ফারহানা আজিম শিউলী : টরন্টোভিত্তিক শিল্প-সাহিত্য চর্চার প্ল্যাটফর্ম ‘পাঠশালা’র ৪২তম ভার্চুয়াল আসরটি এপ্রিল মাসের ২ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। পাঠশালার এ আসরে শামীম সিকদারের লেখা বই, শামীম সিকদারকে নিয়ে লেখা বইসহ অন্য আরও প্রাসঙ্গিক তথ্যের সমন্বয়ে সামগ্রিকভাবে শিল্পী শামীম সিকদারের শিল্পকর্ম ও জীবন নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষক, শামীম সিকদারের ছাত্র নাসিমুল খবির ডিউক।

শামীম সিকদার। বাংলাদেশের অন্যতম ভাস্কর শামীম সিকদার। ১৯৭১ এর মিছিলের সাহসী মুখ শামীম সিকদারের ভাস্কর্যকর্মে বারবার মূর্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ-স্বদেশ। সৃষ্টির পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল ভীষণরকমভাবে আলোচিত-সমালোচিত-বিতর্কিত-আগ্রহ জাগানিয়া। ভাস্কর্যের মতো চ্যালেঞ্জিং বিষয়কে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। একইসঙ্গে খুব সচেতনভাবেই সময়ের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে থেকে জেন্ডার স্টেরিওটাইপ ভেঙেছেন প্রবলভাবে। তাঁর শিল্পকর্ম ও ব্যক্তিজীবনের নানা দিক নিয়ে নানারকম ন্যারেটিভ থাকলেও তিনি ছিলেন আনঅ্যাভয়ডেবল ফেনোমেনন। সাহসের নাম, অনুপ্রেরণা। তিনি অতি স¤প্রতি দেহান্তরিত হয়েছেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শিল্পী শামীম শিকদারকে নিয়েই ছিল পাঠশালার এবারের আয়োজন।

শামীম সিকদারকে নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। কেন প্রয়োজন, কী প্রয়োজন- এ প্রশ্নগুলো সামনে আসে। যেমন: ভাস্কর শামীম শিকদার কেন ভাস্কর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কিংবা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর শিল্পকর্মের গুণগত মান ইত্যাদি জরুরি ডিসকোর্স হতে পারে। কেন কেউ তাঁকে নিয়ে তেমনভাবে লিখেননি, এসব নিয়েও কথা হতে পারে।
একটা জিনিস আমাদের মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের একটা ক্রান্তিকালীন সময়ে শামীম সিকদার ধারাবাহিকভাবে শিল্পচর্চা করে গেছেন এবং সেই সময়ের ভিত্তিতেই তাঁর মূল্যায়ন প্রয়োজন।

শামীম সিকদার শিল্পচর্চা জারি রেখেছেন দীর্ঘ সময় ধরে। অন্য যাঁরা তাঁর সমসাময়িক ছিলেন, তাঁরা কেন পারেননি সেসব নিয়ে কথা হতে পারে। তবে তিনি কার স্ত্রী ছিলেন, কার সাথে প্রণয় বা সখ্য ছিল, তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ কী ছিল, তাঁর বড় ভাই কেমন ছিলেন, তিনি কেমন করে কাজের অনুমোদন পেয়েছিলেন- এসব হয়তো কিছু জায়গায় প্রভাবক-উদ্দীপক কিংবা ঘটনা বোঝার জন্য জরুরি। কিন্তু ব্যক্তি শিল্পীর জীবনবোধ আর তাঁর শৈল্পিক যাত্রার আলোচনাটা এসবের কিছুটা উর্ধ্বে নয় কি? এটি গভীরভাবে ভাবা প্রয়োজন।
শামীম সিকদারের জীবন আমাদের কিছু বার্তা দেয়। আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে প্রশ্ন জাগে- শামীম সিকদার কি এখনকার সময়ে শামীম সিকদার হয়ে থাকতে পারতেন? কিংবা আগেও আর কোনো শামীম সিকদার আমরা পাইনি কেন? তিনি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখান- আমরা কি সময়ের সাথে আসলে এগিয়েছি, নাকি পিছিয়েছি, ক্রমশ পিছাচ্ছি?

শামীম সিকদার এক অস্বস্তির নাম। আমাদের ‘পলিটিক্স অফ কনভেনিয়েন্স’ এর শান্ত সরোবরে তিনি যেন ঢিল ছুঁড়ে দেন, যাতে এলোমেলো হয়ে যায় আমাদের সাজানো মূল্যবোধ, নীতি নৈতিকতা এসব।

আসরের শুরুতেই ভাস্কর শামীম সিকদারের লেখা দুটো বই — Sculpture Coming from Heaven: A picturesque Book on Sculpture (অমরাবতীর পিযুষধারার স্পন্দন, ২০০০) ও নুরুদ্দিন আলো সম্পাদিত Inner Truth of Sculpture: A Book on Sculpture (২০০০) এবং শিল্পকলা আয়োজিত শামীম সিকদারের ভাস্কর্যের একক প্রদর্শনীর ক্যাটালগ – বাংলাদেশের সমকালীন চারুকলা সিরিজ – ২১ (১৯৮২) এ শামীম সিকদারকে নিয়ে মোহাম্মদ মিজারুল কায়েসের লেখা ও বরেণ্য লেখক আহমদ ছফার শামীম সিকদারকে নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’র (১৯৯৬) প্রচ্ছদের স্থিরচিত্র দেখানো হয় এবং কাজগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, Sculpture Coming from Heaven: A picturesque Book on Sculpture বইটির প্রচ্ছদ শামীম সিকদারের করা। এ বইয়ের সূচিতে আছে – From the desk of Shamim Sikder, The meaning of sculpture, Sculpture and Painting, Raw Material of Sculpture, Elements of Design, Philosophy of art, Aesthetic emotion, Representation expression and symbolism, The spiritual in art, Biotic and symbiotic, Unethical attitudinization of the fanatics towards me in Bangladesh Ges A short depiction of Shamim Sikder.

