তুললেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে দুটি জনসভায় অংশ নিয়ে ভারতীয় মন্ত্রী দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে সীমান্ত দিয়ে মানুষ তো দূরে থাক, একটা পাখিও ঢুকতে পারবে না। খবর : বিবিসি বাংলার।

এদিন কোচবিহার ও ঠাকুরনগরের জনসভায় দাঁড়িয়ে অমিত শাহ জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘অনুপ্রবেশ নিয়ে আপনারা কি বিরক্ত নন? আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি আদৌ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারবেন?’

বিজেপি নেতার কথায়, ‘রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেই কেবল অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। দেখবেন, বিজেপি সরকার গড়লে সীমান্ত দিয়ে মানুষ দূরে থাক, একটা পাখিও ঢুকতে পারবে না।’

মজার বিষয় হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে দাঁড়িয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন এ কথা বলছেন, ঠিক তার আগের দিনই তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই ভারতীয় সংসদে লিখিত জবাবে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালের তুলনায় পরের পাঁচ বছরে

বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের ঘটনা ব্যাপকভাবে কমেছে।

রাজ্যসভার সদস্য মানস রঞ্জন ভুঁইয়া প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছিল ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তৃণমূল কংগ্রেসের এ নেতার মতে, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ নিয়ে অমিত শাহের বক্তব্য পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সীমান্তে বেড়া দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের, সেই কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। তা ছাড়া অন্য দেশ থেকে যারা অবৈধভাবে ভারতে ঢুকবে, তাদের ওপর নজরদারি করা বা বাধা দেওয়ার কথা বিএসএফের- যা কেন্দ্রীয় সরকারের বাহিনী। তা হলে তারা কীভাবে অনুপ্রবেশের জন্য মমতা সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপান?’

মানস রঞ্জন ভুঁইয়ার কথায়, ‘ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারই বলেছে, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ কমে গেছে। তার পরও এসব কথা বলার মানে রাজনীতির জন্য রাজনীতি করা বা শুধু বলার জন্যই বলা।’

অনেকটা একই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও। তাদের অনেকে মনে করছেন, বিজেপি আসলে কথিত অনুপ্রবেশ ইস্যুর আড়ালে সাম্প্রদায়িক এজেন্ডাকেই সামনে আনার চেষ্টা করছে।

ভারতের প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাবেক সাংবাদিক শিখা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘অনুপ্রবেশের নাম করে বিজেপি আসলে এটাই বলতে চায়, বাংলাদেশ থেকে দলে দলে মুসলিমরা এসে পশ্চিমবঙ্গে কোনোভাবে হয়তো হিন্দুদের সংখ্যালঘু বানিয়ে দেবে। এটা একটা সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বক্তব্য- আর এ কথাটা যেন বলা যায়, সে জন্যই অনুপ্রবেশের ইস্যুকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’