অনলাইন ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আজ রাত ১২টা ১ মিনিটে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে এটিই প্রথম ফাঁসি।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে আব্দুল মাজেদকে গোসল করানো হয়। রাত ১০টার দিকে কারা মসজিদের ইমাম আব্দুল মাজেদকে তওবা পড়াতে যান। কারা সূত্রে জানা গেছে, এসময় চিৎকার করে কেঁদেছেন মাজেদ। একপর্যায়ে তওবা পড়ানো হয় তাকে। তার আগে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা ফাঁসির কার্যক্রম পরিদর্শন করতে কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। এছাড়াও অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ঢাকার সিভিল সার্জন আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান কারাগারে যান।
তাদের উপস্থিতেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর খুনী আব্দুল মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরতে শনিবার সকালে থেকেই প্রস্তুতি চলছিলো কারাগারে। শাহজাহানের নেতৃত্বে মো. আবুল, তরিকুল ও সোহেলসহ ১০ জন জল্লাদকে প্রস্তুত রাখা হয়। ফাঁসির মঞ্চের লাইট, দড়ি সবকিছু পযৃবেক্ষণ করা হয়। ফাঁসির মঞ্চের পাশে নিরাপত্তকর্মীসহ ডেপুটি জেলার দেখভাল করছিলেন। কারাগারের বাইরে কারারক্ষী ছাড়াও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে বুধবার প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছিলেন আব্দুল মাজেদ। ওই দিন রাতেই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো তার প্রাণভিক্ষার আবেদনটি নাকচ করা হয়। প্রাণভিক্ষার আবেদন বাতিল হওয়ার পর কারাবিধি অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করার করার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে শবেবরাতের কারণে ফাঁসি কার্যকর করার দিন হিসেবে শনিবার দিবাগত রাতকে বেছে নেন কর্তৃপক্ষ। প্রাণভিক্ষার আবেদন বাতিলে পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন মাজেদের স্ত্রী, শ্যালক ও চাচা শ্বশুরসহ পাঁচ সদস্য।
গত সোমবার মধ্যরাতে মিরপুর থেকে আব্দুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তিনি দুই দশক যাবত পলাতক ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছেন তিনি ভারতে পালিয়ে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার দুপুরে মাজেদকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। বিচারের নির্দেশে ওই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন বুধবার মৃত্যুর পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয় তাকে।
এসময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করবেন। পরে সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনী আব্দুল মাজেদ।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবনে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২রা অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। ২০০১ সালের ৩০শে এপ্রিল তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানীর পর অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ১৯৯৮ সালের ৮ই নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৪শে আগস্ট পর্যন্ত বাদী-বিবাদীর আপিলের প্রেক্ষিতে চার দফায় রায় প্রকাশ হয়। সর্বশেষ আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ৫ই অক্টোবর থেকে টানা ২৯ কর্মদিবস শুনানির পর ১৯শে নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। ২০১০ সালের ২৮শে জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তারা হচ্ছে, লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার)। এ পর্যন্ত সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো আব্দুল মাজেদের। এছাড়া এখনো ১২ জনের মধ্যে পাঁচজন বিদেশে পলাতক। পলাতকরা হচ্ছে, কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল এএম রাশেদ চৌধুরী, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ও লে. কর্নেল এসএইচ নূর চৌধুরী।