ড: বাহারুল হক : করাচি… করাচি… করাচি… Karachi is the capital of Pakistan. ছোট বেলায় আমি মাত্র দুইটা বড় শহরের নাম জানতাম তার একটা চট্টগ্রাম অন্যটি ঢাকা। এর বাহিরেও যে আরো শহর আছে তা আমি জানতাম না। ঠিক মনে নাই, আমি ঘরের পাশের প্রাইমারী স্কুলের ক্লাস ওয়ান কি টু-এর ছাত্র। পড়ি লজিং মাস্টারের কাছে যাকে আমরা ডাকতাম মামা। সন্ধ্যায় পড়তে বসতাম মামার সাথে। মামা পড়তো আমিও পড়তাম। আমার কত পড়া! বাংলা কবিতা মুখস্থ করা, ফলের নাম, ফুলের নাম, পাখির নাম মুখস্থ করা, অংক করা, ইংরেজি শব্দের অর্থ মুখস্থ করা। মামা একটা মোটা বই খুলে বসতেন আর জোরে জোরে পড়তেন- Karachi is the capital of Pakistan. ঐ এক লাইন- Karachi is the capital of Pakistan. প্রতিদিন পড়তেন ঐ এক লাইন। মামাকে একদিন বললাম- “মামা, আপনি এটা কী পড়েন”? মামা হেসে বললেন- “তুই বুঝবি না”। আমি বুঝিনি, কিন্তু বার বার শোনায় আমার মুখস্থ হয়ে গেছে- Karachi is the capital of Pakistan. মামা কি জন্য এই লাইনটি পড়তে থাকতেন আমি তখন বুঝিনি। পরে উপরের ক্লাসে উঠে আমি বুঝলাম মামা করাচির উপর রচনা মুখস্থ করতে চেয়েছেন কিন্তু শত চেষ্টা করেও পারেননি। মামার ঐ জিকির আমার ভালো লাগতো না, তবে কিছু বলতাম না। তারপর আমি নতুন ক্লাসে, নতুন বই, কিন্তু মামা নাই। কী ব্যাপার? মামা চলে গেছে, আর আসবে না। মামাকে মনে পড়ে। যাই হোক, সে বয়সে পাঠ্য বইয়ের বাহিরে আমার জ্ঞান অর্জন- পাকিস্তান, ক্যাপিট্যাল এবং করাচি। Karachi is the capital of Pakistan. করাচি… করাচি… করাচি… Karachi is the capital of Pakistan.

বাহার। আমার আব্বা-মা’র দুই কন্যা সন্তানের পর এই অধমের জন্ম। আমার কাকা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের ছাত্র। কাকা বাড়ি আসলেন। নতুন জেনারেশনের নতুন প্রতিনিধিকে দেখলেন। রুপ দেখে (তখন রুপ ছাড়া গুণেরত কিছু নাই) কাকা মুগ্ধ। কাকা ঘোষণা দিলেন – এই রাজপুত্রকে বাহার নামে ডাকা হবে। সেই থেকে আমি বাহার। কাকাতো আর না বুঝে আমার নাম বাহার রাখেন নাই, বাহার নামের অর্থ আছে। বাহার অর্থ-a beautiful show or exhibition; glamour; beauty. এখানে উল্লেখ্য, আমার জন্ম হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে। বাহার কেন ডাকা হবে সে জন্য এ রুপবান শিশুর রাতে জন্ম হওয়ার বিষয়টিও কাকার বিবেচনায় ছিল। কারণ বাহার একটি ইন্ডিয়ান মিউজিক্যাল মোড বা রাগ – এর নাম এবং এ রাগ পরিবেশন করা হয় ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতজ্ঞদের দ্বারা প্রণীত প্রথা অনুযায়ী রাতে। অবশ্য রাতে পরিবেশন করা হয় তেমন ইন্ডিয়ান রাগ আরো আছে। যেমন- বসন্ত, বিহাগ, দরবারী, ছায়ানট ইত্যাদি।
আমার আব্বা কাকা দুই জনই প্রচন্ড রকম সঙ্গীতামোদী ছিলেন। কাকার ভাষায়-
“রুপ আর রাগ- এর সংমিশ্রণে তোমার নাম হয়েছে বাহার”।