আলোচক নাসিমুল খবির ডিউক বলেন, “আমার মনে হয় অতি সা¤প্রতিক সময় অর্থাৎ ভাস্কর শামীম সিকদারের জীবনের পেছন এবং আমাদের নিকটবর্তী সময় থেকে শুরু করলেই ভালো হয়। ২১ মার্চ ২০২৩ সন্ধ্যে ৬টায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শামীম সিকদার। লন্ডন থেকে ২০২২ এর শেষ দিকে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। তারপর দীর্ঘ রোগভোগ ও একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর ২১ মার্চ সন্ধ্যায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে। পরদিন অর্থাৎ ২২ মার্চ সকালে তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সামনের চত্বরে। গত শতকের ৭০ দশকের শুরুতে শিক্ষার্থী হিসেবে এবং ৮০ দশক থেকে দীর্ঘ ২০ বছরেরও বেশি অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন তিনি ভাস্কর্য বিভাগে। পরের প্রায় এক দশক সময়কাল লন্ডন ও ঢাকায় যাওয়া আসায় কেটে গেছে। তাঁর ৭০ বছরের জীবনের পরিসমাপ্তিতে দলমত নির্বিশেষে নানান বয়সের, নানা মত ও পথের মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। তাঁর অগ্রজ-অনুজ-সমবয়সী শিল্পী, শিক্ষক, সহকর্মী, শিক্ষার্থী, সংস্কৃতজন, রাজনৈতিক দলসমূহ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিদেশ থেকে সন্তানদের আসার অপেক্ষায় তাঁর মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে আবার রাখা হয় হিমঘরে। ২৪ মার্চ তাঁকে দাফন করা হয় ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইদগাহ মাঠ-সংলগ্ন কবরস্থানে- তাঁর মা, বাবা ও ভাই সিরাজ সিকদারের পাশে।”

এ পর্যায়ে ভাস্কর শামীম সিকদারের বেশ কয়েকটি স্থিরচিত্র দেখানো হয়। এর মধ্যে ছিল- বিভিন্ন বয়সের কয়েকটি পোর্ট্রেট, বাংলা চারু ও কারু শিল্পী সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে ১৯৭১ এর মার্চে সামনের সারিতে দাঁড়ানো মিছিলের ছবি, কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে ১৯৭৪ সালে কবির ধানমন্ডির বাসভবনে তোলা একটি দুর্লভ ছবি, ’৭১ এর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জল্লাদের দরবারের ‘কেল্লাফতে খাঁ’ চরিত্রের জন্য খ্যাত অভিনেতা রাজু আহমেদের সঙ্গে, তসলিমা নাসরিন সপক্ষ গোষ্ঠীর ব্যানারে সামনের সারিতে দাঁড়ানো মিছিলের ছবি, লেখক আহমদ ছফার সঙ্গে, শিল্পী এস এম সুলতান ও বাবা আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে একটি দুর্লভ ছবি, একুশে পদকসহ ছবি, পরিণত বয়সে চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের সামনে দাঁড়ানো ছবি ও মৃত্যুর পর ভাস্কর্য বিভাগ থেকে তাঁকে জানানো শ্রদ্ধাঞ্জলির ছবি। ছবিগুলো ইন্টারনেট ও ওয়েব কাগজ প্রতিধ্বনি থেকে নেওয়া। উল্লেখ্য, এই স্থিরচিত্রগুলো শিল্পীর অ্যাক্টিভিজম, মতাদর্শিক অবস্থানসহ সামগ্রিকভাবে তাঁকে বুঝতে সহায়ক হতে পারে।

নাসিমুল খবির বলেন, “শামীম সিকদারের মৃত্যুর পর সোশ্যাল, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে তাঁকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে দেখা যায়। তাঁর যাপিত জীবন, ব্যক্তিগত জীবনাচরণ, শিল্পতৎপরতা নানাভাবে আলোচিত হয়। বলাবাহুল্য এই আলোচনায় অনেক ক্ষেত্রেই তাৎক্ষণিক আবেগ প্রাধান্য পায়। এই আলোচনাগুলোতে আবেগপূর্ণ ইতিবাচকতা এবং বিপরীতভাবে তীব্র নেতিবাচকতাও পরিলক্ষিত হয়। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাঁর সম্পর্কে তথ্যের উপস্থাপনায় বিভিন্ন বিভ্রান্তি। আমরা এই আলোচনায় চেষ্টা করব যতটা সম্ভব নির্মোহ থেকে আলোচিত-অনালোচিত শামীম সিকদারকে উপস্থাপন করতে। তাঁর প্রাসঙ্গিকতা চিহ্নিত করতে। এবং সে জায়গা থেকে আমার মনে হয় তাঁর জীবনের বায়োগ্রাফিক্যাল স্কেচটা যদি উপস্থাপন করার চেষ্টা করি সেটা সঙ্গত হবে।”

এ পর্যায়ে শামীম সিকদারের মৃত্যুর পর পত্রপত্রিকায় তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন জনের লেখার স্থিরচিত্র দেখানো হয়। এর মধ্যে ছিল- হামিদুজ্জামান খান, আইভি জামান, নাসিমুল খবির, লোপা মমতাজ ও ইমতিয়াজ মাহমুদের লেখা। এছাড়াও টোকন ঠাকুরের লেখা ও ওয়েব কাগজ ‘প্রতিধ্বনি’র কথা উল্লেখ করা হয়।

আলোচক বলেন, “আমরা যতদূর তথ্য পেয়েছি নথিপত্র ঘেঁটে তাতে দেখা যায়, ১৯৫৩ সালে ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন শামীম সিকদার। যদিও কোথাও কোথাও আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ১৯৫২ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। আবার তাঁর জন্মগ্রহণের স্থান নিয়ে নানান মত উপস্থাপন হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। কোথাও কোথাও দেখছি, তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন বগুড়ার মহাস্থানগড়ের কাছে কোনো একটি গ্রামে। আবার আরো নির্দিষ্ট করে জানা যাচ্ছে, তাঁর আদি নিবাস বা পিতৃনিবাস হচ্ছে শরিয়তপুর জেলার ভেতরগঞ্জ উপজেলায়। ফরিদপুর আগে বৃহত্তর জেলা ছিল। সেটা এখন বিভক্ত হয়েছে। তো আমার মনে হয় এই বিষয়গুলো পরবর্তী আলোচনায় আরো নিশ্চিত হবে। পরিবারের অনেকেই আছেন। ফলে নানা সূত্র থেকে এই বিষয়গুলোকে আরো নিশ্চিত করার সুযোগ আছে।

