হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।
এখানে থাইল্যান্ডে সরকারি সফরের সময় আমার বেকায়দায় পড়া ও তার চমৎকার উত্তরণ সম্পর্কে আজ কথামালা গাঁথবো।
তখন সরকারি চাকরি করি। প্রচুর লেখালেখি, অনুবাদ আর রিপোর্ট তৈরির কাজগুলো আমি করতাম। আর সত্যিকার অর্থে সে কাজগুলো আমি উপভোগ করতাম। কেননা, এগুলো সবই ছিল ক্রিয়েটিভ কাজ আর আমার মজ্জাগত লেখালেখির অংশবিশেষ।
অফিস পলিটিক্স আর অফিসার, তথা আমার জুনিয়র সিনিয়র অফিসারদের ছাড়পত্রের রমরমা ব্যবসাকে আমি ঘৃণা করতাম। তাই তৈরি করে নিয়েছিলাম আমার নিজস্ব জগত। অফিসের প্রকাশনা, ডকিউমেন্টারি, টিভি স্পট এইসব সংবেদনশীল কাজগুলো আমি খুব দক্ষতার সাথে করতে পারতাম। প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের সংকলন প্রকাশের সার্বিক দায়িত্বে আমি থাকতাম। সংকলনের সম্পাদকও ছিলাম আমিই।
মন্ত্রণালয়ের জন্য রিপোর্ট তৈরি বা সংসদে পরিবেশসংক্রান্ত সম্পূরক প্রশ্নের উত্তর তৈরি করতাম আমিই। যখন যে ডিজি সাহেব দায়িত্বে থাকতেন তিনি আমার ওপর নির্ভর করতেন এসব কাজে।
২০০২ সালে থাইল্যান্ডের রাজধানি ব্যাংকক-এ এসকাপের উদ্যোগে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশসমূহের জলবায়ু পরিবর্তন ও মানিয়ে নেয়া সম্পর্কিত একটি সেমিনারে যোগদানের জন্য আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এসকাপ থেকে পাঠানো ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে ‘স্টেট অব ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশ’ পেপারটি তৈরি করে ফেললাম। ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়ে আমি ভীষণ আগ্রহী ছিলাম আর এই বিষয়ে কিছু কাজও করেছিলাম।
ডেইলি স্টার, ইত্তেফাক, মুক্তকন্ঠ ও নিউ নেশন পত্রিকায় কিছু লেখাও আমার ছাপা হয়েছিল। আমার পেপারটি তৈরি করতে তৎকালিন পরিচালক (কারিগরি) প্রয়াত মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন। তৎকালিন মহাপরিচালক হেদায়েতুল ইসলাম চৌধুরী আমাকে ফ্রি-টাইম দিলেন পেপার তৈরি করার এবং আমার প্রতি নানাভাবে আনুকূল্য প্রদর্শন করলেন।
তো আমি থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংকক এয়ারপোর্টে নামলাম। সাধারণত যা হয়ে থাকেÑইমিগ্রেশন এলাকায় আমার নাম লেখা কাগজ ঝুলিয়ে-নাড়িয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আয়োজক কর্তৃপক্ষের কেউ আমাকে রিসিভ করবে। কিন্তু বেশ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও কাউকে দেখতে না পেয়ে ইমিগ্রেশন এলাকা পার হয়ে ট্রলিতে লাগেজ ও কাগজপত্র নিয়ে ট্যাক্সির সন্ধানে এলাম। গন্তব্য ইউনাইটেড ন্যাশনস ভবন। আমি চিন্তিত হলাম, এই নাম বললে কি ক্যাব ড্রাইভার বুঝবে?
আমার মস্তিষ্কে নানা ভাবনা খেলে যাচ্ছিল। তখনও ফোন ফ্যাক্স সেল ফোন, কম্পিউটার-ইন্টারনেট ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠেনি। হঠাৎ আমার এক কলিগের কথা মনে পড়ল। সে ইতোপূর্বে থাইল্যান্ড সফর করে গেছে। সে বলছিল থাই হোটেলের কথা। সেটা নাকি জাতিসংঘ ভবনের কাছেই।
খুশি হয়ে উঠল মন। তখনও জানিনা, মন খুশি হলেও অভ্যন্তরীণভাবে যে আমি ভূমিধসের শিকার হয়েছি; সেটা তখনও টের পাইনি। আপাতত আবারও চিন্তামগ্ন হলাম কোনো ক্যাব ড্রাইভারকে গন্তব্যটা বুঝাই কী করে। সেই কলিগের বলা কথাগুলো মনে মনে আবারও ঝালাই করে ‘প্রজাপতি’ শব্দটা মাথায় এলো। প্রজাপতি কি কোনো রোডের নাম হতে পারে? কেন পারবে না।
একবার, সবে মাত্র ঢাবি’র ইংরেজি বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়ি, তখন ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি আন্তর্জাতিক ফুটবল দল বাংলাদেশে এসেছিল কী একটা কাপ খেলতে। খেলাগুলো হবে তখনকার ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম)। এলাকাটায় ঘুরঘুর করতাম আমি। থাইল্যান্ড! মনে হতো স্বপ্নের দেশ, আর তার না জানি কতো উন্নত মানের ফুটবল খেলে! দেয়ালে পোস্টার, আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে সব স্থান। সেখানে থাই খেলোয়াড়দের নাম দেখলাম। সিথিপন পংশ্রি, ঐরাবত প্রমুখ। ঐরাবত মানে হাতি যদি কারো নাম হতে পারে, তবে প্রজাপতি কেন কোনো রোডের নাম হতে পারবে না!