কামাল ভাইর বয়স শিঘ্রই নব্বই হবে। এত বেশি বয়স্ক বাঙালি মনে হয় টরন্টোতে আর নাই। কামাল ভাই এখন থাকেন একটা ওল্ড হোমে। একা, একদম একা। স্ত্রী দীর্ঘদিন রোগে ভোগে ৬ মাস আগে গত হয়েছেন। প্রথম দেখা হওয়ার দিন থেকেই আমি কামাল ভাইর খুব প্রিয় একজন মানুষ। মাঝে মাঝে ফোন করেন। গতকালও করেছিলেন। প্রথমেই বললেন, “ড: বাহার, আপনাকে একটা খবর দেই। আমি এখন অন্য একটা ওল্ড হোমে। এটা খুব সুন্দর। লোকেশনও চমত্কার”। এইটুকু বলার পর কামাল ভাই একটু থামলেন। তারপর বললেন- “ডঃ বাহার, আপনার ভাবী থাকলে খুব খুশি হতেন”। তারপর চুপ। কথা থেমে গেছে। আমিতো বুঝি। কথাতো আর নাই। কামাল ভাইর কথাতো চলে গেছে ৬ মাস আগে। দার্জিলিং-এর যে কন্যাকে পুতুলের মত সাজিয়ে একদিন ঘরে এনেছিলেন সে কন্যা যে দপ করে একদিন চোখের সামনে প্রাণহীন একটা পুতুলে পরিণত হবে তা তো কামাল ভাই জানতেন না। কামাল ভাই কথা বলেন, একটু-আধটু লেখেনও কিন্তু পুতুল হারাবার কামাল ভাইর যত বেদনা সব এখন শুধু তার চোখের জল হয়ে ঝরে।

মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে দুটি উপায়ে- লিখে আর বলে। এ দুটোর সাথে অবশ্য মানুষের ইচ্ছা জড়িত। কিন্তু ইচ্ছা না থাকলেও মানুষের মনের ভাব বিশেষ করে দুঃখ-বেদনা আপনা আপনি প্রকাশিত হয়ে যায় অন্য এক উপায়ে; সেটা হলো ক্রন্দন। তুমি চুপচাপ একা অপলক দৃষ্টি মেলে বসে থাকবে আর তোমার দুই গাল বেয়ে নেমে পড়বে চোখের জল। এটা কী? তুমি লিখে বা কথা বলে কারো কাছে কিছু প্রকাশ করলে না অথচ বেয়াদপ চোখের জল সব কথা সবাইকে বলে দিল! বলে দিল- তোমার কষ্টের সীমা নাই, তোমার বুকের মধ্যে দুঃখের সুনামি বয়ে যাচ্ছে, তোমার মন-চোখ পুড়ে যাচ্ছে। বিধাতা তৃতীয় এ ব্যবস্থাটা মানুষের জন্য না রাখলে কী ক্ষতি হতো?

আমার প্রাক্তন ছাত্র ও বিজ্ঞ সহকর্মী জনাব ওয়াহেদ চৌধুরী চুরি করা, মেরে দেওয়া, আত্মসাত করা ইত্যাদির সাথে করোনার টীকা জড়িয়ে একটা ছোট্ট স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসাটি নিচে দিলাম:
“চাল, তেল, মাস্ক, পিপী সব চুরি করেন, প্লিজ টিকা চুরি কইরেন না।
টীকা একডোজের বেশি করো লাগবে না, বেশি নিলে করোনা হবে।
শুভ রাত্রি। রমজানুল মোবারক।”

ইন্টারেস্টিং স্ট্যাটাসটি পড়ে আমার মনে পড়ে গেল কর্ণাটক ইউনিভার্সিটির ছাত্র থাকাকালীন এক দিনের কথা। আমি অসুস্থ। সকাল বেলা নাস্তা খেয়ে রুমে শুয়ে আছি। জানালা খোলা। একটা বানর হঠাত ঢুকলো আমার রুমে; টেবিলের উপর ক্যাপসুলের স্ট্রিপ ছিল। সেখান থেকে একটা নিয়ে সে লাফিয়ে আমার রুমের পাশের গাছটার উপর বসলো। আমিও উঠে দেখতে থাকলাম কী করে সে। সে একটা ক্যাপসুল বের করলো। ওটা আবার বাদামের মত খুললো। খুলে সে পাউডার (আসল ঔষধ)- এর গন্ধ নিল। তারপর চোখে মুখে চরম অপছন্দের ভাব তুলে সব ফেলে দিল। তারপর লাফিয়ে অন্য ডালে যাওয়ার আগে একবার সে আমার চোখে চোখ রাখলো। ঐ এক পলকে মনে হয় সে আমাকে বলে গেল- “বেটা, এই সব ছাতা-মাতা খাস তুই? যত্তো সব”! আমি ভেবেছিলাম সে ক্যাপসুল চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। কিন্তু বানরটি বোকার মত তা করেনি। বানর যদি এত হুঁশিয়ার হয় মানুষ কী আর বোকা হবে? করোনার টীকা চুরি হবে না বলে আমার বিশ্বাস।