“শামীম সিকদারের মৃত্যুর পর তাঁর যাপিত জীবনকে বিশ্লেষণ করতে স্বভাবতই ইতিহাসের পাতা উল্টাতে হবে। মনে রাখতে হবে বিশ শতকের ষাটের দশকে বাংলাদেশে আধুনিক ভাস্কর্য চর্চার পটভ‚মি রচনা করেছিলেন একজন নারী, ভাস্কর নভেরা আহমেদ। তারই ধারাবাহিকতায় বহুমাত্রিক শিল্পী অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে স্বাধীনতা-পূর্ব ঢাকার চারুকলায় ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে ১৯৬৩ সাল থেকে ভাস্কর্য বিদ্যার প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হলেও শুরুতে নিয়মিত শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছিল না। কেউ কেউ শর্ট কোর্স করেছিলেন। কিন্তু নিয়মিত কোর্সে কোনো ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না। ঊনসত্তরের উত্তাল গণ-আন্দোলনের সময় যাঁরা চারুকলায় ভর্তি হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভাস্কর্যকে বিষয় করে বিএফ এ প্রোগ্রামে ভর্তি হতে আগ্রহী হলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের মিছিলের মুখ সেই একজন নারী শিক্ষার্থীর নাম শামীম আরা সিকদার। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে শামীম তাঁর সারা জীবনে শত শত ভাস্কর্য গড়েছেন। তিনি ছিলেন ভাস্কর্য বিভাগের প্রথম বিএফএ ব্যাচের একমাত্র শিক্ষার্থী। ১৯৭৪ সালে ভাস্কর্যে স্নাতক হন তিনি। শোনা যায় এর আগে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে একজন ফরাসি ভাস্করের অধীনে কিছুদিন ভাস্কর্য অনুশীলন করেছেন। থাইল্যান্ড ও ইতালি ভ্রমণ শেষে ১৯৭৬ সালে লন্ডনের ‘জন ক্যাস স্কুল অফ আর্ট’ থেকে এক বছরের সার্টিফিকেট কোর্স করেন। চৈনিক এক ভাস্করের কাছেও তিনি দীক্ষা নেন। ১৯৮০ সালে তৎকালীন চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ভাস্কর্যের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন শামীম। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইন্সটিটিউটে পরিণত হওয়া থেকে অনুষদে রূপান্তরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পুরোটা সময় তিনি এখানে শিক্ষকতা করেন। তবে ২০০১ সালে তিনি লন্ডনে যান এবং তখন থেকে সেখানেই বেশিরভাগ সময় বসবাস করতে থাকেন। ২০০৭ সালে অধ্যাপক হিসেবে ভাস্কর্য বিভাগ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন শামীম সিকদার।
“এবারে আসি তাঁর কর্মজগত অর্থাৎ শিল্পতৎপরতার উপস্থাপনে। শামীম সিকদার নিজেকে ভাস্কর হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তিনি বহুসংখ্যক ভাস্কর্য রচনা করেন। তাঁর বেশিরভাগ ভাস্কর্য বাস্তবধর্মী ও প্রতিকৃতি নির্ভর। মাটিতে মণ্ডন করে কংক্রিট মাধ্যমে ঢালাই করে নির্মিত। কিছু কাজ ব্রোঞ্জ, কাঠ ও অন্যান্য মাধ্যমেও রচনা করেন। তিনি বরাবরই বহিরাঙ্গণ ভাস্কর্যের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা তাঁর ভাস্কর্য চর্চার আগ্রহের আরেকটি দিক। ঢাকা চারুকলার শিক্ষার্থী জীবনের শেষ দিকে শামীম দুটো পুরষ্কার ও পদক লাভ করেছেন। একটি ১৯৭৩ সালে পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর পদক এবং অপরটি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের সিলভার জুবিলি পদক।

“এর পরপরই ১৯৭৪ সালে শামীম সিকদার ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধুর একটি আবক্ষ প্রতিকৃতি নির্মাণ করেন।”
“পরের বছর জানুয়ারিতে শিল্পী শামীম সিকদারের জীবনে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। তাঁর ভাই কমিউনিস্ট বিপ্লবী হিসেবে পরিচিত সিরাজ সিকদার নিহত হন।”

“সম্ভবত একই বছরের শেষদিকে শামীম জাকারিয়া খান চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রাসঙ্গিক কারণেই জাকারিয়া খান সম্পর্কে কিছু ধারণা দিচ্ছি। জাকারিয়া খান ছিলেন কবি, সংগঠক ও রাজনীতিক। ১৯৭০ ও ৭১ এর আগরতলা মামলা ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য তিনি সহায়তা সংগ্রহে অংশ নেন। পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের আমলে হবিগঞ্জ থেকে সরকারি দলের সাংসদ হন। সম্ভবত ২০০০ কিংবা ২০০১ সালে তিনি প্রয়াত হন।

“১৯৮০র দশকে নিজের অভ্যস্ততার বাইরে গিয়ে শামীম বেশকিছু নীরিক্ষাধর্মী ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তাঁর একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সামরিক আইন প্রশাসক হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন। এই প্রদর্শনীর পর সাদা সিমেন্ট-কংক্রিটে সিলিন্ডার আকৃতির সরলাকৃতির জ্যামিতিক বিমূর্ত অবয়ব তাঁর সেসময়কার নির্মাণগুলোর মধ্যে ‘লা গোয়ের্নিকা বাংলাদেশ’ নামের ভাস্কর্যটি অন্যতম। পরবর্তীতে এটি সেগুনবাগিচার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনের সবুজ লনে স্থাপিত হয়। এই ভাস্কর্য কোথাও কোথাও ‘অ্যাটাকিং ফোর্স’ বা ‘স্ট্রাগলিং ফোর্স’ এরকম নানান নামেও দেখা গেছে। এই ভাস্কর্যটি খুবই পরিচিত। এই ভাস্কর্যের একটা বিশেষ গুরুত্বের দিক হচ্ছে, এতে তিনি সিলিন্ডারিক ফর্ম তৈরি করেছেন। এই কাজটিকে একটু আলাদা করেই আসলে রাখতে হয় তাঁর অন্য কাজ থেকে।”

