অনলাইন ডেস্ক : অধিকৃত পশ্চিমতীরে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে বহু। গতকাল সোমবার থেকে এ হামলা শুরু হয় যা এখনও চলছে।
গত দুই সপ্তাহ আগেও জেনিন শরণার্থী শিবিরে হামলা চালায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। এতে সাত ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়। গত কয়েক বছরের মধ্যে ইসরায়েলের এটি সবচেয়ে বড় হামলা।
জেনিনে ইসরায়েল কেন এমন বিধ্বংসী হামলা চালাচ্ছে তা নিয়ে এক বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এতে বলা হয়, রোববার রাত থেকেই জেনিন শরণার্থী শিবিরে ১০ বার বিমান হামলা চালানো হয়। এ ক্যাম্পে আধা বর্গ কিলোমিটার স্থান জুড়ে প্রায় ১৪ হাজার বাস্তু চ্যুত ফিলিস্তিনি বসবাস করে।
ড্রোন হামলাসহ ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপ করা হয়। এতে অনেকে ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আবার অনেক ভবন থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।
২১ জুনের আগে জেনিন ক্যাম্পে ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল এতে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। ফলে ক্ষুব্ধ হয় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। তবে ২০০৬ সালের পর অধিকৃত পশ্চিম তীরে ড্রোন হামলা চালানো হয়নি।
এ অভিযানে ইসরায়েল বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল হামলাও চালায়। সাজোয়া যান নিয়ে শরণার্থী শিবিরের অনেক বাড়িঘর এবং রাস্তাঘাট ভেঙে ফেলা হয়।
জেনিন ক্যাম্পে অভিযানে ১৫০টি সাজোয়া যান, সেনাবাহিনীর এক হাজার এলিট ফোর্স, সাধারণ গোয়েন্দা এবং সীমান্ত পুলিশ এ অভিযানে অংশ নেয়। ট্রাক্টর ব্যবহার করে শহরে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে সেনাবাহিনী জেনিন ক্যাম্পে প্রবেশ করে নির্বিঘ্নভাবে অভিযান পরিচালনা করে।
ক্যাম্পে প্রবেশের পরই ইসরায়েল সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মুখোমুখি হয় এবং তাদের সঙ্গে গোলাগুলি হয়।
জেনিন ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানায়, ইসরায়েলি সেনারা প্রবেশ করে তাদের বাড়ি ঘরে নির্বিচারে গুলি চালায়। জেনিন শহরের ডেপুটি গভর্নর কামাল আবু আল রাব আল জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েল সেনাবাহিনী বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, পানির লাইন এবং টেলিযোগাযোগ লাইনও বন্ধ করে দেয়।
ইসরায়েলের লক্ষ্য কী?
জেনিন শরণার্থী ক্যাম্পে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে গত বছর থেকে। আর এই জেনিন ক্যাম্প ইসরায়েলের অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত। যেখানে ইসরায়েল তাদের বসতি বাড়ানোর জন্য জোড় দিচ্ছে।
এখানে ‘জেনিন বিগ্রেডস’ নামে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা আত্মপ্রকাশ করে। যেখানে প্রায় শতাধিক সদস্য রয়েছে। এছাড়া এ ক্যাম্পে আরও অনেক সশস্ত্র গ্রুপ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ, ফাতাহ এবং হামাস। যারা জেনিনে অত্যন্ত সক্রিয়।
ক্রমবর্ধমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযান এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের প্রচেষ্টার মুখে অধিক সংখ্যক ফিলিস্তিনি যুবক ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। গাজার পাশাপাশি জেনিনও এখন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
এদের মধ্যে নতুন একটি দল হলো জেনিন বিগ্রেডস। এই দলের আত্মপ্রকাশের পর চাপে রয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অন্যদিকে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ইসরায়েলের অভিযানও।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে গত দুই বছর ধরে ইসরায়েল সেনাবাহিনী তাদের অভিযান বৃদ্ধি করেছে। এর অন্যতম কারণ জেনিন ক্যাম্পে ফিলিস্তিনিরা নতুন যে গ্রুপ তৈরি করেছে তাদের নিশ্চিহ্ন করা। আর ইসরায়েল এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘ব্রেক দ্য ওয়েভ’।
জেনিন ক্যাম্পে হামলার বিষয়ে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ কারখানায় হামলা চালানো হয়েছে। এখান থেকে রকেট লঞ্চারও উদ্ধার করা হয়।
ইসরায়েল সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র সোমবারের অভিযানের ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেন, জেনিন ক্যাম্পে যেসব সন্ত্রাসী নতুন করে আত্মপ্রকাশ করেছে তাদের নির্মূল করা।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ফলে সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
গত ২০ বছরের মধ্যে জেনিন শরণার্থী শিবিরে এটিই ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।