মৃতা হিন্দু সদবাদের চিতায় তোলার আগে বিশেষভাবে সাজানো হয়। বসন থাকে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি আর থাকে কপালে সিঁধুর, পায়ে আলতা। তারপর দাহ, সব শেষ। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের কর্কট ও মকর ক্রান্তি বৃত্তের অভ্যান্তরীয় অঞ্চলের বৃক্ষের পাতা শীতের আগে হেমন্তের ল্ল শুরু হতেই সবুজ রঙ হারিয়ে ধীরে ধীরে অন্য নানা রঙে রঙিন হয়ে উঠে। হেমন্ত আসলে শীতের বাহক। মৃদু ঠান্ডা নিয়ে হেমন্তেই শীতের চোরা আগমন। হেমন্তের স্থান শীত ভালোভাবে বুঝে নিতে নিতে গাছের রঙিন সব পাতা ঝরে পড়ে। তারপর মাটির সাথে মিশে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। হেমন্ত কাল বা ফ’ল সিজনে গাছের রঙিন পাতা দেখে সবার চোখ জুড়ায়। কিন্তু আমি বেদনা অনুভব করি। আমার মনে হয় পাতাগুলো পাতা নয়। এক একটা মৃতা সদবা। আলতা পায়ে রঙিন বসনে শীতের চিতায় উঠেছে। এরপর দাহ হয়ে (শুকনা হয়ে) ঝরে পড়বে। মাটির সাথে মিশে শেষ।

প্রফেসর কে, এম, নুরুল হুদা, আমার এক অতি প্রিয় সহকর্মির নাম যাকে দুর্ভাগ্যবশত হারিয়েছি ২০০০ সনে। অকাল প্রয়াত এই সহকর্মির ভালোবাসা মাখা সান্নিধ্য আমি পেয়েছি দীর্ঘ ১৭ বছর। হুদা ভাই ছিলেন আমার ৪ বছরের বড়। তাতে কি! আমাদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপুর্ণ এবং বেশ মজার। কিরকম মজার বলি। হুদা ভাই থাকতেন শহরে আর আমি থাকতাম ক্যাম্পাসে। আমাদের দুজনের বাসায় ফোন কিন্তু আমরা ফোনে কথা বলতাম কম। আমরা চিঠি লেখালেখি করতাম। হুদা ভাইকে বললাম- হুদা ভাই চিঠি লেখেন কেন, ফোনে কি অসুবিধা? হুদা ভাই বললেন- তোমার সাথে ফোনের থেকে চিঠিতে মজা বেশি। সেই থেকে রেগুলার চিঠি চালাচালি। আমরা বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে লিখতাম এবং প্রচন্ড হাস্যরসে ভরা থাকতো সেসব চিঠি। দুপক্ষের পরিবারের সদস্যরা পড়তো সেসব চিঠি এবং হাসতে হাসতে হয়রান হতো। হুদা ভাইর ছেলে আমার চিঠির অপেক্ষায় থাকতো সব থেকে বেশি। কিছুদিন চিঠি না পেলে হুদা ভাইকে বলতো – মামার চিঠি আসছে না য়ে সে আবার আমাকে ডাকে মামা, চাচা নয়। অর্থাত আমি হলাম তার মায়ের ভাই; মাতৃপক্ষ। আমি একদিন বললাম – তুমি আমাকে মামা ডাক, ভাল কথা, কিন্তু এতেতো হুদা ভাই আমাকে ঘায়েল করার একটা মোক্ষম অস্ত্র পেয়ে গেল। তবে হুদা ভাই এতই ভদ্র যে ভূলেও কোনদিন একবারের জন্যও সে অস্ত্র আমার উপর ব্যবহার করেননি। চিঠি আবার হাতে হাতে চালাচালি হতো না। চিঠির বাহক একেবারে “রাষ্ট্রীয় ডাক”। বিভাগে দেখা হতো, কথা হতো, কিন্তু চিঠি নিয়ে কোন আলাপ হতো না। চিঠির বিষয়টা একদম আলাদা। তিনি লিখবেন আমি উত্তর দেব, আমি লিখব তিনি উত্তর দেবেন। এমন মজার সম্পর্ক কি আর কারো সাথে ছিল? মনে হয় না।