“এর বাইরে আমরা দেখতে পাচ্ছি, শামীম সিকদার অন্য যেসব ভাস্কর্য নির্মাণ করছেন তার বেশিরভাগই প্রতিকৃতি নির্ভর বাস্তবানুগ ভাস্কর্য। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতি। এই ভাস্কর্যটি খুবই পরিচিত। বিভিন্ন বাংলা সিনেমাতে এই ভাস্কর্যটি দেখা গিয়েছে। কারণ এটি বাংলাদেশ এফডিসি প্রাঙ্গণে স্থাপিত। মাঝখানে শোনা গিয়েছিল, এই ভাস্কর্যটির সংস্কার করতে হয়েছিল। কারণ আমাদের দেশে ভাস্কর্য যতœ করে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় খুব মনোযোগী হন তা নয়। এর বাইরে আরেকটা ভাস্কর্যের কথা বলা যায় যেটি বেশ পরিচিত। সেটি হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে স্বামী বিবেকানন্দের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতি ভাস্কর্য।”

“১৯৮৮-৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পশ্চিম পাশের সড়ক দ্বীপে নির্মিত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ নামের মুক্তাঙ্গণ ভাস্কর্যটি মুক্তিযুদ্ধকে বিষয় করে ভাস্কর শামীম সিকদার নির্মিত স্মারক ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে বেশি পরিচিত।”
“এরপর বলতে হয় শিল্পীর সবচেয়ে বড়ো প্রকল্পের কথা। বাংলাদেশ ও বিশ্বের বহু বরেণ্য-খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতি ভাস্কর্য তিনি বিভিন্ন সময় নির্মাণ করেছেন। সাদা সিমেন্ট-কংক্রিটে ঢালাই করা এ ধরনের শতাধিক ভাস্কর্য নিয়ে সুউচ্চ একটি নির্মাণকে কেন্দ্রে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের সড়ক দ্বীপে ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ নামের ভাস্কর্যটি প্রত্যক্ষ করা যায়। ঢাকার নিউ ইস্কাটনেও তাঁর সৃষ্ট ভাস্কর্যের একটি বড় সংগ্রহ আছে বলে জানা যায়। এই হলো মোটামুটি তাঁর শিল্পতৎপরতার ওপর আলোকপাত।”
“২০০০ সালে শামীম সিকদার একুশে পদক পান। সেটি তাঁর জীবনের একটি বিশেষ ঘটনা এবং আমাদের শিল্পের ক্ষেত্রেও এটি একটি পালক।”
“শামীম সিকদারের একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ক্যাটালগে মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস মন্তব্য করেন- “শামীম সিকদার নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সবচাইতে ফলবান এবং সম্ভবত সমরুপ সৃজনশীল ভাস্কর।” ‘ফলবান’ এর ওপর আমি জোর দিচ্ছি। আসলেই এই ব্যাপারটা সবাইকেই স্বীকার করতে হবে। সংখ্যার বিবেচনায় তাঁর নির্মাণের পরিমাণ ব্যাপক।

ওয়েব কাগজ ‘প্রতিধ্বনি’র সূত্রে জানা যায়- বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ ভাস্কর মি. সিভিস্কির অধীনে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে শামীম সিকদার ভাস্কর্য নিয়ে তিন বছর পড়াশোনা করেন। ১৯৯০ সালে তিনি চীনে বিখ্যাত ভাস্কর লি ডুলির সঙ্গে প্রায় এক বছর কাজ করেন। ১৯৭৫ সালে চারুকলা ইনন্সটিটিউটে শামীম সিকদারের প্রথম একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে লন্ডনের কমনওয়েলথ ইনস্টিটিউটে, ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে তাঁর একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে শামীম সিকদারের ‘ফলসহুড’ শীর্ষক ভাস্কর্য লন্ডনের বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়। তিনি দেশে-বিদেশে অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন।

এ পর্যায়ে স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস নির্ভর শামীম সিকদারের দুটো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ ও ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ নিয়ে শিল্পীর নিজের বয়ানের ভিডিওক্লিপ প্রদর্শিত হয়। এই দুটো নির্মাণের প্রতিবন্ধকতা থেকে পেছনের আরো গল্প, ভাস্কর্যের বেহাল অবস্থা, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা, শিল্পীর আত্মসম্মান, ভাস্কর্যগুলোর গুরুত্বসহ আরো নানা বিষয় উঠে আসে শিল্পীর কথায়। উল্লেখ্য, এই সাক্ষাৎকারটি ২০১০ সালে শিল্পী শামীম সিকদার এক ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে এলে ধারণ করেন কবি-সাংবাদিক শিমুল সালাহ্উদ্দিন।

এরপর শামীম সিকদারের বেশ কয়েকটি ভাস্কর্যকর্মের স্থিরচিত্র দেখানো হয়। এগুলোর মধ্যে ছিল – স্বোপার্জিত স্বাধীনতা (১৯৮৮, টিএসসির সড়কদ্বীপে স্থাপিত); স্বাধীনতার সংগ্রাম (১৯৯০, ফুলার রোডের সড়কদ্বীপে স্থাপিত); স্বাধীনতার সংগ্রাম ভাস্কর্যগুচ্ছের চারপাশে সাজানো খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জর্জ হ্যারিসন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিল্পীর আত্মপ্রতিকৃতি, এস এম সুলতান, সুকান্ত ভট্টাচার্য ও রেবেল শিরোনামে সিরাজ সিকদারের ভাস্কর্য; কল্পিত চরিত্র নির্ভর রাধা-কৃষ্ণ; মা ও শিশু; শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন (চারুকলা প্রাঙ্গণে স্থাপিত); কাজী নজরুল ইসলাম (১৯৮৬, এফডিসি প্রাঙ্গণে স্থাপিত); স্বামী বিবেকানন্দ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে স্থাপিত); ব্রোঞ্জ মাধ্যমের একটি ভাস্কর্য; ‘দ্য ইনোভেশন’ নামে ভিন্ন মাধ্যমের আরেকটি ভাস্কর্য; মিস্টেরিয়াস ক্রিয়েচার সিরিজের দুটো কাজ; ভিন্ন মাধ্যমের ‘রিয়েল হিরো অফ বাংলাদেশ’; ‘এন্ড এক্সপোজার অফ ইনার থট’; ‘বুদ্ধ’ এবং ‘লা গোয়ের্নিকা বাংলাদেশ’ বা ‘স্ট্রাগলিং ফোর্স’ (১৯৮২, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চত্বরে স্থাপিত)।