একটা ক্যাব ডেকে ড্রাইভারকে সোজা বলে দিলাম, থাই হোটেলে চলো, প্রজাপতি রোডে। ঠিক ঠিক পৌঁছে গেলাম থাই হোটেলে! পরে অবশ্যি জেনেিেছলাম ওটা প্রজাপতি রোড নয়। নাম Prachathipatai Road. থাই হোটেল থেকে কাছেই ইউনাইটেড ন্যাশনস ভবন।
হোটেলের কামরায় এসে দেখলাম আমার কাগজপত্র নেই। মূল পেপারটির একটি প্রিন্টআউট নিয়েছিলাম ঢাকায়। আর নিয়েছিলাম পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ও টকিংপয়েন্ট-এর প্রিন্টআউট। সেগুলো আর কিছু বইপত্র নেই। তন্নতন্ন করে লাগেজ খুঁজলাম। কোথাও নেই। সম্ভবত এয়ারপোর্টের ট্রলিতে বা ট্যাক্সিতে সেসব পেপার ফেলে এসেছি। এখন একমাত্র ভরসা ফ্লপি ডিস্ক। তখন পেনড্রাইভের প্রচলন হয়নি। ফøপি ডিস্কে আমি স্টেট-পেপারটি শুধু নিয়েছিলাম।
ছ্যাঁৎ করে উঠল ভেতরটা। সবেধন নীলমণি ফ্লপি ড্রাইভটা আছে তো! ছিল সেটা। কিন্তু কাজ করবে তো সেটা? ফ্লপি ডিস্কের একটা ত্রুটি ছিল যে, ফ্লপি ডিস্ক সময়মতো কাজ করে না বা ওপেন হয় না। রুম থেকে দ্রুত নিচে রিসেপশনে নেমে এলাম। জানতে চাইলাম তাদের কম্পিউটার ফ্যাসিলিটি আছে কিনা। দুইটি কম্পিউটার ও একটি প্রিন্টার ছিল। বললাম, আমি পে করব তোমাদেরকে, আমার কিছু প্রিন্ট করতে হবে। তারা রাজি হলো। যদি না ওপেন হয় ফ্লপি ডিস্ক? আমার ভেতরটা ধুকপুক করছিল। ওপেন না হলে কী করব?
একইসাথে আরেকটি ভাবনা খেলে যাচ্ছিল মাথায়: বাংলাদেশে ইমেইল করব কলিগ খালেদকে। খালেদ অফিসে আমার কামরায় ঢুকে আমার কম্পিউটারে রক্ষিত ম্যাটেরিয়ালসগুলো খালেদের মেইল থেকে আমাকে মেইল করবে। আমি এখানে মেইল ওপেন করে প্রিন্টআউট নেব। কিন্তু সেটা পরদিন সকাল ছাড়া সম্ভব নয়। আমি খালেদের সাথে যোগাযোগ করব কেমন করে? মেইল করতে পারি, কিন্তু সেইরাতে বা পরদিন সকালে ইপ্সিত সময়ে খালেদ যে ইমেইল চেক করবে তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। একমাত্র উপায় হলো ফোন করা। কিন্তু এই রাতের বেলায় তো কেউ তো অফিসে ফোন ধরবে না। খালেদের সেলফোনে ফোন করব, তার কোনো পথ নেই। আমি তো সাথে আমার সেলফোন নিয়ে আসিনি যে, ওর নাম্বারটা জেনে নেব। কোনোক্রমে খালেদকে যদি পেয়েও যাই, আরও একটা সমস্যা থেকে যায়। অফিসে আমার কামরার চাবি তো কারো কাছে নেই। সেইক্ষেত্রে রুমের লক ভেঙে খালেদকে ঢুকতে হবে। এতকিছু কি স্বল্পসময়ে সম্ভব হবে?