হুদা ভাইর সাথে আমার কত কথা, কত স্মৃতি; সব মানসপটে উজ্জল হয়ে আছে। সব থেকে বেশি মনে পড়ে হুদা ভাইর জীবনের শেষ দিনটির কথা। আমরা দুজন সেদিন এক রুমে সময় কাটিয়েছি টানা ৪ ঘন্টা। একথা সেকথা অনেক কথা। তবে আমৃত্যু আমার মনে থাকবে সেসব কথা যা তিনি বলেছিলেন ক্বামার বাণু আপা (তাঁর স্ত্রী এবং সহকর্মি, প্রফেসর ডঃ ক্বামার বাণু ) নিয়ে। হুদা ভাই বললেন – তোমার আপারতো চাকুরি আর বেশি দিন নাই। আমি বললাম- আপনার চাকুরিতো আরো অনেক দিন আছে। হুদা ভাই বললেন – না, ভাবছি তোমার আপার সাথে আমিও স্বেচ্ছা অবসরে চলে যাব। আর চাকুরি করবো না। আমি বেশ আগ্রহভরে জানতে চাইলাম – কেন? তিনি বললেন – ভাল লাগে না, বিভাগে আগের সেই পরিবেশ নাই। চলেই যাব। “চলেই যাব” এ দুটি শব্দের সাথে আমার কানের অনুবন্ধন কোন দিন শেষ হবে না। আমার সমস্ত অনুভবে দুটি মাত্র শব্দ “চলেই যাব”। সন্ধ্যায় খবর পেলাম আমার অতি প্রিয় হুদা ভাই চলে গেছেন। আপার সাথে স্ব ইচ্ছায় চাকুরি থেকে অবসরে নয়, অনিচ্ছায় (ঘাতক ট্রাকের মরনাঘাতে) আপাসহ পৃথিবীর সবার-সবকিছুর মায়া ছেড়ে একেবারে পরপারে। প্রার্থনা করি হুদা ভাইর যেন বেহেশত নসীব হয়। প্রার্থনা করি আপা যেন শক্তি, সাহস আর সুস্বাস্থ নিয়ে আরো বহু বহু দিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকেন।
ভাইকে বললাম- আমিতো গত দুই দিন হাঁটিনি। আমি হেঁটে আসি। ঘন্টা খানেক পর ফিরবো। বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্ক ওয়ে রোড ধরে হাঁটতে থাকলাম। বিশ/পঁচিশ মিনিট পর মনে হলো এক কাপ কফি খেলে ভালো হয়। কিন্তু পাই কোথায়? কাকে জিজ্ঞাসা করবো। কোন মানুষ নাই। রাস্তায় গাড়ি আর রাস্তার দুই ধারে বাড়ি। এই হলো চিত্র। আর কিছুক্ষণ পর দেখি রাস্তার ধারে একটা ঘর। বড় করে লেখা – CHASE, আর কিছু লেখা নাই। ফলে সে ঘরে কী ধরনের কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে বোঝা মুশকিল। ঘরের সামনে তিন চারটা গাড়ি দাঁড়ানো আছে। তাই ভাবলাম, যাই, দেখি কী ওটা। মেইন দরজার সামনে দাঁড়ালাম। ভিতর থেকে একটা মেয়ে বের হলো। তাকে বললাম- “এটা কী”? মেয়েটা বললো- “এটা ব্যাংক। তুমি কী চাও”? আমি বললাম- “কফি খাবো। কফি শপ খুঁজছি”। মেয়েটা বললো- “শুধু কফি”? বললাম – “হাঁ”। সে বললো- “আস আমার সাথে। ভিতরে আস”। আমি বললাম- “তুমি তো বললে এটা ব্যাংক। আমি ব্যাংকে কেন যাবো”? মেয়েটা বললো- “তুমি আস। আমি তোমাকে কফি খাওয়াবো”। ভিতরে ঢুকলাম। দেখি, কী পরিপাটি সব! এক কোণে একসেট সোফা। মেয়েটা সোফা দেখিয়ে বললো- “এখানে বস। আমি কফি দিচ্ছি”। পাশের টেবিলে রাখা কফির কেটলি থেকে এককাপ গরম কফি নিল সে তারপর তা আমাকে দিয়ে বললো- “খাও”। সে চলে যাচ্ছে দেখে আমি তাকে বললাম- “দাম কত? কাকে দিব”? সে হেসে বললো- “কাস্টমারদের জন্য রাখা আছে। ফ্রী। কোন দাম দিতে হবে না”। আমি বললাম- “আমিতো কাস্টমার না”। সে আবারো হেসে বললো- “তাতে কী? আজ না হয় কাস্টমার না, কিন্তু ব্যাংক আশা করে পরে একদিন হবে”। এই কথা বলে সে হন হন করে বের হয়ে গেল। কী মন্তব্য করবো বুঝতেছি না। আপনাদের কী মন্তব্য?