এ পর্যায়ে অগ্রজ শিল্পী ভাস্কর নভেরা আহমেদকে নিয়ে শামীম সিকদারের ভাষ্যর ভিডিওক্লিপ দেখানো হয়, ২০১০ সালের সেই সাক্ষাৎকার থেকে। এই অংশে শামীম সিকদার শিল্পী সমাজের ঈর্ষা, নিজের-সুলতানের-নভেরার অভিমান, নিজের ও নভেরার দেশত্যাগ সহ নভেরার মূল্যায়ন করেন। জীবনাচরণে প্রথাবিরোধী হবার কারণে নভেরার চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগে চাকরি না-পাওয়া, শহীদ মিনারের নকশার প্রকৃত দাবিদার যে নভেরা এসব নিয়েও তিনি বলেন।

নাসিমুল খবির ডিউক বলেন, “শামীম সিকদারের কাজ দেখা হলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁর কাজকে আমরা কীভাবে চিহ্নিত করব? যে কোনো শিল্পীর ক্ষেত্রেই সময় বা ইতিহাসের নিরিখেই তাঁকে আলোচনা করতে হয়। বাংলাদেশে শামীম সিকদারের শিল্প তৎপরতার ভালোমন্দ, প্রাসঙ্গিকতা এবং অপ্রাসঙ্গিকতাকে ভবিষ্যতে অন্য শিল্প-সমালোচক ও গবেষকবৃন্দ হয়তো বিশ্লেষণ করবেন। তবে একথা এখনই বলা যায়, ভাস্কর নভেরা আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ, আনোয়ার জাহান, হামিদুজ্জামান খানদের চর্চার মাধ্যমে উপনিবেশ পরবর্তী বাংলাদেশে আধুনিকতাবাদী ও সমকালীন ভাস্কর্যের যে ধারা বিকশিত হয়েছে সেখানে শামীম সিকদার কতটা এবং কীভাবে প্রাসঙ্গিক তা আলোচনা সাপেক্ষ। তিনি তাঁর শিল্প তৎপরতার ক্ষেত্রে মূখ্যত বাস্তবানুগ প্রতিকৃতি নির্ভর নির্মাণে মনোযোগী ছিলেন। বাস্তবানুগ প্রতিকৃতির যে উপযোগ তা মাথায় রেখে তাঁর নির্মাণের গুণগত মান বিচার করতে হবে। তাঁর অসংখ্য কাজে সাদৃশ্য, অনুপাত, নান্দনিকতার মতো মৌলিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। পাশাপাশি পাবলিক প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে ক্ষমতা কাঠামোর সাথে তাঁর সম্পর্কের বিষয়ও হয়ত প্রাসঙ্গিক হবে এই ক্ষেত্রে। তবে এসবের বাইরে তাঁর ক্ষেত্রে অন্য আলোচনার বিষয় তাঁর ব্যক্তিজীবনাচরণ ও সেটির সামাজিক প্রতিক্রিয়া। সেই জায়গার আলোচনা বিশেষভাবে প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে আলোচনায় আমরা দেখি, তাঁর কাজের চাইতে বেশি জায়গা জুড়ে থাকে তাঁর ব্যক্তিজীবন।

“শামীম শিক্ষার্থী জীবনের শুরু থেকেই তাঁর নিজস্ব সামাজিক পরিসরে বেশি আলোচিত হয়েছেন পোশাক ও জীবনাচরণের ক্ষেত্রে স্টেরিওটাইপ ভাঙার কারণে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ‘পুরুষালি’ পোশাক ও আচরণের জন্য তিনি আলোচিত হয়েছেন। আমাদের প্রচলিত সাধারণ সামাজিক ধারণা অনুযায়ী ভাস্কর্য একটি ‘পুরুষালি’ চর্চার প্রতীক। পোশাক, জীবনাচরণের পাশাপাশি ‘ভাস্কর’ ইমেজ সামাজিকভাবে তাঁর ব্যক্তিপরিচয়ে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। বেপরোয়া, সাহসী সত্তা হিসেবে তিনি সাহিত্যেও জায়গা করে নেন। খ্যাতিমান সাহিত্যিক আহমদ ছফার ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’ উপন্যাসের দুরদানা চরিত্রটি তাঁকে ভিত্তি করেই রচিত।”

