অনলাইন ডেস্ক : দুই বছর আগে ওমান থেকে বসনিয়া যান বাংলাদেশের মোহাম্মদ ইয়াসিন। উদ্দেশ্য ইউরোপের কোনো দেশে পাড়ি জমানো। তিনি এখন আটকে আছেন ক্রোয়েশিয়া-বসনিয়া সীমান্তের ভেলিকা ক্লাদুসার একটি পাহাড়ের ঢালে। সেখান থেকে কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারেননি ইয়াসিন। বারবার দেশটির পুলিশের হাতে আটকা পড়েন। পুলিশ তার সর্বস্ব রেখে আবারও বসনিয়া ফেরত পাঠায় বলে জানান তিনি।

ডয়চে ভেলেকে ইয়াসিন বলেন, ওমান থেকে স্পিডবোটে করে ইরান এসে সেখান থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে আসি আমি। গ্রিস থেকে আসি বসনিয়ায়। চার মাস ধরে এখানকার জঙ্গলে আছি। তিন দিন আগেও ক্রোয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করি। সে সময় কিছুটা (ক্রোয়েশিয়ার) ভেতরে ঢুকেছিলাম। কিন্তু হাতে ধরা পড়ে যাই। পুলিশ আমার সব কিছু কেড়ে নেয়। শুধু আন্ডারওয়্যার পরা অবস্থায় আমাকে এখানে ফেরত পাঠায়।

বসনিয়ার জঙ্গলে বাংলাদেশিদের আটকেপড়ার বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদনের জন্য বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন ডয়চে ভেলের দুই সংবাদকর্মী। তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশটির ক্রোয়েশিয়া সীমান্তবর্তী ভেলিকা ক্লাদুসা এলাকার একটি পাহাড়ের ঢালে কয়েকশ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তীব্র শীত, খাবারের অভাব, পানির সংকটে অমানবিক জীবনযাপন করছেন তারা।

ভেলিকা ক্লাদুসায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে গেছেন। পাড়ি দিয়েছেন দুর্গম পথ। সেখানে অবস্থানরতরা জানান, তারা দালালদের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন।

সেখানে অবস্থানরতদের মধ্যে একজন বলেন, ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করে এখানে এসেছি। বিভিন্ন দেশে দালালদের এ টাকা দিতে হয়েছে। এ মুহূর্তে দেশে গেলে নিঃস্ব হয়ে যাব। গাছের সঙ্গে পলিথিন বেঁধে ওই পাহাড়ের ঢালে বানানো হয়েছে তাঁবু, যেখানে গাদাগাদি করে রাত কাটাচ্ছেন তারা। এমন বেশ কিছু তাঁবুতে অবস্থান কয়েকশ বাংলাদেশির। কর্দমাক্ত মাটিতে পাতলা পলিথিন বিছিয়ে থাকার আয়োজন করেছেন তারা। নেই পর্যাপ্ত খাবার বা জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা।

ভেলিকা ক্লাদুসায় একটি শরণার্থী ক্যাম্প থাকলেও সেখানে সবাইকে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তারা। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের একটি পরিত্যক্ত কারখানায়।

কয়েকশ মানুষ বসনিয়ার এ জঙ্গলে মানবেতর জীবনযাপন করলেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তাদের সহায়তায় তৎপর হতে দেখা যায়নি। সেখানে অবস্থানরত বাংলাদশিরা জানান, মাঝে মাঝে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কেউ কেউ কিছু খাবার আর চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে এলেও তা পর্যাপ্ত নয়।