হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।
এলোমেলো শব্দের পদাবলি-৩
ঢাকায় আগমনের পর থেকে নানা কর্মকাণ্ডে কাটছে আমার দিনগুলো, কখনো অতি ব্যস্ততায়, কখনো কখনো আলস্যে। আসলে নিজের দিকে তাকিয়ে একটু অবাকই হলাম-একেবারেই আলস্যে দিন কাটাবার যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও আমার দিনগুলো কিন্তু কাটছে ব্যস্ততায়। এর একটা কারণ হলো নানা রকম প্রোগ্রাম আর গানের আসর। তারপর একটা ছাত্রীকে ও-লেভেল পড়াচ্ছি। আমার গান ও গানের দৃশ্যায়নের সঙ্গিনীকে তো আইলটস পড়িয়ে পাস করিয়ে রীতিমতো দেশছাড়া করেছি।
ও চলে যাবার পর তো অনেকদিন মনমরা ছিলাম। ও ক্লাসিক্যাল ড্যান্সার। গানে ওকে আমিই নামিয়ে ছিলাম। সুন্দর দিনগুলি ছিল। গান রেকর্ডে, শুটিংয়ে, রেস্তরাঁয় খাবার খেয়ে আর কেনাকাটায় তরতরিয়ে চলে গেল দিনগুলো। বয়সের বিস্তর পার্থক্য থাকলেও সে ছিল আমার বন্ধুর মতো। আর যখন পড়াতাম তখন দিব্যি কড়া ধাঁচের টিচার বনে যেতাম।
ব্যস্ততার আরেকটি কারণ লেখালেখি। টরোন্টোর বাংলা কাগজে নিয়মিত ফরমায়েশি কলাম লিখে যাচ্ছি। এছাড়াও মনের টানে ও অনুরোধে গল্প বা প্রবন্ধ লিখছি। কিছুদিন আগে একজন সম্পাদকের অনুরোধে তার এপার-ওপার বাংলার গল্প সংকলনে গল্প দিতে হলো। সংকলন প্রকাশিত হয়েছে; কপিও পেয়ে গেছি।
আমার প্রিয় ছাত্রী পরবাসী হবার পর তারই আরেক বন্ধুকে সে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে যায়। সেই মেয়েটি প্রথমে আমার কাছে আইলটস পড়লেও অনার্স পরিক্ষার চাপে এখন পড়ছে না। তবে আমার গানের দৃশ্যে মাঝেমধ্যে অংশগ্রহণ করে। সে-ও গুণবতী মেয়ে। গানের কন্ঠ ভালো; যদিও সে গান চর্চা করে না। তবে সে আমার ভালো সাথী। আমার বিষণœতায় বা গানের দৃশ্যায়নে তাকে আমি কাছে পাই। ছাত্রী তো, মাঝেমধ্যে এটাসেটা গিফট দিই। খাওয়াতে নিয়ে যাই।
করোনায় ভুগেছি। আরও কতিপয় ব্যারাম ভর করেছে শরীরে। সেসব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় আছি। জানি না, টেনেটুনে জীবনটাকে কতদূর নিয়ে যেতে পারবো। একটা দিকে ভাগ্য আমার মন্দ। বইমেলায় আমার বই আসে শেষদিকে। এই শনির দশাটা কাটাতে পারছি না। এবারও ব্যতিক্রম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর লিখিত আমার বইটি এখনও মেলার মুখ দেখেনি।
তবে দুইটা কাজ করেছি বটে। একটি নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাস লেখা শেষ করেছি। সেটার কাজ শুরু করেছিলাম টরোন্টোতে অবস্থান করেই। পাশাপাশি এর ইংরেজি অনুবাদও শেষ করেছি। ইচ্ছে আছে ইংরেজি ভার্সন টা ক্যানেডা থেকেই প্রকাশ করব। উপন্যাসটি প্যান্ডেমিক বিষয়ে। এতে সাধ্যমতো সব উপাদানই নিষিক্ত করার চেষ্টা করেছিÑউত্তরাধুনিকতা, জাদুবাস্তবতা, লিটারেরি হাইব্রিডিটি প্রভৃতি। বাংলা কাগজ পত্রিকায় এর একটি প্রি-পাবলিকেশন রিভিউ বেরিয়েছে।
শর্ট ফিল্মও করেছি একটা। এখনও রিলিজ করিনি। মোদ্দা কথা, বসে নেই আমি। অনেকসময় চরম অসুস্থ শরীরেও ফরমায়েশি লেখা লিখেছি। তবে খুব একটা আড্ডাবাজিতে আমি নেই। সেই সুযোগও খুব একটা নেই। জ্যাম-দূষণ উজিয়ে আড্ডায় যোগ দেয়া মঙ্গল গ্রহ জয় করার মতো। আমার কিছু বন্ধু বা পরিচিতজন আসে; আড্ডাটা তখনই হয়। আর হয় গানের আসর ছোটো পরিসরে।
বিধাতার কাছে প্রার্থনা ও মিনতি জানাই, আরও কিছুকাল তিনি যেন আমাকে সময় দেন সৃষ্টিশীল কিছু কাজ করে যাবার।