এ পর্যায়ে প্রথমে আহমদ ছফা সম্পর্কে শামীম সিকদারের ভাষ্যের ভিডিওক্লিপ দেখানো হয়। সেখানে শামীম এই দুরদানা চরিত্রটি নিয়েও বলেন। এরপর পাঠ করে শোনানো হয় আহমদ ছফার ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’র নির্বাচিত অংশ-
“মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিপরীক্ষার মধ্যদিয়ে আমার নতুন জন্ম হয়েছে। আমি অনেক তথাকথিত পবিত্র মানুষের লোভ-রিরংসা একেবারে চোখের সামনে বীভৎস চেহারা নিয়ে জেগে উঠতে দেখেছি। আবার অত্যন্ত ফেলনা তুচ্ছ মানুষের মধ্যেও জ্বলন্ত মনুষ্যত্বের শিখা উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠতে দেখেছি। আমার চেতনার কেন্দ্রবিন্দুটিতে এমন একটা চুম্বক-ক্ষেত্র তাপে-চাপে তৈরি হয়ে গেছে, সামান্য পরিমাণে হলেও খাঁটি পদার্থ দেখতে পেলে মন আপনা থেকেই সেদিকে ধাবিত হয়। গতানুগতিক নারীর বাইরে দুরদানার মধ্যে আমি এমন একটা নারীসত্তার সাক্ষাৎ পেলাম, সর্বান্তঃকরণে তাকে আমাদের নতুন যুগের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করতে একটুও আটকাল না। দুরদানা যখন সাইকেল চালিয়ে নাখালপাড়া থেকে আর্ট ইন্সটিটিউটে আসত, আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতাম। আমার মনে হত দুরদানার প্রতিটি প্যাডেল ঘোরানোর মধ্যদিয়ে মুসলিম সমাজের সামন্তযুগীয় অচলায়তনের বিধি-নিষেধ ভেঙে নতুন যুগ সৃষ্টি করছে। সেই সময়টায় আমরা সবাই এমন একটা বদ্ধ গুমোট পরিবেশের মধ্যে বসবাস করছিলাম, অনেক সময় নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনেও আতঙ্কে চমকে উঠতে হত। আমরা পাকিস্তানের আতঙ্ক-রাজ্যের অস্তিত্ব গুঁড়িয়ে দিয়ে নিজেরা সজ্ঞানে-স্বেচ্ছায় আরেকটা আতঙ্ক-রাজ্য কায়েম করে তুলেছিলাম। আমাদের জনগণের রক্ত থেকে, মৃত্যু থেকে, আমাদের মুক্তিসেনানীদের মৃত্যুঞ্জয়ী বাসনার উত্তাপ থেকে রাতারাতি কী করে কখন আরেকটা কারাগার আমাদের জাতীয় পতাকার ছায়াতলে তৈরি করে নিলাম, নিজেরাও টের পাইনি। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের সম্মোহন-মন্ত্রে স্বর্গাদপি গরিয়সী মাতৃভ‚মিটির যে উদার গগনপ্রসারী ছবি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করতাম, সেই প্রয়াস বারবার ব্যর্থ হয়ে যেত। বারবার একটা খাঁচা তার চারদিকের দেয়ালের সোনালি কারুকাজসহ দৃষ্টির সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠত। এই খাঁচার ভেতরেই আমাদের বসবাস। এখানে সবকিছু বিকলাঙ্গ, সবকিছু অসুস্থ, অস্বাস্থ্যকর। এই পরিবেশে, এই পরিস্থিতিতে একজন তরুণী সমস্ত বাধা-নিষেধ অস্বীকার করে প্রবল প্রাণশক্তির তোড়ে চারপাশের সমস্ত কিছু একাকার করে ফেলতে চাইছে, আমি একে জীবনের স্বাধীনতা সৃষ্টির একটা মহৎ প্রয়াস বলে ধরে নিলাম। লোকে দুরদানা সম্পর্কে যত আজ-বাজে কথা বলুক না কেন, সেগুলোকে আমি জমাট-বাঁধা কাপুরুষতা ছাড়া কিছুই মনে করতে পারলাম না। মাঝে মাঝে মনে হত যুগের প্রয়োজনে এই মেয়ে পাতাল-ফুঁড়ে গোঁড়া মুসলমান সমাজে আবির্ভূত হয়েছে। সে যদি শাড়ি-বøাউজের বদলে প্যান্ট-শার্ট পরে বেড়ায়, তাতে কি হয়েছে? তুচ্ছ গয়নাগাটির বদলে ছুরি-পিস্তল নিয়ে যদি ঘোরাঘুরি করে, সেটা অনেক বেশি শোভন, অনেক বেশি মানানসই।”

“আমি দুরদানার দিকে প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়লাম। ঝুঁকে পড়লাম তার প্রেমে পড়েছি বলে নয়। তার মধ্যে প্রাণশক্তির সবল অঙ্কুরণ দেখে তার প্রতি আমি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। লোকে তার নামে যা-তা বলে বেড়ায়, কারণ সে অন্যরকম। একদিন তার বাবা যখন বললেন, কলেজে আসা-যাওয়ার রিকশা ভাড়া দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই, তখন সে সাইকেল চালানো শিখে নিয়ে একটা সেকেন্ড-হ্যান্ড সাইকেল যোগাড় করে রিকশা ভাড়ার সমস্যার খুব একটা সহজ সমাধান করে নিল। একা একটা মেয়েকে সাইকেলে চলাচল করতে দেখলে সময়ে-অসময়ে বখাটে ছেলেরা তার ওপর চড়াও হতেও দ্বিধা করত না। এই রকম উৎপাত থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য স¤প্রতি সে নিজের সঙ্গে একটা চাকু রাখতে আরম্ভ করেছে। সাইকেল চালাতে গিয়ে একদিন সে আবিষ্কার করল শাড়ি পরে সাইকেল চালাতে বেশ অসুবিধে হয়। সে শাড়ির পাট চুকিয়ে দিয়ে প্যান্ট-শার্ট পরতে আরম্ভ করল।”

“তার ভাই চরমপন্থী রাজনীতি করত। রাজরোষ তার মাথার ওপর উদ্যত খড়গের মতো ঝুলছিল। সরকার তার মাথার ওপর চড়া দাম ধার্য করেছে। এমন ভায়ের বোন হিসেবে তার লুকিয়ে-চুপিয়ে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু দুরদানা সে অবস্থাটা মেনে নেয়নি। ভাইয়ের বিপ্লবী রাজনীতি সম্বন্ধে তার অপরিসীম গর্ববোধ ছিল। তাই সবসময় সে মাথা উঁচু করে বেড়াত। আমাদের সমাজে এই এতখানি স্বাভাবিকতা সহ্য করার খুব বেশি মানুষ ছিল না।”
আলোচক বলেন, “শিল্পীরা আসলে তাঁদের চিন্তার ব্যক্তিটাকে রূপায়ন করেন কোনো বাস্তবের ব্যক্তিকে ভিত্তি করে। ফলে এই দুরদানা পরিপূর্ণভাবে শামীম সিকদারের প্রতিকৃতি হচ্ছে কি না, সেটি নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করতে পারেন। এক্ষেত্রে শামীম সিকদারের সমসাময়িক কোনো অনুজ শিল্পীর বয়ান হাজির করতে পারলে তাঁকে পাঠ করতে সুবিধে হয়। আইভি জামান অতি স¤প্রতি একটা লেখা লিখেছেন শামীম সিকদারের প্রয়াণের পরপর। কেমন ছিলেন তাঁর হোস্টেলমেট শামীম সিকদার। আইভি জামান শামীমের অনুজ ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি নিজেও একজন ভাস্কর। কাজেই সেখান থেকে শামীম সিকদারকে চিহ্নিত করা গেলে একটা বাস্তব স্মৃতিচারণের জায়গাও আসে। সাহিত্য নিয়ে যাদের সংশয় আছে, তাদের জন্যও সেইদিক থেকে শামীমের ইমেজকে পাঠ করতে সুবিধে হয়।”