খুলল। ফ্লপি ডিস্ক ওপেন হলো। আমি প্রথমইে কপি করে হার্ডডিস্কে নিলাম ম্যাটেরিয়ালস-এই আশঙ্কায় যে, যদি ফøপি দ্বিতীয়বার ওপেন না হয়। যাইহোক, প্রিন্টআউট নিলাম। টকিং পয়েন্টেরও একটা প্রিন্টআউট নিলাম। কিন্তু পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের কী হবে?
একটা বুদ্ধি খেলে গেল মাথায়। কাল সকাল ন’টায় ইউএন বিল্ডিং-এর কনফারেন্স রুমে আমাদের সেমিনারের প্রথম পর্ব, মানে ইনোগিউর্যাল সিরিমনি হবে। এরপর শুরু হবে মূল সেমিনার বা টেকনিক্যাল সেশন। মাঝখানে ঘন্টাখানেক সময় থাকবে। সেই সময়টায় আমি ওদের সেক্রেটারিয়েটে গিয়ে কম্পিউটারে বসে স্টেট পেপার আর টকিংপয়েন্ট থেকে তথ্য নিয়ে পাওয়ারপয়েন্ট তৈরি করে ফেলব।
সমাধানটা মাথায় আসতেই শান্তমনে আমি চলে এলাম হোটেলের ডাইনিংয়ে। অনেকরাত তখন। রেস্তরাঁর স্বল্প মায়াবী আলোয় একজন বিদেশি ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলাকে দেখতে পেলাম ডিনার সারছে। আমি খাবারের অর্ডার দিয়ে ভদ্রলোককে লক্ষ্য করতে লাগলাম। কেমন চেনা-চেনা লাগছে তাকে। একসময় এগিয়ে গিয়ে পরিচয় দিলাম আমার।
লাফিয়ে উঠলেন ভদ্রলোক। মালয়েশীয় তিনি, এসকাপের ক্লাইমেট চেঞ্জে চাকরি করেন, ব্যাংককে। তিনি ঢাকার শেরাটনে ক্লাইমেট চেঞ্জবিষয়ক সেমিনারে যোগ দিয়েছিলেন সম্ভবত ২০০০ সালে। তখন তার সাথে পরিচয় হয়। ভদ্রলোক জানালেন, তিনি কালকের সেমিনার আয়োজনের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তিনি আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। ভদ্রলোকের নামটা মনে পড়ছে না। জিজ্ঞেস করলাম এয়ারপোর্টে আমাকে কেউ রিসিভ করতে যায়নি কেন। ভদ্রলোক তাৎক্ষণিকভাবে সেলফোনে কাকে যেন ফোন করলেন। তারপর আমার দিকে ফিরে বললেন, যে মহিলাকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, সে নতুন নিয়োগ ও ট্রেইনিংপ্রাপ্ত। সে কোথাও ভুল করেছে। ভদ্রলোক আবার ফোন তুলে রাগান্বিত ভঙ্গিতে বললেন, তোমার চাকরি চলে যেতে পারে, তুমি জানো?
ভদ্রলোক ফোন রাখলে আমি বললাম, কারুর চাকরি খাওয়ার দরকার নেই।
খিদে লেগেছিল, বেশ মন দিয়ে খেলাম আধো আলো আধো অন্ধকারে। কী খাবার সেই রাতে খেয়েছিলাম, তা মনে পড়ছে না। তবে সেটা যদি শুকনো রুটিও হতো, তবু আমি পেটপুরে খেতাম। কেননা, সেইরাতের বিরাট টেনশন ও দুঃশ্চিন্তা দূর হয়ে গিয়েছিল আমার।
বিল মেটাতে এসে দেখি আমার খাবার বিল পেইড হয়ে গেছে। কে পে করল? সেই ভদ্রলোককে দেখলাম আবার আসছেন আমার দিকে। আমাকে একপাশে টেনে নিয়ে নিচু স্বরে বললেন, এয়ারপোর্টে তোমাকে রিসিভ না করার বিষয়টি তুমি সেক্রেটারিয়েটে জানিয়ো না। কিছুটা হলেও আমার ওপর পড়বে, কেননা আমি দায়িত্বে আছি। আমি বললাম, জানাবো না।
তবে পাওয়ারপয়েন্ট তৈরি করিনি শেষ পর্যন্ত, কেননা তৈরি করতে গিয়ে দেখলাম সামান্য টকিং পয়েন্ট ও অ্যাবস্ট্রাক্ট-এর সামান্য মালমশলা দিয়ে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করার ঝুঁকি খুব বেশি। ফের টেনশনে পড়লাম। শেষে যা হবার হবে ভেবে সেমিনারে পার্টিসিপেইট করতে লাগলাম। কয়েকদিন সেমিনার চলল। শেষ পর্যন্ত সেক্রেটারিয়েটে গিয়ে আমার পক্ষে পাওয়ারপয়েন্ট তৈরি করা হয়ে ওঠেনি।
