অনলাইন ডেস্ক : করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। বাড়ছে বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার। কোভিড-১৯ এর কারণে সবকিছুই স্থবির থাকায় আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছিল প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক অর্থ খরচ। কিন্তু সে অবস্থার পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়েছে। চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলা-অক্টোবর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বৈদেশিক অর্থ ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এই চার মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করেছে ৮ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে খরচ হয়েছিল ৭ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে তুলনামূলক ব্যয় বেড়েছে ৬৪৭ কোটি টাকা। তবে সার্বিকভাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার এখনও গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়েই রয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম শনিবার বলেন, করোনার কারণেই বৈদেশিক সহায়তার ব্যবহার বেড়েছে বলা যায়। কেননা ওই সময় বেশ কিছু সহায়তা ও বাজেট সাপোর্ট এসেছে। যেগুলো দ্রুত ব্যয় করা হচ্ছে। তাছাড়া শুকনো মৌসুমের শুরু এবং করোনার প্রভাব কাটিয়ে সবকিছুতে স্বাভাবিক গতি ফেরায় প্রকল্পের বাস্তবায়নও বাড়ছে। তাই বৈদেশিক সহায়তার অর্থের ব্যবহার বাড়ছে। তবে করোনা মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হলে পুরো শুষ্ক মৌসুমটি কাজে লাগাতে হবে। যাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায় সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

আইএমইডি’র সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার বৃদ্ধির মানেই হচ্ছে ধীরে ধীরে করোনার প্রভাব কেটে যাচ্ছে। কেননা শুরুর দিকে বৈদেশিক অর্থ ব্যয় একেবারেই স্থবির হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। অনেক প্রকল্পে পরামর্শকরা যোগ দিচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বেড়েছে। কোনো কোনো প্রকল্পে মালামালও আসতে শুরু করেছে। তাই বৈদেশিক অংশে খরচ বাড়ছে।

আইএমইডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের তিন মাসে বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয় ছিল সাত দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছিল পাঁচ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয়ের এ হার ছিল পাঁচ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সেই সময়ে ব্যয় হয়েছিল চার হাজার ২২৬ কোটি টাকা। তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের গত তিন মাসের চেয়ে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এক মাসে (অক্টোবর) বৈদেশিক অর্থ ব্যয় বেড়েছে চার দশমিক ০১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে দুই হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। এছাড়া চলতি অর্থবছরের দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বৈদেশিক অর্থ ব্যয় হয়েছিল ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ সময় খরচ হয় দুই হাজার ২৫২ কোটি টাকা। আর শুধু জুলাই মাসে বৈদেশিক অর্থব্যয় হয় দুই দশমিক ০৫ শতাংশ। এ সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেখতে হবে করোনার কারণে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে যেসব সহায়তা এসেছে সেগুলোর কারণে এই ব্যয় বৃদ্ধি কিনা? যদি সেটি হয় তাহলে সার্বিকভাবে বলা যাবে না করোনার প্রভাব কেটে যাচ্ছে। তবে এ কথাও ঠিক করোনার শুরু থেকে বেশ কিছুটা সময় মেট্রোরেল প্রকল্প একেবারেই স্থবির ছিল। কিন্তু এখন কাজ শুরু হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। সেখানেও বেশ কিছু বৈদেশিক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এ রকম অনেক প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এডিপির আওতায় বৈদেশিক অর্থ ব্যবহারে এগিয়ে রয়েছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এ বিভাগের অনুকূলে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ আছে ৭৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। গত চার মাসে ব্যয় হয়েছে ৫শ’ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। এছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ বিভাগে বরাদ্দ আছে সাত কোটি ২৩ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে চার কোটি ৫৪ লাখ টাকা, অগ্রগতি ৬২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের (থোকসহ) বরাদ্দ ৬৯ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ২৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, অগ্রগতি হয়েছে ৪৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। পঞ্চম অবস্থানে থাকা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ আছে ৭৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। গত চার মাসে ব্যয় হয়েছে ৩১ কোটি ৮ লাখ টাকা, অগ্রগতি ৪২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। পঞ্চম অবস্থানে থাকা আইএমইডির অনুকূলে বরাদ্দ আছে ৮৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে ৩৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

অন্যদিকে এডিপির আওতায় বৈদেশিক অর্থব্যয়ের পিছিয়ে থাকার ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হচ্ছে, ভূমি মন্ত্রণালয় এক টাকায়ও খরচ করতে পারেনি। এছাড়া একই অবস্থা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের। তবে জননিরাপত্তা বিভাগের অগ্রগতি শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (থোক বরাদ্দসহ) শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ। আইন ও বিচার বিভাগ ১ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক অর্থ ব্যয়ের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।