শাহনুর চৌধুরী : ফুল ভ্যাকসিনেটেড অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে টিকা নেয়া ভ্রমণকারীদের কানাডায় আসার আগে বা আগমণের পরে সব ধরনের করোনা পরীক্ষা বাদ দেয়ার জন্য অটোয়া প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়ছে। গত কয়েক মাস ধরে বিপর্যস্ত পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে এই দাবি করে আসছে স¤প্রতি ২ জন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কানাডা পর্যটন শিল্প সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে ড. ডমিনিক মের্টজ ও ড. জেইন চাগলা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কানাডা ভ্রমণকারীদের করোনা পরীক্ষা অর্থহীন। এটি সময় ও অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। কেননা করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সরকারের উচিত কানাডা ভ্রমণকারীদের করোনা টেস্টের ‘ঝামেলা’ থেকে মুক্ত করা। হ্যামিলটনের ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মের্টজ আরো বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে আপনি টরন্টো শহরের কেন্দ্রস্থলে যে কোনো একজনকে ধরে করোনা পরীক্ষা করেন আর ভ্রমণকারীদের টেস্ট করেন- দু’পক্ষের ফলাফলে কোনো পার্থক্য হবে বলে মনে হয় না।’
কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে করোনার বিধি-নিষেধ শিথিল করার ঘোষণার পর দেশটিতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটন শিল্পের জন্য ইতিবাচক এই ধারা অব্যাহত রাখতে করোনা টেস্টের বাধ্য-বাধকতা তুলে নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে ফুল ভ্যাকসিনেটেডদের যেন কোন ধরনের করোনা পরীক্ষা দিতে না হয় সেই দাবি করা হচ্ছে।
ফেডারেল সরকার বলছে- তারা ভ্রমণকারীদের জন্য ‘সীমান্ত ব্যবস্থা’ পর্যালোচনা করছে। তবে এখনো আগের নীতিতে কোন পরিবর্তন করা হয়নি।
জনস্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র টেমি জারবেউ এক ইমেইল বার্তায় বলেছেন, সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও এখন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে।
তাই কানাডায় প্রবেশের আগে এবং পরে উভয় ক্ষেত্রেই ভ্রমণকারীদের পরীক্ষা করে সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরী। কানাডা থেকে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার সময়ও এই নীতি মেনে চলা উচিত। পরিস্থিতির আরো উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সরকার ভ্রমণকারীদের করোনা পরীক্ষা বাদ দেয়ার কথা ভাবছে না।
কানাডার বর্তমান নিয়ম অনুসারে, দেশের প্রবেশকারী ভ্রমণকারীদের বিমানবন্দর বা স্থলবন্দরে আগমনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই করোনার নেগেটিভ সনদ সংগ্রহ করতে হবে। দেশে প্রবেশের পর তাদের আবার করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। এসব পরীক্ষার জন্য ভ্রমণকারীকে কয়েক শত ডলার খরচ করতে হয়। অন্যদিকে সরকার সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত ভ্রমণকারীদের রেনডম টেস্ট করাতে গিয়েও মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডা. চাগলা বলেন, করোনা টেস্টের নামে সরকার এবং ভ্রমণকারী উভয় পক্ষের অর্থ ব্যয় করার কোন যুক্তি নেই। এটি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির এই সহযোগী অধ্যাপক আরো বলেন, এই টেস্ট করাতে গিয়ে ভ্রমণকারীদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সময়েরও অপচয় হচ্ছে। ফলে অনেকে ভ্রমণের পরিকল্পনা বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছে। এটি দেশের পর্যটন শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
নোভা স্কশিয়ার পোর্টারস লেক এলাকার জেনিথ স্মিথ ও তার স্বামী গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় তাদের মেয়ের সাথে দেখা করতে যান। পরে কানাডায় ফেরার সময় তাদের দু’জনের পিসিআর টেস্ট করাতে বাড়তি ৩০০ ডলার ব্যয় করতে হয়। জেনিথ বলেন, ‘ওই ব্যয়টি ছিল একটি অপচয়। ভার্জিনিয়ায় আমরা পিসিআর টেস্টের জন্য অর্থ ও নমুনা প্রদান করি। দুই দিনের মধ্যে আমাদের রেজাল্ট দেয়ার কথা থাকলেও চাহিদা বেশি থাকায় আমরা সময় মতো সেটি পাইনি। পরে ‘নেগেটিভ’ সনদ পেলেও সময় (৭২ ঘণ্টা) পার হয়ে যাওয়ায় তা আর কোন কাজে লাগে নি।
যদিও সীমান্তে তাদের কোনো জরিমানা করা হয়নি তবে হেলথ কানাডার একজন কর্মকর্তা তাদের কাগজপত্রে ‘করোনা পরীক্ষা ছাড়াই প্রবেশ’ সিল মেরে দেয়। পরে কানাডায় তাদের করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়ায় তারা অন্যান্য বিধি-নিষেধ থেকে রক্ষা পান। জেনিথ ও তার স্বামী বলেন যে, তারা কানাডা সরকারের করোনা ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করেন। তবে তাদের বিশ্বাস সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত ভ্রমণকারীদের জন্য নিয়মগুলো শিথিল করার সময় এসেছে। টিকা নেওয়া লোকগুলোকে আরও কিছুটা স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।
টরন্টোর সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে এপিডেমিওলজিস্ট ডা. প্রভাত ঝাও এ বিষয়ে বলেন, সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত ভ্রমণকারীদের জন্য ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ পিসিআর টেস্ট বাদ দেয়া যেতে পারে। কেননা এটি অনেক সস্তা ও কম সময় সাপেক্ষ। মন্ট্রিলের এপিডেমিও ও কার্ডিওলজিস্ট ডা. ক্রিস্টোফার লেবোস বলেন, সম্পূর্ণরূপে টিকাপ্রাপ্ত ভ্রমণকারীদের জন্য বর্তমান পরীক্ষার নিয়মগুলো বাদ দেওয়া যেতে পারে। তবে কিছু সর্তকতা তো অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। সূত্র : সিবিসি