এ পর্যায়ে ‘সাহসের প্রতিমা’ শিরোনামে আইভি জামানের সেই লেখাটি পাঠ করে শোনানো হয়- “ভাস্কর শামীম সিকদারকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমি আর শামীম সিকদার একসঙ্গে হলে থাকতাম। একই রুমে। আমি যখন ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হই, উনি তখন ফাইনাল ইয়ারে। উনাকে আমি শিক্ষক হিসেবে পাইনি, তবে উনাকে দেখতাম, উনার কাজ দেখতাম।”
“হলের সবার জন্য সূর্যাস্তের আইন ছিল, তার আইন ছিল রাত ১০টা। তিনি তার সময়মতোই চলতেন। কেউ কিচ্ছু বলত না তাকে। উনি ছিলেন প্রচণ্ড সাহসী একজন মানুষ। এত সাহসী যে, আমরা মেয়েরা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারতাম না ওইরকম কিছু। শামীম আপাকে দেখে আমরা অবাক হয়ে যেতাম। এত সাহস যদি সব মেয়ের হতো, বাংলাদেশটা আরও আগেই বদলে যেত।”

“অনেক সময় তার সাহস দেখে আমরা ভয়ও পেতাম। রাতের বেলা চারদিক একদম নীরব হয়ে যাওয়ার পর দেখা যেত আস্তে আস্তে হেলেদুলে এসে হলে ঢুকছেন। কেউ কিছু বলার সাহস নেই তাকে।”
“চারুকলা অনুষদের ভেতরেই ছিল তখন ছাত্রীদের হোস্টেল। বলা যায় হলটাই ছিল উনার দখলে। বাস্তবিকই ওই হলটা তার দখল করা। ভবনটা একজন ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি ছিল। সেখান থেকে মারপিট করে বাড়িটা শামীম আপা দখল করেছিলেন। তখনো আর্ট কলেজটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের থাকার জায়গার সংকট। তখন সেই ইঞ্জিনিয়ারকে বলা হলো, এ ভবনটা তো চারুকলার ভেতরে, আপনি উঠে যান। শেষে সেই ইঞ্জিনিয়ার বাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন।”

“আমরা তখন মাত্র ভর্তি হয়েছি। সবাই অবাক হয়ে যেতাম শামীম আপাকে দেখে। তার পোশাক-পরিচ্ছদ, চালচলন দিয়ে ছাত্র অবস্থাতেই তিনি বিখ্যাত হয়ে গেছেন তখন। সবাই হয়তো ভালোভাবে নিত না, কিন্তু তখনকার দিনে একজন নারী হিসেবে এরকম বলিষ্ঠভাবে চলাফেরা করাটা অন্য নারীদের কাছে এক ধরনের সাহসের সঞ্চার করত। উনি ছিলেন সাহসী ভাস্কর। মেয়েদের মধ্যে নভেরার পরেই শামীম সিকদারের নাম বলা যায়। শামীম আপা যখন রড-সিমেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করে দিতেন, আমরা উনার সাহস দেখে অবাক হয়ে যেতাম।”
“উনি দরজায় কখনো কড়া নাড়তেন না, লাথি মেরে খুলতেন। আমরা প্রথম প্রথম হয়তো তাকে অসুস্থ ভাবতাম যে, এ আবার কেমন মানুষ, দরজায় লাথি মেরে ঘরে ঢোকে! নিচতলাতেও একইভাবে ঢুকতেন শামীম আপা, দারোয়ান-টারোয়ানও সব বিড়ালের মতো হয়ে দরজা খুলে দিত। এই পরিস্থিতি আসলে তিনি নিজেই তৈরি করে নিয়েছিলেন।”

“আমাদের উনি বলতেন, তোমরা প্যান্ট-শার্ট পরো। এখন তো সব মেয়েই পরছে। কিন্তু শামীম আপা সেই সময়ে কীরকম স্রোতের বিপরীতে চলাফেরা করতেন যারা না দেখেছেন, তারা এখনকার দিনে বসে সেটা কল্পনা করতে পারবেন না। এখন তো সব জায়গায় মেয়েরা প্যান্ট-শার্ট পরছে, ছেলেদের সঙ্গে সমানতালে কাজে এগিয়ে এসেছে। এখন এটা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়ে গেছে। সত্তরের পর আমি যখন চারুকলায় আসলাম, তখনই দেখেছি উনি সবাইকে বলতেন, আমার বহু প্যান্ট-শার্ট আছে, তোমরা নিয়ে নিয়ে পরো সবাই। কারণ উনি চাইতেন মেয়েরাও ছেলেদের মতো জেগে যাক, এগিয়ে আসুক। সবসময় সালোয়ার কামিজ, শাড়ি পরে থাকাটাকে তিনি পছন্দ করতেন না। এ মানসিকতাটা তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কাজ কিন্তু সবাই সবার মতোই করেন, সবাই নিজের একটা ঢঙেই কাজ করেন। কিন্তু এই যে সাহস, এই যে মেয়েদের সামনে একটা অগ্রণী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকা- এর একটা গুরুত্ব আছে।”
“তার সাহস শুধু তখনকার মতো বৈরী পরিবেশে ছেলেদের মতো পোশাক পরিধানে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি ব্যক্তিজীবনেও সমানতালে সাহসী ছিলেন। প্রায়ই দেখতাম মারামারি করে আসতেন। একদিন দেখি হাত কাটা। বললাম, আপা আপনার হাত কাটল কীভাবে। তিনি বললেন, ‘আর বইলো না, আজকে একজন বেয়াদবি করছে, দিছি মাইর।’ উনি আসলে ছেলেদের মতোই ঘোরাফেরা করতে পছন্দ করতেন। মেয়েদের সীমাবদ্ধ জীবন তার সহ্য হতো না।”

