অনলাইন ডেস্ক : গত ১৫ই জুলাই, শনিবার টরন্টোতে বাড়ি ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে ৩৩ কিং স্ট্রীট এ প্রায় ৩০০ জনের উপস্থিতিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভে উপস্থিত ভ‚ক্তভোগীরা জানান, গত কয়েক বছরে টরন্টোতে বাড়ি ভাড়া যে হারে বেড়ে গেছে, তাতে স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে এই শহরে ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী এন্থোনী এলাও জানান, ২০১৯ সালের পর থেকে বাড়ি ভাড়া কম করে শতকরা ৫০ ভাগ বেড়েছে। এর ফলে অনেক পরিবারের পক্ষে পরিবারের সদস্যদের জন্য টেবিলে খাবারের যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে টরন্টোতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সাথে সাথে বাড়ী ভাড়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় এই বৃদ্ধির হার শতকরা একশ ভাগের মত। এর কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করেন, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় বাড়ীর মালিকদের এখন অনেক বেশী হারে মর্টগেজ দিতে হচ্ছে। যার ফলে বাড়ীর মালিকরা বাড়ী ভাড়া এই অস্বাভাবিকভাবে বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়াও টরন্টোতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিবাসী এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী প্রবেশ করায় এখানে ভাড়া বাড়ীর প্রচুর স্বল্পতা রয়েছে, যার সুযোগ নিতে বাড়ীর মালিকরা নিজেদের ইচ্ছেমত বাড়ী ভাড়া ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে যাচ্ছেন।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, টরন্টোর নি¤œ আয়ের মানুষদের পক্ষে সুস্থ পরিবেশে বাড়ী ভাড়া করে বসবাস করা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নি¤œ আয়ের মানুষকে এখন বসবাসের জন্য অস্বাস্থ্যকর বেইজমেন্টে থাকতে হচ্ছে। সেই সাথে ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, টরন্টোর ফুড ব্যাংকগুলোতে খাদ্য গ্রহণে প্রত্যাশী মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এমন অবস্থায় অনেকেই টরন্টো ছেড়ে আশে পাশের লোকালয়ে বসবাসের চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু আশেপাশের লোকালয়ে বসবাসের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে, সেই সব জায়গায় কর্ম সংস্থানের সুযোগ অনেক কম।

ইদানিং দেখা যাচ্ছে, সরকার ফলাও করে জানাচ্ছে, কানাডায় অনেক কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে সেগুলোর সিংহভাগের মজুরী এত কম যে সপ্তাহে সাতদিন কাজ করেও নূন্যতম মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই ট্রুডো সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে জনগণকে স্বাচ্ছন্দ্যে না রাখতে পারার জন্যে। সরকার বড় বড় কথা বললেও বাস্তবে সেটা দেখা যাচ্ছে না। সেই সাথে সরকারের অভিবাসন নীতির ফলে অনেক বেশী অভিবাসী কানাডায় বিশেষ করে টরন্টোতে প্রবেশ করলেও তাদের বাসস্থানের যথেষ্ঠ সংকুলান হচ্ছে না। রিফিউজির দাবীতে এ দেশে প্রবেশের পর অনেককেই রাস্তায় দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ শেল্টার হোমগুলোতে তাদেরকে রাখার মত কোন জায়গা আর খালি নেই।

ফেডারেল, প্রভিন্সিয়াল এবং মিউনিসিপ্যাল সরকার তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় সহজলভ্য বাস স্থানের কথা ফলাও করে প্রচার করলেও দৃশ্যমান তেমন কোন অগ্রগতি এখানে দেখা যাচ্ছে না। তার উপর যে হারে অভিবাসী এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এই শহরে প্রবেশ করছে, তাদের আবাসের জন্য সরকারী কোন মহল তেমনভাবে প্রস্তুত নয়। পৃথিবীর প্রধানতম বাসযোগ্য দেশের কাতারে কানাডার নাম প্রথম সারিতে আসলেও এখানে স্বল্প আয়ের মানুষ যে কষ্টে দিনাতিপাত করছে, সেটা বর্ণনার অতীত। অনেকেই মনে করেছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় এই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে এবারের ফেডারেল নির্বাচনে লিবারেল পার্টির ভরাডুবি হবে।