সেমিনারের টেকনিক্যাল সেশনের শুরুতেই একটি মজার বিষয় ঘটল। এক পাকিস্তানি ভদ্রলোক, যিনি অনুষ্ঠানের একজন উদ্যোক্তা, জানতে চাইলেন পার্টিসিপ্যান্টসদের কাছে যে, পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনায় প্রচলিত অ্যালফেবিটাক্যালি দেশের নাম ধরে শুরু হবে না রিভার্স পদ্ধতিতে। আমি সরব হয়ে উঠলাম, বললাম রিভার্স। তার মানে হলো, রিভার্স হলে বাংলাদেশের নাম ‘বি’ আসতে আসতে অনেকটা সময় পার হয়ে যাবে আর ততক্ষণে টেকনিক্যাল পর্বের সঞ্চালক, বিশেষজ্ঞগণ ও পরিচালক প্রমুখেরা অধৈর্য হয়ে ও সময় কাভার করার জন্য পাওয়ারপয়েন্ট হয়তো বাদ দিয়ে দেবেন।
আল্লাহ্ আমার মনের আর্তি কবুল করলেন সেদিন। শুরু হলো রিভার্স অ্যালফাবেট থেকে প্রেজেন্টেশন। যা ভেবেছিলাম, ঠিক তাই হলো। বাংলাদেশের পালা আসতেই সেশন পরিচালক ভারবাল উপস্থাপনার কথা বললেন। আমি জবর খুশি হয়ে উঠলাম।
তারপর একদিন মুক্ত হলাম। আমি সেক্রেটারিয়েটে গিয়ে ফিরতি ফ্লাইট দুইদিন বিলম্বিত করে এলাম ব্যাংকক দেখা ও কেনাকাটা করার জন্য। অবশ্যি সেমিনার শেষে প্রতিদিনই সঙ্গীসাথী নিয়ে বা একা কেনাকাটা করেছি, ঘুরে বেরিয়েছি, ছবি তুলেছি। রাজার প্রাসাদ দেখেছি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনা দেখেছি।
পাতায়া যাবার ইচ্ছে ছিল, সেই উদ্দেশ্যে প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। সেইরাতেই ঢাকা থেকে একটা ফোন পেলাম। ফোন করেছেন আমার ভায়রাভাই খান সাহেব। খান সাহেব ফোনে জানালেন, আমার ছেলে শাহদিব নাকি কান্নাকাটি করছে, কারণ তারপরের পরের দিনই কোরবানি ঈদ। সেইসময় আমি বাংলাদেশে থাকব না, এটা বাবু মানতে পারছিল না। সুতরাং দুইটি রাত যেনতেন ভাবে হোটেলে কাটিয়ে দিয়ে পরদিন খুব ভোরে ট্যাক্সিতে চেপে এয়ারপোর্টে এলাম।
থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে এয়ারহোস্টেস তরতাজা রাজকীয় থাই অর্কিড উপহার দিল যাত্রীদের। সেই ফুলগুলো আমি নিয়ে এসেছিলাম আমার স্ত্রী সেতুর জন্য। দুপুরে পৌঁছুলাম ঢাকা এয়ারপোর্টে। ঈদ উপলক্ষে সেতু ও শাহদিব অবস্থান করছিল ইস্টার্ন হাউজিংয়ে। আমি মেজপা’র গাড়িতে করে এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি এলাম সেখানে। দুপুরে খেয়ে ঘুম দিলাম। উঠলাম সন্ধ্যায়।
পরে অবশ্যি আরেকবার থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম অফিসিয়াল ট্যুরে। জাপান যাত্রার প্রাক্কালে ব্যাংকক ট্রানজিট ছিল।
থাইল্যান্ড, তথা ব্যাংককের কথা আমার মনে গেঁথে আছে আজও, সেই দুর্যোগ ও দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার অভিনব পদ্ধতি প্রয়োগ, যা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল অনেকখানি। সেই মালয়েশীয় ভদ্রলোকের কথা বহু দিন মনে থাকবে। সেই থাই হোটেলের নিচে অবস্থিত স্যুভেনিয়র শপ থেকে আমি আমার ওয়াইফের জন্য একটা লেডিস ব্যাগ কিনেছিলাম। আমার সাথে ছিলেন মালয়েশীয় সেই ভদ্রলোক। স্ত্রী’র জন্য ব্যাগ কিনেছি জেনে তিনি কিছুতেই টাকাটা আমাকে পরিশোধ করতে দিলেন না। নিজে পরিশোধ করলেন।