“শামীম সিকদার আসলে তার সমগ্রটা মিলিয়েই শামীম সিকদার। তার কাজের ধরন যেমনই হোক, একজন মেয়ে হয়ে ভাস্কর্যের মতো কঠিন কাজে তিনি এসেছেন, একের পর এক কাজ তো করে গেছেন। একবার উনাকে দেখি কাজ করে চারুকলা ভরিয়ে ফেলেছেন। এত কাজ! চার-পাঁচজন মিস্ত্রি নিয়ে কাজ করছেন। বøক করে করে নানারকম ফিগার তৈরি করে চারুকলা ভর্তি করে ফেলেছেন প্রায়। আমরা কোনটা রেখে কোনটা দেখব এমন অবস্থা। তার কাজ কোনটা কেমন সেটা শিল্পবোদ্ধারা বুঝবেন, কিন্তু আমি মনে করি তার মতো সহসী মেয়ে এখনো পর্যন্ত চারুকলাতে নেই। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর তিনিই প্রথম নারী, যিনি সাহসের সঙ্গে এগিয়ে এসে এত এত ভাস্কর্য করেছেন।”
“শামীম আপার ছেলেও পেইন্টার। ইংল্যান্ডে থাকে। শামীম আপা কোনো এক অনুষ্ঠানে গেছেন, সবাই যার যার পরিচয় দিচ্ছেন। উনিও বললেন তার ছেলে একজন পেইন্টার। কিন্তু নিজের কথা বলেননি যে, সে নিজেও একজন ভাস্কর। শুধু ছেলের মা হিসেবেই পরিচয়টা দিয়েছিলেন। বলেননি যে, তিনি বাংলাদেশে একুশে পদকপ্রাপ্ত একজন ভাস্কর। শেষদিকে হয়তো নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছিলেন। নিজেকে ওইভাবে প্রকাশ করতে চাইতেন না।”
“তার চলে যাওয়াটা আমাদের সময়ের একটা দুঃসাহসী অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি।”

সবশেষে আলোচক নাসিমুল খবির ডিউক বলেন, “দূরবর্তী প্রতিক্রিয়া হিসেবে শামীম সিকদারের ব্যক্তি-ইমেজ সমসাময়িক অনেকের কাছে নারীর সাহস ও মুক্ততার ধারণা দেয়। তাঁর প্রজন্মের এবং তাঁর পরের প্রজন্মের অনেক প্রগতিবাদী নারীর কাছে তিনি বিশেষ অনুপ্রেরণা হিসেবে ধরা দেন। আবার নিকটবর্তী অভিজ্ঞতা অনেকের কাছে নেতিবাচক বোধও তৈরি করেছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে শামীম সিকদার ও তাঁর কর্মতৎপরতা আমাদের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কীভাবে, কতটুকু চিহ্নিত ও আলোচিত হবে আপাতত তা ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাক। তবে যে কোনো আলোচনার ক্ষেত্রে আবেগ নয় বরং যথাযথ তথ্য, যুক্তি ও প্রাসঙ্গিকতা প্রাধান্য পাবে এমনটা প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।”
এ পর্যায়ে পরপর ৩টি ভিডিওক্লিপ দেখানো হয়। প্রথমটিতে শিল্পী শামীম সিকদার বলেছেন শিল্পী এসএম সুলতানকে নিয়ে, দ্বিতীয়টিতে সোজাসাপ্টা বলেছেন দেশপ্রেম নিয়ে ও সবশেষটিতে বলেছেন তাঁর অপ্রাপ্তি ও অপূর্ণ ইচ্ছা নিয়ে।
শামীম সিকদার তাঁর লেখা বই – Sculpture Coming from Heaven এর এক জায়গায় লিখেছেন –

“I have been continuously spurned,
Living on earth, doing my job I am burdened,
I am Symphony of art and culture.
To make everything on earth hilarious
With sculptural tincture,
I am dejected I fail to create something bonafide,
I think it is for me a May day.
The sculptural power needs an attention pay.
So that I should be gay and bay
To translate my dream into reality
Highlighting the aspect of peace and amity.
Through sculpture and my feelings,
I like to immortalize my artistic dealings.”

এই লেখাটুকুতে শামীম সিকদারের নিজস্ব বয়ানে তাঁর স্পিরিটের অনেকটুকুই মূর্ত হয়েছে।
শামীম সিকদার নিজেই এক সাহসী ভাস্কর্য। তাঁর ভাস্কর্যের দিকে তাকিয়ে কিংবা কিছুটা কম তাকিয়েও তাঁর সময়জয়ী জীবন দেখাও অনেক সুন্দর ও প্রেরণার হতে পারে। কারো কারো জীবন তাঁর সৃষ্টির কারুকাজের চেয়েও উজ্জ্বলতর।

দর্শক-শ্রোতাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে, শিল্পী শামীম সিকদারের ভাস্কর্যের যথাযথ সংরক্ষণ ও বই প্রকাশসহ তাঁর অপূর্ণ ইচ্ছা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের আহবান জানিয়ে, সামাজিক প্রথা-ভাঙা ভাস্কর শামীম সিকদারকে আন্তরিক ও গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে আসরের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি টানা হয়।
আলোচক নাসিমুল খবির ডিউকের আলোচনা এবং আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা সবাইকে মুগ্ধ করে। দর্শক-শ্রোতা পুরোটা সময় উপভোগ করেন এবং মন্তব্য করে সক্রিয় থাকেন। ভাস্কর শামীম সিকদার স্মরণে পাঠশালার এ আসরের সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ফারহানা আজিম শিউলী।