হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।

টরোন্টোতে পাড়ি দিয়ে প্রথম দিকে আত্মজীবনী লিখতে শুুরু করেছিলাম। তখনও কোনো কাজে বা চাকরিতে যোগ দিইনি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু করেছিলাম। সেইসাথে একআধটু জীবনী লিখে যেতে লাগলাম। আমার মতো সাধারণ মানুষের আত্মজীবনী কে পড়বে- এটা ভেবে নয়; বরং এটা ভেবে নিজকে প্রবোধ দিচ্ছিলাম যে, আমার ঘটনাবহুল আনন্দ-সুখ-দুঃখ বা হাসি-কান্না ও ব্যথা-বেদনার বহু অজানা কাহিনি হয়তো বা কারুর মনের খোরাক যুগাতে পারে বা আমার ঘাত-প্রতিঘাতময় পাকদণ্ডী পথের পরিক্রমায় নিজের সাথে মিলিয়ে নিতে পারবেন।

আমার জীবনটা ছিল, এবং এখনও চলছে কফি হাউসের সেই আড্ডাটার মতো। অবশ্য যেকোনো সময় থমকে বা থেমে যেতে পারে এই আড্ডা।

আত্মজীবনী লেখার কাজ আর তেমন এগিয়ে যায়নি। বাস্তবতার নিষ্পেষণে, নতুন একটি দেশে মানিয়ে ও খাপ খাইয়ে নিতে নতুন সংগ্রামে লিপ্ত হতে হলো। সম্প্রতি ভাবছি, আত্মজীবনী লেখার কাজটি আবার শুরু করব।

এই লেখার শুরুতেই আত্মজীবনী লেখার প্রসঙ্গটা কেন এলো তা ব্যাখ্যা করছি। ঢাকায় দীর্ঘসময়ের জন্য এসে যখন জীবনী লেখার কাজটি এগিয়ে নেয়ার কথা ভাবছিলাম তখন বৈশি^ক মহামারী করোনা আমাকে যেমন আতংকের মধ্যে ফেলল, তেমনি আবার নতুন কিছু লিখতে কাঁচামালের যোগান দিল। লিখে ফেললাম উপন্যাস ‘ভাইরাস অর্নিথিসাইরাস’ নাম দিয়ে। শুধু তাই নয়। আমার সুপ্ত ইচ্ছেটাকে বাস্তবায়ন করতে এর ইংরেজি অনুবাদের কাজও সেরে ফেললাম যদিও জানি না যে অনুবাদটা কতোটা সমৃদ্ধ হলো। অবশ্য মানসম্মত হয়েছে, এমন প্রত্যয় হয় এজন্য যে, আমার অনূদিত মলয় কৃষ্ণ ধর-এর ‘ট্রেইন টু ইন্ডিয়া: মেমোরিজ অব অ্যানাদার বেঙ্গল’ (পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত) বইটি পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এরপর আমার ওপর বাড়তি চাপ থাকে কোনো গল্প বা প্রবন্ধ লেখার। আর প্রতিবছরই প্রস্তুতি নিতে হয় বইমেলার জন্য গ্রন্থ রচনার। যদিও বিগত তিনটি বইমেলায় আমার বই প্রকাশিত হয়নি। এই তিনবছরে অবশ্য ট্রেইন টু ইন্ডিয়া ও গল্পগ্রন্থ ‘প্রেয়সী ও গোলাপের কাঁটা’ বেশ চলেছিল মেলায়।

২০২১ সালে ফরমায়েশ ছিল জলবায়ুর ওপর পাণ্ডুলিপি রচনার। আমি শুরু করলাম লেখা। এরপর দুইবছর কেটে গেলো। প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার প্রচ্ছদও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু শেষমুহূর্তে কী কারণে যেন আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন তিনি। প্রকাশকদের সাথে আমার তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। ধরনা দেয়ার কাজটি আমি আমার জীবনে কখনো স্বাচ্ছন্দের সাথে করতে পারিনি। এদিকে আমি জলবায়ু পাণ্ডুলিপি আপডেট করার কাজটি প্রতিবছরই সম্পন্ন করি। অবশেষে এগিয়ে এলো অক্ষরবৃত্ত। তারা এই বছর (২০২৩) আমার বইটি প্রকাশ করল। গ্রন্থটির নাম ‘পরিবর্তিত জলবায়ু: মহাসংকটের মুখে পৃথিবী।’

গত প্রায় ছয়-সাত মাস যাবত টরোন্টো’র বাংলা পত্রিকা ‘বাংলা কাগজ’ এ ‘বালুকা বেলা’ নামে নিয়মিত কলাম লিখে যাচ্ছি বন্ধু মনিস রফিকের অনুরোধে। নিয়মিত কলাম লেখার অনুপ্রেরণা ও প্রথম অভিজ্ঞতা বন্ধু মনিস রফিকের তাগাদাতেই শুরু হলো।
আর আমার আরেকটি লেখার কাজ, অর্থাৎ একটি উপন্যাস শূরু করেছিলাম ২০১৫ সালে। সেটা লেখা শেষ হয় ২০১৭ সালে। এখন সেটা ঘষামাজা করছি।

আমার দৈনন্দিন জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে গান। গান বহু আগে থেকেই করতাম। সেকথা পরবর্তী এপিসোডগুলোতে লিখে যাবো। যাইহোক, বইমেলার কাজে ব্যস্ত থেকে অবশেষে একটি গান রেকর্ডিং করলাম রবিবার (৫ মার্চ)। এখানে বিশেষভাবে একটি গান রেকর্ডিং করার কথা বললাম এজন্য যে, এটা একটু এক্সপেরিমেন্টাল। কিছু কিছু গান আছে যা কোনোদিন পুরোনো হবার মতো নয়। তেমন একটি গান ‘কাছে এসো যদি বলো।’
‘আবির্ভাব’ ছায়াছবিতে গান টা করেছিলেন খোন্দকার ফারুক আহমেদ ও সাবিনা ইয়াসমিন। নায়ক-নায়িকা ছিলেন রাজ্জাক ও কবরী। দ্বৈতকন্ঠের গান গাইতে ও দৃশ্যায়নে এখন আর গায়িকা ও মডেলের পারিশ্রমিক দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। প্রশ্ন আসতে পারে যে, দ্বৈত গান গাইবার ও দৃশ্যায়ন করার এতো আয়োজন কেন। সেটা ঠিক। তবে কিছু কিছু আকাক্সক্ষা বোধহয় মানুষের মনে সারাজীবনের জন্য গেঁথে থাকে। কারুরটা বাস্তবায়িত হয়। কারুর স্বপ্ন হয়তো মুুখ থুবড়ে পড়ে। আমার অবচেতন মনে বোধহয় এমন একটা কিছু লুকোনো ছিল। সম্প্রতি এমন আধা-বাস্তব ও আধা-স্বপ্নের কোনো বাসনা লুকিয়ে রেখেছিলাম মনের কোণে। তাই বেশ ক’টি প্রিয় গান গেয়েছি আর দৃশ্যায়ন করেছি। সেসব প্রশংসিত হয়েছে। ইউটিউবে প্রচুর সাড়া পেয়েছি।

যাইহোক, আমার এক আইলটস ছাত্রী আমার গানের দৃশ্যায়নে এসেছিল। সেই ছাত্রীকে ফোন করে আনিয়ে ৫ মার্চ গানের রেকর্ডিং করলাম। সে অ্যামেচার গায়িকা। আমার নিজেরই নির্দেশনায় আমার আর ওর গানের রেকর্ডিং সেরে ফেললাম। আমার অনুরোধে সে রাজী হয়েছে দৃশ্যায়নে অংশগ্রহণ করতে। আমার আরেক ছাত্রী প্রথমদিকের গানগুলোতে কন্ঠ ও দৃশ্যায়নে ছিল। বর্তমানে সে প্রবাসী।

আশা করছি, গান টা ভালো লাগবে সবার। আজ এখানেই সমাপ্তি টানছি।